নিশ (Niche) বা বাস্তুতান্ত্রিক নিশ (Ecological Niche)
কোনো জীবের বাস্তুতান্ত্রিক নিশ হল জীবটির "ঠিকানা ও কর্মধারা" (Address & Profession)। ঠিকানা হল এর হ্যাবিট্যাট যেখানে জীবটি বসবাস করে এবং এর কর্মধারা হল খাদ্য শৃঙ্খলে এই জীবটির অবস্থান। সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার-এর ঠিকানা হল এই বনভূমির অন্তঃভাগ (Core habitat) এবং এর কর্মধারা হ'ল এর শিকার জীবন যে কর্মক্ষেত্র বিস্তৃত বনের প্রান্তভাগ পর্যন্ত যেখানে হরিণ, বাইসন বা অন্যান্য তৃণভোজী প্রাণীদের প্রাধান্য এবং এই কর্মের প্রয়োজন ভক্ষণের জন্য অর্থাৎ বাঘ-এর বেঁচে থাকার জন্য। তেমনি বক পাখীর বাসস্থল হল জলাভূমি এবং এর কর্মধারা হল মাছ শিকার ইত্যাদি।
সুতরাং বাস্তুতন্ত্রে জীব সম্প্রদায় যে ভূমিকা পালন করে তাকেই বলে নিশ (Niche)। হ্যাবিট্যাটের সঙ্গে এর পার্থক্য হল হ্যাবিট্যাট জীব-এর বাসস্থল বা যেখানে জীব বসবাস করে সেই স্থান তথা তার পরিবেশকে বোঝায়। কিন্তু এর নিশ হল উক্ত জীব যেভাবে তার প্রাকৃতিক ও জৈব পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্কিত তার পূর্ণাঙ্গ ভূমিকার বর্ণনা। বাস্তুতন্ত্রে নিশ-এর গুরুত্ব অত্যাধিক। তবে এই নিশ নির্ধারণ একটি কঠিন তথ্যানুসন্ধানী প্রক্রিয়া।
প্রতিটি জীব প্রজাতির নিজস্ব নিশ (Niche) স্বীকার্য্য। যদি কোনো একটি নির্দিষ্ট বাসস্থলে দুটি প্রাণী প্রজাতি থাকে তবে উভয়ে একই নিশ বজায় রাখবে এবং মিলে মিশে বাস করবে এই ধারণা বাস্তবোচিত নয়। কারণ ডারউইনের মতানুসারে, প্রকৃতির নিয়ম অনুসারে বাঁচার তাগিদে একে অপরকে হটিয়ে দিতে বা নির্মূল করে দিতে সচেষ্ট হবে। এটি নিম্নে আরও একটু বিশদ আলোচিত হল।
গজের প্রতিযোগিতামূলক বিতাড়ন নীতি (Gause's Competitive Exclusion Principle):
ডারউইনের যোগ্যতমের বাঁচার অধিকার (Survival of the fittest) তত্ত্বকে অনুসরণ করে বিজ্ঞানী গজ (Gause) যে ধারণা দিয়েছেন তা পরবর্তীকালে 'গজের প্রতিযোগিতামূলক বিতাড়ন নীতি' (Gause's Competitive Exclusion Principle) হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। গবেষণাগারে ইষ্ট (Yeasts) ও প্রোটোক্লিস্ট (Protoclests) যে দুটি হ'ল ঘনিষ্ঠ সম্পর্কিত, এদের সহাবস্থান বিষয়ে অনুসন্ধান করে বিজ্ঞানী গজ এই সিন্ধান্তে এসেছেন যে বিরল ক্ষেত্রেই দুটি সমধর্মী প্রজাতি একই নিশ-এ অবস্থান করে। এরা একটি অপরটির তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থান বুঝে নিয়ে খাদ্যের দখল নেয় ও জীবন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এবং একে অপরকে বিতাড়িত করে। বস্তুত দুটি প্রজাতি যতই সমধর্মী হোক না কেন, তাদের জীবনধারণে পার্থক্য থাকবেই এবং একই কারণে এরা ভিন্ন ভিন্ন নিশ অবলম্বন করবে। তাই এদের সহাবস্থানের বিষয়টি নির্ভর করবে প্রজাতি দুটির মধ্যে ঐক্যের চেয়ে অনৈক্য কতটা বেশি বা কম তার ওপর যা একে অপরকে মেনে নেবে বা বাতিল করবে।
শান্তিনিকেতনে সোনাঝুড়িতে মৌসুমী পর্ণমোচীর স্বাভাবিক বাসভূমিতে ইউক্যালিপ্টাস সৃজন করে দেখা গেছে ইউক্যালিপ্টাস বনায়নে সাফল্য এসেছে ঠিকই কিন্তু অন্যান্য পর্ণমোচী বৃক্ষচারার জন্ম, বৃদ্ধি ও বিকাশ ব্যাহত হয়ে অনেক ক্ষেত্রে উত্ত নির্দিষ্ট সৃজিত বন এলাকা থেকে বিতাড়িত হয়েছে প্রায় বলা চলে। একটি অ্যাকুরিয়াম (Aqurium)-এ লক্ষ্য করবে, অনেক ক্ষেত্রেই বড় মাছের সঙ্গে ছোট মাছ রাখা ছোট মাছের পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়।