আবহবিদ্যা (Meteorology):
Meteorology পদবাচ্যটি দুটি গ্রিক শব্দ 'Meteor' অর্থাৎ উর্ধ্ববায়ুমণ্ডল সংক্রান্ত (on the things above) এবং 'Logy' বা 'Logos' অর্থাৎ বিদ্যা বা বিজ্ঞান-এর সমন্বয়ে গঠিত। '০' অক্ষরটি এখানে সংযোজক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে (Meteor-o-Logy)। 'Meteor' শব্দটি গ্রিক শব্দ 'Meteoron' থেকে এসেছে। খ্রিস্টপূর্ব 340 শতক থেকে গ্রিক পন্ডিত অ্যারিস্টটলের হাত ধরেই আবহবিদ্যা নিয়ে পর্যালোচনা শুরু হয়। অ্যারিস্টট্ল লিখিত মেটেওরলজিকা (Meteorologica) আবহবিদ্যার একটি অমূল্য সম্পদ।
আবহবিদ্যা বলতে বোঝায় একটি নির্দিষ্ট স্থানে ও নির্দিষ্ট সময়ে আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদানগুলির অবস্থার বিজ্ঞানভিত্তিক পর্যালোচনা। আবহাওয়া (Weather) বলতে কোনো নির্দিষ্ট স্থানের, কোনো নির্দিষ্ট দিনের অথবা নির্দিষ্ট সময়ের বায়ুমণ্ডলীয় উপাদানগুলির অবস্থাকে বোঝায়। আর আবহবিদ্যা আবহাওয়ার এই সমস্ত বিষয়গুলিকে নিয়েই পর্যালোচনা করে।
ক্রিচফিল্ড (Critchfield)-এর মত অনুসারে
বিজ্ঞানের যে শাখাটি বায়ুমণ্ডলের অবস্থার দৈনন্দিন কারণ অনুসরণ করে, তাকে আবহবিদ্যা বলে। (Meteorology, which treats day-to-day atmospheric con-ditions and their causes)।
অলিভার ও হিডোর (Oliver and Hidore)-এর মত অনুযায়ী
আবহবিদ্যা বিজ্ঞানের এমন একটি শাখা যেখানে আবহাওয়ার পদ্ধতি ও পূর্বাভাসের পরিপ্রেক্ষিতে বায়ুমণ্ডলের গতিপ্রকৃতি ও ঘটনাসমূহ নিয়ে আলোচনা করে। (Meteorology is the science that deals with motion and phenomena of the at- mosphere, with the view of both forecasting weather and explaining the process in- volved.)
বর্তমানে আবহবিদ্যার প্রধান উদ্দেশ্য হল, আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদানগুলির অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণের মাধ্যমে আবহাওয়ার সঠিক পূর্বাভাস (Weather forecasting) দেওয়া।
আবহবিদ্যার শ্রেণিবিভাগ (Sub-divisions of Meteorology):
আবহবিদ্যাকে বিভিন্ন দিক থেকে বিভিন্নভাবে শ্রেণিবিভাজন করা হয়। তবে প্রায়োগিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী আবহবিদ্যাকে চারটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।
1. দৈনন্দিন আবহবিদ্যা (Synoptic Meteorology):
একটি নির্দিষ্ট স্থানের নির্দিষ্ট মুহূর্তের আবহাওয়াগত অবস্থার পর্যালোচনা করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়াই দৈনন্দিন আবহবিদ্যার মুখ্য বিষয়। এই শাস্ত্রে প্রধানত বৃহৎ অঞ্চল জুড়ে আবহাওয়াগত অবস্থার পর্যালোচনা করা হয় এবং আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিয়ে সতর্কতা জারি করা হয়।
2. গতি সংক্রান্ত আবহবিদ্যা (Dynamic Meteorology):
এটি প্রধানত শক্তির দৈশিক বণ্টন, দৈশিক বণ্টনের পার্থক্য অনুযায়ী বায়ুচাপ ঢালের বিস্তার এবং বায়ুর গতি ও দিক নিয়ে আলোচনা করে। গতি সংক্রান্ত আবহবিদ্যা দৈনন্দিন আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটিকে পুনরায় দুটি উপবিভাগে বিভক্ত করা হয়। যথা-
(a) তাপগতি সম্বন্ধীয় বিদ্যা (Thermodynamic science) এবং
(b) বায়ুমণ্ডলীয় গতিবিধি সংক্রান্ত বিদ্যা (Dynamics of the atmosphere)।
3. ভৌত আবহবিদ্যা (Physical Meteorology):
ভৌত আবহবিদ্যায় ভৌত বিজ্ঞানের নীতিসমূহ প্রয়োগ করে বায়ুমণ্ডলের ঘটনাসমূহকে ব্যাখ্যা করা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়-নিউটনের গতিসূত্র অনুযায়ী বায়ুপ্রবাহের দিক ও গতি বিশ্লেষণ করা হয়। যেমন-কোরিওলিস বল অনুযায়ী বায়ুর গতিবিক্ষেপের ব্যাখ্যা নিউটনের দ্বিতীয় গতিসূত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত।
4. বিমান চলাচল সংক্রান্ত আবহবিদ্যা (Aeronautical Meteorology):
আবহবিদ্যার এই শাখায় বিমান চলাচলের জন্য বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন অবস্থার বিশ্লেষণ করা হয়। যেমন, অনুভূমিক দৃশ্যমানতা (Horizontal Visibility) ও আবহাওয়ার গোলযোগ সংক্রান্ত বিষয় এই শাখায় অধ্যয়ন করা হয়।