welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

প্রোজেক্ট টাইগার বা ব্যাঘ্র সংরক্ষণ প্রকল্প (Project Tiger)

প্রোজেক্ট টাইগার বা ব্যাঘ্র সংরক্ষণ প্রকল্প (Project Tiger)



ভূমিকা: 

ভারতে বন্যপ্রাণী বিশেষতঃ বাঘের সংখ্যা উত্তরোত্তর লোপ পেতে শুরু করেছে। চোরা শিকারীর আক্রমণই মূলত-এর জন্য দায়ী। অরণ্যের সংকোচনও বাঘের বিচরণ ক্ষেত্রের আয়তন হ্রাস করে ব্যাঘ্র জনসংখ্যায় চাপ দিয়েছে। এজন্য ১৯৭২ সালে গৃহীত হয়েছে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ প্রকল্প যাতে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার রক্ষা ও সংখ্যাবৃদ্ধি করা যায়।


প্রকল্পের উদ্দেশ্যঃ 

প্রাকৃতিক পরিবেশে স্বস্থানে (In situ) বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি এই প্রকল্পের আপাত উদ্দেশ্য হলেও বাঘের প্রাকৃতিক আবাসস্থল সংরক্ষণের গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ায় অন্যান্য বন্য প্রাণী ও উদ্ভিদও সংরক্ষিত হবে। মনে রাখতে হবে বাঘ খাদ্য শৃঙ্খলের শীর্ষে অবস্থান করে। সুতরাং বাঘ সংরক্ষণের অর্থ এই খাদ্য শৃঙ্খলের অন্যান্য শ্রেণির জীবকূলেরও সংরক্ষণ।


প্রকল্পের মূল্যায়ণ: 

১৯৭৩ সালের ১লা এপ্রিল চালু হয়েছে 'প্রোজেক্ট টাইগার' বা ব্যাঘ্র সংরক্ষণ প্রকল্প। এটি একটি অন্যতম সফল বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ প্রকল্প। ভারতবর্ষ জুড়ে যে সকল জীব ভৌগোলিক অঞ্চল রয়েছে, সে সকল অঞ্চলে বাঘের বিচারণক্ষেত্র বেছে নিয়ে গঠিত হয়েছে ব্যাঘ্র সংরক্ষণ প্রকল্প।


প্রকল্পের গতিপ্রকৃতিঃ

 বর্তমানে ৪০টি ব্যাঘ্র প্রকল্পে (২০০৪) ৩৭,৩৬১ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বাঘের সংরক্ষণ ও বৃদ্ধির প্রচেষ্টা নেওয়া হচ্ছে। যার ফলশ্রুতি ১৯৭০ সালের মাত্র ১,২০০ টি বাঘের থেকে সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ১৯৯০ সালে হয়েছে ৩৫০০ টি। তবে পরিবেশবিদদের মধ্যে এই সংখ্যা বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ ২০০৮-এর একটি ব্যাঘ্র সুমারীতে বলা হয়েছে বাঘের প্রকৃত সংখ্যা বর্তমানে ১,৪১১ টি।


প্রায় ৭০০ কোটি টাকা (১৫.৩ কোটি ডলার) বাজেট ধরে ভারত সরকার ব্যাঘ্র সুরক্ষা বল (Tiger Protection Force) গঠন করার কথা ভেবেছেন। এজন্য অরণ্য সংলগ্ন গ্রাম গুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে বাঘ ও মানুষের সংঘাত ন্যূনতম করতে হবে। উল্লেখ্য ২০০৫-এর একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল সরিস্কা টাইগার রিজার্ভ (Sariska Tiger Reserve)-এ বাঘ লুপ্তপ্রায় হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ২০০৮-এর জুলাই-এর এক সমীক্ষায় বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হলে, উক্ত অভয়ারণ্যে বাঘ সংখ্যা ২১টিতে দাঁড়িয়েছে।


প্রকল্প অঞ্চলের ব্যাপ্তিঃ 

১৯৭৩-৭৪ সালে ভারতবর্ষে ১টি ব্যাঘ্র সংরক্ষণ অঞ্চল ছিল যা প্রায় ১৩,০১৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ব্যাপ্ত ছিল। এর অন্তর্গত ছিল (১) অসমের মানস, (২) বিহারের পালামৌ, (৩) ওড়িশার সিমলিপাল, (৪) উত্তর প্রাদেশের করবেট ন্যাশনাল পার্ক, (৫) মধ্য প্রদেশের কানহা ন্যাশনাল পার্ক, (৬) মহারাষ্ট্রের মেলঘাট (Melghat), (৭) কর্ণাটকের বন্দীপুর, (৮) রাজস্থানের রনথমবোর, (৯) পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন।


ব্যাঘ্র প্রকল্পের আওতায় নতুন নতুন বনভূমি চিহ্নিত হওয়ায় ২০০৭ সালে ৪০টি ব্যাঘ্র প্রকল্পে প্রকল্প অঞ্চলের আয়তন বেড়ে দাঁড়ায় ৩৭,৩৬১ বর্গ কিলোমিটার এলাকা। অন্যান্য ব্যাঘ্র প্রকল্পগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য রাজস্থানের সরিস্কা, মধ্য প্রদেশের ইন্দ্রাবতী, অস্ত্রপ্রদেশের নামধাপা, পশ্চিমবঙ্গের বক্সা প্রভৃতি।


প্রকল্পে করণীয়:


ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকাগুলিকে দুটি অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছে-ক. কোর (Core) বা অরণ্যের গভীরতম এলাকা খ. বাফার (Buffer) বা কোর অরণ্যের বাইরে মূল বনাঞ্চল। বলা হয়েছে-


কোর এলাকায়, সমগ্র ধরনের অবাঞ্ছিত মনুষ্যকৃত হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে এবং বাফার অঞ্চলটিতেও মানুষের হস্তক্ষেপ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।


• যে সকল বাস্তুতন্ত্র ইতিমধ্যেই মানুষের হস্তক্ষেপে ক্ষতিগ্রস্ত সেগুলির পুনরুদ্ধার করে পূর্বাবস্থা ফিরিয়ে দিতে হবে। 

• উদ্ভিদ ও প্রাণী জগতে পরিবর্তন কী ঘটছে তার তদারকি করতে হবে এবং বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত গবেষণা চালাতে হবে।


•চোরাশিকার বন্ধ করতে হবে। এই উদ্দেশ্যে চোরা শিকার প্রবণ অঞ্চলগুলিকে চিহ্নিত করে এ সংক্রান্ত মানচিত্র তৈরি করতে হবে।


• বন্য প্রাণীর স্থানগত বন্টন নির্ধারণ ও তার গতিবিধি যথাসম্ভব তদারকি করতে হবে।


• যোগাযোগ ও সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে চোরা শিকারী ও অসাধু বনকর্মীদের ধরতে হবে।


• ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থার (Geographical Information System) সাহায্য নিয়ে ব্যাঘ্র মানচিত্র (Tiger Atlas) তৈরি, ব্যাঘ্র বাসস্থল ও তার মূল্যায়ন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। দেশে এই উদ্দেশ্যে ক্ষেত্র পরিসংখ্যান সংগ্রহ ও তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে।


ভারতে এই লক্ষ্যে কাজও শুরু হয়েছে। উপগ্রহ মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে ১:৫০,০০০ স্কেলে উদ্ভিদ ও ভূমির ব্যবহারের মানচিত্র তৈরি হচ্ছে। এতে সমোন্নতি রেখা, রাস্তাঘাট, জনবসতি, মৃত্তিকা ও শাসনতান্ত্রিক সীমারেখা নির্দেশিত থাকছে। বিশেষ স্তর বা লেয়ারগুলি (Layers) হবে জনসংখ্যা, পালিত পশু সংখ্যা, জলবায়ুগত তথ্য, কৃষি সংক্রান্ত তথ্য, বন্য প্রাণী ও তার বাসস্থল সংক্রান্ত তথ্যাদি যা বাঘ ও তার বাসস্থল সংরক্ষণ ও নজরদারিতে সাহায্য করবে।


ইতিমধ্যে বেতার যোগাযোগ ও বন পাহারার ব্যবস্থা জোরদার করায় চোরা শিকার কমছে। দাবানল প্রতিরোধ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। গ্রামবাসীদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তৈরি জলের সহজ প্রাপ্তি ও ঘাসের আবরণ সুরক্ষার দিকে যত্ন নেওয়া হচ্ছে যাতে বাথসহ বন্যপ্রাণীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। হচ্ছে। ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকায় পশুচারণ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। বনে


এক একটি ব্যাঘ্র প্রকল্পে রয়েছে একটি স্টিয়ারিং কমিটি ও একজন ফিল্ড ডিরেক্টর। সারা দেশে ব্যাঘ্র প্রকল্পগুলির মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য রয়েছে একজন পূর্ণ সময়ের ডিরেক্টর। আশা করা যায় ব্যাঘ্র প্রকল্প সার্থকভাবে রূপায়িত হবে এবং বাঘের আবাসস্থল তথা বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণের প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হবে।



Middle post ad 01