welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

এপিকো আন্দোলন [Appiko Movement]

 এপিকো আন্দোলন [Appiko Movement]


ভারতবর্ষের উত্তরাখন্ড রাজ্যের চিপকো আন্দোলনের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে দক্ষিণ ভারতে নিস্তব্ধ উপত্যকা আন্দোলনের পর এক নতুন পরিবেশগত আন্দোলন সৃষ্টি হয়, এই আন্দোলনই এপিকো আন্দোলন নামে সুপরিচিত। গড়োয়াল হিমালয়ের চিপ্‌কো আন্দোলন দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের উত্তরে অবস্থিত কর্ণাডা জেলার অধিবাসীদের বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল। 1983 সালে ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের সিরসি অঞ্চলের সলকানি বনাঞলে এপিকো আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে।

 উক্ত সময়ে আলোচ্য অঞ্চলে টিম্বার কোম্পানির ঠিকাদাররা যখন কলশ গাছ কাটতে আসে তখন ওই অঞ্চলের অধিবাসীগণ কলশ গাছগুলিকে জড়িয়ে ধরে বনভূমি ধ্বংস ও প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় এক মহা আন্দোলনে শামিল হন, এই আন্দোলনই 'এপিকো আন্দোলন' নামে পরিচিত। কন্নড় ভাষায় 'এপিকো' শব্দের অর্থ হল আলিঙ্গন করা। এপিকো আন্দোলন ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের চারটি পাহাড়ি জেলায় প্রসারিত হয়েছিল। পূর্বঘাট পর্বতের তামিলনাড়ু রাজ্যের বেশ কিছুটা অংশে এপিকো আন্দোলনের প্রভাব প্রতিফলিত হয়। পরবর্তী সময়ে তা ভারতের গোয়া পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। 

এপিকো আন্দোলনের মূল নেতৃত্বে ছিলেন পান্ডুরাম হেজ। এপিকো আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্যগুলি হল পশ্চিমঘাট পর্বতের অবশিষ্ট ক্রান্তীয় বনভূমিকে রক্ষা, নগ্নীভূত অঞ্চলে সবুজায়ন বৃদ্ধি এবং বনজ সম্পদের ওপর জাতীয় চাপ হ্রাস। এপিকো আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে সার্বিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে গভীর জঙ্গলের ভিতর দিয়ে পদযাত্রা, পথনাটিকা, স্থানীয় নৃত্য, লোকসংগীত প্রভৃতি সৃষ্টি করা হয়। রাজ্য সরকার এখন অরণ্যহনন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করার ফলে এপিকো আন্দোলন বিরাট সাফল্য অর্জন করেছে। এপিকো আন্দোলনের কর্মসূচি অনুযায়ী নগ্নীভূত অঞ্চলে সবুজায়ন সৃষ্টি সাপেক্ষে কৃষি বনসৃজন ও সামাজিক বনসৃজন ব্যাপক আকারে প্রসারিত হয়েছিল। 

বলাবাহুল্য, এই বনসৃজন কর্মে আঞ্চলিক বাসিন্দাদের যুক্তকরণের মাধ্যমে আঞ্চলিক বাসিন্দাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ক্রমান্বয়ে বর্ধিত হয়েছে। এপিকো আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে বনাঞ্চলের ওপর চাপ কমিয়ে বিকল্প শক্তির উৎসসমূহ খুঁজে বার করেন আন্দোলনকারীগণ। তাঁরা আলোচ্য অঞ্চলে 2000টি এমন আধুনিক উনুন তৈরি করেছেন যেগুলি কাষ্ঠ সম্পদ ব্যবহারের পরিমাণ 40 শতাংশ হ্রাস করবে। এছাড়াও তাঁরা গ্যাস প্ল্যান্ট নির্মাণ করেছেন বনভূমির ওপর চাপ হ্রাসের জন্য। 

ভারতের সমাজ ব্যবস্থার সর্বস্তরের মানুষের প্রকৃতি সম্বন্ধে মনোভাব পরিবর্তন করতে ও বিপদসংকুল ক্রান্তীয় বনভূমির ওপর ভার হ্রাসের বাস্তবতা বোঝাতে সক্ষম হয়েছে এই আন্দোলন। এই আন্দোলনের ফলে নগ্নীভূত অঞ্চলে সবুজায়নের মাত্রা ধীরে ধীরে বর্ধিত হয়েছে। এপিকো আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষেরা পূর্বের তুলনায় ব্যাপক মাত্রায় সচেতন হয়েছেন। সর্বশেষে বলা যেতে পারে। যে, ভারতবর্ষের বুকে পরিবেশ সংরক্ষণের সাপেক্ষে বিবর্তনমুখী আন্দোলন হিসাবে এপিকো আন্দোলনের সার্বিক রশ্মি ও উজ্জ্বলতা শাশ্বত হয়ে থাকবে।

Middle post ad 01