welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

পরিবেশ ভূগোলের পরিধি [Scope of Environmental Geography]

 পরিবেশ ভূগোলের পরিধি [Scope of Environmental Geography]


পরিবেশ ভুগোলের আলোচনা ক্ষেত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপক্ষেত্র হল পরিবেশ ভূগোলের পরিধি। এই উপক্ষেত্রটি বর্তমানে পরিবেশ ভূগোলের যথার্থতার দাবি রাখছে। পরিধির মধ্যে দিয়ে একাধারে যেমন পরিবেশ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানের উপলব্ধি হয়, তেমনিই পরিবেশীয় ভূগোলের অসীমতা সম্পর্কেও জ্ঞান অর্জিত হয়। পরিবেশ ভূগোলের এই অতি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র দুটি নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হল।


পরিবেশ ভূগোলের সামগ্রিক আলোচনা ক্ষেত্রের পরিসরে থাকা এক অংশ হল পরিধি (scope)। ভূগোলের অন্যান্য শাখার ন্যায় পরিবেশ ভূগোলেরও এক অসীম পরিধি রয়েছে। পরিমাণ ও গুণমানগত এই দ্বৈত দিক থেকে বিচার করে দেখলে বোঝা যায় যে, পরিবেশ ভূগোলের পরিধি কতটা ব্যাপক। অধ্যাপক Savindra Singh-এর মতানুযায়ী, তিনটি মূল বিষয় সংঘবন্ধ হয়ে পরিবেশ ভুগোলের পরিধিটি সৃষ্টি করেছে।


(a) প্রথম বিষয় (First Matter) 

পরিবেশ ভূগোলের পরিধি গঠনে সাহায্যকারী প্রথম বিষয়টি হল— পরিবেশের মৌলিক ধারণা এবং মানুষ ও সমাজের সাথে এর সম্পর্ক। এই বিষয়টি মূল বিষয় হিসাবে থাকলেও এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়াবলি যুক্ত নয় আছে। এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়াবলিগুলি হল- পরিবেশ ভূগোলের সংজ্ঞা, পরিবেশ ভূগোলের অর্থ, পরিবেশ ভূগোলের বৈঠা, পরিবেশ ভূগোলের প্রয়োজনীয়তা, পরিবেশ ভূগোলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, পরিবেশ ভূগোলের গতিময়তা, পরিবেশ ভূগোলের দৃষ্টিভঙ্গি, পরিবেশ ভূগোলের নৈতিকতা, পরিবেশ ভূগোলের ভিত্তি, পরিবেশ ভূগোলের প্রকৃতি, পরিবেশ ভূগোলের গুরুত্ব, পরিবেশ ভূগোলের মৌলিক ধারণা, পরিবেশের সংজ্ঞা, পরিবেশের অর্থ, পরিবেশের বৈশিষ্ট্য, পরিবেশের গতিময়তা, পরিবেশ দৃষ্টিভঙ্গি পরিবেশের গুরুত্ব, পরিবেশের গঠন, পরিবেশের প্রকারভেদ, বাস্তুতন্ত্র ও বাস্তুসংস্থান, বাস্তুতন্ত্রের মৌলিক ধারণা, বাস্তুতন্ত্রের নীতি, মানুষ ও পরিবেশ সম্পর্ক, পরিবেশ প্রক্রিয়া, পরিবেশ প্রক্রিয়ার নীতি। এই আলোচ্য বিষয়গুলির প্রত্যেকটি একে অপরের সঙ্গে গভীর আন্তঃসম্পর্কে লিপ্ত। এই বিষয়গুলি সংঘবদ্ধ হয়ে পরিবেশ ভুগোলের পরিধির এক অংশকে পূর্ণ করে।


(b) দ্বিতীয় বিষয় (Second Matter) : 

পরিবেশ ভুগোলের পরিধি গঠনে অংশগ্রহণকারী দ্বিতীয় বিষয়টি হল বাস্তুসংস্থান ও পরিবেশর অবস্থান। এই মূল আলোচ্য বিষয়টির মধ্যে বেশ কয়েকটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়াবলি যুক্ত হয়ে আছে। এই সংযুক্ত বিষয়াবলি হল—বাস্তুতন্ত্র ও শক্তিপ্রবাহ, ভূ-রাসায়নিকচক্র, বাস্তুতন্ত্রে স্থিতি, বাস্তুতন্ত্রে অস্থিতি, বাস্তুতন্ত্রের উৎপাদনশীলতা, বাস্তুসংস্থানের বাস্তুগত পরিবর্তন, উদ্ভিদ ও প্রাণীর স্থানিক বণ্টন, বায়োমের সংজ্ঞা, বায়োমের অর্থ, বায়োমের বৈশিষ্ট্য, বায়োমের শ্রেণিবিভাগ, পরিবেশের অবনমন, পরিবেশ দূষণ, পরিবেশ অবনমন ও পরিবেশ দূষণের কারণ, ফলাফল ও প্রতিকারের উপায়, পরিবেশ সংকটের সংজ্ঞা, পরিবেশ সংকটের অর্থ, পরিবেশ সংকটের বৈশিষ্ট্য, পরিবেশ সংকটের প্রকৃতি, পরিবেশ সংকটের আয়তন, পরিবেশ সংকটের প্রভাব, পরিবেশ অবনমনের শ্রেণিবিভাগ, পরিবেশ দুষণের প্রকারভেদ, পরিবেশ শাসন কার্যক্রম প্রভৃতি। 2004 সালে Savindra Singh বাস্তুসংস্থানের বাস্তুগত পরিবর্তনকে কালিক বস্তুতান্ত্রিক পরিবর্তন (temporal ecological changes) নামে অভিহিত করেন। অবার, উদ্ভিদ ও প্রাণীর স্থানিক বণ্টনকে দৈশিক ক্ষেত্রে বাস্তুসংস্থানসংক্রান্ত পরিবর্তন (ecological changes in space) নামে অভিহিত করেন। আলোচ্য প্রত্যেকটি উপবিষয় একে অপরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে আন্তঃসম্পর্কিত। এই উপবিষয়গুলি সংঘবন্ধ হয়ে পরিবেশ ভুগোলের পরিধির আরো এক অংশকে পূর্ণ করে।


(c) তৃতীয় বিষয় (Third Matter) : 

পরিবেশ ভুগোলের পরিধি গঠনে অংশগ্রহণকারী তৃতীয় বিষয়টি হল পরিবেশ ব্যবস্থাপনা। এই মূল বিষয়টির মধ্যে বেশ কয়েকটি উপবিষয় সংযুক্ত হয়ে রয়েছে। এই সংযুক্ত বিষয়গুলি হল পরিবেশ ব্যবস্থাপনার সংজ্ঞা, ধারণা, পরিবেশ ব্যবস্থাপনার ভিত্তি, পরিবেশ ব্যবস্থাপনার বৈশিষ্ট্য, নীতি, পরিবেশ ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা, পরিবেশ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, পরিবেশ ব্যবস্থাপনার প্রভাব, বাস্তুতন্ত্রের সম্পদের শ্রেণিবিভাগ, পরিবেশ পরিকল্পনা, পরিবেশ পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্য, নীতি, ভিত্তি, পরিবেশ পরিকল্পনার লক্ষ্য, পরিবেশ পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা, পরিবেশ পরিকল্পনার প্রভাব, পরিবেশগত অভিঘাত মূল্যায়ন, প্রধান পরিবেশ কর্মসূচি, পৃথিবী ব্যাপী পরিবেশগত সমস্যাবলি, জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্ঘটনা, পরিবেশ বিপর্যয় প্রভৃতি। পরিবেশ দূষণের কারণগুলিকে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার করা যেতে পারে। যথা-জনসংখ্যা বৃদ্ধি, বায়ুদূষণ, নগরায়ণ, শিল্পায়ন, অরণ্যচ্ছেদন, আধুনিক উৎপাদনমুখী কলাকৌশল প্রভৃতি। উপরিউক্ত উপবিষয়গুলির প্রত্যেকটি প্রত্যেকটির সঙ্গে নিবিড় আন্তঃসম্পর্কে লিপ্ত। এই উপবিষয়গুলিও সংযুক্ত হয়ে পরিবেশ ভূগোলের পরিধির অবশিষ্ট অংশকে পূর্ণ করে।


উপরিউক্ত বিশ্লেষণভিত্তিক আলোচনা ছাড়াও অধ্যাপক Savindra Singh 2008 সালে নয়টি প্রধান বিষয়কে পরিবেশ ভূগোলের পরিধির মধ্যে নিয়ে আসেন।


এই নয়টি মুখ্য বিষয়গুলি হল-

 (1) ভূ-বাস্তুতন্ত্র (geo-ecosystem),

 (2) বাস্তুতন্ত্রের কার্যাবলি (function of ecosystem),

 (3) কালিক বাস্তুতান্ত্রিক পরিবর্তন (temporal change of ecosystem),

 (4) স্থানিক বাস্তুতান্ত্রিক পরিবর্তন (spatial change of ecosystem), 

(5) মানুষ-পরিবেশ প্রক্রিয়াসমূহ (man-environmental process). 

(6) বিশ্ব পরিবেশ সমস্যা (global environmental problems),

 (7) বিপর্যয় ও দুর্ঘটনা (disaster and accident).

 (8) পরিবেশ অবনমন ও পরিবেশ দূষণ (Environmental degradation and environmental pollution) এবং, 

(9) পরিবেশ ব্যবস্থাপনা (environmental management)। এই বিষয়গুলির প্রত্যেকটির সঙ্গে প্রত্যেকটির এক গভীর সম্পর্ক বর্তমান।


পরিবেশ ভূগোলের পরিধি কোনো একক বিষয়কেন্দ্রিক নয়। বহু উপবিষয়ালির ক্রমসংযুক্তিকরণের ফলে, এই পরিধির জন্ম ও বিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে নব নব উপবিষয় পরিবেশ ভূগোলের পরিধির মধ্যে সংযোজিত হয়ে পরিধির মাত্রা ক্রমবর্ধিত করছে। আশা রাখি, অদুর ভবিষ্যতে এই পরিধির মাত্রা আরো ক্রমবর্ধিত হবে।

Middle post ad 01