ওজোন স্তর ( Ozone Layer) :
বায়ুমণ্ডলে ওজোনের ঘনত্ব সর্বত্র সমান নয়। ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুতে এই গ্যাসের উপস্থিতি অতি নগণ্য। স্ট্যাটোস্ফিয়ারের 15 থেকে 30 কিমি উচ্চতার মধ্যে ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। তাই বায়ুমণ্ডলে স্ট্যাটোস্ফিয়ারে সীমাবদ্ধ ওজোন গ্যাসের পুরু আবরণকে ওজোন স্তর বা ওজোনোস্ফিয়ার বলে।
বায়ুমণ্ডলের ওজোনের ঘনত্বকে পিপিএম (ppm)-এর পরিবর্তে ডবসন এককে প্রকাশ করা হয়। পদার্থবিদ্ গর্ডন ডবসন প্রথম 1920 খ্রিস্টাব্দে স্পেকটোমিটার যন্ত্র ব্যবহার করে ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব পরিমাপ করায়, ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব ডবসন এককে প্রকাশ করা হয়। এক ডবসন একক বলতে একক বায়ুমণ্ডলীয় চাপে 0.001 মিলিমিটার পুরু ওজনের ঘনত্ব বা প্রতি বর্গমিটারে 2.69 × 102 সংখ্যক ওজোন অণুর উপস্থিতিকে বোঝায়। ক্রান্তীয় অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে ওজোনের ঘনত্ব ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। ক্রান্তীয় অঞ্চলে (0° - 30°) এই গ্যাসের ঘনত্ব সর্বাপেক্ষা কম 250 DU। বায়ুমণ্ডলের স্ট্যাটোস্ফিয়ারে ক্রান্তীয় অঞ্চল থেকে উপমেরু অঞ্চলের দিকে বায়ুপ্রবাহের ফলে ওজোন গ্যাসের স্থানান্তর ঘটে। ফলে উপমেরু অঞ্চলে ক্রান্তীয় অঞ্চল অপেক্ষা ওজোনের ঘনত্ব বেশি লক্ষ করা যায়।
ওজোনস্তরের হ্রাস ( Ozone Depletion ) :
বায়ুমণ্ডলে প্রাপ্ত বিভিন্ন গ্যাসগুলির মধ্যে এমন কিছু গ্যাস রয়েছে যেগুলি খুবই অল্প পরিমাণে পাওয়া গেলেও পরিবেশে এদের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি।
ওজোন হল এমনই একটি গ্যাস। এটি তিনটি অক্সিজেন পরমাণুর (O) আইসোটোপ যুক্ত হালকা নীল বর্ণের আঁশটে গন্ধযুক্ত গ্যাস। বায়ুমণ্ডলে এই গ্যাসের মোট পরিমাণ মাত্র 0.00006% 1 ওজোনের স্ফুটনাঙ্ক -112.4° C এবং গলনাঙ্ক - 249.7° C 1785 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী ভান মারুম (Van Marum) অক্সিজেন অণুর (O.) মধ্যে তড়িৎক্ষরণ ঘটিয়ে একটি বিশেষ গন্ধের উপস্থিতি উপলব্ধি করেন। কিন্তু গন্ধটি কীসের, সে বিষয়ে তিনি কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি।
পরবর্তীকালে 1840 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী স্কোনবি (Schanbein) প্রমাণ করেন গন্ধটি নতুন একটি গ্যাসের। তিনি এই গ্যাসের নাম দেন ওজোন (Ozone)। 'ওজোন' শব্দটি গ্রিক শব্দ 'Ozein' থেকে এসেছে, যার অর্থ গন্ধ (to smell)। এর 73 বছর পর 1913 খ্রিস্টাব্দে দুই ফরাসি বিজ্ঞানী হেনরি বুশন (Henry Buisson) ও চার্লস ফেব্রি (Charles Febry) বায়ুমণ্ডলে ওজোন স্তর আবিষ্কার করেন।