welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

বাস্তুতন্ত্রের সংজ্ঞা ও ধারণা (Definition and Concept of Ecosystem)

 বাস্তুতন্ত্রের সংজ্ঞা ও ধারণা (Definition and Concept of Ecosystem) : 

পৃথিবীতে নানান ধরনের জীবের (উদ্ভিদ ও প্রাণী) অস্তিত্ব চোখে পড়ে। কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানে বসবাসকারী জীব সম্প্রদায়ের বিভিন্ন প্রজাতির এবং ওই স্থানের অজীব উপাদানসমূহের মধ্যে একটি পারস্পরিক মেলবন্ধন বা সম্পর্ক গড়ে ওঠাকে বাস্তুতন্ত্র বলা হয়। বাস্তুতন্ত্র শব্দটি ইকোসিস্টেম' শব্দের বাংলা পরিভাষা। জীববিজ্ঞানের যে শাখায় জীব এবং পরিবেশের আন্তঃসম্পর্ক আলোচিত হয়, তাকে 'বাস্তুবিদ্যা' বা 'ইকোলজি' (Ecology) বলে।

 বাস্তুতন্ত্র বা ইকোসিস্টেম হল প্রকৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ অথবা Ecological System-এর সংক্ষিপ্তরূপ। এটি জীবজগৎ এবং তার চারপাশের ভৌত পরিবেশকে নিয়ে গঠিত একটি কার্যকরী একক, যেখানে উদ্ভিদ জগৎ এবং প্রাণী জগৎ পরস্পরের সঙ্গে এবং তাদের পারিপার্শ্বিক ভৌত পরিবেশের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কে আবদ্ধ থাকে।

Ecosystem” শব্দটি 1935 খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম এ. জি. ট্যান্সলে (A. G. Tansely) ব্যবহার করেন। ‘Ecosystem’ শব্দটি দুটি শব্দের সম্মিলিত রূপ। 'Eco' শব্দের অর্থ পরিবেশ বা 'Environment' ও 'System' শব্দের অর্থ রীতি বা নীতি। এ. জি. ট্যাপলে-এর মতে, জীবগোষ্ঠী ও তাদের প্রাকৃতিক

পরিবেশ যখন আন্তঃক্রিয়ার মাধ্যমে একটি বাস্তুসংস্থানগত একক রূপে কাজ করে তখন তাকে 'বাস্তুতন্ত্র' বা 'Ecosystem' বলা হয়।

বিভিন্ন বিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে Ecosystem এর সংজ্ঞা দিয়েছেন।  যেমন-


এ. জি. ট্যান্সলে (A. G. Tansely) (1935): 

"বাস্তুতন্ত্র হল একটি ক্রিয়ামূলক একক যেখানে পারিপার্শ্বিক পরিবেশের অন্তর্গত জীবজ এবং অজীবজ উপাদান একত্রে পরস্পরের উপরে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া করে।" (a particular category of physical systems, consisting of organisms and inorganic components in a relatively stable equilibrium, open and of various size and kinds.") "Ecosystem" বলে।”

(teracting System), যা এক বা একাধিক জৈব এবং ভৌত উভয় উপাদান দ্বারা গঠিত কার্যকরী একক।"


ক্লার্ক (Clarke) (1954) 

"বসতির জৈব ও ভৌত উপাদান একত্রে যে বসবাস নীতি গড়ে তোলে, তাকে এফ. আর. কোর্সবার্গ (F. R. Courseberg) (1963): "Ecosystem" হল কার্যকরী আন্তঃক্রিয়া সিস্টেম (In- হুইটাউয়াস (Whittauas) (1960) : “উদ্ভিদ ও প্রাণী সম্প্রদায় এবং পরিবেশ একটি বিশেষ রীতিতে একত্রে কাজ করে এবং উভয়ের একত্রে কাজ করার পদ্ধতিকে Ecosystem বলে।”


স্মিথ (Smith) (1966) : 

“ইকোলজির মৌল গঠনমূলক ও কার্যকরী একক হল Ecosystem."

মাধব গ্যাডগিল (Madhab Gadgil) (1989) : 

কোনো এককের পরিবেশের প্রেক্ষিতে তার চারপার্শ্বস্থ সব কিছুই হল বাস্তুতন্ত্র। (“It is anything and everything surrounding an individual in relation to its environment.")। এ. এন. স্টুলার ও এ. এন. স্টুলার (A. N. Strahlar & A N. Strahlar) (1976): উপাদানের মোট একত্রীভবনের সঙ্গে একটি জীবগোষ্ঠীর মধ্যেকার আন্তঃক্রিয়াকে বাস্তুসংস্থান বা বাস্তুতন্ত্র সিস্টেম বলে।

 ডাম (Odum) (1963) : 

“প্রকৃতির দুটি মূল কার্যকরী একক, জীবগোষ্ঠী এবং তাদের জড় পরিবেশ যখন পারস্পরিক আন্তঃক্রিয়া করে এবং একে অন্যের ধর্মকে প্রভাবিত করে, তখন তাকে বাস্তুতন্ত্র বলে।”

সি. সি. পার্ক (C. C. Park) (1980):

 “Ecosystem হল একটি অঞ্চলের সমস্ত প্রাকৃতিক জীব ও পদার্থের সমষ্টি এবং তাকে প্রাকৃতিক ভূগোলের মুক্ত সিস্টেমের বা Open System-এর একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।”

পরিশেষে বলা যায়, যে প্রণালী বা নিয়মের মাধ্যমে কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানে বসবাসকারী জীব সম্প্রদায় এবং ওই স্থানের অজীবজ উপাদানগুলির আন্তঃক্রিয়ায় উদ্ভূত নির্দিষ্ট উপাদানের বিনিময় ঘটে, তাকে Ecosystem বলে। প্রকৃতপক্ষে প্রণালীই হল বিভিন্ন উপাদানের মিলিত বা সংযুক্ত একটি একক। মানবদেহ হল একটি প্রণালী যা বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে গঠিত, যা এককভাবে ক্রিয়াশীল। প্রকৃতিতে মূলত তিন ধরনের প্রণালীর উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। যেমন- (i) বিচ্ছিন্ন প্রণালী (Isolated Systemn), (ii) বন্ধ প্রণালী (Closed System), (iii) মুক্ত প্রণালী (Open System ) ।


(i) বিচ্ছিন্ন প্রণালী (Isolated System) :

 এই প্রণালী প্রধানত প্রকৃতি বা পরিবেশ থেকে শক্তি বা পদার্থ গ্রহণ বা বর্জন করে না। প্রকৃতিতে বিচ্ছিন্নভাবে প্রণালীগুলি অবস্থান করে। 

(ii) আবদ্ধ প্রণালী (Closed System) :

 আবদ্ধ প্রণালীর ক্ষেত্রে প্রণালীর ক্রিয়াশীল অবস্থায় শক্তি বা পদার্থের অনুপ্রবেশ বা বহির্গমন ঘটে না।

(iii) মুক্ত প্রণালী (Open System) :

 প্রণালী চলাকালীন শক্তি বা পদার্থ পরিবেশ থেকে প্রণালীর মধ্যে প্রবেশ ও বহির্গমন করতে পারে।

পৃথিবীতে অবস্থানকারী বিভিন্ন ধরনের বাস্তুতন্ত্রগুলিকে দুটি দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্লেষণ করা যায়। যথা- (i) সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি (Hological Approach) ও (ii) আংশিক দৃষ্টিভঙ্গি (Merological Approach)


(i) সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি (Hological Approach) : 

এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে কোনো বাস্তুতন্ত্রের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলিকে সমষ্টিগতভাবে নির্ধারণ করা হয় এবং এই দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রয়োজনীয় উপাদানগুলির বিচার-বিশ্লেষণ করা হয়।  

(ii) আংশিক দৃষ্টিভঙ্গি (Merological Approach) : 



এই দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রথমে বাস্তুতন্ত্রের নির্দিষ্ট উপাদানগুলির এককভাবে বিশ্লেষণ করা হয়। এর পরবর্তী পর্যায়ে উপরিউক্ত বিশ্লেষণ থেকে প্রাপ্ত তথ্য একত্রিত করে সমগ্র বাস্তুতন্ত্রের সম্পর্কে ধারণা অর্জন করা হয়। বিচারে ক্রিয়াশীলতার নিম্নলিখিত বাস্তুতন্ত্রের বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলি তাৎপর্যপূর্ণ। যেমন- (a) শক্তিপ্রবাহ (Energy Flow), (b) খাদ্যশৃঙ্খল (Food Chain), সময়গত (c) স্থানগত জীববৈচিত্রা (Spatial and Temporal Biodiversity), (d) জৈব ভূ-রাসায়নিক চক্র (Bio Geo-Chemical Cycle), (e) বাস্তুতন্ত্রের বিকাশ ও বিবর্তন (Development and Evolution of Ecosystem), (f) মুখ্য ও গৌণ উৎপাদনশীলতা (Primary and Secondary Productivity) এবং (g) স্বনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিবর্তন ( Homeostasis and Feedback)।


শুধুমাত্র মানুষের প্রয়োজনে বাস্তুতন্ত্রের গুরুত্ব রয়েছে তা নয়, জীবজগতের অন্যান্য স্বার্থেও এর গুরুত্ব যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। বাস্তুতন্ত্র নিম্নলিখিত বিষয়গুলি সম্বন্ধেও অনেক তথ্য প্রদান করে- (i) সৌরশক্তির প্রাপ্যতা, (ii) সৌরশক্তির ব্যবহার, (iii) খনিজ সম্পদের ব্যবহার ও তাদের পুনঃচক্র, (iv) মোট ও নীট উৎপাদন ক্ষমতা, (v) বিভিন্ন জীব সম্প্রদায়ের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক এমনকি পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্ক, (vi) সম্পদের সংরক্ষণ, (vii) দূষণ প্রতিরোধ এবং (viii) সর্বাধিক উৎপাদনের লক্ষে সম্পদের যোগান প্রভৃতি।

Middle post ad 01