welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

প্লবনশীলতা বা অস্থিতিশীলতার শ্রেণিবিভাজন (Classification of Instability)

প্লবনশীলতা বা অস্থিতিশীলতার শ্রেণিবিভাজন (Classification of Instability) :


বায়ুপুঞ্জের উন্নতা হ্রাস ও ঊর্ধ্বমুখী সঞ্চলনের প্রকৃতি অনুযায়ী বায়ুপুঞ্জের অস্থিতিশীলতাকে 4টি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

(i) সাধারণ প্লবনশীলতা বা চরম অস্থিতিশীলতা (General or Absolute Instability).

(ii) শর্তাধীন প্রবনশীলতা বা অস্থিতিশীলতা (Conditional Instability),

(iii) যান্ত্রিক প্রবনশীলতা বা অস্থিতিশীলতা (Mechanical Instability),

(iv) পরিচলনজাত প্রবনশীলতা বা অস্থিতিশীলতা (Convective Instability)


 সাধারণ প্লবনশীলতা বা চরম অস্থিতিশীলতা (General or Absolute Instability):

পরিবেশগত তাপবিযুক্তির হার বুদ্ধতাপীয় হ্রাসহার অপেক্ষা অনেক বেশি হলে বায়ুস্তূপটি আশপাশের বায়ু অপেক্ষা অধিক মাত্রায় উদ্বু ও হালকা হয়ে পড়ে। ফলে বায়ুপুঞ্জ বা বায়ুর স্তূপটি ঊর্ধ্বমুখী হয়।

 বায়ুপুঞ্জের এরূপ অবস্থাকে চরম অস্থিতিশীলতা বলে। বায়ুপুঞ্জের গভীরতা বেশি হলে বায়ুপুঞ্জের অস্থিতিশীলতা বাড়ে। কারণ একখণ্ড উয়বায়ু বুদ্ধতাপীয় বিযুক্তির হার অনুসরণ করে বায়ুর তাপমাত্রা হ্রাসের বেশি সুযোগ পায়। তাই বায়ুপুঞ্জটি ভূপৃষ্ঠ থেকেঅনেক উঁচু পর্যন্ত উঠতে পারে। বায়ুমণ্ডলের গভীরতা বেশি থাকায় চরম অস্থিতিশীলতার মাত্রাও বেশি হয়। একে অতি-বৃদ্ধতাপীয় বিযুক্তি (Super adiabatic lapse) বলে।

সমুদ্রের ওপর পরিবেশগত তাপীয় বিযুক্তির হার ও রুদ্ধতাপীয় উয়তা হ্রাসের হারের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য থাকে না। তাই একে স্বয়ং পরিচলনজাত উদ্বুত। হ্রাসের হার (Auto-Convective lapse rate) বলে।

 তবে চরম অস্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে পরিবেশগত উদ্বৃতা হ্রাসের হার (Environmental lapse rate বা ELR) সকল সময়ই সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত রুদ্ধতাপীয় উয়তা হ্রাসের হার (DALR and SALR) অপেক্ষা বেশি হবে। এক্ষেত্রে-

চরম অস্থিতিশীলতা (Absolute Instability) = ELR > DALR and SALR

সকল প্রকার প্লবনশীলতা বা অস্থিতিশীলতার মধ্যে এই ধরনের অস্থিতিশীলতাই সাধারণত দেখা যায় বলে এই ধরনের অস্থিতিশীলতাকে সাধারণ অস্থিতিশীলতাও (General Instability) বলে।

চিত্র (12.5) অনুযায়ী, পরিবেশগত তাপবিযুক্তি হার প্রতি কিমি উচ্চতায়-12° সেঃ এবং শুষ্ক-রুদ্ধ তাপীয়বিযুক্তি হার প্রতি কিমিতে -10° সেঃ ও আর্দ্র-বুদ্ধ তাপীয়বিযুক্তি হার প্রতি কিমিতে -5° সেঃ। ঘনীভবন তলটি ভূপৃষ্ঠ থেকে 1 কিমি উঁচুতে অবস্থিত। এই অবস্থায় বায়ুমণ্ডলে ভূপৃষ্ঠীয় তাপমাত্রা 26° সেঃ। ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি বায়ুস্তুপের (Pocket of air percel) উন্নতা 27° সেঃ। তাপমাত্রার পার্থক্য থাকার জন্য বায়ুস্তূপটি উর্ধ্বমুখী হবে এবং শুষ্ক বৃদ্ধ তাপীয়বিযুক্তি প্রক্রিয়া অনুযায়ী -10° সেঃ হারে তাপমাত্রার হ্রাস ঘটবে।

এই অবস্থায় বায়ুস্তূপটি ঘনীভবন তলে এসে পৌঁছোলে তার তাপমাত্রা হয়ে দাঁড়ায় 17° সেঃ। কিন্তু পরিবেশের তাপমাত্রা ঘনীভবন তলে-12° সেঃ করে কমে এসে দাঁড়ায় 14° সেঃ। এর ফলে ঊর্ধ্বমুখী বায়ুস্তূপটিতে 100% আপেক্ষিক আর্দ্রতা থাকায় জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে জলকণায় পরিণত হবে এবং মেঘ সৃষ্টির প্রক্রিয়া শুরু হবে।


ঘনীভবনের সময় ঘনীভবনের লীনতাপ ত্যাগ করার জন্য বায়ুস্তূপটি আরও উত্তপ্ত হয়ে অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে। উপরন্তু পরিবেশগত তাপমাত্রার তুলনায় বায়ুস্তূপটির তাপমাত্রা অধিক হওয়ায় তখনও বায়ুস্তূপটি স্থিতিশীলতা লাভ করে না। ফলে আরও ঊর্ধ্বমুখী হয়। এই পর্যায়ে বায়ুস্তূপটি আর্দ্র-বৃদ্ধতাপীয়বিযুক্তি প্রক্রিয়ায় তাপমাত্রার হ্রাস ঘটায়। এই প্রক্রিয়া অনবরত চলতে থাকায় বায়ুস্তূপটি কখনোই স্থিতিশীলতা লাভ করতে পারে না। ফলে বায়স্তূপটি চরম অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।


2. শর্তাধীন প্লবনশীলতা বা অস্থিতিশীলতা (Conditional Instability):


বায়ুপ্রবাহের ফলে অধিক আর্দ্রতাযুক্ত স্থিতিশীল বায়ু উঁচু পাহাড় বা পর্বতের অথবা শীতল বায়ুপুঞ্জের গা বেয়ে ওপরে উঠতে থাকলে, তা শুষ্ক-বুদ্ধতাপীয় হ্রাসের নীতি অনুযায়ী সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। সম্পৃক্ত বায়ু ঘনীভবন তলের ওপর অবস্থান করলে সেই বায়ু রুদ্ধতাপীয় হ্রাসের হারে তাপ হারিয়ে অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। ঘনীভবন তলের ওপরে উত্থিত বায়ু পার্শ্ববর্তী বায়ুমণ্ডলের বায়ু অপেক্ষা অধিক উত্তপ্ত হওয়ায় বায়ুস্তম্ভটি ওপরের দিকে উঠতে থাকে।


শর্তাধীন অস্থিতিশীলতার শর্তসমূহ (Favourable Conditions of Conditional Instability):


(1) অধিক আর্দ্রতাযুক্ত বায়ুস্তূপের উপস্থিতি।


(ii) বায়ুপ্রবাহের মতো প্রযুক্ত বলের উপস্থিতি।


(iii) উঁচু পাহাড় বা পর্বত বা শীতল বায়ুপুঞ্জের কীলকের উপস্থিতি।

(iv) পরিবেশগত উয়তা হ্রাসের হার আর্দ্র-বুদ্ধতাপীয় হ্রাসের হার অপেক্ষা বেশি ও শুষ্ক-রুদ্ধ তাপীয় হ্রাসের হার অপেক্ষা কম হতে হবে। অর্থাৎ-


DALR > ELR > SALR


এসব শর্তের উপস্থিতির জন্যই ঘনীভবন তলের নীচের স্থিতিশীল বায়ুস্তম্ভ ঘনীভবন তলের ওপরে উঠে বায়ুর প্লবনশীলতা বা অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করে।


বৈশিষ্ট্য (Characteristics):


(i) প্রাথমিক অবস্থায় বায়ুর স্তূপটি স্থিতিশীল অবস্থায় থাকে।


(ii) আর্দ্র বায়ুর স্তূপটি বায়ুপ্রবাহের ফলে পাহাড়ের বা শীতল বায়ুপুঞ্জের কীলকের গা বেয়ে প্রবাহিত হওয়ার ফলে তাপ হারিয়ে ঘনীভূত হতে শুরু করে।


(iii) ঘনীভবনের ফলে পরিত্যক্ত লীন তাপের কারণে বায়ুর শীতলীভবনের মাত্রা কমে এবং এই বায়ুস্তম্ভটির উয়তা পরিবেশের তাপমাত্রা অপেক্ষা বেশি থাকায় এই বায়ু ঊর্ধ্বমুখী হয়।

 1200 মিটার উচ্চতা পর্যন্ত স্থিতিশীল বায়ু শুষ্ক-রুদ্ধ তাপীয় হ্রাস হার অনুসরণ করে শীতল হয়েছে। ঘনীভবন তলের ঊর্ধ্বে বায়ুতে আর্দ্র-রুদ্ধতাপীয় বিযুক্তির হার অনুসৃত হওয়ায় লীনতাপ যুক্ত হয়েছে। ফলে 1750 মিটার উচ্চতার ঊর্ধ্বে পরিবেশগত উয়তা হ্রাসের হার অপেক্ষা আর্দ্র-বুদ্ধ তাপীয় হ্রাসের হার কম হওয়ায় ঊর্ধ্বমুখী বায়ুর পরিচলন স্রোত শক্তিশালী হয়।


3. যান্ত্রিক প্লবনশীলতা বা অস্থিতিশীলতা (Mechanical Instability):


বায়ুমণ্ডলে কখনো কখনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতির আবির্ভাব ঘটে যখন পরিবেশগত উয়তা হ্রাসের হার অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায়, প্রায়-35° সেঃ প্রতি কিলোমিটারে। এরূপ পরিস্থিতিতে ওপরের বায়ুর স্তরটির ঘনত্ব নীচের বায়ুস্তরগুলি অপেক্ষা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। অন্য কোনোরূপ শক্তির জোগান ছাড়াই অধিক ঘনত্বযুক্ত বায়ুর হঠাৎ স্থানান্তর ঘটে এবং দ্রুতগতিতে বায়ু চলাচল শুরু হয়। বায়ুর এই ধরনের অস্থিতিশীলতাকে বা চঞ্চলতাকে যান্ত্রিক প্লবনশীলতা বা অস্থিতিশীলতা বলে। এমত অবস্থায়, স্বল্প পরিসরে বিস্তৃত অতি বিধ্বংসী টর্নেডোর মতো ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়।


বৈশিষ্ট্য (Characteristics):


(i) পরিবেশগত তাপ হ্রাসের হার অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায় (-35° সেঃ/কিমি)।

(ii) ঊর্ধ্বস্তরের বায়ুর ঘনত্ব অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়।

(iii) স্বল্প পরিসরে বিস্তৃত টর্নেডোর মতো বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়।


4. পরিচলনজাত প্লবনশীলতা বা অস্থিতিশীলতা (Convective Instability):


একটি ঊর্ধ্বমুখী গভীর বায়ুস্তরের নীচের অংশ অধিক আর্দ্র ও ওপরের অংশ শুষ্ক হলে, এর নীচের স্তরটি সামান্য ওপরে উঠলেই সম্পূর্ণরূপে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। সম্পৃক্ত বায়ু ঘনীভবন তলের ঊর্ধ্বে অবস্থান করলে, তা আর্দ্র- বুদ্ধতাপীয় হ্রাস হারে শীতল হতে শুরু করে কিন্তু গভীর বায়ুস্তরে ওপরের অংশ অসম্পৃক্ত অবস্থায় থাকায় বায়ুর শুষ্ক-বুদ্ধ তাপীয় বিযুক্তি হার অনুসরণ করে ধীরে ধীরে শীতল হয়। ফলে গভীর বায়ুস্তরের ওপরের ও নীচের অংশের মধ্যে উন্নতার পার্থক্য এত বেড়ে যায় যে এই স্তরে পরিবেশগত উয়তা হ্রাসের হার শুষ্ক রূদ্ধ তাপীয় বিযুক্তির হারকে অতিক্রম করে। ফলে ওপরের শীতল ভারী বাতাস দ্রুতগতিতে নীচের দিকে নেমে আসে। অন্যদিকে তুলনামূলকভাবে তলদেশের উয় ও হালকা বাতাস অস্থিতিশীল হয়ে ওপরের দিকে উঠতে থাকে। এভাবে গভীর বায়ুস্তরটির মধ্যে পরিচলন প্রক্রিয়া চলতে থাকে। বায়ুর এরূপ প্লবনশীলতা বা অস্থিতিশীলতাকে পরিচলনজাত প্লবনশীলতা বা অস্থিতিশীলতা বলে । এরূপ পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গে কালবৈশাখীর মতো বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের আবির্ভাব ঘটে।

বৈশিষ্ট্য (Characteristics):

(i) ঊর্ধ্বমুখী বায়ুস্তরের গভীরতা অধিক।

(ii) বায়ুস্তরের নীচের অংশের আপেক্ষিক আর্দ্রতা অধিক কিন্তু এর ওপরের অংশের আপেক্ষিক আর্দ্রতা খুবই কম।

(iii) বায়ুস্তরের ওপর ও নীচের স্তরের প্রকৃতিগত পার্থক্যের জন্য উয়তার পার্থক্য হয় সর্বাধিক।

(iv) ওপরের শীতল ও ভারী বাতাসের নীচের দিকে সঞ্চলন এবং হালকা ও উয় বাতাসের ঊর্ধ্বমুখী সঞ্চলনের মধ্য দিয়ে বায়ুপুঞ্জ প্লবনশীল বা অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে।


(v) এরূপ অস্থিতিশীলতার কারণে কালবৈশাখীর মতো বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের আবির্ভাব ঘটে।

Middle post ad 01