welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

অরণ্য ধ্বংসের প্রভাব (Effects of deforestation )

 অরণ্য ধ্বংসের প্রভাব :



অরণ্যনিধন পরিবেশের ওপর কী ধরনের প্রভাব বিস্তার করছে এবার তার বিস্তারিত আলোচনা করা হল।


(i) উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষের ফলে বিপুল অক্সিজেন বাতাসে যোগ হয়। বলা হয়ে থাকে একটা গল্ফকোর্সের মতো বড়ো অরণ্য ছয় থেকে আট হাজার মানুষের প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে। 

কিন্তু এই সালোকসংশ্লেষের সময় সবুজ উদ্ভিদ প্রচুর কার্বন ডাইঅক্সাইড বাতাস গ্রিন হাউস এফেক্ট বা পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করবে। তা ছাড়া ওই থেকে গ্রহণ করে থাকে। বনভূমি ধ্বংস হলে এই কার্বন ডাইঅক্সাইড বাতাসেই জমবে। এর ফলে অরণ্যের কাঠ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করলে তা থেকেও বিপুল পরিমাণে কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গত হয়ে গ্রিন হাউস এফেক্ট-এর মাত্রা বৃদ্ধি করবে।

FAO-এর এক হিসেবে (1998-99) দেখা যাচ্ছে যে 1976 খ্রিস্টাব্দে পৃথিবীতে মোট অরণ্যের পরিমাণ ছিল 423 কোটি হেক্টর, 1998-99 খ্রিস্টাব্দে তা দাঁড়িয়েছে 419,71 কোটি হেক্টরে। অর্থাৎ বিগত বাইশ বছরে অরণ্যের পরিমাণ 3.3 কোটি হেক্টর কমেছে। এ প্রসঙ্গে ভারতের চিত্রটি যাক। এতে দেখা যাচ্ছে ভারতের এক-তৃতীয়াংশের বেশি স্থানে 10%-এর কম অরণ্য রয়েছে।


 এখন প্রশ্ন পৃথিবীতে অরণ্যচ্ছেদন কেন হচ্ছে?


জেম্‌স উইনকিনসন-এর হিসেব অনুযায়ী বলা যায়, সারা বিশ্বে অরণ্যের কাঠ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের ফলে একমাত্র 1989 খ্রিস্টাব্দে 140 কোটি টন কার্বন ডাইঅক্সাইড বাতাসে মিশেছে, এটা তার দশবছর আগে 1979 খ্রিস্টাব্দে যা ছিল তার থেকে শতকরা অন্তত 75 ভাগ বেশি।


সারা পৃথিবীতে কয়লা, পেট্রোলিয়াম, কেরোসিন, ডিজেল প্রভৃতি জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়াবার ফলে যত কার্বন ডাইঅক্সাইড বাতাসে যোগ হয়, তার এক-তৃতীয়াংশ শুধু অরণ্যের কাঠ পুড়িয়েই সৃষ্টি হয়ে থাকে।

 বনভূমি ধ্বংস হলে বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বাড়বে। ফলে সারা পৃথিবী জুড়ে শুধু যে তাপ বেড়ে চলবে তাই নয়, মেরু অঞ্চলে জমে থাকা হিমবাহ বেশি গলতে শুরু করবে। উপকূলবর্তী নীচু জায়গা তার ফলে জলমগ্ন হয়ে পড়বে। বন্দর, পোতাশ্রয়, উপকূলবর্তী জনপদ, কৃষিজমি ইত্যাদির ব্যাপক ক্ষতি হবে। বর্তমান পৃথিবীতে এই সমস্যা দেখা দিতে শুরু করেছে। 

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করেছেন আগামী শতাব্দীতে এর পরিমাণ 140 কোটি টন থেকে বেড়ে 500 কোটি টনে গিয়ে দাঁড়াবে এবং তারপর এর পরিমাণ নাটকীয়ভাবে হঠাৎ কমে যাবে কারণ, পৃথিবীতে তখন পোড়াবার মতো আর কোনো বনভূমি অবশিষ্ট থাকবে না।


(ii) পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি বাস করে ক্রান্তীয় অরণ্যে। এই ক্রান্তীয় অরণ্য ধ্বংস হলে বলা বাহুল্য, অসংখ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতির অবলুপ্তি ঘটবে।


(iii) অরণা নিধনের ফলে ভয়ংকররূপে ভূমিক্ষয় এবং ভূমিস্খলন দেখা যায়। একটি হিসেবে দেখা গেছে যে প্রতি বছর ভারতে প্রায় 600 কোটি টন উর্বর মৃত্তিকার (Top soil) ক্ষতি হচ্ছে। 1977 খ্রিস্টাব্দের হিসেব অনুযায়ী জাতীয় ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় 1200 কোটি টাকা

1984 খ্রিস্টাব্দে বিশ্ব পর্যবেক্ষণ ইন্সটিটিউটের (World Watch Institute) এক সমীক্ষায় প্রকাশ যে, সমগ্র পৃথিবী থেকে প্রতি বছর প্রায় 7,700 কোটি টন মাটি ক্ষয় হচ্ছে। মাটিকে উর্বরতা জোগায় যে খনিজ ও জৈব পদার্থগুলি সেগুলিও একই সঙ্গে ধুয়েমুছে যাচ্ছে। ফলে জমি রিক্ত হয়ে উঠছেই। অনুর্বর জমিকে চাষযোগ্য করার সমস্যা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। মাটির এই ব্যাপক ক্ষয়ের পিছনে রয়েছে খেয়ালখুশিমতো গাছপালা কেটে ফেলার মতো অদুরদর্শী কাজ।


বন্যা ও খরার প্রকোপ বৃদ্ধি : 

বনভূমি বিনষ্ট হলে নদীখাতে অতিরিক্ত পলি জমা হয়। ফলে নদীর গভীরতা কমে যায়। বর্ষার অতিরিক্ত জল তখন নদীর পক্ষে আর বহন করা সম্ভব হয় না। নদীতে ন্যা দেখা দেয়। অনুমান করা হয়, প্রাচীন হরপ্পা ও মহেন-জো-দারো সভ্যতার ধ্বংসের অন্যতম কারণ হল জ্বালানি কাঠ সংগ্রহের জন্য বনভূমির বিনাশ ও তার ফলে সৃষ্ট বন্যা। অন্যদিকে বনভূমি বাতাসে যে জলীয় বাষ্প জোগান দেয়, বনভূমি ধ্বংস হলে সেই জোগান ব্যাহত হবে, বৃষ্টির পরিমাণ কমে যাবে, খরা দেখা দেবে।


মরুভূমির প্রসার : 

বাতাস ও মাটিতে গাছপালা যে আৰ্দ্ৰভাব বজায় রাখে, গাছপালার বিহনে সেই আর্দ্রতা লুপ্ত হয়। মনুসংলগ্ন অঞ্চলে স্বাভাবিকভাবেই মরুভূমির আয়তন প্রসারিত হয় বা অন্যান্য জায়গায় অনাবৃষ্টির প্রভাবে মরুকরণ (Desertification) অবস্থার সৃষ্টি হয়।

অরগানিধনের ফলে প্রতিবছর ভারতে প্রায় এক শতাংশ ভূমি বন্ধ্যারূপে পরিবর্তিত হয়। হিমালয় অঞ্চলে ইতিমধ্যেই 3-4 শতাংশ বৃষ্টিপাত হ্রাস পেয়েছে।


আমরা জানি, গাছপালা মাটিকে ঢেকে রাখে বলে সরাসরি বৃষ্টির কণাগুলি মাটিকে আঘাত করতে পারে না। এ ছাড়া বৃষ্টির কণাগুলির গতিশক্তি কম। গাছকাটার ফলে মাটির কণাগুলি পরস্পর থেকে আলাদা হয়ে যায় ও সহজেই বৃষ্টির জলের সঙ্গে অন্যত্র পরিবাহিত হয়। এভাবে মাটি দ্রুত ক্ষয় হয়। বনাঞ্চলে মাটির ওপর স্তরে সঞ্চিত জৈব বিশেষ (লতা, শাখাপ্রশাখা, মূল, কাণ্ড, মুকুল ইত্যাদি) বৃষ্টির জল ধরে রাখতে সাহায্য করে। তাই যথেষ্ট জল মাটির ভিতর প্রবেশ করে। কিন্তু উন্মুক্ত মাটিতে ধাবধারার (Run off) পরিমাণ বেশি হওয়ায় ওইসব স্থানে শিট (sheet)-ক্ষয়, নালি (gully) ক্ষয় ও খাত (Ravine) ক্ষয় বেশি হয়। শান্তিনিকেতনের ‘খোয়াই’ বা চম্বলের ‘বেহেড়’ এলাকায় এজন্য ভূমিক্ষয় বেশি।


আর্থ সামাজিক পরিবেশের ওপর প্রভাব :

(1) অবৈজ্ঞানিকভাবে গাছ কাটার ফলে অদূর ভবিষ্যতে কাঠের জোগান কমে যাবে এবং কাগজ ও কাঠশিল্প সমস্যার সম্মুখীন হবে।

(ii) প্লাস্টিক, পলিথিন প্রভৃতি জৈব পচন বিমুখ পদার্থের ওপর চাপ বাড়বে ও বাস্তুতন্ত্রের ওপর প্রতিকূল প্রভাব পড়বে।

(iii) পরিবেশদূষণ বাড়বে।

Middle post ad 01