বাস্তুবিদ্যার ধারণা (Concept of Ecology)
ইংরেজি ‘Ecology' শব্দটি দুটি গ্রিক শব্দের সমন্বয়ে গঠিত, যথা Oikos' যার অর্থ বাসস্থান এবং Logos যার অর্থ জ্ঞান। অর্থাৎ, 'Ecology' শব্দটির সম্পূর্ণ অর্থ হল জীবের বাসস্থান সম্পর্কে জ্ঞানার্জন। 1866 সালে জার্মান বিজ্ঞানী হেকেল ( Haeckel) প্রথম Oekologic শব্দটি ব্যবহার ও প্রয়োগ করেন। তাঁর মতে, পরিবেশের সঙ্গে জীবের সম্পর্কই হল বাস্তুবিদ্যার প্রধান বিষয়বস্তু। এরপরে বহু বিজ্ঞানী ইকোলজি' শব্দটি নানাভাবে ব্যবহার করেন। অনেকের মতে, 'ইকোলজি' হল “বিজ্ঞানসম্মত প্রাকৃতিক ইতিহাস'। কেউ কেউ আবার ইকোলজি'কে জৈব সম্প্রদায় বিদ্যা' এবং 'গোষ্ঠী ও জনসংখ্যা বিজ্ঞান' ইত্যাদি নামেও অভিহিত করেন। অতএব উপরিউক্ত আলোচনা থেকে ‘ইকোলজি'-র সংজ্ঞা দেওয়া যায় যে, “যে বিজ্ঞানে উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের পারস্পরিক সম্পর্ক আলোচনা করা হয়, তাকে ইকোলজি বা বাস্তুবিদ্যা বলে।”
এই প্রসঙ্গে বলা যায়, পৃথিবীর স্থলমণ্ডল (Lithosphere), বারিমণ্ডল (Hydrosphere) ও বায়ুমণ্ডলের (Atmosphere) যেখানে জীবের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়, তাকে জীবের বসতিস্থান চিত্র বলা হয়। এই প্রসঙ্গে Clements এবং Shelford (1939) বলেছেন যে, “একটি নির্দিষ্ট প্রজাতি বা অনেকগুলি প্রজাতি বা জীবগোষ্ঠীকে সংবেষ্টিত করে পরিবেশের যে প্রাকৃতিক ও রাসায়নিক অবস্থার আপেক্ষিক স্থান তৈরি হয়, তাকে বাসস্থান (Habitat) বলে।”
বহু জীববিজ্ঞানী বাস্তুবিদ্যার নানা সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। তাঁদের দেওয়া সংজ্ঞাগুলিকে নীচে উল্লেখ করা হল- আর্নেস্ট হেকেল (Ernst Haeckel) (1869) এর মতে, বাস্তুবিদ্যা বলতে জৈব ও অজৈব উভয় পরিবেশের সাথে প্রাণীদের সামগ্রিক সম্পর্ককে বোঝায়” (Ecology as "the total relations of animal to both its organic and inorganic environment.")।
ফ্রেডারিক ক্লিমেন্টস্ (Frederick Clements) (1916)-এর মতে, বাস্তুবিদ্যা হল “সম্প্রদায়ের বিজ্ঞান” (“Science of Community".)।
চার্লস এলটন (Charles Elton) (1972) তাঁর বিখ্যাত বই 'Animal Ecology' তে বাস্তুবিদ্যাকে বৈজ্ঞানিক প্রাকৃতিক ইতিহাস” (“Scientific Natural History.") বলে উল্লেখ করেছেন।
অ্যালেক (Allec) (1949) এর ধারণানুসারে বাস্তুবিদ্যা হল – “জীব ও তার পরিবেশের (ভৌত ও জৈব-উভয়) মধ্যে আন্তঃসম্পর্কের বিজ্ঞান।" “the science of interelationships between living organisms and their environment (both physical and biotic)" |
ইঞ্জিন ওডাম (Engeene Odum) (1963) বাস্তুবিদ্যার সংজ্ঞা প্রসঙ্গে বলেছেন –“বাস্তুবিদ্যা বলতে “প্রকৃতির গঠন ও কার্যাবলির চর্চাকে বোঝায়।” (Ecology as the "Study of the structure and function of nature.")।
অ্যান্ড্রেওয়ার্থ (Andrewarth) (1961)-এর মতে “জীবের বণ্টন ও প্রাচুর্য্যের বিজ্ঞানসম্মত চর্চা হল বাস্তুবিদ্যা” ("Ecology is the scientific study of the distribution and abundance of organisms" I
চার্লস জে. ক্লেরস্ (Charles J. Krebs) (1972)-এর ধারণানুসারে “বাস্তুবিদ্যা হল আন্তঃসম্পর্কের বিজ্ঞাসম্মত চর্চা যা জীবের বণ্টন ও প্রাচুর্য্যেকে নির্ধারণ করে। “Ecology is the scientific study of interactions that determine the distribution and abundance of organisms." I
স্মিথ (Smith) (1977) বলেছেন, বাস্তুবিদ্যা হল একটি বহুসংশ্লেষিত বিজ্ঞান যা জীব ও তার বসবাসের স্থান নিয়ে আলোচনা করে এবং বাস্তুতন্ত্রের উপর গুরুত্ব আরোপ করে” (“a multidisciplinary science which deals with organism and its place to live and focuses on the ecosystem") ।