welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

বায়ুমণ্ডলের গ্যাসীয় উপাদান (Gaseous components of atmosphere)

 

বায়ুমণ্ডলের গ্যাসীয় উপাদান (Gaseous components of atmosphere):


বায়ু প্রকৃতপক্ষে বিভিন্ন প্রকার গ্যাসের মিশ্রণ। এই গ্যাসীয় উপাদানগুলিকে দুটি বৃহৎ শ্রেণিতে ভাগ করা হয়।


যথা-

 (A) প্রধান বা স্থায়ী গ্যাস (Permanent gases),

 (B) দুষ্প্রাপ্য গ্যাস (Trace elements) |


(A) প্রধান বা স্থায়ী গ্যাস (Permanent gases) :


বায়ুমণ্ডলে বিভিন্ন গ্যাসের উপস্থিতি লক্ষ করা গেলেও নাইট্রোজেন (N₂) এবং অক্সিজেন (O₂)-এই দুটি গ্যাসের প্রাধান্যই সবচেয়ে বেশি। এই দুটি গ্যাস বায়ুমণ্ডলের শতকরা 99 শতাংশ স্থান দখল করে রেখেছে (নাইট্রোজেন-78.08%, অক্সিজেন 20.9%)। বায়ুমণ্ডলে এদের অনুপাত হল 4:1। এ ছাড়া অন্যান্য স্থায়ী গ্যাসগুলি হল-কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO₂), আর্গন (Ar), নিয়ন (Ne), হিলিয়াম (He), ক্রিপ্টন (Cr), হাইড্রোজেন (H), জেনন (Xe), ওজোন (O.) ইত্যাদি। এর মধ্যে CO₂, Ar এবং Ne-এর পরিমাণ যথাক্রমে 0.036%, 0.93% এবং 0.0018%। পরিমাণ অনুযায়ী বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত এই সকল স্থায়ী গ্যাসীয় উপাদানকে দুটি ভাগে ভাগকরা হয়। যথা- (i) প্রধান ও (ii) অপ্রধান গ্যাস।


• প্রধান গ্যাসীয় উপাদান (Major Gases): 

বায়ুমণ্ডলের প্রধান প্রধান গ্যাসীয় উপাদানগুলি হল



1. নাইট্রোজেন (N₂):


বিজ্ঞানী র‍্যাদারফোর্ড (Rutherford) 1772 খ্রিস্টাব্দে প্রথম নাইট্রোজেন গ্যাস আবিষ্কার করেন। প্রাথমিক অবস্থায় এই গ্যাসের নাম দেওয়া হয়েছিল গন্ধময় বিষবাষ্প (Mephitic Air)। বায়ুমণ্ডলে সবচেয়ে বেশি নাইট্রোজেন গ্যাসেরই অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। বায়ুমন্ডলের মোট আয়তনের প্রায় 78.08 শতাংশ অঞ্চল এই গ্যাস দখল করে রেখেছে। কিন্তু কোনেপ্রকার রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ না করায় এই গ্যাস বায়ুমণ্ডলে নিষ্ক্রিয় গ্যাস হিসেবেই পরিচিত। ভূপৃষ্ঠ থেকে 100 কিমিরও বেশি উচ্চতায় এই গ্যাস লক্ষ করা গেলেও পারমাণবিক অবস্থায় নাইট্রোজেন 50 কিমি-এর মধ্যে এবং আণবিক অবস্থায় 50 থেকে 100 কিমির মধ্যেই সবচেয়ে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়।


• গুরুত্ব: উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য নাইট্রোজেন গ্যাস অপরিহার্য হলেও এরা কেউই বায়ুমণ্ডল থেকে সরাসরি এই গ্যাস গ্রহণ করতে পারে না। মৃত্তিকায় অবস্থিত বিভিন্ন নাইট্রোজেন স্থিতিকারী ব্যাকটেরিয়া বায়ুমণ্ডল থেকে মৃত্তিকায় N₂ গ্যাস সঞ্চিত করে। উদ্ভিদ জলের সঙ্গে মিশ্রিত অবস্থায় নাইট্রোজেন গ্রহণ করে এবং খাদ্যশৃঙ্খল অনুযায়ী তা মানবদেহে প্রবেশ করে।


2. অক্সিজেন (O):


বায়ুমণ্ডলে অবস্থিত সর্বাধিক সক্রিয় গ্যাস হল অক্সিজেন যা বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটায়। পরিমাণের দিক থেকে এটি নাইট্রোজনের পর অর্থাৎ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। বায়ুমণ্ডলের আয়তনের প্রায় 20.9% স্থান অক্সিজেন দখল করে রয়েছে। এই গ্যাস বর্ণহীন, গন্ধহীন ও স্বাদহীন। নিজে দাহ্য না হলেও এই গ্যাস দহনের সহায়ক।


• গুরুত্ব: জীবের বেঁচে থাকার জন্য অর্থাৎ শ্বসনকার্যে অক্সিজেন অপরিহার্য। এটি বিভিন্ন গ্যাসের সঙ্গে মিশে শিলায় আবহবিকার ঘটায় ও লোহায় মরচে ধরায়।


3. কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO₂):


বায়ুমণ্ডলের মোট আয়তনের শতকরা 0.036 অংশ CO, দখল করে অবস্থান করেছে। এর পরিমাণ নগণ্য হলেও এই গ্যাসের উপস্থিতি জীবনধারণের জন্য বিশেষ প্রয়োজন।


• গুরুত্ব:

 (a) সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৌরশক্তিকে আবন্ধ করে এই গ্যাসের সাহায্যে উদ্ভিদ শর্করা জাতীয় খাদ্য তৈরি করে যা উদ্ভিদের বৃদ্ধি ঘটায় এবং খাদ্যশৃঙ্খল অনুযায়ী প্রাণীদেহে প্রবেশ করে পুষ্টি ও শক্তি প্রবাহ (সৌরশক্তির) বজায় রাখে। ফলে বাস্তুতন্ত্র সচল থাকে। এ ছাড়া সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার সময় এই গ্যাস বিশ্লিষ্ট হয়ে ০, উৎপন্ন করে, বায়ুমণ্ডলে O,-এর জোগানও অব্যাহত রাখে।


6CO, + 6H₂O সূর্যালোক ক্লোরোফিল CHO+60,


(b) বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রিনহাউস গ্যাসরূপে কাজ করে। CO, ক্ষুদ্র তরঙ্গের সৌরশক্তি শোষণে অক্ষম হলেও দীর্ঘ তরঙ্গের আলোকরশ্মির উত্তম শোষক। তাই আগত সৌর বিকিরণকে বাধা না দিলেও ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত দীর্ঘ তরঙ্গকে শোষণ করে নিম্ন বায়ুমণ্ডলের উন্নতাকে ধরে রাখে। বায়ুমণ্ডলে CO₂-এর পরিমাণ কমে গেলে পৃথিবীতে বিশ্ব হিমায়ন (Global cooling) দেখা দেবে।


(c) বায়ুমণ্ডলে যদি CO, না থাকত তবে কৃষ্ণবস্তুর চরিত্র অনুযায়ী ভূপৃষ্ঠ রাতের বেলায় তাপবিকিরণ করে ভীষণভাবে ঠান্ডা হয়ে যেত। ফলস্বরূপ দিন ও রাতের তাপমাত্রায় বিশাল পার্থক্য দেখা দিত। এর প্রভাবে জীবজগতের বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে উঠত। প্রসঙ্গত একথাও উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, CO₂-এর মাত্রা অসম্ভব হারে বাড়লে গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাবে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের গড় উন্নতা দ্রুত বৃদ্ধি পাবে (Global Warming) যার প্রভাবে পৃথিবীর ওপর অবস্থিত বরফের আচ্ছাদন গলে যাবে এবং সমুদ্রের জলস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। ফলে জীবজগৎ ধ্বংসের সম্মুখীন হবে।


4. আর্গন (Ar):

বায়ুমণ্ডলে আর্গনের পরিমাণ প্রায় 0.93 শতাংশ। এটি বায়ুমন্ডলে প্রাপ্ত তৃতীয় প্রধান গ্যাস। এটি নাইট্রোজেনের মতোই নিষ্ক্রিয় গ্যাস।


• গুরুত্ব: পরিবেশে এই গ্যাসের প্রভাব খুবই সীমিত। শিলাস্থিত পটাশিয়ামের তেজস্ক্রিয় বিয়োজনের ফলে বায়ুমণ্ডলে এই গ্যাসের সৃষ্টি হয়। আর্গন কোনোপ্রকার রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে না। তাই এটি নিষ্ক্রিয় গ্যাস হিসেবে পরিচিত।


• অপ্রধান গ্যাসীয় উপাদান (Minor Gases):


উপরিউক্ত চারটি গ্যাস ছাড়া নিয়ন, হিলিয়াম, হাইড্রোজেন, ক্রিপ্টন, জেনন ও ওজোন বায়ুমণ্ডলের খুবই অল্প অংশই দখল করে রেখেছে।


• নিয়নের (Ne) 

উপস্থিতি বায়ুমণ্ডলে খুবই নগণ্য (0.0018%)।


• হিলিয়ামের (He) 

উপস্থিতি নিম্ন বায়ুমণ্ডলে প্রায় নেই বললেই চলে। তবে উর্ধ্ব বায়ুমণ্ডলে হিলিয়ামের সংঘবদ্ধতা লক্ষ করা যায়।


• হাইড্রোজেন (H) 

প্রধানত ঊর্ধ্ব বায়ুমণ্ডলে ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 1500 কিমির অধিক উচ্চতায় লক্ষ করা যায়। নিম্ন বায়ুমণ্ডলে অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে জলীয় বাষ্প ও মিথেনের ভাঙনে হাইড্রোজেন উৎপন্ন হয়। কিন্তু আণবিক ওজন সবচেয়ে কম হওয়ায় এর ঘনত্ব কমে যায়। তাই এটি ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী হয়ে বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে ওপরের স্তরে অবস্থান করে।


• ওজোন (o³)

 গ্যাসের উপস্থিতি ভূপৃষ্ঠর সংলগ্ন বায়ুমণ্ডলে খুবই কম। প্রধানত ভূপৃষ্ঠের ওপরে 15 থেকে 35 কিমি উচ্চতার মধ্যে বলয়ের আকারে ওজোন গ্যাস অবস্থান করে। এটি তিনটি অক্সিজেন পরমাণুর সমন্বয়ে গঠিত। সূর্য থেকে আগত অতিবেগুনি (uv) রশ্মির প্রভাবে একটি অক্সিজেন অণু ও একটি অক্সিজেন পরমাণুর সংযোজনে ওজোন গ্যাসের সৃষ্টি হয়।

জীবজগতের কাছে এই গ্যাসের গুরুত্ব অপরিসীম। uv রশ্মিকে শোষণ করে এই রশ্মির ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে জীবমণ্ডলকে রক্ষা করে।

• মিথেন (CH4)  

বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত অন্যতম একটি অপ্রধান গ্যাস। প্রধানত জৈব পদার্থের পচনের ফলে এই গ্যাসের সৃষ্টি হয় এবং বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে।


(B) দুষ্প্রাপ্য গ্যাস (Trace elements):

প্রধান, অপ্রধান গ্যাস ছাড়াও অন্যান্য আরও কিছু গ্যাস রয়েছে সেগুলি প্রধানত প্রধান গ্যাসগুলির রাসায়নিক বিক্রিয়ার প্রভাবেই সৃষ্টি হয়েছে। বায়ুমণ্ডলে এই সকল গ্যাসের পরিমাণ মোট আয়তনের দিক থেকে অত্যন্ত কম। এগুলি হল-সালফার ঘটিত গ্যাস (SO), কার্বন মনোক্সাইড (CO), হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড (H₂O₂), পারদ (Hg), ক্লোরো-ফ্লুরোকার্বন (CFC'S), নাইট্রোজেন ঘটিত গ্যাস (NO) ইত্যাদি। সালফার ঘটিত গ্যাসগুলির মধ্যে সালফার ডাইঅক্সাইড (SO₂), সালফার ট্রাইঅক্সাইড (SO), হাইড্রোজেন সালফাইড (H₂S) প্রধান। নাইট্রোজেনঘটিত গ্যাসের মধ্যে নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড (NO₂) প্রধান।

বায়ুমণ্ডলে জল বাষ্পরূপে অবস্থান করে। প্রধানত সূর্যের তাপে ভূপৃষ্ঠের জল বাষ্পে পরিণত হয়। বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের গড় পরিমাণ 0.2 থেকে 4.5 শতাংশ পর্যন্ত হয়।

 ভূপৃষ্ঠ থেকে সাধারণত 10 কিমি উচ্চতার মধ্যেই জলীয় বাষ্প দেখা যায়। এর মধ্যে 5 কিমি উচ্চতার মধ্যেই মোট জলীয় বাষ্পের 90 শতাংশ অবস্থান করে। আবার, নিরক্ষীয় ও ক্রান্তীয় আর্দ্র অঞ্চলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ সর্বাধিক (প্রায় 2.6%) কিন্তু উচ্চ অক্ষাংশে ক্রমশ এর পরিমাণ কমতে থাকে। 70° অক্ষাংশের কাছাকাছি এর পরিমাণ এসে দাঁড়ায় 0-2%।


• গুরুত্ব: বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের গুরুত্ব অপরিসীম। এগুলি হল-

(i) ঘনীভবন প্রক্রিয়ায় জলীয় বাষ্পের উপস্থিতিতে বায়ুমণ্ডলে মেঘের সৃষ্টি হয় এবং বৃষ্টিপাত ও তুষারপাত হয়। এ ছাড়া কুয়াশা সৃষ্টিতেও জলীয় বাষ্পের ভূমিকা অপরিসীম।


(ii) জলীয় বাষ্প ক্ষুদ্র তরঙ্গের সূর্যরশ্মিকে কিছুটা শোষণ করে এবং ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত দীর্ঘ তরঙ্গের রশ্মিকে বাধা প্রদান করে শোষণ করে। ফলে পরোক্ষভাবে নিম্ন বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে।

Middle post ad 01