welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

চিলকা আন্দোলন [Chilka Movement ]

 চিলকা আন্দোলন [Chilka Movement ] 

ভারতবর্ষের বুকে সংঘটিত হওয়া পরিবেশবাদী আন্দোলনগুলির মধ্যে এক অনন্য আন্দোলন হল চিলকা বাঁচাও আন্দোলন। এই আন্দোলনটি ভারতের পরিবেশগত সুরক্ষামূলক আন্দোলনের ক্ষেত্রে এক অতি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপও বটে। চিলকা হল ভারতবর্ষের ওড়িশা রাজ্যের এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যশোভিত এবং পরিবেশগত ভারসাম্যে সুসমৃদ্ধ উপহ্রদ বিশেষ। ভারতের বুকে ব্যবসায়ী টাটা কোম্পানির দ্বারা সম্ভাব্য বর্জ্য সমৃদ্ধ জল দূষণের কবল থেকে চিলকা উপহ্রদকে সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, সেই আন্দোলনই চিলকা বাঁচাও আন্দোলন নামে পরিচিত। ভারতের চিলকা উপহ্রদে টাটা কোম্পানির বাগদা চিংড়ি মাছ চাষের একটি প্রকল্প গঠনের পরিকল্পনাই চিলকা বাঁচাও আন্দোলনের প্রেক্ষাপট রচনা করেছে। এই আলোচ্য প্রকল্পে স্থানীয় প্রচুর সংখ্যক বেকার যুবকদের চাকরি পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়

। কিন্তু এই প্রকল্পটির ফলে স্থানীয় জেলেদের চিলকা উপহ্রদে মাছ শিকার করা নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। এছাড়াও এই উপহ্রদের জলে চিংড়ি মাছের খাদ্য হিসাবে যে পচনশীল গেজিয়ে ওঠা খাদ্যসার ও পুষ্টিদ্রব্য মেশানো হবে, তাতে এই উপহ্রদের জলে দূষণ ঘটবে। আবার অন্যদিকে, এই প্রকল্পটির ফলে চিলকা উপহ্রদের জলে অন্যান্য বহুল প্রকার মাছের আনাগোনা ভয়ংকরভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়ে যাবে, সামুদ্রিক শৈবাল ও জলজ প্রাণীর মৃত্যু ঘটবে এবং উপহ্রদে বহু প্রজাতির পরিযায়ী পাখীদের আনাগোনা যথেচ্ছভাবে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে। এর চূড়ান্ত ফলস্বরূপ পরিবেশীয় সুস্থতা ও বাস্তুব্যবস্থার ভারসাম্য ব্যাপক মাত্রায় বিঘ্নিত হবে। এইরূপ সার্বিক সম্ভাব্য পরিবেশগত সংকটের আশঙ্কায় ওড়িশা রাজ্যের এক প্রাক্তন রাজস্বমন্ত্রী বাঁকা বিহারী দাস মহাশয়ের উদ্যোগে এক মহা আন্দোলন সংঘটিত হয়, এই আন্দোলনই চিলকা বাঁচাও আন্দোলন নামে খ্যাত। 

চিলকা বাঁচাও আন্দোলনকে পূর্ণরূপে সমর্থন করতে এগিয়ে আসে নানান পরিবেশবিদগণ ও পরিবেশ সচেতন মানুষ। এই সকল মানুষের দ্বারা এই আন্দোলন জোরদার রূপ ধারণ করলে 1992 সালের অক্টোবর মাসে আলোচ্য চিংড়ি মাছ চাষ প্রকল্পকে ওড়িশার রাজ্য সরকার পরিবেশগত ছাড়পত্র না দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এর পরবর্তী সময়ে 1993 সালের নভেম্বর মাসে চিলকা উপহ্রদের পরিবেশীয় ভারসাম্য সংরক্ষণের স্বার্থে ওড়িশা হাইকোর্টের -  ডিভিশন বে" চিলকা বাঁচাও আন্দোলনের সপক্ষে রায় প্রদান করে।

 এই রায় প্রদানের পরবর্তী সময়ে টাটা কোম্পানির বাগদা চিংড়ি মাছ চাষের এই প্রকল্পের পক্ষে ও বিপক্ষে থাকা মানুষজনের মধ্যে ব্যাপক বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ শুরু হয়। এর পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি আরো জটিল ও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠলে পুলিশকে গুলি চালনাও করতে হয়। সেই সময় চিলকা বাঁচাও আন্দোলনটি তখনকার মতো অবদমিত হলেও চিলকা উপহ্রদে আলোচ্য প্রকল্পটিকে পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা সংক্রান্ত আন্দোলনটির প্রধান দাবিটি কিন্তু এখনও একই গুরুত্বের সঙ্গে বজায় রয়েছে।

 সার্বিকভাবে বলতে গেলে বলা যেতে পারে যে, চিলকা বাঁচাও আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে একাধারে যেমন চিলকা উপহ্রদের সৌন্দর্যগত অবস্থানকে অক্ষত রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল; ঠিক তেমনি অন্যদিকে এই উপহ্রদকে ঘিরে গড়ে ওঠা প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্যমূলক অবস্থান এবং পরিবেশগত পবিত্রতাকেও সুরক্ষিত করার অতি সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। এই কারণের জনাই ভারতের বুকে পরিবেশবাদী আন্দোলনের ইতিহাসে চিলকা বাঁচাও আন্দোলন হল এক মহিমান্বিত দিকচিহ্ন বিশেষ।

Middle post ad 01