welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

ভোগ(Consumption)

ভোগ(Consumption)


সমস্ত অর্থনৈতিক কাজের সর্বশেষ উদ্দেশ্য হল ভোগ বা কনসাম্পসন (consumption)। ভোগ বলতে বিভিন্ন দ্রব্য ও পরিসেবার ব্যবহারের মাধ্যমে তার উপযোগ (utility) নিঃশেষ করার প্রক্রিয়াকে বোঝায়। যেমন লিখতে লিখতে কলমের কালি শেষ হয়ে গেলে কলমের উপযোগ শেষ হয়ে যায়। এখানে লেখার কাজে কলমের ব্যবহার হল ভোগ।

ভোগের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Consumption)

ভোগের বৈশিষ্ট্য হল - 

(1) ভোগ একটি প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভোগের উপযোগী উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী ব্যবহার করে উপভোক্তা তার অভাব পূরণ করে। 

(2) ভোগের মাধ্যমে তৃপ্তির (satisfaction) জন্য যে-কোনো উৎপাদিত দ্রব্য বা কাঁচামাল যথেষ্ট নয়। সেই দ্রব্যকে সরাসরি ব্যবহারের উপযুক্ত ও তৃপ্তি দেওয়ার (direct satisfaction) উপযোগী হতে হবে। তাই কাগজের মণ্ড বা পাল্প (pulp) ভোগের উপযোগী কোনো দ্রব্য নয়। কিন্তু কাগজ, বই, খাতা হল দ্রব্য হিসেবে ভোগের উপযোগী।


(3) দ্রব্য বা সেবার বা উপযোগের সর্বশেষ ব্যবহার বা চূড়ান্ত ব্যবহার (final use) হল ভোগ। অর্থাৎ ভোগের মাধ্যমে উপযোগ নিঃশেষ হয়। তাই ভোগকে "Destruction of utility" বলা হয়। যেমন এক গ্লাস জল পান করার পরে গ্লাসের ওই জলের আর কোনো অস্তিত্ব ও উপযোগ থাকে না।


(4) ভোগের মাধ্যমে দ্রব্যের গড়ন ও স্বরূপ (form) বদলে যায়। যেমন আপেল খাওয়ার পরে মানুষের শরীরে আপেলের উপাদানগুলি পাওয়া যাবে, কিন্তু সেই উপাদানগুলি আপেল নয়।

(5) ভোগের মাধ্যমে দ্রব্যের ও পরিসেবার উপযোগ তাড়াতাড়ি বা আস্তে আস্তে কমতে পারে। যেমন ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে এক থালা ভাতের উপযোগ দ্রুত হ্রাস পায়। কিন্তু টিভি-র উপযোগ ধীরে ধীরে কমে।


(6) ভোগের জন্য উৎপাদিত দ্রব্য মানুষের ভোগে না লাগলে ওই দ্রব্য বর্জ্য পদার্থে (waste) পরিণত হয়। যেমন সবজি, ফল, খাদ্যদ্রব্য ইত্যাদি।


ভোগের শ্রেণিবিভাগ (Classification of Consumption)

ভোগ নানা ধরনের যেমন-


(1) একবার ভোগ বা বারংবার ভোগ। উপভোক্তার ভোগের জন্য এমন দ্রব্য আছে যাকে একবার ব্যবহার (single use) করলেই তার উপযোগ শেষ হয়ে যায়। পক্ষান্তরে বারবার ব্যবহার করা যায় (durable use) বা ভোগ করা যায়, তেমন দ্রব্যও আছে। যেমন একটি কাচের গ্লাসে দুধ। দুধটি একবার ভোগের এবং কাচের গ্লাসটি বারবার ভোগের উপযুক্ত দ্রব্যের উদাহরণ। কারণ দুধের সঙ্গে কাচের গ্লাসটি কেউ খেয়ে ফেলে না।


(2) দ্রুত ভোগ ও ধীর ভোগ। দ্রব্যের প্রকৃতি অনুসারে ভোগের ধরন দ্রুত বা ধীর প্রকৃতির হয়। যেমন দ্রুত ভোগ হল একটা রুটি, একটা লজেন্স-এর ভোগ। বিপরীতভাবে ধীর ভোগ হল একটা পেনসিল বা একটি খাতার ব্যবহার।


(3) উপস্থিত ভোগ বা বর্তমান ভোগ ও মুলতুবি ভোগ। উৎপাদনের অব্যবহিত পরে কোনো দ্রব্যের ভোগ হল উপস্থিত বা বর্তমান ভোগ (Present consumption)। যেমন মাঠ থেকে তোলা আলু। পক্ষান্তরে উৎপাদনের পরে উপযুক্ত সময়ে ওই দ্রব্যের ভোগ হল মুলতুবি ভোগ (Deferred consumption / Postponed consumptioni যেমন হিমঘর থেকে আনা আলু।


(4) প্রত্যক্ষ ভোগ ও অপ্রত্যক্ষ ভোগ। উপভোক্তা কোনো দ্রব্যকে ভোগ করলে দ্রব্যের উপযোগ তখনই শেষ হয়ে যায়। এই ভোগ হল প্রত্যক্ষ ভোগ (Direct consumption)। যেমন রসগোল্লা, কেক, পেস্ট্রি। পক্ষান্তরে উপভোক্তার তৃপ্তি ঘটলেও দ্রব্যটির উপযোগ শেষ হয়ে যায় না। এগুলি হল অপ্রত্যক্ষ ভোগ (Indirect consumption)। যেমন একটি ভালো সিনেমা, একটি লিফ্ট বা এসকালেটর (escalator)।


(5) স্বয়ংচালিত ভোগ ও কর প্রদানের পরে অবশিষ্ট আয়ের সাপেক্ষে ভোগ। স্বয়ংচালিত ভোগ হল অটোনমাস কনসাম্পসন (autonomous consumption)। অর্থাৎ উপভোক্তার হাতে নগদ টাকা না থাকলেও যে ন্যূনতম ভোগ, প্রয়োজনে টাকা ধার করেও, তাকে জীবনধারণের জন্য করতে হয়, তাই হল স্বয়ংচালিত ভোগ। পক্ষান্তরে, কর দেওযার পরে উপভোক্তার ভোগব্যয় হল অবশিষ্ট আয় (disposable income)-এর সাপেক্ষে ভোগ।


ভোগের গুরুত্ব (Significance of Consumption)


সমস্ত অর্থনৈতিক কাজ যেমন কৃষি, শিল্প, ব্যাবসা অথবা উৎপাদন, বিনিময় ও বণ্টন ইত্যাদির উদ্দেশ্যই হল ভোগের মাধ্যমে মানুষের চাহিদা মেটানো। ভোগ ছাড়া অর্থনৈতিক কাজের উপযোগ নেই। সুতরাং মানুষের আর্থ-সামাজিক পরিবেশে ও দেশের অর্থনীতিতে ভোগের গুরুত্ব অপরিসীম, যেমন-


(1) মানুষের সব চাহিদার মূলে রয়েছে ভোগের ইচ্ছা। গাড়ি, বাড়ি, জামাকাপড়, ভালো খাবার, টিভি, ফ্রিজ, স্মার্টফোন, অন্যান্য ইলেকট্রনিক দ্রব্য ইত্যাদি নানা ধরনের পণ্য উৎপাদনের যে বিপুল অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চলছে তার প্রধান চালিকাশক্তি হল ভোগ। এই কারণেই যে দেশ বা অঞ্চলে ভোগ-প্রবণতা (propensity to consumption) কম, সেখানে অর্থনৈতিক কাজকর্মও কম।


(2) ভোগ হল কোনো দেশের উন্নতি ও কল্যাণের (progress and welfare) সূচক। ভোগের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে জীবনযাত্রার মান বাড়ে। পৃথিবীর উন্নত G8 দেশগুলিতে ভোগের পরিমাণ বেশি এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত।


(3) ভোগের মাধ্যমে উৎপাদনে জোয়ার আসে। কারণ ভোগ বাজারে কোনো দ্রব্যের চাহিদা তৈরি করে এবং সেই চাহিদা পূরণের জন্য উৎপাদনের মধ্য দিয়ে দ্রব্যটির জোগান দেওয়া হয়। যেমন বর্তমানে বাজারে সাদা কালো টিভি-র চাহিদা নেই। তাই সাদা কালো টিভি-র উৎপাদনও প্রায় নেই। কিন্তু রঙীন টিভি তৈরি হচ্ছে।


(4) ভোগের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগের সুযোগ (employment opportunity) তৈরি হয়। আবার কোনো দ্রব্যের ভোগের সুযোগ কমলে বা তার পরিবর্তে বিকল্প দ্রব্যের চাহিদা বাড়লে পুরোনো ব্র্যান্ডের দ্রব্যটি উৎপাদনের জন্য কর্মী নিয়োগের সুযোগ হ্রাস পায়। যেমন বর্তমানে অ্যামবাস্যাডার ব্র্যান্ডের মোটর গাড়ির চাহিদা উপভোক্তাদের মধ্যে কমেছে।

ফলে হিন্দমোটরে ওই মোটরগাড়ি উৎপাদনের কাজ স্থগিত রয়েছে। তাই নিয়োগের সুযোগ নেই। কিন্তু গুজরাট বা হরিয়ানায়


মারুতি-সুজুকি ব্র্যান্ডের মোটরগাড়ি কারখানায় পেশাগত নিয়োগের সুযোগ আছে।


ভোগ ব্যয় (Consumption Expenditure)


ব্যক্তিগত স্তরে উপভোক্তা পণ্য ও পরিসেবার জন্য যে খরচ করে বা জাতীয় স্তরে সামাজিক কারণে গোষ্ঠী ও প্রশাসনের মাধ্যমে ভোগের জন্য যে খরচ হয়, তাকে ভোগ ব্যয় (consumption expenditure) বলে। ব্যক্তিগত ভোগব্যয় প্রধানত ব্যক্তি বা পরিবারের আয়ের ওপর এবং সামাজিক ভোগব্যয় জাতীয় আয়ের ওপর নির্ভর করে।

ব্যক্তি ও পারিবারিক ভোগব্যয়ের নিয়ন্ত্রক (Controls of personal and family consumption


expenditure): ব্যক্তিগত ও পারিবারিক স্তরে ভোগব্যয়ের আটটি নিয়ন্ত্রক আছে, যেমন 

(1) ব্যক্তিগত বা পারিবারিক আয়, (2) ভোগ্যপণ্যের দাম, (3) পরিবারের সদস্য সংখ্যা, (4) ভোগের অভ্যাস, (5) পারিবারিক সম্পত্তির পরিমাণ, (6) প্রদর্শন প্রভাব, (7) সুদের হার ও (৪) বিজ্ঞাপনের প্রভাব।


(1) ব্যক্তিগত ও পারিবারিক আয় (Personal and Family Income):


কোনো ব্যক্তির বা তার পরিবারের ভোগব্যয়ের ক্ষমতা প্রত্যক্ষভাবে ওই ব্যক্তি ও তার পারিবারিক আয়ের ওপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ যে ব্যক্তি বা পরিবারের আয় যত বেশি, তার ভোগব্যয় করার ক্ষমতা তত বেশি।


(2) ভোগ্যপণ্যের দাম (Price of Commodities)

: ভোগ্য পণ্যের দাম বা মূল্যসূচক বৃদ্ধি পেলে এবং ব্যক্তি ও পরিবারের আয় অপরিবর্তিত থাকলে, উপভোক্তা সমপরিমাণ ব্যয় করে তুলনামূলকভাবে অল্প ভোগ্যপণ্য ক্রয় করতে


সমর্থ হয়। ভোগ্যপণ্যের দাম কমলে ঠিক বিপরীত ঘটনা ঘটে অর্থাৎ ভোগ্যব্যয় বৃদ্ধি পায়।


(3) পরিবারের সদস্য সংখ্যা (Size of the Family):

 পরিবারের সদস্য সংখ্যা ও পরিবারের উপার্জনশীল ব্যক্তির সংখ্যার ওপর ভোগব্যয় নির্ভর করে। সাধারণত যে পরিবারে সদস্যসংখ্যা কম এবং উপার্জনশীল ব্যক্তির সংখ্যা ও উপার্জনের পরিমাণ বেশি, সেখানে ভোগব্যয় স্বাভাবিকভাবেই বেশি।


(4) ভোগের অভ্যাস (Habit of Consumption)

: ভোগের অভ্যাস, ব্যক্তিগত রুচি ও পছন্দ, পারিবারিক প্রথা, সামাজিক সংস্কৃতি প্রভৃতি বিষয়গুলি ভোগব্যয় ও ভোগ প্রবণতার ওপর প্রভাব বিস্তার করে।


(5) পারিবারিক সম্পত্তির পরিমাণ (Size of Family Assets): 

ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা, কোম্পানির শেয়ার, নগদ টাকা, ভূসম্পত্তির পরিমাণ ইত্যাদি বস্তুগত সম্পত্তির ওপর ব্যক্তি ও পরিবারের ভোগব্যয়ের পরিমাণ নির্ভরশীল। স্বাভাবিকভাবেই দরিদ্র পরিবারের পারিবারিক সম্পত্তির পরিমাণ কম এবং ভোগব্যয় ক্ষমতাও কম।

(6) প্রদর্শন প্রভাব (Showing off one's accomplishments): 

ভোগবাদী সমাজে বহু মানুষ নিজেদের ধনসম্পত্তির প্রকাশ ঘটানোর জন্য প্রচুর অলংকার, ভূসম্পত্তি, আসবাবপত্র কেনেন। সম্পদের অপচয় করেন। এতে তাঁদের ভোগব্যয় বৃদ্ধি পায়।


(7) সুদের হার (Rate of Interest): 

ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ পাওয়া সম্ভব হলে, মানুষের মধ্যে ভোগব্যয় ক্ষমতা বাড়ে। টিভি, ফ্রিজ, মোটরগাড়ি, ফ্ল্যাট প্রভৃতি নানান ভোগ্যপণ্য কেনার জন্য ওই ঋণের টাকা ব্যয় করে।


(৪) বিজ্ঞাপনের প্রভাব (Influence of advertisement):

 উপভোক্তারা টিভি, রেডিয়ো, খবরের কাগজে দেওয়া বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের বিজ্ঞাপনে প্রভাবিত হয়ে ভোগব্যয় বৃদ্ধি করে।

সামাজিক ভোগব্যয়ের নিয়ন্ত্রক (Controls of Social Consumption Expenditure): 

সামাজিক ভোগব্যয়ের প্রধান দুটি নিয়ন্ত্রক হল  (1) দেশের জনসংখ্যা ও (2) দেশে আয় বণ্টনের প্রকৃতি।


(1) দেশের জনসংখ্যা (Population size of a country): দেশের জনসংখ্যা বেশি হলে স্বাভাবিকভাবেই খাদ্য দ্রব্যসহ অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বেশি হয়।


(2) দেশে আয়বণ্টনের প্রকৃতি (Nature of income distribution in a country): অর্থনীতিবিদরা লক্ষ করেছেন যে নিম্ন আয়ের লোকজনের মধ্যে প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা (marginal propensity to consumption) উচ্চবিত্ত মানুষের তুলনায় বেশি হয়। অর্থাৎ গরিব মানুষ ভোগ্যদ্রব্য ক্রয়ের জন্য আয়ের বেশিরভাগ অংশই খরচ করে। তুলনামূলকভাবে বড়োলোকদের মধ্যে এই খরচের প্রবণতা কম। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, নিম্ন আয়ের মানুষের প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা 70 শতাংশ, অর্থাৎ 1 টাকায় 70 পয়সা। অন্যদিকে উচ্চবিত্ত মানুষের প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা ধরা যাক 50 শতাংশ, অর্থাৎ 1 টাকায় 50 পয়সা।

এখন সরকার যদি উচ্চবিত্ত মানুষের কাছ থেকে কর বাবদ 1 টাকা সংগ্রহ ক'রে গরিব মানুষের মধ্যে নানা প্রকল্পের মাধ্যমে ওই। টাকা বণ্টন করে, তাহলে নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে ভোগ ব্যয় বাড়বে এবং জাতীয় ভোগব্যয়ের নিট বৃদ্ধি হবে 70 পয়সা 50 পয়সা 20 পয়সা।


ভোগ অপেক্ষক ও ভোগ প্রবণতা (Consumption function and Propensity to Consume)


ভোগ অপেক্ষক (Consumption function): 

ভোগব্যয় (C) ও আয়ের (Y) মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার সম্পর্ককে ভোগ অপেক্ষক বা Consumption function বলে। 1936 সালে অর্থনীতিবিদ জন মেনার্ড কেইন্স (John Maynard Keynes) জাতীয় খরচের বিশ্লেষণ প্রসঙ্গে ভোগ অপেক্ষকের ধারণার প্রবর্তন করেন। এই অপেক্ষকের সাহায্যে সমষ্টিগত জাতীয় আয়ের সঙ্গে জাতীয় ভোগব্যয়ের সম্পর্ক জানা যায়।


ভোগ অপেক্ষককে স্বল্পকালীন ও দীর্ঘমেয়াদি দুটি দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা যায়। কেইন্সের মত অনুসারে স্বল্পকালীন ভোগ অপেক্ষক-এর ক্ষেত্রে জাতীয় আয় যে অনুপাতে পরিবর্তিত হয়, ভোগব্যয় তার চেয়ে কম অনুপাতে পরিবর্তিত হয়।


দীর্ঘকালীন ভোগ অপেক্ষক-এর ক্ষেত্রে আয় ও ভোগব্যয়ের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট অনুপাত প্রায় সর্বদা বজায় থাকে।


ভোগ প্রবণতা (Propensity to consume): 

আয়ের পরিবর্তনের ফলে ভোগব্যয়ের পরিমাণে যে পরিবর্তন ঘটে, তাকে ভোগ প্রবণতা (propensity to consume) বলে। ভোগ প্রবণতা দু'ধরনের, যেমন প্রবণতা, ও (2) প্রান্তিক ভোগ প্রবণতা। (1) গড় ভোগ

(1) গড় ভোগপ্রবণতা (Average Propensity to Consume - APC): 

মোট ভোগব্যয় (C)-কে মোট আয় (Y) দিয়ে ভাগ করলে গড় ভোগ প্রবণতা (Average Propensity to Cosume সংক্ষেপে APC) পাওয়া যায়। অর্থাৎ মোট ভোগব্যয় (C) এবং মোট আয়ের (Y) অনুপাত হল গড় ভোগপ্রবণতা (APC)। সূত্র অনুসারে APC C/Y

(2) প্রান্তিক ভোগপ্রবণতা (Marginal Propensity to Consume - MPC): 

মোট ভোগব্যয়ের (C) পরিবর্তনকে মোট আয়ের (Y) পরিবর্তন দিয়ে ভাগ করলে প্রান্তিক ভোগপ্রবণতা (Marginal Propensity to Consume সংক্ষেপে MPC) পাওয়া যায়। অর্থাৎ ১-এর সামান্য পরিবর্তনের ফলে C-এর যে পরিবর্তন হয়, তাই হল প্রান্তির ভোগপ্রবণতা (MPC)। সূত্র অনুসারে, MPC = AC / AY যেখানে, এ পরিবর্তন।


গড় ভোগপ্রবণতা (APC) ও প্রান্তিক ভোগপ্রবণতা (MPC)-কে সংশ্লিষ্ট সারণিতে দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বুঝে নেওয়া যেতে পারে।



গড় ভোগপ্রবণতা ও প্রান্তিক ভোগপ্রবণতার মধ্যে পার্থক্য (Difference between Average Propensity to Consume [APC] and Marginal Propensity to Consume [MPC])


(1) গড় ভোগপ্রবণতার (APC) সাহায্যে প্রতি একক আয় থেকে সম্ভাব্য ভোগব্যয় সম্পর্কে জানা যায়। অন্যদিকে, প্রান্তিক ভোগপ্রবণতা (MPC) অতিরিক্ত একক আয় থেকে উদ্ভূত অতিরিক্ত ভোগব্যয়কে নির্দেশ করে।


(2) মোট আয়ের কত অংশ ভোগে ব্যয় হয় তা APC নির্দেশ করে। যেমন উদাহরণ-1, 2 অনুসারে 100 (টাকা) আয় হলে ভোগব্যয় 70 শতাংশ।


আবার, MPC-র মাধ্যমে ভোগব্যয়ের পরিবর্তনশীলতা সম্পর্কে জানা যায়। যেমন উদাহরণ-1 অনুসারে আয় 100 (টাকা) থেকে 200 (টাকা) বা 200 থেকে 300 অথবা 300 থেকে 400 হলে প্রান্তিক ভোগব্যয় প্রতি স্তরে 10 শতাংশ হ্রাস পায়।


(3) অধ্যাপক কেইন্স (Keynes)-এর মতে আয় বাড়লে ভোগব্যয় বাড়ে। কিন্তু আয়ের বৃদ্ধির তুলনায় ভোগব্যয়ের


বৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে কম হয়। অর্থাৎ MPC-র মান ধনাত্মক হবে, কিন্তু এককের চেয়ে কম হবে (0 < MPC < 1)। তবে যদি YC হয়, তাহলে C/Y APC1 হবে। আবার, Y > C হলে, C/P = APC < 1 এবং C > Y হলে C/Y = APC > 1 হবে। A


(4) APC নির্ধারণের জন্য একটি আয়স্তর ও সেই আয়স্তরে ভোগব্যয়ের পরিমাণ জানতে হয়। অন্যদিকে, MPC নির্ধারণের জন্য দুটি আয়স্তর ও দুটি ভোগব্যয় স্তর জানা দরকার।


এঙ্গেল-এর বিধি (Engel's Laws): 1857 সালে সংখ্যাতত্ত্ববিদ


আরনেস্ট এঙ্গেল (Emest Engel) দেখিয়েছেন যে ভোক্তার আয় বাড়লে আনুপাতিক হারে খাদ্যদ্রব্যের ওপর তার ব্যয় (ভোগব্যয়) কমতে থাকে। সংশ্লিষ্ট চিত্রের উল্লম্ব অক্ষে ভোগ (C) এবং অনুভূমিক অক্ষে আয় (Y) পরিমাপ করা হয়েছে। এই রেখাটির ওপর যে-কোনো বিন্দুতে রেখাটির ঢাল ভোক্তার প্রান্তিক ভোগপ্রবণতার (MPC) পরিমাণকে নির্দেশ করে। জ্যামিতিক ভাবে C/Y APC OA রেখার ঢালের সমান। আলোচ্য বিধিটি এঙ্গেল-এর বিধি (Engel's Law) নামে পরিচিত। এই বিধি থেকে কোনো দেশের জীবনযাত্রার মান সম্পর্কে ধারণা করা যায়। প্রসঙ্গত, এঙ্গেল গুণাঙ্ক (Engel's coefficient) বাড়লে কোনো দেশের জীবনযাত্রার মান কমে এবং এঙ্গেল গুণাঙ্ক কমলে দেশটিতে জীবনযাত্রার মান বেড়েছে বলে মনে করা হয়। অর্থনীতিবিদ লিওন (Leon, 1967) এবং প্যাসিনেত্তি (Passinetti, 1981) কোনো দেশে দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে অর্থনৈতিক প্রগতি হচ্ছে কিনা, জানার জন্যও এঙ্গেল বিধি প্রয়োগ করা যায় বলে মনে করেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01