উৎস অঞ্চলের শ্রেণিবিভাগ (Classification of Source region):
বায়ুপুঞ্জের উৎস অঞ্চলকে পিটারসেন (Petterssen, 1941) ছটি ভাগে ভাগ করেছেন।
1. সুমেরু ও মেরু সংলগ্ন মহাদেশীয় উৎস অঞ্চল (The Arctic and Polar Continental Source):
উত্তর মেরু ও মেরু সংলগ্ন উত্তর আমেরিকা ও ইউরেশিয়া বায়ুপুঞ্জ গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসস্থল। এখানে সমগ্র অঞ্চল জুড়ে প্রতীপ ঘূর্ণবাত অবস্থান করে। শীতকালে ভূমিভাগ বরফাবৃত থাকে। তাই শীতল বায়ুপুঞ্জ সৃষ্টির আদর্শ অবস্থা তৈরি হয়।
2. ক্রান্তীয় সামুদ্রিক উৎস অঞ্চল (Tropical maritime source):
ক্রান্তীয় সমুদ্রে সারাবছরই প্রতীপ ঘূর্ণবাত অবস্থানের কারণে জলবায়ুগত অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন ঘটে না। জলভাগের উপস্থিতির জন্য এখানে আর্দ্র প্রকৃতির বায়ুপুঞ্জের সৃষ্টি হয়।
3. ক্রান্তীয় মহাদেশীয় উৎস অঞ্চল (Tropical continental source):
শীতকালে উত্তর আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যে বিস্তৃত হলেও গ্রীষ্মকালে এই উৎস অঞ্চলটি আফ্রিকা, এশিয়া ও দক্ষিণ ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে। এ ছাড়া উত্তর আমেরিকার মিসিসিপি নদী অববাহিকাও ক্রান্তীয় মহাদেশীয় উৎস অঞ্চলের অন্তর্গত। এখানে সৃষ্টি হওয়া বায়ুপুঞ্জ উয় প্রকৃতির হয়।
4. মেরূদেশীয় সামুদ্রিক উৎস অঞ্চল (The polar maritime source):
আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগর সংলগ্ন উত্তর ও উত্তর-পূর্ব অংশ এই উৎস অঞ্চলের অন্তর্গত। শীতকালে সুমেরু সংলগ্ন মহাদেশীয় শীতল বায়ু জলভাগে প্রবেশ করলে নতুন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বায়ুপুঞ্জের সৃষ্টি হয়।
5. নিরক্ষীয় উৎস অঞ্চল (The equatorial source):
নিরক্ষরেখা সংলগ্ন আন্তঃক্রান্তীয় সম্মিলন বলয়ে (ITCZ) যেখানে উভয় প্রকার আয়ন বায়ু মিলিত হয় সেখানে উন্ন, আর্দ্র ও অস্থিতিশীল বৈশিষ্ট্যযুক্ত বায়ুপুঞ্জের সৃষ্টি হয়। নিরক্ষীয় অঞ্চলের ভূমিভাগ মোটামুটি একই ধরনের। উপরন্তু উন্নতা ও আর্দ্রতাও সারাবছর প্রায় একই রকমের থাকে। এ ছাড়া অঞ্চলটির বেশির ভাগ অংশই জলভাগ দ্বারা আবৃত। তাই এই অঞ্চলটি জলীয় বাষ্পে সমৃদ্ধ। উয় ভুভাগ ও জলীয় বাষ্পপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে এখানে উল্ল ও আর্দ্র বায়ুপুঞ্জের সৃষ্টি হয়।
6. মৌসুমি উৎস অনबुल (The Monsoon source):
এই অঞ্চলটি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জুড়ে অবস্থান করে। হিমালয়ের অবস্থানের কারণে উত্তরের শীতল মহাদেশীয় মেরুবায়ু প্রবেশ করতে পারে না। তাই অঞ্চলটিতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব লক্ষ করা যায়। গ্রীষ্মকালে অঞ্চলটিতে দক্ষিণে অবস্থিত ভারত মহাসাগর থেকে বায়ু এই অঞ্চলে প্রবেশ করায় এখানে উয় ও আর্দ্র বায়ুপুঞ্জ লক্ষ করা যায় ও শীতকালে উত্তর দিক থেকে মহাদেশীয় শীতল ও শুদ্ধ বায়ুপুঞ্জ প্রবাহিত হতে দেখা যায়।