অরণ্য-সংরক্ষণের উপায়( Forest-conservation means) :
পৃথিবীকে মানুষের বসবাসের উপযোগী রাখতে হলে অরণ্যের সবুজকে আবার ফিরিয়ে আনা দরকার। বিভিন্ন দেশের মতো ভারতেও অরণ্য সংরক্ষণের জন্য নিম্নোক্ত বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আর এ কাজে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলি হল—
1. দাবানল প্রতিরোধ :
কানাডা ও রাশিয়া ফেডারেশনের বনাঞ্চলে মাঝে মাঝেই দাবানল সৃষ্টি হয়। কানাডার বনগুলিতে অল্প দূরত্বের ব্যবধানে দাবানল রোধ করার জন্য প্রহরাকেন্দ্র ( watch centre) আছে। এসব প্রহরাকেন্দ্রে খবরাখরব দেওয়ার আধুনিক ব্যবস্থা এবং অগ্নিনিবারক যন্ত্রাদি রয়েছে।
2. বাস্তুতন্ত্র :
জীবজন্তু-সংরক্ষণের জন্য বাস্তুতন্ত্রের (ecology) খুব প্রয়োজনীয়তা আছে। ভারতেও সংরক্ষিত বনভূমি, অভয়ারণ্য, মৃগদাব গড়ে তুলে অরণ্য ও পশু সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে যদিও এসব অরণ্যে সংরক্ষণের ব্যবস্থা যথোপযুক্ত নয়।
3. বৃক্ষছেদন :
পতিত জমিতে বৃক্ষচ্ছেদনের কারণে কৃষিজমি চাষের অযোগ্য হয়ে পড়তে পারে। সেখানে বনসৃজন করে ভালো ফল পাওয়া যায়। এতে করে একদিকে যেমন ওই জমির ভূমিক্ষয় রোধ করা যায় অন্যদিকে তেমনি বৃক্ষ রোপণ করে ভবিষ্যতে কৃষকের লাভ হয়। ভারতের রাজস্থানেও এভাবে বনভূমি সৃষ্টি করে মরু বিজয়ের কেতন শুন্যে ওড়াবার চেষ্টা কিছুটা সফল হয়েছে। এ ছাড়া, সামাজিক বনসৃজন (social forestry) প্রকল্পে ভারতের অনেক স্থানে নতুন বনভূমি সৃষ্টি করে আবহাওয়া নির্মল করার চেষ্টা হয়েছে। উপরন্তু পুরনো অরণ্যের বদলে নতুন অরণ্য সৃষ্টি করা হয়েছে। এসব অরণ্যের গাছ তাড়াতাড়ি বাড়ে, আর তাই ওই গাছের কাঠ বিক্রি করে কৃষকরা লাভবান হয়।
4. নিয়ন্ত্রিত পশুচারণ :
ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি চরানোর জন্য নির্দিষ্ট পশুচারণভূমি থাকা দরকার। অন্যথায় পশুদের ক্ষুরে ক্ষুরে ভূমিক্ষয় হবেই। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে চারাগাছের বনভূমিতে আইন করে পশুচারণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এ ছাড়া বনভূমি-সংরক্ষণে—
5. পরিত্যক্ত খনি এলাকায় বনভূমিসৃষ্টির কাজে হাত দেওয়া।
6. অপরিণত গাছ যাতে না কাটা হয় সেদিকে লক্ষ রাখা।
7. কীটনাশক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক দ্রব্যের নিয়ন্ত্রিত প্রয়োগ।
৪. আইন প্রণয়ন ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও আইন লঙ্ঘনকারীর শাস্তি বিধান।
9. আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে বৃক্ষচ্ছেদন করে যাতে আশেপাশের গাছের কোনোরকম ক্ষতি না হয়, এবং
10. সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা দরকার। অন্যথায় ব্যথিত কবির মতো আমরাও আক্ষেপ করব এই বলে—“আমরা সবুজকে হলুদ করি আবার ধূসরকে বলি সজল হতে।”—সুনীল