welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

উত্তাপের ভারসাম্যের একটি সাধারণ মডেল (A general model of Heat budget)

 উত্তাপের ভারসাম্যের একটি সাধারণ মডেল (A general model of Heat budget):


বিশ্ব উন্নায়নের কারণে ধীরে ধীরে পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কার্যকরী সৌর বিকিরণ ও অ্যালবেডোর পরিমাণের মধ্যে বিগত কয়েক দশক ধরে একটা পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে গবেষকরা সিদ্ধান্তে এসেছেন যে পৃথিবীতে অ্যালবেডোর পরিমাণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে 1 মার্চ 2000 থেকে 31 ডিসেম্বর 2011 পর্যন্ত উপগ্রহচিত্র বিশ্লেষণ করে NASA-এর হিসাব অনুযায়ী 1970-এর সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত অ্যালবেডোর হার কমে 30 শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে।

 এর প্রধান কারণ হল বিশ্ব উন্নায়নের ফলে বরফের গলন। NASA-এর তথ্য অনুযায়ী সমগ্র ভূভাগ যদি বরফাবৃত হত তাহলে অ্যালবেডোর পরিমাণ হত 84%। 

তাই প্লেইস্টোসিন হিমযুগে বরফাবৃত ভূভাগের উপস্থিতির জন্য অ্যালবেডোর পরিমাণ অধিক ছিল। কিন্তু বর্তমান হলোসিন যুগে গ্রিন হাউস প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় মেরুসংলগ্ন ও উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলের বরফ গলতে শুরু হওয়ায় অ্যালবেডোর পরিমাণ ধীরে ধীরে কমে আসছে। এর ফলে কার্যকরি সৌর বিকিরণের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে উত্তাপের ভারসাম্যে পরিবর্তন ঘটেছে। তাই বর্তমানে বিংশ শতাব্দীর আবহবিদগণ যেসমস্ত মডেল প্রস্তুত করেছেন বর্তমানে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। 

নীচে NASA-সহ আধুনিক আবহবিদদের হিসাব অনুযায়ী একটি উত্তাপের সেটি ভারসাম্য মডেল তুলে ধরা হল।

1.1

সূর্য থেকে আগত সৌর বিকিরণ যদি 100 একক ধরা হয় তবে সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী 30 একক মেঘ, ধুলিকণা ও ভূপৃষ্ঠ দ্বারা (20+6+4) প্রতিফলিত হয়ে মহাশূন্যে ফিরে যায়। বাকি 70 এককের মধ্যে 19 একক বিচ্ছুরণ, শোষণ প্রক্রিয়ার দ্বারা মেঘ ও বায়ুমণ্ডল কর্তৃক সরাসরি শোষিত হয় এবং 51 একক কার্যকরী সৌর বিকিরণরূপে সরাসরি ভূপৃষ্ঠ দ্বারা শোষিত হয়। 


(ক) ভূপৃষ্ঠে উত্তাপের সমতা (Heat balance in earth's surface):


কার্যকরী সৌর বিকিরণের 51 একক ভূপৃষ্ঠ কর্তৃক শোষিত হওয়ার পর 23 একক জলের বাষ্পীভবন, 7 একক পরিচলন ও পরিবহণ প্রক্রিয়ায় নষ্ট হয় এবং বায়ুমণ্ডলে ফিরে আসে। বাকি 21 একক অবলোহিত রশ্মিরূপে বিকিরিত হওয়ার জন্য পড়ে থাকে। কিন্তু চিত্র নং 1.1 ভালো করে লক্ষ করলে দেখা যাবে ভূপৃষ্ঠ প্রকৃতপক্ষে 117 একক শক্তি বিকিরণ করে। প্রকৃতপক্ষে আগত সৌর বিকিরণ কেবল দিনের বেলায় লক্ষ করা যায় কিন্তু পৃথিবী দিন ও রাত দুই বেলাই বিকিরণ করে। তাই ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকিরণের হার এত বেশি হয়। উপরন্তু গ্রিনহাউস গ্যাস ও মেঘ কর্তৃক 117 এককের মধ্যে 111 একক শোষিত হয়। 

এই শক্তির 96 একক পুনরায় ভূপৃষ্ঠে এসে (96 +21) = 117 একক শক্তি ভূপৃষ্ঠে পুনরায় জমা হয়। তবে এই 117-এর মধ্যে 6 একক সরাসরি মহাশূন্যে ফিরে যায়। সুতরাং সূর্য থেকে আগত কার্যকরী বিকিরণের (51 একক) প্রায় দ্বিগুণ (96 একক) দীর্ঘ তরঙ্গরূপে বায়ুমণ্ডল থেকে ভূপৃষ্ঠ লাভ করে। অর্থাৎ, ভূপৃষ্ঠের প্রাপ্ত মোট তাপশক্তির পরিমাণ 51 + 96 = 147 একক। ভূপৃষ্ঠ থেকে দীর্ঘ তরঙ্গরূপে বায়ুমণ্ডল ও মহাশূন্যে ফিরে যাওয়া শক্তির পরিমাণ যথাক্রমে 7 (পরিচলন ও পরিবহণ প্রক্রিয়ায়), 23 (বাষ্পীভবন ও ঘনীভবন প্রক্রিয়ায়), 111 (গ্রিনহাউস গ্যাস দ্বারা শোষণ) পরিচলন ও বাশীঘ্রনে দির্ঘতরাশের বিকিরণ পরিবহন (মহাশূন্যে সরাসরি ফেরা) একক, অর্থাৎ মোট 7 + 23 + 111 + 6 = 147 একক


1.2


(খ) বায়ুমণ্ডলে উত্তাপের সমতা (Heat balance in Atmosphere):


বায়ুমন্ডলেও উত্তাপের আদানপ্রদানের মধ্যে সমতা বজায় থাকে। চিত্র নং 1.2 থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে বায়ুমণ্ডল ভূপৃষ্ঠ ও সূর্য থেকে সৌর কিরণরূপে মোট 160 একক শক্তি পায়, যার 19 একক (আগত সৌর বিকিরণের 100 এককের মধ্যে) আগত ক্ষুদ্র তরঙ্গের সৌর বিকিরণ থেকে সরাসরি লাভ করে এবং বাকি 141 এককের মধ্যে ভূ পৃষ্ঠ থেকে গ্রিন হাউস প্রভাবরূপে 111 একক, পরিচলন ও পরিবহণ প্রক্রিয়ায় 7 একক ও বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ায় একক পায় (19+111 +7 + 23 = 160)। এই শক্তির মধ্যে 64 একক মহাশূন্যে এবং 96 একক পুনরায় ভূপৃষ্ঠে পাঠিয়ে

(64 + 96 = 160) বায়ুমণ্ডল আগত সৌর বিকিরণ ও ভূপৃষ্ঠে বিকীর্ণ শক্তির মধ্যে সমতা বজায় রাখে।


(গ) কার্যকরী সৌর বিকিরণের উত্তাপের সমতা (Heat balance of Effective Solar Radiation):


আবার, চিত্র থেকে এটিও স্পষ্ট যে সূর্য থেকে বিকীর্ণ ক্ষুদ্র তরঙ্গরূপে আগত 70 একক তাপ যার 19 একক

বায়ুমণ্ডল এবং 51 একক ভূপৃষ্ঠ শোষণ করে তা দীর্ঘ তরঙ্গরূপে ভূপৃষ্ঠ হতে বিকীর্ণ 117 এককের মধ্যে 6 একক ভূ পৃষ্ঠ সরাসরি এবং বায়ুমণ্ডলীয় গ্রিনহাউস গ্যাস দ্বারা শোষিত বাকি 111 এককের (117 – 6) মধ্যে 64 একক মহাশূ ন্যে ফিরে যায় (6 + 64 = 70)। এভাবে সূর্য থেকে পৃথিবীপৃষ্ঠ তথা বায়ুমণ্ডলে আগত সৌর বিকিরণের উত্তাপের সমতা বজায় থাকে।


(ঘ) ভূত্বক ও বায়ুমণ্ডলের মধ্যে উত্তাপের সমতা (Heat balance between earth crust and atmo- sphere):


বায়ুমণ্ডল ও ভূপৃষ্ঠ নিজেদের মধ্যেও তাপের বিকিরণ দ্বারা উত্তাপের সমতা বজায় রাখে। ভূপৃষ্ঠ সূর্য ও নিজের বায়ুমণ্ডল থেকে 147 একক শক্তি অর্জন করে এবং 117 একক বিকিরণ করে অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠে (147-117) = 30 একক শক্তি উদ্বৃত্ত থাকে। অন্যদিকে বায়ুমণ্ডল 130 একক শক্তি ভূপৃষ্ঠ ও সূর্য থেকে লাভ করে (117 ভূপৃষ্ঠ থেকে, 19 আগত সৌর বিকিরণ থেকে) যেখানে 160 একক (64 একক মহাশূন্যে এবং 96 একক ভূপৃষ্ঠে) বিকিরণ করে। অর্থাৎ, বায়ুমণ্ডলে (160 - (64+96)} = 30 একক শক্তির ঘাটতি থাকে। এই ঘাটতি বাষ্পীভবন (23 একক) ও পরিচলন-পরিবহণ (7 একক) প্রক্রিয়ায় ভূপৃষ্ঠের উদ্বৃত্ত শক্তি থেকে বায়ুমণ্ডলে এসে পরিপূরণ হয়।

সুতরাং সূর্য থেকে আগত যে সৌরশক্তি ভূপৃষ্ঠ ও বায়ুমণ্ডল শোষণ করছে তা উভয়ের (ভূত্বক ও বায়ুমণ্ডল) মধ্যে আদানপ্রদান করে এবং মহাশূন্যে ফিরিয়ে দিয়ে উত্তাপের সমতা বজায় রাখছে। এমনকি বায়ুমণ্ডল ও ভূত্বকে উত্তাপের যে ঘাটতি ও উদ্‌বৃত্ত থাকে তাও সময়ানুসারে সমতা লাভ করে। তাই মোট শক্তির বার্ষিক কোনো উদ্‌বৃত্ত বা ঘাটতি থাকে না। ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার তেমন কোনো পরিবর্তন হয় না এবং বায়ুমণ্ডলের তাপও ধ্রুবক অবস্থায় থাকে। এই অবস্থাকেই বার্ষিক উত্তাপের ভারসাম্য (Annual heat balance) বলে।

Middle post ad 01