আন্তঃযুদ্ধের বছরগুলিতে প্রচার Propaganda In the inter war years
আন্তঃযুদ্ধের বছরগুলি (১৯১৯-১৯৩৯) বিশ্ব ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যেখানে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (১৯১৪-১৯১৮) পরবর্তী পরিস্থিতি এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৩৯-১৯৪৫) সূচনা পর্যন্ত সময়কাল অন্তর্ভুক্ত। এই সময়ে প্রচারের (propaganda) ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন দেশ রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রচারের কৌশল ব্যবহার করেছিল।
প্রচারের বৈশিষ্ট্য -
১. রাজনৈতিক প্রচার:-
ফ্যাসিবাদী ও নাৎসি মতাদর্শের উত্থান ইতালিতে মুসোলিনি ও জার্মানিতে হিটলার তাদের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে প্রচারকে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন।সোভিয়েত ইউনিয়নে স্টালিন কমিউনিজম প্রচারের জন্য গণমাধ্যম, পোস্টার ও শিক্ষা ব্যবস্থাকে কাজে লাগান।
২. সামরিক প্রচার:-
যুদ্ধ প্রস্তুতির জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা হয়। জার্মানি ও জাপানে সামরিক শক্তির গৌরবগাথা তুলে ধরে জনগণের মনোভাবকে যুদ্ধমুখী করা হয়।
৩. সাংস্কৃতিক প্রচার:-
জাতীয়তাবাদ ও ঐতিহ্যের উপর জোর দিয়ে জনগণকে একত্রিত করার চেষ্টা করা হয়। শিল্প, সিনেমা এবং সাহিত্যকে রাজনৈতিক বার্তা ছড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হয়।
৪. অর্থনৈতিক প্রচার:-
মন্দার সময়ে (গ্রেট ডিপ্রেশন, ১৯২৯) বিভিন্ন দেশ অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের জন্য প্রচার চালায়।সোভিয়েত ইউনিয়নে "ফাইভ ইয়ার প্ল্যান" এবং "শ্রমিক নায়ক" ধারণা প্রচারিত হয়।
ক) প্রচারের মাধ্যম
খ)পোস্টার এবং ব্যানার
গ) রেডিও সম্প্রচার
ঘ) সংবাদপত্র ও পুস্তিকা
ঙ) চলচ্চিত্র এবং সংগীত
উদাহরণ -
ক) নাৎসি জার্মানি:- হিটলারের প্রচারমন্ত্রী জোসেফ গোয়েবলস গণমাধ্যম এবং শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে নাৎসি মতাদর্শ প্রচার করেন।
খ) সোভিয়েত ইউনিয়ন:- বিপ্লবী পোস্টার ও সাহিত্যিক প্রচারের মাধ্যমে কমিউনিজমের বার্তা ছড়ানো হয়।
গ) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র:- নিউ ডিল কর্মসূচির প্রচারের জন্য মিডিয়া ব্যবহার করা হয়।
প্রভাব -
ক) সমাজে বিভেদ ও মতাদর্শগত সংঘর্ষ বৃদ্ধি পায়।
খ) প্রচার জনমত তৈরি ও রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতা দৃঢ় করতে সাহায্য করে।
গ) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য জনগণকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করা হয়।
এই সময়ের প্রচার আধুনিক গণমাধ্যম এবং রাজনৈতিক কৌশলের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।