welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

বায়ুমণ্ডলের উৎপত্তি ও বিবর্তন (Origin and Evolution of Atmosphere)

 বায়ুমণ্ডলের উৎপত্তি ও বিবর্তন (Origin and Evolution of Atmosphere):

এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রতিটি উপাদানই যেখানে অস্থিতিশীল, পৃথিবীর সৃষ্টি লগ্নে সৃষ্ট অতিপ্রাকৃত (Primordial) বায়ুমণ্ডল কালের সাপেক্ষে বিবর্তিত হয়ে বর্তমান বায়ুমণ্ডলের রূপ ধারণ করেছে-এটা ভাবাই স্বাভাবিক। বিজ্ঞানীদের মত অনুযায়ী, পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত বায়ুমণ্ডলের প্রকৃতি একইরকম ছিল না, তা কালের সাপেক্ষে বিবর্তিত হতে হতে বর্তমান অবস্থায় পৌঁছেছে। তাঁদের মত অনুযায়ী, সৃষ্টির আদিপর্বে পৃথিবী ছিল একটি উত্তপ্ত গ্যাসীয় পিণ্ড। এই গ্যাসীয় পিণ্ড কালক্রমে তাপ বিকিরণ করে ঘনীভূত হয়ে পড়লে এর কেন্দ্রে একটি তরল কেন্দ্রমণ্ডল এবং এর চারপাশে ঘনত্বের তারতম্য অনুযায়ী বহিঃস্তরগুলি গঠিত হয়। অবশিষ্ট গ্যাসগুলি ঘনীভূত না হওয়ায় তরল বা অর্ধতরল অবস্থায় পৃথিবীর ওপর ভেসে বেড়াতে শুরু করে। দুর্বল মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে এই গ্যাসগুলি মহাশূন্যে বিলীন হয়ে যায়। পরবর্তী পর্যায়ে, তরল ভূভাগের কঠিনীভবনের ফলে তরল শিলায় আবদ্ধ গ্যাসসমূহ বিমুক্ত হয়ে নতুন বায়ুমণ্ডলের জন্ম দেয়। এই সময় বায়ুমণ্ডলে স্থিত প্রধান গ্যাসগুলি হল-কার্বন ডাইঅক্সাইড (10-15%), নাইট্রোজেন (8-10%) ও জলীয় বাষ্প (60-70%)।


তাপ বিকিরণ করে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হলে আকাশে বিপুল পরিমাণ মেঘের সঞ্চার ঘটে। এই প্রক্রিয়া লক্ষ লক্ষ বছর ধরে চলতে থাকে। জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে জলকণায় পরিণত হলে তা পৃথিবীর আকর্ষণে পৃথিবীপৃষ্ঠের দিকে ছুটে আসে। পৃথিবীপৃষ্ঠ অধিকমাত্রায় উত্তপ্ত থাকায় বৃষ্টিবিন্দু পৃথিবীপৃষ্ঠকে স্পর্শ করার পূর্বেই বাষ্পীভূত হয়ে বায়ুমণ্ডলে ফিরে যায়। অনুমান করা হয়, এই প্রক্রিয়া লক্ষ লক্ষ বছর ধরে চলতে থাকে। পৃথিবীপৃষ্ঠ শীতল হলে, অবিরাম (প্রায় 40,000 বছর) বারিবর্ষণ চলতে থাকে। ফলে, পৃথিবীর অবনমিত অঞ্চলগুলি জলে পূর্ণ হয়ে সৃষ্টি হয় বারিমণ্ডল (Hydrosphere) এবং উত্থিত অংশগুলি মহাদেশের (Continents) অংশরূপে অবস্থান করতে থাকে। এই বৃষ্টির ধারা বায়ুমণ্ডল থেকে কেবলমাত্র জলীয় বাষ্পকেই স্থানান্তরিত করেনি, বাতাস থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইডকে মুক্ত করে সমুদ্রবক্ষে প্রচুর পরিমাণে কার্বনেট শিলার জন্ম দিয়েছে।

 বায়ুমণ্ডলে মুক্ত অক্সিজেনের যুক্ত হওয়ার ঘটনা সম্পর্কে বিজ্ঞান মহলে দুটি মত প্রচলিত আছে। একদল বিজ্ঞানীর মত অনুযায়ী জলীয় বাষ্প পরিচলন স্রোত (Convection current) দ্বারা ঊর্ধ্বাকাশে নিক্ষিপ্ত হলে তা অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন পরমাণুতে বিয়োজিত হয়। হাইড্রোজেন গ্যাস তুলনামূলকভাবে হালকা হওয়ায় ওপরের দিকে উঠে যায়। অন্যদিকে অক্সিজেন পরমাণু আপেক্ষিকভাবে ভারী হওয়ায় বায়ুমণ্ডলের নীচেই থেকে যায় এবং পরবর্তী পর্যায়ে অন্য অক্সিজেন পরমাণুর সঙ্গে সমন্বয় ঘটিয়ে অক্সিজেন অণু গঠিত হয়। অক্সিজেন অণু গঠনের এই প্রক্রিয়া এত ধীর যে এই পদ্ধতিতে বর্তমান বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত অক্সিজেনের জোগানকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়।


ভিন্ন মত অনুযায়ী উদ্ভিদ জগতই অক্সিজেন সরবরাহের প্রধান উৎস। উদ্ভিদ জল, বাতাসের কার্বনডাইঅক্সাইড ও সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় খাদ্য উৎপাদনের সময় প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন উৎপন্ন করে। বর্তমান বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের প্রাচুর্যের প্রধান উৎস হল উদ্ভিদকুল। উদ্ভিদকুলের আবির্ভাবের পূর্বেই ছিল প্রাণীদের অস্তিত্ব। প্রশ্ন ওঠে তা কী করে সম্ভব? ওই যুগে ক্লোরোফিল সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যাকটিরিয়া সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় প্রচুর মুক্ত অক্সিজেন প্রস্তুত করতে সমর্থ হয়। এরপর পৃথিবীতে এলো সবুজ উদ্ভিদের সমারোহ। ক্রমাগত বায়ুমণ্ডলকে অক্সিজেনের জোগান দিয়ে সবুজ উদ্ভিদ পৃথিবীতে প্রাণের প্রাচুর্য ঘটায়।


আজ থেকে প্রায় 60 কোটি বছর পূর্বে অক্সিজেনের ওপর নির্ভরশীল প্রাণীকুলের সংখ্যা বহুগুণে বেড়ে যায়। এর কিছুদিন পর ডেভোনিয়ন উপযুগে স্থলভাগের ওপর স্থলজ উদ্ভিদের বিস্তার ঘটে। এভাবে কার্বন ডাইঅক্সাইড ও * অক্সিজেনের মধ্যে ভারসাম্য তৈরি হলে পার্থিব বায়ুমণ্ডল ভীষণভাবে বিবর্তিত হয়। এই পরিবর্তনের ধারা আজও অক্ষুণ্ণ রয়েছে।


বায়ুমণ্ডল গঠনের প্রাথমিক পর্যায়ে নাইট্রোজেন গ্যাসের পরিমাণ ছিল মাত্র 8-10%। আজ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে 78-084%। বাতাসে বিপুল পরিমাণে মুক্ত নাইট্রোজেন সংযুক্ত হওয়া ও ভারসাম্য রক্ষার পিছনে যে কারণগুলি বর্তমান সেগুলি হল- 

(i) আগ্নেয় শিলা বিয়োজনের ফলে সৃষ্ট মুক্ত নাইট্রোজেন

(ii) আগ্নেয়গিরি থেকে অক্সাইডরূপে নাইট্রাস অক্সাইডের নির্গমন ও বিয়োজন এবং 

(iii) সিউডোেমানাস ও প্যারাকক্কাস-এর মতো কিছু ডিনাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া জীবজ নাইট্রোজেনকে প্রাণীদেহ থেকে বায়ুমণ্ডলে মুক্ত নাইট্রোজেনরূপে নির্গত করে।

Middle post ad 01