★ঢাল Slope
প্রত্যেক ভূমিরূপের একটি ঢাল আছে। অন্যভাবে বলা যায় কোনো ভূমিরূপ এক বা একাধিক ঢালের সমাবেশে গঠিত হয়। আবার ভূমিরূপ তৈরি হবার পর তার বিবর্তনে ঢালের প্রকৃতি ও মাত্রা বিশেষভাবে দায়ী থাকে। তাই ঢালকে ভূমিরূপের গঠনগত ও আকৃতিগত একক বলা হয়ে থাকে। এই ঢাল 0° থেকে 90° বা তার বেশিও হতে পারে। ভূমিরূপ বিবর্তনে ভূগঠনকারী প্রক্রিয়া কাজ করে থাকে এবং তার ফলে ঢালেরও বিবর্তন বা পরিবর্তন হয়ে থাকে।
● সংজ্ঞা (Definition)
সাধারণভাবে বলা যেতে পারে ভূপৃষ্ঠ বা ভূপৃষ্ঠতল অনুভূমিক তলের সঙ্গে যে কোণে অবস্থান করে তাকে ভূমির ঢাল (slope) বালে। অনুভূমিক তলের সঙ্গে ভূতল 90° কোণে অবস্থান করলে তাকে সম্পূর্ণ খাড়াই ঢাল বলা হয়। আবার অনুভূমিক তলের সঙ্গে ভূতল ০° কোণে অবস্থান করলে তাকে সরণ ঢাল বা সমতল ঢাল বলে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভূমির ঢাল এই দুই চরম সীমার মধ্যে থাকে, অর্থাৎ 09-এর চেয়ে বেশি ও 90°-এর কম। সমুদ্র পৃষ্ঠের কাছাকাছি সমতলভাগ 0°তে থাকে এবং অনেক সময় উপকূলবর্তী ভৃগু 90° ঢালে থাকে।
● বৈশিষ্ট্য (Characteristics)
ঢালের দুটি নিয়ন্ত্রক থাকে–
(i) উচ্চতার পার্থক্য, ও
(ii) অনুভূমিক দূরত্ব। এই দুয়ের সাপেক্ষে ঢালের কৌণিক অবস্থান নির্দিষ্ট হয়।
(iii) ঢালের পরিমাণের উপর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব নির্ভর করে। যেমন বেশি ঢাল হলে পুণাক্ষয় (Mass wasting) দ্রুত হয়। মৃদু ঢাল হলে গড়িয়ে চলন। বা ক্লীপ (creep) দেখা যায়। আবার ঢাল খাড়াই হলে ধস বা হিমানিসম্প্রপাত (avalanche) দেখা যায়।
(IV) ঢালের পরিমাণের উপর প্রাকৃতিক শক্তি বা প্রক্রিয়ার উত্তল ঢাল মুখ ঢাল ঋজুরেখ ঢাল অবরোহণ (degradation), পরিবহন (transportation) এবং আরোহণ (aggradation) কার্য নির্ভর করে। ঢাল বেশি হলে কোনো প্রক্রিয়ার শক্তি বেশি হয়, ফলে ক্ষয়কার্য ঢালের বিভিন্ন উপাদান অধিক হয়। আবার ঢালের পরিমাণ কম হলে শক্তি কমে যায়, তখন ক্ষয় ও পরিবহন ক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলে সঞ্চয় কার্য অধিক হয়।
প্রত্যেক ভূমিরূপের একটি ঢাল আছে। অন্যভাবে বলা যায় কোনো ভূমিরূপ এক বা একাধিক ঢালের সমাবেশে গঠিত হয়। আবার ভূমিরূপ তৈরি হবার পর তার বিবর্তনে ঢালের প্রকৃতি ও মাত্রা বিশেষভাবে দায়ী থাকে। তাই ঢালকে ভূমিরূপের গঠনগত ও আকৃতিগত একক বলা হয়ে থাকে। এই ঢাল 0° থেকে 90° বা তার বেশিও হতে পারে। ভূমিরূপ বিবর্তনে ভূগঠনকারী প্রক্রিয়া কাজ করে থাকে এবং তার ফলে ঢালেরও বিবর্তন বা পরিবর্তন হয়ে থাকে।
● সংজ্ঞা (Definition)
সাধারণভাবে বলা যেতে পারে ভূপৃষ্ঠ বা ভূপৃষ্ঠতল অনুভূমিক তলের সঙ্গে যে কোণে অবস্থান করে তাকে ভূমির ঢাল (slope) বালে। অনুভূমিক তলের সঙ্গে ভূতল 90° কোণে অবস্থান করলে তাকে সম্পূর্ণ খাড়াই ঢাল বলা হয়। আবার অনুভূমিক তলের সঙ্গে ভূতল ০° কোণে অবস্থান করলে তাকে সরণ ঢাল বা সমতল ঢাল বলে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভূমির ঢাল এই দুই চরম সীমার মধ্যে থাকে, অর্থাৎ 09-এর চেয়ে বেশি ও 90°-এর কম। সমুদ্র পৃষ্ঠের কাছাকাছি সমতলভাগ 0°তে থাকে এবং অনেক সময় উপকূলবর্তী ভৃগু 90° ঢালে থাকে।
● বৈশিষ্ট্য (Characteristics) ঢালের দুটি নিয়ন্ত্রক থাকে–
(i) উচ্চতার পার্থক্য, ও
(ii) অনুভূমিক দূরত্ব। এই দুয়ের সাপেক্ষে ঢালের কৌণিক অবস্থান নির্দিষ্ট হয়।
(iii) ঢালের পরিমাণের উপর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব নির্ভর করে। যেমন বেশি ঢাল হলে পুণাক্ষয় (Mass wasting) দ্রুত হয়। মৃদু ঢাল হলে গড়িয়ে চলন। বা ক্লীপ (creep) দেখা যায়। আবার ঢাল খাড়াই হলে ধস বা হিমানিসম্প্রপাত (avalanche) দেখা যায়।
(IV) ঢালের পরিমাণের উপর প্রাকৃতিক শক্তি বা প্রক্রিয়ার উত্তল ঢাল মুখ ঢাল ঋজুরেখ ঢাল অবরোহণ (degradation), পরিবহন (transportation) এবং আরোহণ (aggradation) কার্য নির্ভর করে। ঢাল বেশি হলে কোনো প্রক্রিয়ার শক্তি বেশি হয়, ফলে ক্ষয়কার্য ঢালের বিভিন্ন উপাদান অধিক হয়। আবার ঢালের পরিমাণ কম হলে শক্তি কমে যায়, তখন ক্ষয় ও পরিবহন ক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলে সঞ্চয় কার্য অধিক হয়।
(v) সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঢাল পরিবর্তনশীল। একে ঢালের বিবর্তন বলে। এই পরিবর্তনে শিলার গঠন, ভূপ্রাকৃতিক শক্তির তারতমা, জলবায়ুর পরিবর্তন ও ভূ-আন্দোলন দায়ী থাকে।
● ঢালের উপাদান (Elements of Slope) বিভিন্ন ভূবিজ্ঞানী ঢালকে বিভিন্ন উপাদানে ভাগ করেছেন। প্রখ্যাত ভূমিরূপবিদ অ্যালান উড (Allan Wood, 1942)-এর ধারণা অনুযায়ী ঢালের 4টি উপাদান রয়েছে। যথা—
1. উত্তল ঢাল (Convex Slope) : উঁচু পাহাড়ের মাথায় উত্তল ঢাল দেখা যায়, কারণ এখানে নিম্নক্ষয়ের হার অধিক থাকে।
2. মুক্ত ঢাল (Free Face) : পাহারের চূড়ার ঠিক নীচে মুক্ত ঢাল দেখা যায়, কারণ এই অংশ খাড়াই থাকে।
3. ঋজুরেখ ঢাল (Rectilinear Slope) : পাহাড়ের পাদদেশে যেখানে উপরের অংশের ক্ষয়ীভূত শিলাচূর্ণ জমা হয় সেই অংশকে ঋজুরেখ ঢাল বলে। এই অংশ সাধারণত অনেকখানি চওড়া হয়।
4. অবতল ঢাল (Concave Slope) : ঋজুরেখ ঢালের পরবর্তী অংশ যেখানে ভূমিভাগ প্রায় সমতল সেই অংশের ঢালকে অবতল ঢাল বলে। ভূবিজ্ঞানী সেলবি (Selby) অন্যভাবে ঢাল ভূমিরূপের ব্যাখ্যা দেন। তাঁর মতে একটি আদর্শ ঢালের 7টি উপাদান রয়েছে এবং প্রতিটি অংশের উপর ক্রিয়াশীল ভূপ্রাকৃতিক প্রক্রিয়াও আলাদা। এই 7টি উপাদান হল
1. জলবিভাজিকা (Interfluve) : এটি উচ্চভূমির সর্বোচ্চ অংশ। এখানে মৃত্তিকা পদ্ধতি কাজ করে।
2. সিপেজ ঢাল (Seepage Slope) : যান্ত্রিক ও রাসায়নিক পদ্ধতিতে শিলাচূর্ণের স্থানান্তর।
3. উত্তল ঢাল (Convex Slope) : মৃত্তিকা গড়িয়ে গড়িয়ে নীচে নামে।
4. মুক্ত ঢাল (Free Face) : শিলার ধস বা পতন হয়।
5. পরিবাহী ঢাল (Transportational Slope) : পুঞ্জক্ষয়ের মাধ্যমে শিলার স্থানান্তর।
6. পাদদেশীয় ঢাল (Foot Slope) : শিলার সঞ্চয়ের মাধ্যমে ফ্যান (fan) সৃষ্টি হয়।
7. পলিযুক্ত পাদদেশীয় ঢাল (Alluvial Foot Slope) : পলি জমে সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ তৈরি হয়।
৪. উপত্যকা ঢাল (Valley Slope) : শিলার ক্ষয় ও বহন কার্যের মাধ্যমে সমতল তৈরি হয়।
★ঢালের শ্রেণিবিভাগ Classification of Slope
ভূবিজ্ঞানীরা নানাভাবে ঢালের শ্রেণিবিভাগ করে থাকেন। এর মধ্যে ঢালের উৎপত্তিগত শ্রেণিবিভাগ (genetic classification) ও আকারগত শ্রেণিবিভাগই (morphological classification) প্রধান।
● উৎপত্তিগত শ্রেণিবিভাগ (Genetic Classification) বহিঃস্থ বা বহির্জাত এবং অন্তঃশ বা অন্তর্জাত প্রক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে ভূবিজ্ঞানীরা ও প্রকার ঢালের পরিচিতি ঘটান। যথা
1) বহিঃস্থ ঢাল (Exogenetic Slope) : পৃথিবী পৃষ্ঠের বাইরের শক্তিসমূহ (নদীপ্রবাহ, হিমবাহ, সমুদ্রতরঙ্গ ইত্যাদি) যে পদ্ধতিতে পৃথিবীর ভূমিরূপের আবহবিকার ক্ষয়, বহন ইত্যাদির মাধ্যমে নগ্নীভবন ঘটিয়ে ঢাল তৈরি করলে তাকে বহিঃস্থ ঢাল বলে। সুতরাং বহিঃস্থ ঢাল বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির ক্ষয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হলে তাকে ক্ষয়িত ঢা (erotional slope) বলে। যেমন ভৃগুঢ়াল, নদীখাতের ঢাল, এরিটি ঢাল, বালিয়াড়ির ঢাল ইত্যাদি ক্ষয়জাত ঢালের উদাহরণ। বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে পদার্থের পরিবহন ও সঞ্চয়ের মাধ্যমে যে ঢালের উৎপত্তি হয় তাকে সময়জ্ঞাত ঢাল (aggradational slope) বলে। যেমন—ট্যালাস ঢাল, সন্ত্রী ঢাল, পলন ব্যজনী (alluvial fan) ঢাল ইত্যাদি।
2) অন্তঃস্থ ঢাল (Endogenetic Slope): ভূ-অভ্যন্তরে সৃষ্ট শক্তিগুলি (অগ্ন্যুৎপাত, ভূমিকম্প ইত্যাদি) আকস্মিক বা ধীরভাবে ভূত্বকের পরিবর্তন ঘটিয়ে ঢাল তৈরি করলে তাকে অন্তগ্রস্থ ঢাল বলে। পর্বত, মালভূমি, সমভূমির ঢাল এই পর্যায়ের।
3) মিশ্র বা যৌগিক ঢাল (Mixed or Compound Slope) বহিঃস্থ ও অভ্যস্থ প্রক্রিয়া যুগ্মভাবে অনেক সময় ঢালের সৃষ্টি করে। একে ভূবিজ্ঞানীরা মিশ্র বা যৌগিক ঢাল বলে। চাতিরেখা ভূগ এইরকম একটি মিশ্র ঢালের আদর্শ উদাহরণ। এখানে প্রথমে অন্তঃস্থ প্রক্রিয়ায় চ্যুতি (fault) তৈরি হয়। তারপর বহিঃস্প প্রক্রিয়ায় চ্যুতিভূগু (fault scarp) তৈরি হয়। আবার দীর্ঘকালীন ক্ষয়কার্যের ফলে চ্যুতিভূৎ চাত্রিরেখা ভৃগু (fault line scarp) তে পরিণত হয়।
● ঢালের আকারগত শ্রেণিবিভাগ (Morphological Classification of Slopes) ভূবিজ্ঞানী স্যাভিগিয়ার (R. A. G. Savigear, 1956), 1 (A. Young. 1964) প্রমুখ ঢালের আকার অনুযায়ী পার্বত্য উচ্চভূমিতে 5 প্রকার ঢালের অস্তিত্বের সম্ভাবনার কথা বলেছেন। যথা
1} উত্তল ঢাল (Convex Slope):
পার্বত্য ভূমির উপরের দিকে উত্তল প্রকৃতির ঢাল তৈরি হয়। দ্রুত ভূমির উত্থানেও এ জাতীয় ঢাল তৈরি হতে পারে। সংজ্ঞা হিসাবে বলা যায় যখন ঢালের কোণ ঢালের নীচের দিকে বাড়তে থাকে তখন তাকে উত্তল ঢাল বলে। অনেক সময় দুটি উত্তল ঢাল পরস্পরের অভিমুখে মিলিত হয়ে গ মালবা গম্বুজ ( Dhoom ) আকৃতির পাহাড় তৈরি করে এই ঢাল যেহেতু পাহাড়ের চূড়া বা শিখর থেকে নিচের দিকে ক্রমশ বাড়তে থাকে তাই একে ক্রমবর্ধমান ( Waxing slope ) ঢাল বলে।
2} অবতল ঢাল (Concave Slope) :
পার্বত্য ভূমির নিম্নভাগে এই ঢাল তৈরি হয়। এই ঢালের কোণ নীচের দিতে ক্রমশ কমতে থাকে। সাধারণত অপেক্ষকৃত কম ক্ষয় প্রতিরোধ শিলায় এই ঢাল তৈরি হয়। দুটি অবতল ঢাল পরস্পরের অভিমুখে মিলিত হলে অবনমিত ভূমিরূপ (depression) সৃষ্টি হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ঢালের পরিমাণ ঢালের দৈর্ঘ্য বরাবর কমতে থাকে বলে একে ক্রমহ্রাসমান (Waning Slope) ঢাল বলে।
3} মুক্ত ঢাল (Free Face) :
পার্বত্য উপত্যকায় শীর্ষ অংশে উত্তল ঢালের নীচের অংশের ঢাল যথেষ্ট খাড়াই হয়। এতে মুক্ত ঢাল বলে। এক্ষেত্রে আনুভূমিক তলের সাপেক্ষে ভূপৃষ্ঠের ঢাল ৩০° বা প্রায় সমকোণে অবস্থান করে। মুপ্ত চালে শিলাস্তর উন্মুক্ত অবস্থায় থাকে এবং সেই কারণে আবহবিকার, পুঞ্জক্ষা ইত্যাদির পরিমাণও এখানে অধিক। কোনো কোনো ভূবিজ্ঞানী একে ভুগ্ম ঢাল (cliffy face) বা শৈলভৃগু (rocky diff) নামে অভিহিত করেন। মুক্ত ঢালের সর্বনিম্ন মান 36° এবং সর্বোচ্চ মান 90°
উচ্চভূমির বিভিন্ন ঢালের অবস্থান :
(A) ক্রমবর্ধমান ঢাল (Waxing Slope), (B) মুক্ত ঢাল (Free Face), (C) ক্রমহ্রাসমান ঢাল (Waning Slope), (D) পাদদেশীয় ঢাল (Pediment Slope), (a) ট্যালাস (Talus), (b) মৃত্তিকা (Soil)
4} ট্যালাস ঢাল (Talus Slope) পার্বত্য ভূমির পাদদেশের অবতল ঢালের ঠিক উপরের অংশে ট্যালাস ঢাল গড়ে ওঠে। এই অংশে ট্যালাস জাতীয় পদার্থের সঞ্চয় হয় বলে একে ট্যালাস ঢাল বলে। এই সন্বিত পদার্থসমূহ পাহাড়ের উপরের গাড়া ঢাল অংশে ডাউনের ফলে সৃষ্টি হয় এবং তা ক্রমশ নীচে নেমে পাদদেশে সঞ্চিত হয়। ট্যালাস ঢাল অংশে পলল পাখা ও পলল শঙ্কু গড়ে উঠতে দেখা যায়। দৈর্ঘ্য বরাবর এই ঢাল দেখতে সরলরৈখিক হয়।
5} উত্তল-অবতল ঢাল (Convex-Concave Slope): অনেক সময় পার্বত্য উপত্যকার উপরের অংশের ঢাল উত্ত প্রকৃতির এবং নীচের অংশের ঢাল অবতল প্রকৃতির হয়। একে উত্তেল-অবতল ঢাল বলে। এদের মধ্যবর্তী অংশে ঋজুরেখ ঢাল (rectilinear slope) থাকে। এই ঢাল দীর্ঘকাল স্থায়ী হয় না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উত্তল ঢালের প্রাধান্য কমতে থাকে, অবতল ঢালের প্রাধান্য বাড়তে থাকে।
6} জটিল ঢাল (Complex Slope): অনেক সময় উপত্যকার পার্শ্বঢালে উত্তল বা অবতল কোনো ঢাল স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় না। ভূমিভাগ অনেকটা ঢেউ খেলানো আকৃতির হয়। এরূপ ঢালকে জটিল ভূমিরূপ বলা হয়।
★ঢালের বিবর্তন Evolution of Slope
বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভূভাগে ঢালের উদ্ভব ও রূপান্তর ঘটে। অর্থাৎ ভূমির প্রাথমিক ঢাল সময়ের সাথে সাথে বাড়তে পারে, কমতে পারে, অপরিবর্তিত থাকতে পারে বা ভূমিতে সম্পূর্ণ নতুন ঢালের সৃষ্টি হতে পারে। এই প্রসঙ্গে ডেভিস (W. M. Davis), পেঙ্ক (W. Penck), কিং (L. C. King), উড (A. Wood), স্ট্যালার (A.N. Strahter), ইয়ং (A. Young), সেলবি (M. J. Selby) প্রমুখ ভূবিজ্ঞানী বিভিন্ন তত্ত্ব উপস্থাপন করেন। এগুলি ঢাল বিবর্তনের তত্ত্ব বা মডেল নামে পরিচিত।
● ডেভিসের মডেল (Davis's Model) ডেভিস তাঁর বিখ্যাত ক্ষয়চক্র (cycle of erosion) তত্ত্বের বিশ্লেষণে বলেছেন যে ক্ষয়চক্রের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রাথমিক ঢাল ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে। যৌবন পর্যায়ে (youthful stage) নদীর নিম্নক্ষয়ের ফলে উত্তল খাড়া ঢালের (convex slopel উদ্ভব হয়। পরিণত পর্যায়ে নিম্নক্ষয় অপেক্ষা পার্শ্বক্ষয় বেশি হওয়ায় ঢালের পরিমাণ হ্রাস পায়। বার্ধক্য অবস্থায় (old Stage) বোঝার পরিমাণ বাড়ার ফলে পরিবহন ক্ষমতা ক্রমশ কমতে থাকে তখন অবতল ঢালের (concave slope) সৃষ্টি হয়। ডেভিসের মতে বার্ধক্য পর্যায়ের শেষে নদী উপত্যকা পর্যায়িত ঢালে রূপান্তরিত হয়। এ অবস্থায় উপত্যকার পটাল উজ্জ্বাবতল (convexo-concave) প্রকৃতির হয়। ডেডিস বিশ্বাস করেন ভূমিরূপের যৌবন অবস্থা থেকে পরিণত অবস্থায় ঢালের পরিমাণ ও আপেক্ষিক ভূপ্রকৃতি (relative relief) উভয়ই ক্রমবর্ধমান। আবার পরিণত অবস্থা থেকে বার্ধক্য অবস্থায় ঢাল ও আপেক্ষিক ভূপ্রকৃতি উভয়ই ক্রমহ্রাসমান।
● পেষ্কের মডেল (Penck's Model) (পঙ্ক (W. Penck, 1924) তাঁর বিখ্যাত চক্র মডেলের আলোচনায় ডেভিসের তত্ত্ব থেকে সম্পূর্ণ আলাদা উদ্ভবের তত্ত্ব হাজির করেন। পেঙ্ক বিশ্বাস করেন—
1. বহিঃস্থ ও অন্তঃস্থ প্রক্রিয়ার অনুপাতের সাপেক্ষে যে কোনো ভূমিরূপরে ব্যাখ্যা করা যায়।
2. স্থানীয় ক্ষয়কার্যের তীব্রতা ও গতিপ্রকৃতি সেই স্থানের ভূমির প্রাথমিক ঢালের উপর নির্ভরশীল।
3. ঢালের বিবর্তন থানীয় ক্ষয়কার্যের নিম্নসীমা ও গতিশীল পদার্থের আয়তনের নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। দ্বারা
4. যদি ঢালের সকল অংশে আবহবিকার ক্ষয়ীভবন সমানভাবে কাজ করে, তবে সেই ঢালের পশ্চাদপসরণ (Parallel Retreat of Slope) হয়।
● ঢালের বিবর্তনের ধারণা (Concept of Slope Development):
পেঙ্কের ঢালের বিবর্তন
(1) পেঙ্কের মতে ভূমির উত্থানের হার ক্ষয়ের হারের থেকে বেশি হয়। তখন ভূমির প্রাথমিক চাল উত্তল ঢালে পরিণত হয়। একে ক্রমবর্ধমান ঢাল বা waxing slope বলে।
(2) এরপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভূমির খাড়া ঢাল কমতে থাকে এবং দ্রুত সমান্তরাল পশ্চাদপসরণ হয়, ফলে ঢালের পরিমাণ হ্রাস পেতে থাকে। এক সময় উত্থানের হার ও নিম্নক্ষয়ের পরিমাণ সমান হয়, তখন ঢাল অপরিবর্তিত থাকে। একে সুষম বা সমপ্রকৃতির ঢাল বা straight slope বলে।
(3) ভূমির উত্থান ভূমির ক্ষয়ের হারের থেকে কম হলে ভূমির উচ্চতা ক্রমশ কমবে, ফলে ভূমির নিম্নে পদার্থের সঞ্চয়ের ফলে অবতল ঢাল তৈরি হবে। একে ক্রমহ্রাসমান ঢাল বা waning slope বলে।
● কিং-এর মডেল (King's Model)
কিং (L. C. King, 1947) পেশের তত্ত্ব ও অ্যালান উডের তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে ঢাল বিবর্তনে এক অভিনব তত্ত্বের অবতারণা করেন। কিং-এর মতে যে কোনো প্রাথমিক ভূমির উৎপত্তিতে ভৃগুর (cliff) অস্তিত্ব থাকবেই। কালক্রমে ভৃগুর খাড়া তলের পশ্চাদপসরণের ফলে ভূমির উচ্চতা হ্রাস পায় এবং সমতল ভূপ্রকৃতি বা পেডিমেন্ট (pediment) সৃষ্টি হয়। পরিশেষে বিভিন্ন পেডিমেন্ট একত্রিত হয়ে পেডিপ্লেন (pedeplain) নামক সমভূমি সৃষ্টি করে। পেডিপ্লেনের ঢাল অবতল (concave) প্রকৃতির হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার শুষ্ক অঞ্চলে কিং তাঁর এই মডেল অনুসারে পেডিপ্লেন ও না প্রতিরোধকারী ইনসেলবার্জ (incelberj)- এর ব্যাখ্যা দেন।
★ঢাল বিবর্তনে উডের মডেল Wood's Model on Evolution of Slope
ভূবিজ্ঞানী অ্যালান উড (Allan Wood, 1942) ঢালের জ্যামিতিক শ্রেণিবিভাগের সমর্থক ছিলেন। এই চিন্তাধারায় তিনি 1942 সালে ঢাল বিবর্তনের এক অভিনব তত্ত্ব দেন। উডের মতে উন্মুক্ত শিলাস্তারে আবহবিকার হলে খাড়া ঢালের সৃষ্টি হয়। তিনি এই ঢালকে উল্লাস খাড়া ঢাল বা মুক্ত পৃষ্ঠ (free face) নামে অভিহিত করেছেন।
● মূল ধারণা (Main Idea)
উড বিশ্বাস করেন খাড়া ঢালযুক্ত মুক্ত পৃষ্ঠ অঞ্চলের পাদদেশে ট্যালাস জাতীয় পদার্থ সজ্জিত হয়। দীর্ঘকালীন এই সঞ্চয়ে প্রতিসম চাল তৈরি হয়। এই প্রকার চালকে কনস্ট্যান্ট (constant) বা অপরিবর্তিত (unchanged) বা ট্যালাস (talus) ঢাল বলে। এটি সাধারণত খাড়াই ঢালের পাদদেশের অবতল ঢালের সাথে স্পর্শকরূপে অবস্থান করে। পরবর্তীকালে এই ট্যালাস ঢালের উপরও জয় হতে দেখা যায়। তখন ট্যালাস ঢালটি ক্রমশ অবলাকৃতি ধারণ করে।
● ঢালের বিবর্তন (Evolution of Slope) :
উত্তের ঢাল বিবর্তন তত্ত্ব নিম্নলিখিতভাবে বিশ্লেষণ করা যায়
1. প্রথমে একটি নাড়া মুক্ত পৃষ্ঠ (free face) ভূমিভাগের উপরিভাগে উত্তল (convex) ঢালের সৃষ্টি হবে। একে পাহাড়ের চূড়ার উত্তল ঢাল (summital convexity) বলে।
2. এই সময় ভূমিভাগের নিম্ন অংশে অবতল ঢাল থাকে। একে পাদদেশীয় অবতল ঢাল (pediment concavity) বলে।
3. এই দুই ঢালের মধ্যবর্তী অংশে ঋজুরেখ ঢাল (Straight বা rectilinear slope) দেখা যায়। এতে ধ্রুবক ঢালও (constant slope) বলা হয়। এই ঢালের উপরিভাগ একটানা সমান কোণবিশিষ্ট হয়। ধ্রুবক ঢাল তৈরি হলে ঢালের সমপরিমাণ পশ্চাদপসরণ ঘটে ফলে পাদদেশীয় ঢালের উদ্ভব হয়।
4. একসময় পাদদেশীয় অবতল ঢাল ও শীর্ষদেশীয় উত্তল ঢাল বাছাকাছি আসে অর্থাৎ ঋজুরেখ ঢালের দৈর্ঘ্য কমতে থাকে। অবশেষে সমগ্র অংশে অবতল-উজ্জ্বলীয় (concavo convex) ঢালের দৃষ্টি হয়। পরবর্তীকালে সমগ্র ভূমিরূপ উচ্চতা হারিয়ে সমতল প্রকৃতির হয়।
5. কালক্রমে পাদদেশীয় ঢালের সমান্তরাল পশ্চাদপসরণ হলে আবার নতুন করে পাদদেশীয় ঢালের উদ্ভব হবে। এভাবেই বিবর্তন চলতে থাকবে।
● সমালোচনা (Criticism)
(1) অ্যালান উড উপত্যকার ঢালের আকৃতি নিয়ে ধ্রুবক ঢালের (constant slope) কথা বলেছেন যা অনেক ভূবিজ্ঞানীর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
(2) এটি জ্যামিতিক ঢালের দৃষ্টিভঙ্গির উপর দাঁড়িয়ে, ফলে চালের উৎপত্তিগত (genetic) শ্রেণিবিভাগের ব্যাখ্যা এই বিবর্তন তত্ত্বে পাওয়া যায় না।
(3) এটি একটি অতি সরলীকরণ ধারণা মাত্র। বাস্তবে ভূমিরূপের বিবর্তন অনেক বেশি জটিল প্রক্রিয়া
(4) উড বিভিন্ন ধরনের ঢালের আকারের কথা বলেছেন, কিন্তু সৃষ্টির পেছনে সঠিক বিজ্ঞানকে হাজির করতে পারেননি।