welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

বৃষ্টিপাতের শ্রেণিবিভাগ (Types of Precipitation)

 বৃষ্টিপাতের শ্রেণিবিভাগ (Types of Precipitation) :


সূর্যের তাপে জলভাগ থেকে জল বাষ্পীভূত হলে তা হালকা হয়ে ওপরে উঠে যায়। এই উর্ধ্বমুখী জলীয় বাষ্পপূর্ণ আর্দ্র বাতাস অ্যাডিয়াবেটিক পদ্ধতিতে তাপবিকিরণ করতে করতে শিশিরাঙ্ক তাপমাত্রায় পৌঁছলে তা ঘনীভূত হয়ে শীতল জলকণায় এবং তা ধীরে ধীরে ক্রমশ কঠিন ভাসমান তুষারকণায় পরিণত হয়ে মেঘ সৃষ্টি করে। পরে তা আয়তনে বৃদ্ধি পেলে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে ভূপৃষ্ঠে অধঃক্ষেপণরূপে আছড়ে পড়ে। বড়ো বড়ো বরফকণাগুলি নীচের দিকে নামতে থাকলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বরফকণা গলে গিয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়।


বায়ুর ঊর্ধ্বগমনের প্রকৃতি অনুসারে বৃষ্টিপাতকে ওটি প্রধান শ্রেণিতে বিন্যস্ত করা যায়। যথা-


(ক) পরিচলন বৃষ্টিপাত (Convectional Precipitation)

(খ) শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত (Orographic Precipitation)

(গ) ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত (Cyclonic Precipitation)


(ক) পরিচলন বৃষ্টিপাত (Convectional Precipitation) :

প্রবল সূর্যতাপে ভূপৃষ্ঠ অধিক উত্তপ্ত হলে উয় ও আর্দ্র বায়ু ওপরে উঠে প্রসারিত ও শীতল হয়ে ঘনীভূত হলে তা আয়তনে বড়ো ও ভারী হয় এবং মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে নিম্নমুখী হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। এই ধরনের বৃষ্টিপাতকে পরিচলন বৃষ্টিপাত বলে। এই প্রকার বৃষ্টিপাত সংঘটনের দুটি প্রধান শর্ত হল- (i) ভূভাগ উত্তপ্তকরণ, (ii) বাতাসে প্রচুর জলীয় বাষ্পের জোগান। সাধারণত উয় ও আর্দ্র জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ুর উল্লম্ব গতির জন্য প্রথমে কিউমুলাস মেঘের সৃষ্টি করে। এরপর ট্রপোপজের (12 কিমি) কাছাকাছি বায়ু লীনতাপ ত্যাগ করে ঘনীভূত হয়ে নীরদস্তূপ মেঘ বা কিউমুলোনিম্বাস মেঘের সৃষ্টি করে। এই কিউমুলোনিম্বাস মেঘ বহুদূর বিস্তার লাভ করে না এবং দীর্ঘস্থায়ী হয় না, তাই পরিচলন বৃষ্টিপাত ক্ষণস্থায়ী এবং স্বল্প এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। কখনও কখনও এই বৃষ্টির সঙ্গে শিলাবৃষ্টিও হতে দেখা যায়। সাধারণত ভূপৃষ্ঠের তিনটি অঞ্চলে পরিচলন পদ্ধতিতে বৃষ্টি ঘটতে দেখা যায়। যথা-

(i) নিরক্ষীয় অঞ্চল: 

(0° থেকে উভয় গোলার্ধে 5° অক্ষরেখাদ্বয়ের মধ্যবর্তী অঞ্চলে স্থলভাগের তুলনায় জলভাগের বিস্তৃতি অনেক বেশি। আবার এখানে, সারাবছরই সূর্যকিরণ প্রায় লম্বভাবে পড়ার ফলে এই অঞ্চল প্রচুর উত্তাপ গ্রহণ করে। ফলে এই অঞ্চল বাতাসে বা বায়ুমণ্ডলে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্পের জোগান দেয়। অপরদিকে এই অঞ্চলে আন্তঃক্রান্তীয় সম্মিলন বলয় (ITCZ) অবস্থানের ফলে বায়ুর জোগান অব্যাহত থাকায় অধিক উয়তায় বায়ু গরম হয়ে সোজা ওপরে উঠে পরিচলন স্রোতের সৃষ্টি করে। এ ছাড়াও নিরক্ষীয় অঞ্চলের ঘন অরণ্য থেকে বাষ্পমোচনের ফলে সারাবছর ধরে প্রচুর জলীয় বাষ্প বাতাসে যুক্ত হয়, যা বাতাসে জলীয় বাষ্পের জোগানকে বাড়িয়ে দেয়। তাই নিরক্ষীয় অঞ্চলে সাধারণত বিকাল ও সন্ধ্যার সময় প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি ও বজ্রপাত হয় বলে দক্ষিণ- পূর্ব এশিয়ায় একে '4 O' Clock Rain' বলে।



(ii) নাতিশীতোয় মণ্ডল: 

এই অঞ্চলে গ্রীষ্মকালের শুরুতে দিনের বেলায় প্রখর রৌদ্রকিরণে ভূপৃষ্ঠ যথেষ্ট উত্তপ্ত হয়ে পড়ে, অথচ ওপরের বায়ুমণ্ডল বেশ শীতল থেকে যায়। তাই দিনের বেলায় ভূপৃষ্ঠের জলাশয়গুলো থেকে জল বাষ্পে পরিণত হয়ে সোজা ওপরে উঠে যায়। ওই জলীয় বাষ্প ওপরে উঠলে শীতল বায়ুর সংস্পর্শে চলে এলে পরিচলন পদ্ধতিতে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়।


(iii) ক্রান্তীয় অঞ্চল: 

এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে মূলত মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়ে থাকে। বিশেষ করে ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমার, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, চিনের দক্ষিণাংশ প্রভৃতি দেশে মৌসুমি বায়ুর অনুপ্রবেশ ও প্রত্যাবর্তনের পূর্বে পরিচলন প্রক্রিয়ায় বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয়। এই সময় এই অঞ্চলের ভূভাগ উয় বা উত্তপ্ত হলেও ঊর্ধ্বাকাশের বায়ুমণ্ডলের স্তর শীতল থাকে বলে এই ধরনের বৃষ্টিপাত ঘটে থাকে।


(খ) শেলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত (Orographic Precipitation) :


বৃহৎ জলরাশির ওপর দিয়ে প্রবাহিত কোনো জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু স্থলভাগের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় গতিপথে কোনো উঁচু পর্বত বা মালভূমিতে বাধা পেয়ে ওপরে উঠে প্রসারিত হয়। এর ফলে অ্যাডিয়াবেটিক পদ্ধতিতে তাপবিকিরণ করে বায়ু ক্রমশ শীতল হয়ে পড়ে। এ ছাড়া পর্বতের ওপর বরফ জমে থাকলে তার সংস্পর্শে এসে ওই বায়ু সহজেই ঘনীভূত হয়ে পর্বতের প্রতিবাত ঢালে (Windward side) প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। এরূপ বৃষ্টিপাতকে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টি (Orographic Rainfall) বলে। শৈলোৎক্ষেপ পদ্ধতিতে বৃষ্টিপাত অধিক হয়, যদি-


(i) পর্বতের উপরিভাগ বরফাবৃত থাকে,

(ii) সমুদ্রের নিকটে উঁচু পর্বত থাকে এবং

(iii) প্রবল বেগে বাহিত জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু প্রবাহপথের সমকোণে বাধা পায়।


পর্বত অতিক্রম করে ওই বায়ু যখন পর্বতের অপর পার্শ্বে অর্থাৎ অনুবাত ঢালে (Leeward side) এসে পৌঁছায় তখন তাতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ যথেষ্ট কমে যায়। এ ছাড়াও ওই উন্ন বায়ু নীচে নামার সময় ক্রমশ উন্নতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এর জলীয় বাষ্প ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে অনুবাত ঢালে বৃষ্টিপাত বিশেষ হয় না। এইরূপ প্রায় বৃষ্টিহীন শুষ্ক অঞ্চলকে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল (Rain shadow zone) বলে।

উদাহরণ: 

মৌসুমি জলবায়ুর অন্তর্গত অঞ্চলে এই প্রকার বৃষ্টিপাত সবচেয়ে বেশি ঘটে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আরবসাগরীয় শাখা পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে (প্রতিবাত ঢালে), মৌসুমি বায়ুর বঙ্গোপসাগরীয় শাখা মেঘালয়ের খাসি পাহাড়ের দক্ষিণ ঢালে ও হিমালয়ের দক্ষিণ ঢালে এই পদ্ধতিতে বৃষ্টিপাত ঘটায়।


(গ) ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত (Cyclonic Precipitation) :


ঘূর্ণবাতের প্রভাবে সংঘটিত বৃষ্টিপাতকে ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত বলা হয়। প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য, প্রক্রিয়া এবং উৎপত্তি অঞ্চলের বিচারে ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাতকে দুভাগে বিভক্ত করা হয়। যথা-


1. ক্রান্তীয় অঞ্চলের ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত (উয় মণ্ডলীয়) ও 2. নাতিশীতোয় মণ্ডলের ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত।


1. ক্রান্তীয় অঞ্চলের (উয়মণ্ডলীয়) ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত (Cyclonic Precipitation of Topical Region):

উভয় গোলার্ধে ক্রান্তীয় অঞ্চলের অন্তর্গত স্বল্প পরিসর কোনো স্থানে প্রচণ্ড উন্নতার প্রভাবে শক্তিশালী নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়, যার আকর্ষণে চারপাশের অঞ্চল থেকে বায়ু প্রবলবেগে সেদিকে ছুটে আসে ও ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি করে। উয়ুমণ্ডলীয় বা ক্রান্তীয় অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রমুখী ও ঊর্ধ্বমুখী। তাই নিম্নচাপকেন্দ্রের জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু ঊর্ধ্বে উঠে ঘনীভূত হয়ে বজ্রবিদ্যুৎসহ মুষলধারে বৃষ্টিপাত ঘটায়।



2. নাতিশীতোয় মণ্ডলের ঘূর্ণবাত জনিত বৃষ্টিপাত (Cyclonic Precipitation of Temperate Region) : 

নাতিশীতোয় অঞ্চলে স্থলভাগের শীতল শুষ্ক বায়ু ও জলভাগের ওপর থেকে আসা উন্ন-আর্দ্র বায়ু পরস্পরের বিপরীত দিক থেকে অনুভূমিক (Horizontally)-ভাবে প্রবাহিত হয়ে নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে ছুটে আসে। যদি উল্ল ও শীতল বায়ু পরস্পরের মুখোমুখি হয়, তাহলে উন্নবায়ু হালকা বলে তা ভারী শীতল বায়ুস্তরের ওপর ধীরে ধীরে উঠতে বাধ্য হয়। জলভাগের ওপর থেকে বয়ে আসা উয় বায়ুতে প্রচুর জলীয় বাষ্প থাকে। এই বায়ু শীতল বায়ুর ওপর উঠলে তার ভিতরের জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। একেই নাতিশীতোয় ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত বলা হয়।


এই বৃষ্টিপাত কখনোই উয়ুমণ্ডলের ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাতের মতো বজ্রঝঞ্ঝাযুক্ত (Thunderstorm) এবং তীব্র (Violent) প্রকৃতির হয় না। বরং এই প্রকার বৃষ্টিপাতের প্রকৃতি সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী-ঝিরঝির করে দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টিপাত চলতে থাকে। উদ্বু বায়ু ও শীতল বায়ু দ্বারা সীমান্ত সৃষ্টির মাধ্যমে এই প্রকার বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয় বলে, একে সীমান্ত বৃষ্টিও (Frontal Rainfall) বলে। এই প্রকার বৃষ্টিপাত মধ্য অক্ষাংশে শীত ঋতুতে দেখা যায়।


অবস্থানগত উদাহরণ: 

প্রধানত পৃথিবীর তিনটি অঞ্চলে ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত লক্ষ করা যায়। যথা-


(1) নিরক্ষরেখার উভয়পাশে উত্তর-পূর্ব আয়নবায়ু ও। দক্ষিণ-পূর্ব আয়নবায়ুর মিলনস্থলে অবস্থিত নিরক্ষীয়। শান্তবলয়ে (Inter Tropical Convergence Zone বা ITCZ) এই প্রকার বৃষ্টিপাত ঘটে।


(ii) ভারত সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মৌসুমি বায়ুর প্রভাবাধীন দেশগুলোতে শীতকালের পূর্বে (শরৎ ও হেমন্তকালে) এ জাতীয় বৃষ্টিপাত হতে দেখা যায়।


(iii) মধ্য ইউরোপের দেশগুলোতে শীতকালে মাঝে মাঝেই এরূপ বৃষ্টিপাত হয়। সব মাধাই হত্যাকাণ


Middle post ad 01