welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

নর্মদা আন্দোলন [Narmada Movement ]

 নর্মদা আন্দোলন [Narmada Movement ]


ভারতবর্ষের পশ্চিমবাহিনী নদীগুলির মধ্যে অন্যতম প্রধান নদী হল নর্মদা। নর্মদা নদী 1060 মি. উঁচুতে মহাকাল পর্বতের অমরকণ্টক গুলোর একটি প্রস্রবণ থেকে উৎপত্তি লাভ করে সাতপুরা পর্বতের উত্তর দিকের গ্রস্ত উপত্যকার, মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাতের বেশ কতগুলি অঞ্চল এবং অতি সংবেদনশীল বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে খাম্বাত বা ক্যাম্বে উপসাগরে পতিত হয়েছে। নর্মদা নদীর আরেক নাম রেবা।

 ভারতের গুজরাত ও মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের উদ্যোগে নর্মদা নদী ও তার কয়েকটি উপনদীর ওপর একাধিক প্রকল্পের কাজ হাতে নেওয়া হয়। এই প্রকল্পের মধ্যে ছিল 30টি বৃহৎ বাঁধ প্রকল্প, 135টি মাঝারি বাঁধ প্রকল্প ও 3000টি ক্ষুদ্র বাঁধ প্রকল্প। এই প্রকল্পগুলির মধ্যে অন্যতম প্রধান প্রকল্প ছিল সর্দার সরোবর প্রকল্প। এই প্রকল্পের ভাঁওতামূলক উদেশ্যগুলিকে পর্যালোচনা করে এবং প্রকল্প রূপায়ণের দরুন ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কথা আশঙ্কা করে তৎকালীন পরিবেশবাটী বাস্তুচ্যুতদের ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান প্রভৃতির জন্য যে ব্যাপক আন্দোলনের জন্ম দিয়েছিল, সেই আন্দোলনই 'নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন' বা 'NBA' নামে সুপরিচিত। এই আন্দোলনে বিশেষ ভাবে শামিল হয়েছিলেন উক্ত অঞ্চলের হাজার হাজার আদিবাসী সম্প্রদায়, কৃষক, মানবাধিকার রক্ষাকারীগণ প্রমুখ। নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান করেছিলেন সমাজকর্মী মেধা পাটেকর, বাবা আমতে প্রমুখ। বুকার পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখিকা শ্রীমতি অরুন্ধতী রায় এই আন্দোলনে মেধা পাটেকরের সহযোদ্ধা হিসাবে কাজ করেন। 

1969 সালের 12 ডিসেম্বর বিশেষ আদালত বাঁধ প্রকল্প রূপায়ণে সম্মতি জানায় এবং বিশেষ আদালতের দেওয়া অনুমতি ও ভারত সরকারের পরিবেশ ও বনমন্ত্রকের ছাড়পত্রের প্রভাবে সর্দার সরোবর বাঁধ নির্মাণ কার্যে সমস্ত বাধা সরে যায়। 1985 সালে মেধা পাটেকর ও তাঁর বেশ কিছু সহকর্মীরা প্রকল্প এলাকা এবং প্রকল্প পার্শ্ববর্তী এলাকা পরিদর্শন করেন এবং বেশ কিছু আদিবাসী সম্প্রদায়, কৃষকদের কাছ থেকে জানতে পারেন যে, এই বাঁধ প্রকল্প নির্মাণের জন্য বাস্তুহারাদের সরকার কোনোরূপ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেনি। এর পরবর্তী সময়ে মেধা পাটেকর ভারত সরকারের পরিবেশ ও বন মন্ত্রকের কাজ থেকে বেশ কিছু তথ্য জানতে চান এবং তৎসহ বিশ্বব্যাংক এই বাঁধ প্রকল্পের বাস্তবায়নের জন্য কতটা আর্থিক তহবিল মঞ্জুর করেছে সেটাও জানতে চান। এর পরবর্তী সময়ে মেধা পাটেকরের সঙ্গে সরকারের ব্যাপক সংঘাত বাধে এবং নর্মদাকে বাঁচানোর জন্য আন্দোলন শুরু হয়। 

এই বাঁধ প্রকল্পের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল গুজরাত ও মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের খরা প্রবণ অঞ্চলগুলিকে সেচ ব্যবস্থার আওতায় এনে কৃষিজ পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, পরিবহন, পর্যটন, শিল্পস্থাপন, মৎস্যচাষ প্রভৃতি অর্থনৈতিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচির রূপায়ণ করা ইত্যাদি। নর্মদা প্রকল্পের উদ্দেশ্যগুলির সুফল পরিবেশবাদীদের নিকট গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি বরং তা মিথ্যা তথা ভাঁওতামূলক প্রতিশ্রুতি বলে মনে হয়েছিল। 

নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনকারীদের মতানুযায়ী, আলোচ্য বাঁধ প্রকল্প পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হলে উক্ত অঞ্চলের মানুষের লাভের থেকে ক্ষতির পরিমাণ বহুলাংশে বর্ধিত হবে এবং যদিও কিছু লাভ হয়, তার সিংহভাগই শহরের মানুষেরা ভোগ করবে ও তার প্রভাবে অশিক্ষিত গ্রামবাসী, আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষেরা বাসভূমি ও সার্বিক সম্পদ হারাবে এবং তৎসহ তাদের জীবিকা অর্জন ব্যাহত হবে। এছাড়াও সার্বিকভাবে সংবেদনশীল বাস্তুতান্ত্রিক পরিবেশের চরম ক্ষতি হবে। গুজরাতের ‘আর্কবাহিনী’, ‘নর্মদা অবসরগ্রস্ত সমিতি', মধ্যপ্রদেশের ‘নর্মদা খতিনভ নির্মাণ সমিতি' প্রভৃতি সংস্থা নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনকারীগণের সঙ্গে আন্দোলনে শামিল হয়েছিল। 

সর্বসাকুল্যে বলতে গেলে বলা যেতে পারে যে, নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন হল আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার রক্ষার উদ্দেশ্যে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সুসংগঠিত এক শাশ্বত অহিংস বহিঃপ্রকাশ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01