ভারতীয় অর্থব্যবস্থায় কৃষির গুরুত্ব [Importance of Agriculture in Indian Economy ]
ভারতীয় অর্থনীতির মেরুদণ্ড হল কৃষি। পরিকল্পনার ছয় দশকে ভারতীয় অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে শিল্পায়ন ঘটলেও, কৃষি এখনও ভারতীয় অর্থনীতিতে একটি প্রধান স্থান অধিকার করে রয়েছে। বর্তমানেও ভারতীয় কৃষিক্ষেত্রে দেশের বৃহত্তম শিল্প হিসাবে মোট কর্মরত জনসংখ্যার প্রায় 65 শতাংশ লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিয়োজিত রয়েছে। অর্থাৎ, ভারতে শিল্পোন্নয়ন হওয়া সত্ত্বেও এর গুরুত্ব বিশেষ হ্রাস পায়নি, এই কারণেই ভারতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় কৃষিক্ষেত্রের ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ভারতের অর্থনৈতিক জীবনে কৃষির গুরুত্ব কতটা তা ব্যাখ্যা করা যায় নিম্নলিখিত বিষয়গুলি থেকে—
[1] ভারতের জাতীয় আয়ে কৃষির অবদান :
1950-51 সালে ভারতের মোট অন্তর্দেশীয় উৎপাদনে কৃষির অবদান ছিল 56.5%। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় আয়ে কৃষির অবদান ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে। যদিও পৃথিবীর অন্যান্য উন্নত দেশগুলির সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় যে, সমস্ত উন্নত দেশগুলিতে জাতীয় আয়ে কৃষিক্ষেত্রের অবদান 5 শতাংশেরও কম। বর্তমানে ভারতের জাতীয় আয়ে কৃষির অবদান প্রায় 20 শতাংশ। তাই উন্নত দেশগুলির সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় যে এখনও ভারতের জাতীয় আয়ে কৃষিক্ষেত্রের অবদান গুরুত্বপূর্ণ।
[2] কর্মসংস্থান :
কর্মসংস্থানের দিক থেকে এককভাবে কৃষির অবদান সর্বাধিক। 1951 সালে কর্মে নিযুক্ত জনসংখ্যার মোট প্রায় 70 শতাংশ কৃষিক্ষেত্রে নিযুক্ত ছিল। 2005-06 সালে তা সামান্য হ্রাস পেয়ে 58 শতাংশ হয়। তুলনামূলকভাবে ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশগুলিতে মোট কর্মরত জনসংখ্যার যথাক্রমে 2 শতাংশ এবং 3 শতাংশ কৃষিক্ষেত্রে নিযুক্ত রয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে কৃষিক্ষেত্রে নিযুক্ত কর্মীর সংখ্যা হ্রাস পায় এবং মাধ্যমিক ও সেবাক্ষেত্রে কর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রেও ভারতীয় অর্থনীতিতে তা ঘটলেও দেখা যাচ্ছে যে কর্মসংস্থানের দিক থেকে তা পূর্বের মতো গুরুত্বপূর্ণই থেকে গেছে।
[3] খাদ্যের জোগান :
ভারতের মতো বিশাল জনসংখ্যার দেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্যের জোগানের জন্য কৃষির ওপরই নির্ভর করতে হয়। অর্থাৎ, দেশের বিশাল জনসংখ্যার খাদ্যশস্যের পূরণের দিক থেকে ভারতীয় কৃষির গুরুত্ব সর্বাধিক। বর্তমানে কৃষিক্ষেত্রে বেশ কিছু সাফল্য আসার দরুন খাদ্যশস্য উৎপাদনের দিক থেকে ভারতীয় কৃষি স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।
[4] শিল্পোন্নয়ন :
দেশের শিল্পোন্নয়নে কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম। ভারতীয় কৃষি হল বহু অগ্রণী শিল্পের কাঁচামালের উৎস। কৃষি ও শিল্পের উন্নয়ন অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কৃষিজ দ্রব্য, যা শিল্পের কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃতহয় যেমন তুলা, পাট, আখ ইত্যাদি। তাই তুলাবস্ত্র শিল্প, পাটশিল্প, বনস্পতি শিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প প্রভৃতি কৃষির উপর নির্ভরশীল।
[5] বহির্বাণিজ্য :
ভারতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে কৃষির অবদান উল্লেখযোগ্য। পরিকল্পনার প্রথম দিকে বেশিরভাগ রপ্তানিকৃত কাঁচামালের মধ্যে কৃষিজ দ্রব্যাদিই ছিল পাটজাত দ্রব্য, চা, চিনি, তৈলবীজ ও তামাক। যদিও অর্থনৈতিক উন্নয়ন, উৎপাদন কাঠামোয় বৈচিত্র্য প্রভৃতি কারণে ভারতের কৃষিপণ্যের অংশ হ্রাস পেয়েছে তথাপি ভারতীয় রপ্তানি বাণিজ্যে কৃষির অবদান এখনও যথেষ্টভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
[6] অভ্যন্তরীণ ব্যাবসাবাণিজ্য :
ভারতের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের একটি বড়ো অংশ খাদ্যশস্য ও কৃষিজাত দ্রব্যসামগ্রীর উপর নির্ভরশীল। কৃষিজাত দ্রব্যের সরবরাহ করেই ভারতের রেল পরিবহন এবং সড়ক পরিবহন বহুল পরিমাণে আয় অর্জন করে। তাই কৃষির সমৃদ্ধি অভ্যন্তরীণ ব্যাবসাবাণিজ্যে তেজীভাব সৃষ্টি করে। সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, ভারতবর্ষ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষিই অর্থনৈতিক বিকাশের পরিকাঠামো তৈরি করে এবং এই পরিকাঠামোর ওপর দেশের অর্থনৈতিক বিকাশের প্রধান কাঠামোটি গড়ে ওঠে।