ভন থুনেন-এর জমির ব্যবহার মডেলের পরিবর্তিত অবস্থা (Modified State)
ভন খুনেন যে শহর বা বাজারকেন্দ্রিক কৃষিজমি ব্যবহারের মডেলটি (Agricultural land use model) প্রশ্ন করেছেন, তার আকৃতিগত কিছু পরিবর্তন হওয়া সম্ভব। সংশ্লিষ্ট চিত্রে এই পরিবর্তিত আকৃতি কেমন হতে পারে তার এশ্নী আনুমানিক অবস্থা তুলে ধরা হল।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, শহর-সংলগ্ন যদি কোনো রাস্তা ও নৌ-পরিবহনযোগ্য নদী থাকে তাহলে ওই রাজ ও নদী মারফত খুব সহজেই কম খরচে শহরে দুধ, শাকসবজি, জ্বালানি কাঠ, খাদ্যশস্য ইত্যাদি পাঠানো যায়। সেক্ষেত্রে 1নং, ২নং, ১নং ও এনং বলয়গুলি বৃত্তাকার না হয়ে, রাস্তা ও নদীর সমান্তরালে লম্বাটে ধরনের আকার নিতে পারে
এ ছাড়া, যে কেন্দ্রীয় শহরটিকে ঘিরে নানাধরনের বৃত্তাকার বলয়গুলি গড়ে উঠতে পারে বলে ভন থুনেন মনে করেছেন। তবে কাছাকাছি আর কোনো ছোটো শহর থাকলে ওই ছোটো শহরটির জন্য একটি আলাদা ধরনের বাণিজ্য এলাকা বা জোগান ক্ষেত্র (supply area) গড়ে উঠবে
ভারত ও বর্তমান কালে ভন থুনেন-এর মডেলের প্রাসঙ্গিকতা ও মূল্যায়ন(Relevance and Evaluation of Von Thunen's model with reference to India and Modern Times)
প্রাসঙ্গিকতা:
অর্থনৈতিক কাজকর্মের গতিশীলতা ও বৈচিত্র্য সত্ত্বেও, বর্তমান যুগে ভন থুনেনের তত্ত্বের আলোচনা প্রাসঙ্গিক। কারণ,
(1) দূরত্ব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবহন খরচও যে সাধারণত বাড়ে, Line-haul Cost-এর এই ধারণা এখনও সমানভাবে চালু রয়েছে।
(2) পচনশীল বস্তু বা পণ্যের উৎপাদন বাজারের কাছাকাছি করতে হবে, এই তত্ত্বটি এখনও বিশেষত, উন্নয়নশীল দেশগুলির কারিগরি স্তরের সাপেক্ষে, গ্রহণযোগ্য।
(3) বাজার অঞ্চলে অর্থনীতিক খাজনা (economic rent) ও অবস্থানগত খাজনা (locational rent) বেশি হওয়ার থুনেনীয় তত্ত্ব এখনও প্রাসঙ্গিক।
(4) যদিও বর্তমান যুগে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত মানুষ জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করে না এবং সেজন্য শহরের কাছাকাছি জ্বালানি কাঠ সরবরাহকারী বলয়ের প্রয়োজন নেই, তবুও আধুনিক শহরে জনবসতিকে ঘিরে উদ্ভিজ্জের বলয় গড়ে তোলা হচ্ছে। উদ্দেশ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ।
(5) Ronald Horvath (1969), Piers Blaikie (1971) প্রমুখ গবেষকবৃন্দ দেখিয়েছেন যে ইথিয়োপিয়ার আদ্দিস আবাবা শহরকে কেন্দ্র করে প্রায় বৃত্তাকার কৃষিজাত পণ্যের উৎপাদন বলয় আছে। উত্তর ভারতেও ছোট ছোট শহরের চারপাশে এ ধরনের বলয় লক্ষ করা যায়।
মূল্যায়ন:
(1) ভন খুনেন প্রস্তাবিত জমির ব্যবহারিক বৈশিষ্ট্যগুলি আধুনিক যুগেও লক্ষ করা যায়। তবে ভূপ্রাকৃতিক বৈষম্য, নদ-নদী, পাহাড়-পর্বতের অবস্থান, দেশের বা অঞ্চলের পরিবর্তনশীল সীমারেখা, খনিজ পদার্থের আবিষ্কার ও খনিশিল্পের প্রবর্তন, সরকারি নীতির পরিবর্তন ইত্যাদি কারণে ভন থুনেন প্রস্তাবিত জমির ব্যবহারভিত্তিক-পূর্ণ বলয়গুলির গঠন সব সময় সম্ভব হয় না। ফলে তার পরিবর্তে আঞ্চলিক ভৌগোলিক পরিবেশের ওপর নির্ভর করে নানান জ্যামিতিক আকৃতির অঞ্চল গড়ে ওঠার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
(2) প্রযুক্তিবিদ্যার উন্নতির সাথে সাথে এখন বহু দূর থেকেও রেফ্রিজারেটর লাগানো গাড়ি করে কম খরচে দুধ, শাকসবজি ইত্যাদি পচনশীল সামগ্রী বাজারে চালান দেওয়া যায়। ফলে শহরের কাছেই যে দুধ ও শাকসবজি উৎপাদনের বলয় গড়ে তুলতে হবে তার কোনো মানে নেই।
3) ঘর-গৃহস্থালির কাজে শহরাঞ্চলে এখন আর জ্বালানি কাঠের ব্যবহার নেই। সুতরাং, জ্বালানি কাঠ জোগান ( দেওয়ার জন্য কোনো 'মেকলেনবার্গ এস্টেট' বা উদ্ভিদ বলয়-এর আর প্রয়োজন নেই।
(4) অর্থনৈতিক খাজনা (economic rent) এবং কৃষির প্রগাঢ়তা (farming intensity) পরিমাপ করা কষ্টসাধ্য।
(5) ভন থুনেন বাজারের যে জাতীয় isolated state কল্পনা করেছেন বর্তমান বিশ্বে বিশেষত বিশ্বায়ন বা globalization-এর যুগে তেমন নিঃসঙ্গ বাজার খুঁজে পাওয়া কঠিন।