ঘনিভবনের শর্তসমূহ (Favourable conditions for Condensation) :
ঘনীভবন প্রক্রিয়াটি প্রধানত কয়েকটি বিশেষ আবহাওয়াগত অবস্থার ওপর নির্ভর করে। যথা-
1. বায়ুর উন্নতা (Temperature of Air):
বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ স্থির রেখে উষ্ণতা বৃদ্ধি করলে আপেক্ষিক আর্দ্রতা কমে আসে এবং বায়ুতে জলীয় বাষ্প ধারণক্ষমতা বেড়ে যায়। তাই কখনোই বায়ু সম্পৃক্ত অবস্থায় আসতে পারে না। অন্যদিকে উন্নতা কমলে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বাড়ে এবং একসময় বায়ু সম্পৃক্ত হয়। ফলে ঘনীভবন প্রক্রিয়া শুরু হয়।
2. আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ (Relative humidity of air):
বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা 100 শতাংশে পৌঁছালে তবেই বায়ু সম্পৃক্ত হয়ে। বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা 100 শতাংশে পৌছালেই বায়ু শিশিরাঙ্ক উন্নতায় পৌছে যায়। তাই যে-কোনো উন্নতাতেই ঘনীভবন প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।
3. পরিবেশগত তাপবিযুক্তি হার (Environmental lapse rate):
একখণ্ড বায়ু অধিকাংশ ক্ষেত্রে অ্যাডিয়াবেটিক পদ্ধতিতেই শীতল ও ঘনীভূত হয়। আবার, বায়ুর অ্যাডিয়াবেটিক পদ্ধতিতে শীতলীভবনের হারও স্থির। বায়ু তার ধর্ম অনুযায়ী আশেপাশের বায়ুর সমান উন্নতায় আসার চেষ্টা করে। বায়ুর মধ্যে উন্নতার পার্থক্য তৈরি হলে বায়ু অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে এবং ওপরের দিকে উঠে আয়তনে প্রসারিত হয়ে শুষ্ক অ্যাডিয়াবেটিক পদ্ধতিতে শীতল হওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু পরিবেশগত তাপবিযুক্তির হার শুষ্ক অ্যাডিয়াবেটিকের তুলনায় বেশি থাকলে বায়ু দ্রুত শিশিরাঙ্ক তাপমাত্রায় চলে আসে এবং ঘনীভবন প্রক্রিয়া শুরু করে দেয়।
4. বায়ুমণ্ডলের শীতলীভবনের হার (Rate of Cooling):
উয়তা কমলে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায়। তাই শীতলীভবনের হারের ওপর ঘনীভবন প্রক্রিয়া নির্ভর করে। ভূপৃষ্ঠ দ্রুত তাপবিকিরণ করে শীতল হয়ে পড়লে সংলগ্ন বায়ুর উয়তা হ্রাস পায় কিংবা শীতল ভূপৃষ্ঠের ওপর দিয়ে উদ্বু ও আর্দ্র বায়ু প্রবাহিত হলে সংস্পর্শজনিত কারণে বায়ু দ্রুত শীতল হয়ে ঘনীভবন প্রক্রিয়া করে দেয়।
5. জলাকর্ষী কেন্দ্রাণুর উপস্থিতি (Presence of Hygroscopic nuclei):
বায়ুতে আপেক্ষিক আর্দ্রতা যতই থাকুক না কেন বায়ুতে পর্যাপ্ত জলাকর্ষী কণার উপস্থিতি না থাকলে ঘনীভবন প্রক্রিয়া শুরু হয় না। জলাকর্ষী কণার অনুপস্থিতিতে বাতাস 400 শতাংশ আপেক্ষিক আর্দ্রতায় পৌঁছালে তবেই ঘনীভবন প্রক্রিয়া শুরু হয়। বায়ুতে ভাসমান সামুদ্রিক লবণকণা, সালফার কণা ইত্যাদি এই জলাকর্ষী কণার উৎস। এগুলির গড় ব্যাস 0-1 µm-এর কম।
6. বায়ুতে আর্দ্রতার জোগান (Supply of moisture):
বায়ুতে আর্দ্রতার পরিমাণ বৃদ্ধি ঘনীভবন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। আর্দ্রতার উৎসস্থল হল জলভাগ। তাই শুষ্ক বায়ু জলভাগের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলে জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে দ্রুত আর্দ্র হয়ে ওঠে। এই কারণে জলভাগ থেকে আসা বায়ু অধিক আর্দ্র হওয়ায় বৃষ্টিপাত ঘটায়। অন্যদিকে স্থলভাগ থেকে আসা বায়ু জলীয় বাষ্পের অভাবে শুষ্ক প্রকৃতির হয়। তাই বৃষ্টিপাত ঘটানোর তেমন কোনো ক্ষমতা থাকে না।