welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

ভন খুনেন (ফন থুনেন)-এর কৃষি অবস্থান তত্ত্ব (Agricultural Location Theory of Von Thünen)

ভন খুনেন (ফন থুনেন)-এর কৃষি অবস্থান তত্ত্ব (Agricultural Location Theory of Von Thünen)


কৃষিজমির ব্যবহার সম্বন্ধে উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে যে-সমস্ত তত্ত্বগুলি তাদের বিশ্লেষণী আঙ্গিকের জন্য প্রসিদ্ধ হয়েছে, সেগুলির মধ্যে প্রাশিয়ার জোহান হাইনরিখ ভন থুনেন (Johann Heinrich von Thünen, 1826)-এর সমকেন্দ্রিক বাজারভিত্তিক কৃষিজমির ব্যবহার তত্ত্ব বা Concentric Market Based Agricultural Land Use Theory অন্যতম (von Thünen জার্মান ভাষায় প্রকৃত উচ্চারণ: ফন থুনেন।)। 

তাঁর রচিত "Der isolierte Staat in Beziehung auf Landwirtschaft und Nationalokonomic." গ্রন্থটির প্রথম খণ্ড 1826, দ্বিতীয় খণ্ডের প্রথম ভাগ 1850, দ্বিতীয় খণ্ডের শেষ অংশ এবং তৃতীয় খণ্ড 1863 সালে প্রকাশিত হয়। তিনি তাত্ত্বিক অর্থনীতিবিদ ছিলেন। 

কৃষি-সংক্রান্ত অর্থনীতির গবেষণার জন্য তিনি মেকলেনবার্গ (Mecklenburg)-এ অবস্থিত তাঁর কৃষি-খামারটিকে বেছে নিয়েছিলেন। কৃষি-সংক্রান্ত বিষয়ে তাঁর অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি কৃষি-জমির ব্যবহার বা চাহিদার কেন্দ্র থেকে দূরত্বের সাপেক্ষে বিভিন্ন ধরনের কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থার অবস্থান সম্পর্কে একটি তাত্ত্বিক প্রতিকল্প গঠন করেন। এ ছাড়া, জমির খাজনা ও সম্পদের প্রান্তিক উৎপাদনশীলতার তত্ত্বের ক্ষেত্রেও ফন থুনেন অসামান্য অবদান রেখেছেন।


উদ্দেশ্য (Objectives)


আলোচ্য তত্ত্ব বা মডেলের উদ্দেশ্য হল বাজার (market) থেকে দূরত্ব বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কৃষিজমির ব্যবহার কেন এবং কিভাবে বদলে যায়, সে সম্পর্কে আলোকপাত করা। এ ব্যাপারে ভন থুনেন দুটি মডেল (model) প্রস্তাব করেছেন।

■ মডেল-1 (Model-1): 

কোন একটি নির্দিষ্ট শস্যের উৎপাদন মাত্রা (intensity of production) বাজার থেকে দূরত্ব বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে।


■ মডেল-2 (Model-2): 

বাজার থেকে দূরত্ব যত বাড়ে জমির ব্যবহারের ধরন বদলে যায়।


গুরুত্ব (Significance)

ভন থুনেন-এর তত্ত্বটির গুরুত্ব হল-

(1) এই তত্ত্বের সাহায্যে বিভিন্ন কৃষিজাত পণ্যের ভৌগোলিক বণ্টন ব্যাখ্যা করা যায়।

(2) এই তত্ত্বটি বিভিন্ন কৃষিজাত পণ্যের দামের পার্থক্য ও এই পার্থক্য কিভাবে কৃষিজমির ব্যবহারিক ধরনকে প্রভাবিত করে, তা বুঝতে সাহায্য করে।

(3) এই তত্ত্বের সাহায্যে জমির খাজনার হার ও কৃষিজমির ব্যবহারের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা যায়।

শর্ত বা ধারণা (Premise or Assumption)


ভন থুনেন তাঁর দুটি মডেলের ভিত্তি হিসেবে নিম্নলিখিত শর্ত বা অনুমানগুলির সাহায্য নিয়েছেন। 

এই শর্ত বা ধারণাগুলি হল-

(1) ধরা যাক, একটি কৃষি অঞ্চলের কেন্দ্রে পারিপার্শ্বিক এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন একটি একক বাজার আছে। ভন থুনেন আলোচ্য বাজারের এই সম্পর্কহীন, একক, নিঃসঙ্গ অবস্থানকে জার্মান ভাষায় বলেছেন isolierte staat (আইসোলিয়ারটে স্ট্যাট)।

(2) বাজার বা শহরটিকে ঘিরে-থাকা গ্রামীণ কৃষিক্ষেত্রের উদ্বৃত্ত শস্য শুধুমাত্র ওই শহরটিতেই বিক্রি করা হয়। অর্থাৎ শহরটি হল কৃষিজাত পণ্যের বাজার। এই বাজারে কোনো একটি নির্দিষ্ট পণ্যের জন্য সমস্ত কৃষক সমান দাম পেয়ে থাকে।

(3) ওই কেন্দ্রীয় বাজারটিতে অন্য কোনো জায়গা থেকে খাদ্যশস্য বা অন্য কৃষিজাত পণ্য বিক্রির জন্য আসে না।

(4) বাজারের চারপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূল প্রকৃতির। ভূপ্রকৃতি সমতল ও মাটির ভৌত-রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য সর্বত্র সমান। এই পরিবেশে নাতিশীতোষ্ণ কৃষির উপযুক্ত বিভিন্ন শস্য চাষ করা যায় ও পশুপালন করা যায়।

(5) বাজার সংলগ্ন গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী কৃষকেরা উদ্যমী ও লাভ বাড়ানোর জন্য সদা সচেষ্ট। উৎপাদিত পণ্যের চাহিদার তারতম্য অনুসারে চাষিরা তাদের শস্য উৎপাদনের ধরন পরিবর্তন করতে সক্ষম। কৃষকদের এই সদর্থক ভূমিকার জন্য তাদের বলা হয় অর্থবিজ্ঞানের কল্পিত মানব বা ইকনমিক মেন (economic men)।

(6) বাজার ও গ্রামের মধ্যে পরিবহনের জন্য শুধুমাত্র ঘোড়ায় টানা গাড়িতে সড়ক পথে যাতায়াতের সুযোগ আছে।

(7) বাজারে ফসল বিক্রি করার জন্য পরিবহন খরচ চাষিরাই বহন করে। পরিবহন ব্যয়ের সঙ্গে দুরত্বের সম্পর্ক আনুপাতিক এবং পরিবহন ব্যয় যে-কোনো দিকে এবং যে-কোনো পথেই সমান।

(৪) শ্রমিকের মজুরি ও দক্ষতা সমান। ফলে মজুরি বৃদ্ধির জন্য কৃষি শ্রমিকদের বা কৃষকদের মধ্যে অসম প্রতিযোগিতা নেই।

নীতি (Principles)

ভন থুনেনের তত্ত্বটি তিনটি মূল নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। যথা-


(1) অর্থনৈতিক খাজনা বা ইকনমিক রেন্ট (Economic Rent)-এর নীতি।

(2) দূরত্ব এবং বাজারে বিক্রয়যোগ্য কোনো নির্দিষ্ট পণ্যের দামের মধ্যে সম্পর্কের নীতি।

(3) দূরত্ব এবং কৃষিকাজের প্রগাঢ়তার (intensity) মধ্যে সম্পর্ক সংক্রান্ত নীতি।

 ইকনমিক রেন্ট (Economic Rent): 

বাংলা পরিভাষায় ইকনমিক রেন্ট বলতে খাজনাকে বোঝায়। সংজ্ঞা। উৎপাদনের কোনো উপাদানকে তার বর্তমান কাজে নিযুক্ত রাখার জন্য যে পরিমাণ অর্থ দেওয়ার প্রয়োজন, তার তুলনা বেশি অর্থ দিলে যে বাড়তি প্রাপ্তি হয় তাকে ইকনমিক রেন্ট বলে। 

 লোকেশনাল রেন্ট (Locational Rent): 

ইকনমিক রেন্ট-এর ধারণা জমির ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে অর্থনীতিবিদেরা লোকেশনাল রেন্ট (locational rent) বা অবস্থানগত খাজনার তত্ত্ব নির্মাণ করেছেন। সংজ্ঞা অনুসারে উৎপাদনের উপাদান হিসেবে জমিকে লাভজনকভাবে বর্তমান কাজে নিযুক্ত রাখার জন্য যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করছে বাড়তি প্রাপ্তি হয়, তাকে লোকেশনাল রেন্ট বা অবস্থানগত খাজনা বলে।


সূত্র অনুসারে, লোকেশনাল রেন্ট (LR) হল-

                         LRY (mc) - Ytd

যেখানে,

 Y = একক পরিমাণ জমিতে ফলন  

m = একক পরিমাণ উৎপাদিত পণ্যের বাজার দর

C = একক পরিমাণ উৎপাদিত পণ্যের উৎপাদন ব্যয়

t  = একক দূরত্ব প্রতি পরিবহন ব্যয়

d  = বাজার থেকে পণ্য উৎপাদনকারী জমির দূরত্ব


 দূরত্ব ও কোনো পণ্যের দাম ও ওই পণ্যের লোকেশনাল রেন্ট-এর মধ্যে সম্পর্ক (Distance, Cost and Locational Rent interrelationship): 

দূরত্ব বাড়লে পণ্যের পরিবহন ব্যয় বাড়ে। ফলে ওই পণ্যের দাম বাড়ে। আবার দূরত্ব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দাম বাড়ার জন্য পণ্যটির লোকেশনাল রেন্ট কমে। অর্থাৎ পণ্যটি অলাভজনক হতে থাকে দূরত্ব ও দামের মধ্যে এই সম্পর্কে পরিবহন ব্যয় কোনো ভাবেই কোনো প্রশাসনিক নীতি বা নিয়ন্ত্রণের অধীন নয়। প্রতিযোগিতামূলক খোলা বাজারে দূরত্ব ও পরিবহন খরচের মধ্যে প্রত্যক্ষ ধনাত্মক সম্পর্ক হল লাইন হল কস্ট (line haul cost)। ভন থুনেন লাইন হল কস্ট-এর কথাই তাঁর মডেলে বিবেচনা করেছেন। পরিবহন খরচ যখন কোনো প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের অধীন হয়, তখন অনেক ক্ষেত্রেই দূরত্ব বাড়লেও পরিবহন ব্যয় আপাতভাবে বাড়ে না। কারণ সরকার সেই বাড়তি খরচ ভরতুকির সাহায্যে পুশিয়ে দেয়।


 দূরত্ব ও কৃষি কাজের প্রগাঢ়তার মধ্যে সম্পর্ক (Relation between distance and agricultural intensity):

 বাজার থেকে দূরত্ব যত বৃদ্ধি পায়, কৃষিকাজের প্রগাঢ়তা (intensity) তত হ্রাস পায়। অর্থাৎ একই পণ্য বা শস্য উৎপাদনকারী দুটি জমি, একটি বাজারের কাছে এবং অন্যটি বাজার থেকে দূরে, এই দুই-এর মধ্যে তুলনা করলে দেখা যায় যে বাজারের নিকটবর্তী জমিটিতে কৃষিপণ্য বা শস্য উৎপাদনের নিবিড়তা দূরের জমিটির তুলনায় অনেক বেশি। 

লাভ নির্ধারণ (Determination of Profit)

বাজার বা শহরে কত দূর থেকে কোন্ মাল এলে চাষির পক্ষে কতটা লাভ করা সম্ভব হবে, তা নির্ভর করে,

 (1) বাজারে পণ্যের বিক্রয় মূল্যের উপর, 

(2) কৃষিপণ্যের উৎপাদন ব্যয়ের উপর এবং

 (3) বাজার ও কৃষি খামারের মধ্যে দূরত্ব অনুসারে পরিবহন ব্যয়ের ওপর। 

সুতরাং, সূত্র অনুসারে, চাষির লাভের পরিমাণ হল- (1)


                                  P = V - (E+ T) 


যেখানে,

P = লাভ বা প্রফিট (Profit)

V = কৃষিপণ্যের বিক্রয়মূল্য বা ভ্যালু (Value) 

E = ওই পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বা প্রোডাকশন এক্সপেনসেস (Production Expenses)

T  = পরিবহন ব্যয় অর্থাৎ ট্রান্সপোর্টেশন কস্ট (Transportation Costs)

সংশ্লিষ্ট এই সূত্র অনুসারে, কোনো চাষির উৎপাদিত জ্বালানি বা কাঠ ও খাদ্যশস্যের উৎপাদন ব্যয়, বিক্রয়মূল্য, পরিবহন ব্যয় ও লাভের মধ্যে যদি তুলনা করা যায়, তাহলে দেখা যাবে যে, বাজার থেকে যত দূরে যাওয়া যাবে অর্থাৎ শহর থেকে খামারের দূরত্ব যত বাড়বে, চাষির লাভ তত কমবে।


কোনো চাষি যদি শহরে কাঠ বা জ্বালানি বিক্রি করতে চায়, তাহলে শহর থেকে তিন কিলোমিটারের কম দূরত্বের মধ্যে তাকে ওই জ্বালানি উৎপাদন করতেই হবে। নচেৎ তার পক্ষে লোকসান হবে। আবার খাদ্যশস্য বেচে লাভ করার ক্ষেত্রে হিসাব আলাদা। এক্ষেত্রে উদাহরণ অনুসারে শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটারের কম দূরত্বের মধ্যে খামার তৈরি করে সেখান থেকে খাদ্যশস্য এনে শহরে বেচলে ওই চাষির লাভ হবে। সুতরাং, কি পণ্য উৎপাদন করা হবে; কত দূর থেকে ওই পণ্য আনা লাভজনক হবে অর্থাৎ শহর থেকে দূরে কোন্ জমিকে কোন্ কাজে ব্যবহার করা হবে, ভন থুনেনের মতে তা প্রত্যক্ষভাবে বাজার অর্থনীতির ওপর নির্ভর করে। উদাহরণ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এবং আলোচ্য মডেলের নীতি, বিশেষত লোকেশনাল রেন্ট অবস্থানগত খাজনার সাপেক্ষে লাভ নির্ধারণের বিষয়টিকে সংশ্লিষ্ট লেখচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা যেতে পারে । 

জমির ব্যবহারিক অঞ্চল (Land use Zones)


বাজারের সাপেক্ষে কোন্ শস্য কোথায় এবং কতটা জায়গা জুড়ে উৎপাদন করা হবে, তা মূলত নির্ধারিত হ বাজার থেকে দূরত্ব এবং লোকেশনাল রেস্ট (locational rent)-এর পারস্পরিক সম্পর্কের উপর। আলোচ্য সম্পর নিয়ন্ত্রণকারী উপাদানগুলি হল-

(a) চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে নির্ধারিত কোনো পণ্যের দাম;

(b) কোনো পণ্যের পচনশীলতা, পরিবহনযোগ্যতা, পরিমাণের ভিত্তিতে নির্ধারিত পরিবহন ব্যয়;

(c) একক জমি প্রতি কোনো পণ্যের ফলন হার;

(d) কোনো পণ্যের উৎপাদন ব্যয়।

বাজার থেকে দূরত্ব ও লোকেশনাল রেন্ট-এর মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তিতে বিভিন্ন শস্যের বণ্টন এবং জমির ব্যবহারির অঞ্চলের বিভিন্ন রূপ হতে পারে । এখানে কয়েকটি অবস্থা তুলে ধরা হল।

■ অবস্থা-1:

 এই অবস্থা (situation/case) অনুসারে 'ক' এবং 'খ' শস্যের উৎপাদন ব্যয় এবং ফলন হার সমান হলেও, পরিবহন খরচ এবং বাজারে দাম আলাদা। যদি 'ক' শস্যের পরিবহন ব্যয় ও বিক্রয় মূল্য 'খ'-এর তুলনায় বেশি হয়, তাহলে 'ক' শস্য বাজারের কাছে এবং 'খ' শস্য বাজার থেকে দূরে চাষ করা হবে ।

■ অবস্থা-2: 

আলোচ্য অবস্থা (situation/case) অনুসারে 'ক' ও 'খ' শস্যের উৎপাদন ও পরিবহন ব্যয় সমান, কিন্তু বাজারে দাম ও ফলন আলাদা। যদি 'ক' শস্যের ফলন বেশি ও বাজারে দাম কম হয়, তাহলে 'খ' শস্যের তুলনায় 'ক' শস্যা বাজারের কাছে উৎপাদিত হবে। কারণ এক্ষেত্রে 'ক'-এর লোকেশনাল রেন্ট, 'খ'-এর সাপেক্ষে বেশি ।

 অবস্থা-3:

 আলোচ্য অবস্থা (situation/case) অনুসারে 'ক', 'খ'ও 'গ'- এই তিন ধরনের শস্যের মধ্যে ক-এর রেন্ট বা খাজনা সবচেয়ে বেশি এবং গ-এর সবচেয়ে কম। এমতাবস্থায়, অবস্থা-1 ও অবস্থা-2-এ দেওয়া নীতি অনুসারে বাজারের সবচেয়ে কাছে 'ক'-এর চাষ, তারপরে 'খ'-এর চাষ এবং বাজার থেকে সবচেয়ে দূরে 'গ' শস্যের চাষ করা হবে ভন খুনেন দূরত্ব ও লাভের ব্যস্তানুপাতিক (inversely proportional) সম্পর্ক অনুসারে কৃষিজমিকে কয়েকটি ভাবে ব্যবহারের কথা বলেছেন। যেমন- (1) কেন্দ্রে শহর বা বাজার; (2) কেন্দ্র বা শহর জনবসতি থেকে দূরত্ব অনুসারে হরটিকালচার, দোহশিল্প (dairy) ও শাকসবজির চাষ: (3) কাঠ বা জ্বালানি উৎপাদন; (4) কৃষিপণ্য বা খাদ্যশস্য উৎপাদন ও (5) পশুচারণ।

(1) বাজার (Market): 

এটি কেন্দ্রীয় বাজার ও জনবসতিকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে 

(2) হরটিকালচার, দোহশিল্প, সবজি চাষ: 

এই বলয়টি শহর বা বাজারের সবচেয়ে কাছে অবস্থিত। এখানে প্রধানত দুধ ও শাকসবজির মতো দ্রুত পচনশীল, বা পেরিশেল (perishable) পণ্য উৎপাদন করা হয়। এই বলয়টি শহর থেকে কত দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হবে, তা নির্ভর করে, শহরবাসীরা ওই দুধ বা শাকসবজির জন্য কেমন দাম দিতে প্রস্তুত, তার উপর। এখানে উৎপাদিত পণ্যের লোকেশনাল রেন্ট সবচেয়ে বেশি ।

(3) কাঠ বা জ্বালানি উৎপাদন: 

এটি দুধ ও শাকসবজি উৎপাদক বলয়ের পরে বা পিছনে অবস্থিত। যেহেতু ফন থুনেনের সময়ে ঘর-গৃহস্থালির কাজে জ্বালানি কাঠ
ব্যবহার করার প্রচলন ছিল, তাই সেই সময়ে জ্বালানি কাঠ উৎপাদন করার জন্য শহরের কাছাকাছি বেশ কিছু জমি ব্যবহার করা হত। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ফন থুনেন জার্মানির রস্টক (Rostock) শহরকে উদাহরণ হিসেবে ধরে তাঁর এই তত্ত্বটি পেশ করেন এবং এই রস্টক শহরের জন্য জ্বালানির জোগান আসত রস্টক-সংলগ্ন মেকলেনবার্গ এস্টেট (Mecklenburg estate) থেকে। 1ম বলয়টির মতো দ্বিতীয় বলয়টির বিস্তৃতিও নির্ভর করে শহরবাসীরা জ্বালানি ও কাঠের জন্য কতটা ভালো দাম দিতে প্রস্তুত, তার ওপর। 

(4) খাদ্যশস্য উৎপাদন: 

কৃষিপণ্য বা খাদ্যশস্য উৎপাদক বলয়টি দ্বিতীয় বলয়ের পরে অবস্থিত। এই বলয়টিকে তিনটি উপবিভাগে ভাগ করা যায়। শহর থেকে দূরত্ব অনুসারে এবং উৎপাদিত শস্যের বিক্রয়মূল্যের ওপর 4 নং বলয়ের চারটি উপবিভাগের বিস্তৃতি নির্ভর করে। আলোচ্য তিনটি উপবিভাগ হল- (A) প্রথম উপবলয়ে কোনো পতিত জমি নেই। (B) দ্বিতীয় উপবলয়ে পতিত জমির গড় পরিমাণ প্রায় 14 শতাংশ এবং (C) তৃতীয় উপবলয়ে পতিত জমির পরিমাণ প্রায় 33 শতাংশ।

(5) পশুচারণ:


 এই বলয়টি শহর থেকেসবচেয়ে দূরে অবস্থিত। এখানে মূলত পশুপালন করা হয়। এছাড়া চিজ (cheese) অর্থাৎ পনির উৎপাদন করা হয়। দুগ্ধজাত এই সামগ্রীটি সহজে পচে না, তাই শহর থেকে দূরত্ব বেশি হলেও, পনির উৎপাদনের ওপর এই দূরত্বের কোনো প্রভাব
পড়ে না।



Middle post ad 01