পণ্য ও পরিসেবার মধ্যে পার্থক্য (Differences between Goods and Services)
পণ্য হল একটি দ্রব্য বা বস্তু যার ভৌতগুণ (physical characteristics) আছে, যেমন- পণ্যের ওজন, আয়তন, গন্ধ, স্পর্শযোগ্যতা (tangibility), অবস্থা (state অর্থাৎ কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় অবস্থা)।
এই ভৌতগুণ কোনো কারবারের বা শিল্পের অবস্থানের ওপর বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। যথা- ভারহ্রাসমান কাঁচামাল বা পণ্য যেমন আকরিক লোহা, কয়লা, আকরিক তামা ইত্যাদি দূরদূরান্তে বিশেষত সড়ক পথে পরিবহন করা অলাভজনক। তাই লৌহ-ইস্পাত শিল্প সাধারণত কাঁচামালের কাছাকাছি কোনো স্থানে গড়ে তোলা হয়, যেমন- কয়লার উৎসের কাছে অবস্থিত দুর্গাপুরের লৌহ-ইস্পাত কারখানা।
বিপরীতভাবে,
পরিসেবার কোনো ভৌতগুণ নেই। পরিসেবা হল অস্পর্শনযোগ্য।
পণ্য প্রকৃতির দান বা মনুষ্যসৃষ্ট বস্তু। যেমন- খনিজ তেল ও কেরোসিন, ডিজেল।
অন্যদিকে
পরিসেবা হল মানুষের জন্য মানুষের তৈরি পণ্য বা ব্যবস্থাপনা, যেমন ইনটারনেট পরিসেবা।
পণ্যের নির্দিষ্ট উৎস (source) আছে। এই উৎস প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট। যেমন- ভারতে সোনার খনির অবস্থান হল কর্ণাটকের কোলার (Kolar) ও হাট্টি (Hatti)। কিন্তু সোনার অলংকারের প্রাপ্তিস্থান যে-কোনো বড়ো-মাঝারি ছোটো শহর।
পক্ষান্তরে
পরিসেবার কোনো নির্দিষ্ট উৎস স্থান নেই। যেমন- যেখানে দরকার সেখানে নার্সিং হোম, প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি, কল সেন্টার ইত্যাদি গড়ে তোলা যায়। স্বাভাবিকভাবেই পরিসেবার উৎস হল বাজার (market)।
প্রাকৃতিক উপায়ে পণ্য সৃষ্টির জন্য উপভোক্তার সঙ্গে যোগাযোগ দরকার হয় না। যেমন পৃথিবীতে কয়লা সৃষ্টির সময় কোনো মানুষের অস্তিত্ব ছিল না। কিন্তু মোটরগাড়ি উৎপাদনের ক্ষেত্রে উপভোক্তার পছন্দ বা চাহিদা জানার দরকার আছে।
পরিসেবা প্রদানের জন্য মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ, প্রয়োজনে মুখোমুখি যোগাযোগ করা একান্ত প্রয়োজন। যেমন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিমার পলিসি বিক্রির জন্য বিমা কোম্পানি এজেন্ট নিয়োগ করে। আবার কোনো কোম্পানি, তার পছন্দমতো সফ্টওয়্যার তৈরি করার জন্য সফ্টওয়্যার প্রস্তুতকারী সংস্থার সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলে।
পণ্য হস্তান্তরযোগ্য (transferable)। হস্তান্তরিত হলে পণ্যের মালিকানা বদলে যায়।
কিন্তু
পরিসেবা দিলে পরিসেবার মালিকানার বদল ঘটে না। কারণ পরিসেবা শুধুই ব্যবহারযোগ্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়।
যে-কোনো সিনেমা হলে সিনেমা দেখার টিকিট কাটা হলে টিকিটের সঙ্গে সিনেমা হলের মালিকানা কেনা হয় না। শুধু ওই টিকিটের বিনিময়ে সিনেমা দেখিয়ে হল মালিক যে পরিসেবা দেয়, সেই সেবা (service) গ্রহণ করা যায়।
পণ্য ফেরতযোগ্য (returnable)। কোনো ত্রুটি বা অপছন্দের কারণে পণ্যকে ফিরিয়ে দেওয়া যায়।
পক্ষান্তরে
পরিসেবা গ্রহণ করা হলে তাকে ফেরত করা যায় না।
পণ্যকে প্রয়োজনমতো ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে গুদামজাত করা যায়। যেমন- চাল, গম, চিনি।
কিন্তু
পরিসেবাকে গুদামজাত করা সম্ভব নয়।
পণ্য উৎপাদন ও পণ্যের ভোগের (consumption) মধ্যে সময়ের পার্থক্য (time lag) আছে। অর্থাৎ কোনো দ্রব্যের উৎপাদন ও সেই দ্রব্যের উপভোগ একসঙ্গে চলতে পারে না।
পরিসেবার ক্ষেত্রে পরিসেবা দেওয়া ও পরিসেবা নেওয়া একসঙ্গে (simultaneous) চলে।
একই জাতের পণ্য যার কাছ থেকেই কেনা হোকনা কেন, ওই পণ্যের ভৌত বৈশিষ্ট্য একই থাকে।
কিন্তু
একই শ্রেণির পরিসেবা, পরিসেবাদায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায়। যেমন ডাক্তারের চিকিৎসা প্রণালী, উকিলের পরামর্শ দেওয়ার দক্ষতা, মোবাইল-ইনটারনেট ইত্যাদি পরিসেবার ব্যবস্থা সব সময় একে অন্যের থেকে আলাদা হয়। প্রসঙ্গত, BSNL, ভোডাফোন, এয়ারটেল ও রিলায়েন্স কোম্পানির মোবাইল-ইনটারনেট পরিসেবা ব্যবস্থার পার্থক্য এক্ষেত্রে একটি উদাহরণ।