welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

ভারতে কৃষি ঋণের উৎস (Sources of Agricultural Credit in India)

 ভারতে কৃষি ঋণের উৎস (Sources of Agricultural Credit in India) : 



ভারতে কৃষি ও অন্যান্য অর্থনৈতিক কাজের উদ্দেশ্যে ঋণ সরবরাহের উৎসগুলিকে দু-ভাগে ভাগ করা হয়—


(ক) অপ্রাতিষ্ঠানিক বা বেসরকারি উৎস এবং

 (খ) প্রাতিষ্ঠানিক উৎস। গ্রামীণ ঋণের ক্ষেত্রে অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎসগুলির মধ্যে প্রধান হল-


(i) গ্রামীণ মহাজন, (ii) জমিদার ও জোতদার, (iii) আত্মীয়স্বজন, (iv) ব্যবসায়ী, (v) কমিশন এজেন্ট। অপরদিকে, ঋণের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক উৎসগুলি হল – (i) সমবায় প্রতিষ্ঠান, (ii) সরকার, (iii) বাণিজ্যিক ব্যাংক, (iv) আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাংক। 

[ক] অপ্রাতিষ্ঠানিক বা বেসরকারি উৎস : 

ভারতে গ্রামীণ ঋণ সরবরাহের ক্ষেত্রে 1951 সালে অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎসগুলির অবদান (মোট ঋণের প্রায় 93 শতাংশ) ছিল সর্বাধিক। বেসরকারি অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎসগুলির মধ্যে ঋণ সরবরাহের ক্ষেত্রে প্রভুত্ব করত কৃষিজীবী মহাজন ও পেশাদার মহাজনগণ। মোট গ্রামীণ ঋণের 71 শতাংশেরও বেশি এরাই সরবরাহ করত। মোট কথা, এরা সামগ্রিকভাবে গ্রামীণ অর্থ ও ঋণব্যবস্থা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে দরিদ্র কৃষিজীবীদের যথেচ্ছভাবে শোষণ করত। এ ছাড়া, ঋণ সরবরাহের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক উৎসগুলির ভূমিকা গৌণ। ওই সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকে সংগৃহীত ঋণের পরিমাণ ছিল মোট ঋণের মাত্র 7.2 শতাংশ।


ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি : 

ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষির অনুকূলে সরকারি নীতি ঘোষিত হওয়ায় পরিকল্পনাকালে (1951- 81) ঋণ সরবরাহের ক্ষেত্রে অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎসগুলির অবদান হ্রাস পায়। 1951 সালে যেখানে এই সূত্র থেকে প্রায় 93 শতাংশ ঋণ সরবরাহ করা হয়েছিল, 1981 সালে তা হ্রাস পেয়ে 38.8 শতাংশ হয়। সর্বোপরি, সরকারি নীতির পরিবর্তনের দরুন গ্রামীণ অর্থনীতিতে মহাজনদের দাপট অনেকাংশে খর্ব করা সম্ভবপর হয়েছে। 1981 সালে কৃষিজীবী ও পেশাদার মহাজনগণ মোট ঋণের প্রায় 16.9 শতাংশ সরবরাহ করে।


[খ] প্রাতিষ্ঠানিক উৎস :

 ঋণ সরবরাহের ক্ষেত্রে ক্রমাগত প্রাতিষ্ঠানিক উৎসের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। 1981 সালে এই সূত্র থেকে ঋণ সরবরাহের পরিমাণ 7.2 শতাংশ ( 1951 ) থেকে বৃদ্ধি পেয়ে 61.2 শতাংশ হয়। এই অগ্রগতি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।


[1] সমবায় সমিতি :

 1951 সালে সমবায় সমিতি/ব্যাংকগুলির ভূমিকা ঋণ সরবরাহে ছিল নিতান্ত গৌণ। কার্যত, ব্যাংক জাতীয়করণের (1969) আগে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি কৃষি-অর্থনীতিতে ঋণ সরবরাহে চরম ঔদাসীন্য দেখাত । ফলে, গ্রামীণ ঋণ সরবরাহে সমবায় সমিতি ও সমবায় ব্যাংকগুলিই ছিল বেশি গুরুত্বপূর্ণ। 1981 সালে এককভাবে সমবায় ও সমবায় ব্যাংকগুলি 28.6 শতাংশ ঋণ সরবরাহ করে।


[2] বাণিজ্যিক ব্যাংক : 

ব্যাংক জাতীয়করণের পর থেকে গ্রামীণ ঋণ সরবরাহের ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি অগ্রণী ভূমিকা নেয়। আর, এর ফলেই মাত্র এক দশকের মধ্যেই (1971-1981) ঋণ জোগানে অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎসের গুরুত্ব 70.8 শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে 38.8 শতাংশ হয়। অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎসগুলির মধ্যে আবার মহাজনি কর্তৃত্ব হ্রাস — সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। 1971 সালে কৃষিজীবী ও পেশাদার মহাজনেরা যেখানে মোট ঋণের 36.9 শতাংশ সরবরাহ করত, 1981 সালে তা হ্রাস পেয়ে 16.9 শতাংশ হয়। পক্ষান্তরে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি হয়ে উঠেছে। অনেক বেশি গ্রামকেন্দ্রিক। তাই, এই সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ সরবরাহের অবদান 2.2 শতাংশ (1971) থেকে বেড়ে 28 শতাংশে (1981) দাঁড়ায়।


ভারতে মহাজনি কারবার বহুকাল ধরে চলে আসছে। গ্রামাঞ্চলে অর্থসরবরাহের ব্যাপারে মহাজনি ব্যবসায়ের প্রধান ত্রুটি – মহাজনরা অত্যন্ত চড়া সুদে ঋণ দেয়। এরা সাধারণত ঋণের ওপর 18 থেকে 50 শতাংশ পর্যন্ত সুদ ধার্য করে। কখনো কখনো তা বেড়ে 100 শতাংশে দাঁড়ায়। এই শোষণমূলক সুদের হার কৃষিজীবীকে ঋণের নাগপাশে আজীবন আবদ্ধ করে রেখেছে। মোট কথা, কৃষককে মহাজন ঋণ ফাঁদে বন্ধ করে রেখেছে। রাষ্ট্রীয়করণ: মহাজনদের প্রাধান্য কমাতে হলে প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি। সরকার সমবায় সমিতিগুলির দুর্বলতা দূর করে সমবায়িক ঋণের প্রসার ঘটিয়েছেন। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলিকে গ্রামকেন্দ্রিক করা উদ্দেশ্যে 1969 সালে 14টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের জাতীয়করণ করা হয়। 1980 সালে আরও 6টি বাণিজ্যিক ব্যাংক  ভারতীয় অর্থনীতির সমস্যা ও নীতিসমূহ 265 রাষ্ট্রায়ত্ত করা হয়। কৃষিক্ষেত্রে ঋণের সুযোগ বৃদ্ধি করা ব্যাংক রাষ্ট্রায়ত্তকরণের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য। বিশেষ করে কৃষিঋণের প্রয়োজনীয়তার কথা স্মরণে রেখেই সরকার 1975 সালে আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাংক স্থাপন করে।

 [3] আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাংক :

 গ্রামাঞ্চলে কৃষি, ব্যাবসাবাণিজ্য, শিল্প ও অন্যান্য উৎপাদনশীল কাজকর্মের উন্নয়নের উদ্দেশ্যে মূলত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি, কৃষিশ্রমিক, কারিগর ও ছোটোখাটো উদ্যোক্তাদের ঋণ ও অন্যান্য সুযোগসুবিধা প্রদান করে গ্রামীণ অর্থনীতিকে পুনরায় বাঁচিয়ে তোলা— আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাংকের মুখ্য উদ্দেশ্য। আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাংকগুলি তপশিলিভুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের মতো মর্যাদা পাওয়ার অধিকারী এবং স্বল্প ব্যয়বিশিষ্ট ব্যাংকিং নীতি অনুসারে এগুলি স্থাপিত হবে বলে বলা হয়।


• অগ্রগতি : 

আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাংক স্থাপনের দু-বছরের মধ্যে এই ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়ায় 50-এর মতো। এগুলির ঋণদানের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে থাকে। কার্যত, এই ব্যাংক স্থাপনার পর থেকে ভারতীয় ব্যাংক ব্যবস্থায় এক সার্বিক উন্নতি ঘটে। এই ব্যাংকগুলি প্রধানত ব্যাংকবিহীন অঞ্চলে ও সল্পসংখ্যক ব্যাংকবিশিষ্ট গ্রামাঞ্চলে ব্যাংকের শাখা স্থাপনে উদ্যোগ নেয়। 1975 সালে যেখানে 17টি শাখাসহ 6টি আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাংক কাজ করত, 1998 সালের মার্চ মাসে শাখা ব্যাংকের সংখ্যা বেড়ে 15.102টি এবং আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়ায় 196টি।


এ ছাড়া, কৃষিঋণের ক্ষেত্রে 1982 সালে শীর্ষ ব্যাংক হিসাবে জাতীয় কৃষি ও গ্রামোন্নয়ন ব্যাংকের (The National Bank for Agriculture and Rural Development বা NABARD) স্থাপনা — নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি নিয়ে নীচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হল।

 ■ জাতীয় কৃষি ও গ্রামোন্নয়ন ব্যাংক (NABARD)


• কাজ :

 নাবার্ড—গ্রামাঞ্চলে কৃষি, ক্ষুদ্র শিল্প, হস্তচালিত শিল্প এবং অন্যান্য গ্রামীণ শিল্পের উন্নয়নকল্পে ঋণ- সরবরাহের ব্যাপারে নীতি-নির্ধারণ, পরিকল্পনা এবং রূপায়ণ-সংক্রান্ত যাবতীয় কাজের জন্য সংহত ও একক প্রতিষ্ঠান, অর্থাৎ, কৃষিঋণের ক্ষেত্রে শীর্ষ উন্নয়ন ব্যাংক।


কৃষি পুনঃঅর্থসরবরাহ কর্পোরেশনের (ARDC) মতোই [1] নাবার্ড— বাণিজ্যিক ব্যাংক, আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাংক এবং রাজ্য সমবায় ব্যাংকসমূহকে পুনঃঅর্থসরবরাহের ব্যবস্থা করে থাকে। 

[2] উপরন্তু, নাবার্ড গ্রামাঞ্চলে মাধ্যমিক ও সেবাক্ষেত্রে ঋণব্যবস্থার ভার নিয়েছে, যে ভার ARDC-র ছিল না।

 [3] আবার রিজার্ভ ব্যাংকের মতো রাজ্য সমবায় ব্যাংক ও আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাংকসমূহকে অতিরিক্ত পুনঃঅর্থসংগ্রহের সুবিধা দেয়।

 [4] সংহতিপূর্ণ গ্রামোন্নয়ন কার্যক্রমের জন্যও নাবার্ড থেকে পুনঃঅর্থসরবরাহের সুবিধা পাওয়া যায়।

 [5] গ্রামাঞ্চলে দারিদ্র্য মোচন কার্যক্রমে উন্নয়ন ব্যবস্থা সম্পন্ন করার জন্য নাবার্ড বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনুসন্ধান চালায়। তাহলে দেখা গেল যে, বিগত কয়েক বছরে গ্রামীণ ঋণ সরবরাহের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক উৎসগুলির অংশগ্রহণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।


[4] সমবায় সমিতি :

 বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক উৎসগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হল — সমবায় সমিতি ব্যাংক এবং বাণিজ্যিক ব্যাংক। 1981–1996 এই সময়ের মধ্যে সমবায় সমিতি ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি থেকে ঋণ সরবরাহের পরিমাণ 3.5 শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে 61.2 শতাংশ হয়। আবার, রাষ্ট্রায়ত্তকরণের পর থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি অগ্রণী ভূমিকা নেয়। কৃষিক্ষেত্রে প্রত্যক্ষভাবে ঋণ সরবরাহে বাণিজ্যিক ব্যাংকের অবদান 1.3 শতাংশ [1969] থেকে বৃদ্ধি পেয়ে 28 শতাংশে [1996] দাঁড়ায়। বর্তমানে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি হয়ে উঠেছে গ্রামকেন্দ্রিক। প্রসঙ্গত বলা দরকার যে, ব্যাংক জাতীয়করণের আগে গ্রামীণ কৃষিঋণ সরবরাহের উদ্দেশ্যে সমবায় সমিতি/ব্যাংকের ওপর বিশেষ দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। কিন্তু, ঋণ সরবরাহের ব্যাপারে সমবায় সমিতিগুলির কিছু কিছু দুর্বলতাও লক্ষ করা যায়। ইতিমধ্যে 1960-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে ভারতীয় অর্থনীতিতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে, যার প্রভাব কৃষি-অর্থনীতিতে বিশেষভাবে পড়ে। প্রথমটি সবুজ বিপ্লব। 

সবুজ বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে প্রয়োজন বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগের। পর্যাপ্ত ও সহজ শর্তে ঋণ সম্প্রসারণ করে কৃষিক্ষেত্রে বিনিয়োগ সম্ভবপর। দ্বিতীয় ঘটনাটি ব্যাংক জাতীয়করণ, যার অন্যতম মুখ্য উদ্দেশ্য কৃষিক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঋণের সংস্থান করা। অর্থাৎ, 1970-দশকের গোড়া থেকেই গ্রামীণ ঋণ সরবরাহে বহু সংস্থার দৃষ্টিভঙ্গির' প্রবর্তন করা হয়। এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের ফলেই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলি কৃষিক্ষেত্রে ঋণদানে এগিয়ে আসে। শুধু তাই নয়, বিশেষ করে ঋণের প্রয়োজনীয়তার কথা স্মরণে রেখেই সরকার 1975 সালে গঠন করল আঞ্চলিক গ্রামীণ ব্যাংক। এছাড়া, কৃষিঋণের ক্ষেত্রে 1982 সালে শীর্ষ ব্যাংক হিসাবে NABARD-এর স্থাপনা - নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। তাহলে দেখা গেল যে, বিগত কয়েক বছরে গ্রামীণ ঋণ সরবরাহের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক উৎসগুলির অংশগ্রহণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

Middle post ad 01