বিশনোই অরণ্য আন্দোলন [ Bishnoi Forest Movement ]
ভারতবর্ষের বুকে যে কটি পরিবেশবাদী আন্দোলন সুসংঘটিত হয়েছিল তার মধ্যে গুরুত্বগত দিক থেকে বিশনোই অরণ্য বাঁচাও আন্দোলন অনন্য। এই পরিবেশবাদী আন্দোলনটি ভারতবর্ষের পরিবেশ সংরক্ষণমূলক আন্দোলনের ক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল দিক চিহ্ন।
বিশনোই অরণ্য বাঁচাও আন্দোলনটি সুসংঘটিত হয়েছিল ভারতের রাজস্থান রাজ্যের বিশনোই এলাকার অরণ্যক্ষেত্রে। এই অরণ্যক্ষেত্রের গাছগুলিকে কেটে ফেলার পরিবেশ বিরোধী ঘটনাটিই বিশনোই অরণ্য বাঁচাও আন্দোলনের পটভূমি রচনা করেছে। বিশনোই এলাকার অরণ্যক্ষেত্রকে বাঁচানোর জন্য যে পরিবেশবান্ধব আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল, সেই আন্দোলনটিই বিশনোই অরণ্য বাঁচাও আন্দোলন নামে সুপরিচিত।
আলোচ্য আলোচনার সাপেক্ষে বলা যেতে পারে যে, এই ক্ষেত্রে বেশ কিছু মুনাফালোভী মানুষের লক্ষ্য ছিল বিশনোই এলাকার অরণ্যক্ষেত্রের গাছগুলিকে কেটে ফেলে সেই কাষ্ঠগুলি চড়া দামে বিক্রি করে বিপুল পরিমাণে অর্থনৈতিক মুনাফা অর্জন করা। কিন্তু বিশনোই এলাকার অরণ্যক্ষেত্রের গাছগুলিকে কেটে ফেলা হলে প্রচুর অরণ্য ধ্বংসের কবলে পড়বে এবং তৎসহ এই অরণ্যের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল প্রাণীরা ব্যাপকভাবে বিপদাপন্ন হয়ে পড়বে।
এর ফলে আলোচ্যক্ষেত্রের বাস্তুব্যবস্থার ভারসাম্য নিদারুণভাবে বিঘ্নিত হবে। এর ফলস্বরূপ সার্বিকভাবে আলোচ্য এলাকার প্রকৃতি ও পরিবেশের সুস্থতা ও স্বাভাবিকতা ব্যাহত হবে। এইরূপ সার্বিক সীমাহীন পরিবেশীয় সংকটের আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে ওই অঞ্চলের স্থানীয় মহিলাগণ গাছগুলিকে ব্রক্ষার তাগিদে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসে এবং জীবনের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও ওই অরণ্যক্ষেত্রের এক একটি গাছকে সন্তানস্নেহে জড়িয়ে ধরে মহা আন্দোলনে ব্রতী হন। এই আন্দোলনই বিশনোই অরণ্য বাঁচাও আন্দোলন নামে খ্যাত। এই আন্দোলনে স্থানীয় মহিলাগণের আন্দোলনী সক্রিয়তার মধ্য দিয়ে পরিবেশবাদী আন্দোলনে নারীশক্তির দক্ষতাকে বলিষ্ঠভাবে তুলে ধরা হয়েছিল।
বলাবাহুল্য, রাজস্থানের বিশনোই এলাকার অরণ্যক্ষেত্রের গাছগুলিকে রক্ষার ব্যাপারে স্থানীয় মহিলাগণের আলোচ্য আন্দোলনমুখী কৌশলটি 1973 সালের ‘চিপকো আন্দোলনে' ঐকান্তিকভাবে অনুসৃত হয়েছিল। সার্বিকভাবে বলতে গেলে বলা যেতে পারে যে, বিশনোই অরণ্য বাঁচাও আন্দোলনটি অরণ্য ধ্বংসের আত্মহননকারী ঘটনাকে প্রতিহত করে অরণ্যের সুরক্ষা ও পরিবেশের সংরক্ষণের চেতনা উভয়কেই সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছিল।