ভারতের বিভিন্ন ধরণের জলবায়ুভিত্তিক স্বাভাবিক উদ্ভিদের শ্রেণিবিভাগ (Classification of natural flora of India based on climate)
ভারতের বিভিন্ন ধরণের জলবায়ুভিত্তিক স্বাভাবিক উদ্ভিদের শ্রেণিবিভাগ নীচে আলোচনা করা হল।
(1) চিরহরিৎ বৃক্ষের (বৃষ্টি) অরণ্য :
200 সেন্টিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চল, যথা হিমালয়ের পূর্বদিকে আর্দ্র নিম্ন তরাই অঞ্চল, উত্তর-পূর্ব পাহাড়ি অঞ্চলের মিজো, খাসিয়া, জয়ন্তিয়া পাহাড়ে, ঊর্ধ্ব ব্রহ্মপুত্র-উপত্যকায়, পশ্চিমঘাট পর্বতের প্রতিবাত ঢালে এবং আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে শিশু, আবলুস, গর্জন, চাপলাস, বিশপ-উড, পুন, রোজ-উড প্রভৃতি বৃক্ষের নিবিড় অরণ্য দেখতে পাওয়া যায়। এদের পাতা কখনো একসঙ্গে ঝরে যায় না বলে এদের চিরহরিৎ বৃক্ষের অরণ্য বলে। এদের কাঠ খুবই শক্ত।
(2) আর্দ্র পর্ণমোচী বৃক্ষের (মৌসুমি) অরণ্য :
101 থেকে 200 সেমি বৃষ্টিপাতযুক্ত হিমালয়ের পাদদেশে বিশেষত অসম, পশ্চিমবঙ্গ এবং দাক্ষিণাত্যের মালভূমির উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিম অংশে এই অরণ্য দেখতে পাওয়া যায়। শাল, সেগুন, বট, অশ্বত্থ, আবলুস, আম, জাম প্রভৃতি এই অরণ্যের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গাছ। শুষ্ক এসব গাছের পাতা ঝরে যায়। এই কারণে তাদের পর্ণমোচী বৃক্ষ বলে। এই বনভূমির শাল, সেগুন ও আবলুস কাঠ খুব মূল্যবান।
(3) শুষ্ক পর্ণমোচী বৃক্ষের অরণ্য :
51-100 সেমি বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে অর্থাৎ রাজস্থানের দক্ষিণ-পূর্বাংশে ছোটো ছোটো কাঁটাগাছের বন দেখতে পাওয়া যায়। পূর্বে এই অঞ্চলে ঘাসের বন ছিল। এদের মাঝে মাঝে বৃক্ষ দেখা যেত। কিন্তু এই তৃণভূমির বেশির ভাগ স্থান পরিষ্কার করে কৃষিক্ষেত্রে পরিণত করা হয়েছে। বর্তমানে কেবল পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ ও রাজস্থানের কিছু কিছু অংশে এই সাভানা তৃণভূমি দেখা যায়। হিমালয়ের মাঝে মাঝে, মধ্যপ্রদেশ ও দাক্ষিণাত্যের অল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত স্থানে তৃণ জন্মায়। ভারতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি বলে তৃণভূমি কম দেখতে পাওয়া যায়।
(4) শুষ্ক মরু-অঞ্চলে কাঁটাযুক্ত গুল্ম :
ভারত গ্রীষ্মপ্রধান দেশ। 50 সেমি বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে মাঝে মাঝে নিকৃষ্ট তৃণ বা বাবলা জাতীয় ছোটো কাঁটাগাছ জন্মায়। থর মরুভূমিতে এরূপ গাছ দেখা যায়।
(5) হিমালয়ের পার্বত্য অরণ্য :
হিমালয়ের পাদদেশে মৌসুমি অরণ্য ও 1,500 মিটার পর্যন্ত চিরহরিৎ অরণ্য পূর্বহিমালয়ে দেখতে পাওয়া যায়। এই অঞ্চলে প্রচুর বাশ ও লম্বা ঘাস জন্মায়। 1,500-3,600 মি পর্যন্ত অঞ্চলে নাতিশীতোয়মণ্ডলের ওক গাছের মতো চওড়া পাতাযুক্ত গাছ এবং পাইন, ফার জাতীয় গাছের মতো সরলবর্গীয় গাছ জন্মায়। এরও উঁচুতে পরপর তৃণভূমি, গুল্মভূমি, কাঁটাগাছের ঝোপ ও শৈবাল দেখা যায়। তারও ওপরে চিরতুষারাবৃত থাকে। এখানে কোনো উদ্ভিদ জন্মায়। না।
(6) উপকূলবর্তী অরণ্য বা ম্যানগ্রোভ :
সমুদ্রতীরে বিশেষত পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণে জোয়ারের লবণাক্ত জলপ্লাবিত অঞ্চলে ম্যানগ্রোভ জাতীয় গাছের অরণ্য দেখা যায়। সুন্দরবনে সুন্দর গাছের প্রাধান্য লক্ষ করা যায়। উপকূলে নারকেল, সুপারি ও তাল বৃক্ষও জন্মায়।