ভারতের আঞ্চলিক বৈষম্য প্রদর্শনের কয়েকটি পদ্ধতি ও নির্ধারক (Some methods and determinants of Regional Disparities in India)
ভারতের আঞ্চলিক উন্নয়ন তথা বিকাশের বিভিন্ন স্তরেই বৈষম্যের যাবতীয় প্রেক্ষাপটটি লুক্কায়িত রয়েছে। সেই কারণে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ তাঁদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে এখানকার আঞ্চলিক বৈষম্যকে প্রদর্শন করার ক্ষেত্রে পদ্ধতিগতভাবে কিছু নির্ধারকের কথা বলেছেন, যেগুলি পরোক্ষভাবে উন্নয়নের মাত্রা নির্ধারণের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য। যেমন—
[1] বিপ্লব দাসগুপ্ত পদ্ধতি (Biplob Das Gupta's Method) :
মার্ক্সীয় ভাবধারায় বিশ্বাসী অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ বিপ্লব দাশগুপ্ত (2 জানুয়ারি 1938-17 জুলাই 2005) ভারতের আঞ্চলিক বৈষম্যকে উপস্থাপন করার ক্ষেত্রে এখানকার মানুষের জীবনযাত্রা এবং বেশকিছু সুযোগসুবিধাকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। তিনি আঞ্চলিক উন্নয়নের স্তর নির্ধারণের ক্ষেত্রে দুটি উল্লেখযোগ্য পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেন। যেগুলি হল—
[ক] সাধারণ র্যাঙ্কিং পদ্ধতি (Simple Ranking method),
এবং
[খ] নির্দেশক পদ্ধতি (Indices method) ।
[ক] সাধারণ র্যাঙ্কিং পদ্ধতি (Simple Ranking method) : শ্রী দাসগুপ্ত এই পদ্ধতি অনুসারে ভারতের কোনও একটি প্রদেশের বা জেলাকেন্দ্রিক প্রাপ্ত জল, বিদ্যুৎ, ওষুধ, শিক্ষা, পাকা রাস্তা, টেলিফোন, টেলিগ্রাফ প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের পরিসেবাগত সুযোগসুবিধার শতাংশগত প্রাপ্যতার উপর নির্ভর করে কয়েকটি Rank বা ক্রমসজ্জা স্থির করেছেন। তাঁর এই র্যাঙ্কিংয়ে 100% মান হল সবচেয়ে উন্নত অঞ্চলের মানদণ্ড এবং 0%-এর কাছাকাছি র্যাঙ্কিং হল সবচেয়ে কম উন্নত বা বৈষম্যযুক্ত অঞ্চলের মানদণ্ড।
[খ] নির্দেশক পদ্ধতি (Indices method): এই পদ্ধতিটিকে শ্রী দাশগুপ্ত আবার দুইভাবে উপস্থাপন করেছেন, যেমন-
(a) Unweiteages Method এখানে তিনি আঞ্চলিক বৈষম্যের প্রতিটি নির্ধারককে কোনওরকম ক্রমসজ্জা ছাড়াই সমান গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেছেন।
(b) Weigted Method: এই পদ্ধতিতে আঞ্চলিক বৈষম্যের উপাদানগুলিকে পূর্বনির্ধারিত গুরুত্বের মান অনুযায়ী ক্রমিকভাবে উপস্থাপন করা হয়। যেমন- 18 নং সারণিটি দ্রষ্টব্য।
[2] এ.কে শিব কুমারের পদ্ধতি (A.K Shiv Kumar's Method):
1990-এর দশকে ভারতের অর্থনৈতিক সংস্কার প্রবর্তনের পর দেখা যায়, এখানে অভাবনীয় অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও, ভারতীয়দের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অবস্থার উন্নতি খুবই ধার এবং অসমভাবে ঘটেছে। জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের এই ধরনের প্রতিকূল ব্যবস্থা গ্রামীণ ও শহুরে অঞ্চলগুলিতে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বৈষম্যকে যথেষ্ট প্রসারিত করেছে। বিষয়টিকে লক্ষ্য রেখে শ্রী শিবকুমার 1990 খ্রিস্টাব্দে UNDP-এর HDI মানদণ্ডের "level measurement” নীতির উপর নির্ভর করেই তাঁর যুক্তিপূর্ণ ধারণাটি ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে মানুষের আয় ও সম্পদ কখনোই উন্নয়নের প্রকৃত মাপকাঠি হতে পারে না। বস্তুত, একটি দেশের উন্নয়ন সর্বদা অর্থনীতিতে মানুষের অংশগ্রহণ করার ক্ষমতা এবং জীবনযাপন প্রণালীর ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল। সেই কারণে, তিনি 1987 খ্রিস্টাব্দে দেশের 17টি রাজ্যের নিরিখে HDI নির্ণয় করেন এবং আঞ্চলিক বৈষম্য নির্ধারণে মানুষের মাথাপিছু আয়, প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল ও শিক্ষার হার প্রভৃতি বেশ কয়েকটি বিষয়কে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে দাবি করেছেন।
এজন্য শ্রী শিবকুমার ভারতের পৃথক রাজ্যভিত্তিক সংশ্লিষ্ট নির্ধারকগুলিকে “Log value” আকারে প্রকাশের জন্য একটি রাজ্যের পৃথক পৃথক HDI মান নির্ণয় করেছেন। সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষণে ভারতের তৎকালীন 17টি রাজ্যের মধ্যে এটি (পাঞ্জাব, কেরালা, হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্র) রাজ্য উন্নয়নের মধ্যম শ্রেণিতে (যেমন পাঞ্জাবের মান-0.651 থাকার জন্যে) এবং বাকিগুলি (যেমন- উত্তরপ্রদেশের মান 0.292 থাকার জন্য) নিম্নশ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হয়।
[3] আশাক মিত্রের দৃষ্টিভঙ্গি (Ashok Mitra's Aspect ) :
জাতিসঙ্ঘের অর্থনৈতিক কমিশনের অন্যতম উপদেষ্টা তথা ভারতের বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ শ্রী অশোক মিত্র (10 এপ্রিল 1928–1 মে 2018 খ্রী) দেশের আঞ্চলিক উন্নয়নের বিভিন্ন স্তরে বৈষম্যের বিষয়টিকে উপস্থাপনার ক্ষেত্রে 1961 খ্রিস্টাব্দের ভারতীয় আদমসুমারীর সাহায্য নিয়েছিলেন। আঞ্চলিক অধ্যয়নে তাঁর মূল উদ্দেশ্য ছিল উন্নয়নের নিরিখে ভারতের বিভিন্ন জেলাগুলির প্রকৃত অবস্থা খুঁজে তার কারণ ব্যাখ্যা করা। এক্ষেত্রে শ্রী মিত্র যে সকল সূচক ব্যবহার করেছিলেন সেগুলিকে উল্লেখযোগ্য 6টি সারি বা Block আকারে উল্লেখ করেন।
প্রসঙ্গত, সংশ্লিষ্ট তথ্যে শ্রী মিত্র তৎকালীন ভারতের 79 টি জেলাকে উন্নয়নের নিম্নস্তরে (যেমন-বিহার, ঝাড়খণ্ড, নাগাল্যান্ড প্রভৃতি), ৪৪টি জেলাকে উন্নয়নের মধ্যম স্তরে (পাঞ্জাব, হরিয়ানা প্রভৃতি) এবং 84টি জেলাকে উন্নয়নের প্রসঙ্গত, সংশ্লিষ্ট তথ্যে শ্রী মিত্র তৎকালীন ভারতের 79 টি জেলাকে উন্নয়নের নিম্নস্তরে (যেমন-বিহার, ঝাড়খণ্ড উচ্চস্তরে (যেমন-মহারাষ্ট্র, গুজরাট, তামিলনাড়ু প্রভৃতি) চিহ্নিত করেছিলেন।