ভারতীয় কৃষির মূল বৈশিষ্ট্য [Basic Features of Indian Agriculture ]
ভারতীয় অর্থনীতির একটি প্রধান ভিত্তি হল কৃষি। কৃষিক্ষেত্রকে ভারতীয় অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসাবে বিবেচনা করা হয়।। ভারতের জনসংখ্যার প্রায় 70 শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এখনও কৃষির উপর নির্ভরশীল। পরিকল্পনার 63 বছর পরেও ভারতের অর্থনৈতিক কাঠামোয় কৃষির গুরুত্ব কমেনি। ভারতে শিল্পোন্নয়ন হওয়া সত্ত্বেও এর গুরুত্ব বিশেষ হ্রাস পায়নি। ভারতের অর্থব্যবস্থায় কৃষির অপরিসীম গুরুত্বের জন্য উন্নয়ন পরিকল্পনায় এর অগ্রগতির ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় কৃষির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল--
[1] প্রকৃতি-নির্ভরতা :
ভারতীয় কৃষি - প্রকৃতিনির্ভর। জলসেচের ব্যবস্থা পরিকল্পনাকালে প্রসারলাভ করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট কম। বর্তমানে প্রায় 65 শতাংশ জমিতে চাষের জন্য বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভর করতে হয়। প্রকৃতির অনিয়মতা ও অপর্যাপ্ততা এবং অনিশ্চয়তা থাকার দরুন কৃষির উৎপাদন অনিশ্চিত। ফলে, জাতীয় আয়, নিয়োগ, ব্যাবসাবাণিজ্য প্রভৃতির ওপর একটি প্রতিকূল প্রভাব পড়ে। 2003-04 সালে খাদ্যশস্যে নিযুত্ব চাষযোগ্য জমির 42.2 শতাংশ ছিল সেচসেবিত।
[2] জনাধিক্য ও বেকারসমস্যা :
কৃষিযোগ্য জমির তুলনায় জনসংখ্যার আধিক্য — ভারতের কৃষি অর্থ-ব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এর ফলে ভারতীয় কৃষিক্ষেত্রে ছদ্ম বেকারত্বের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। আবার ভারতীয় কৃষি যেহেতু প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল, তাই ভারতীয় কৃষিক্ষেত্রে মরশুমি বেকারত্বও লক্ষ করা যায়। উপজীবিকা হিসাবে কৃষির ভারাধিক্য — ভারতীয় অর্থনৈতিক জীবনের অনগ্রসরতারই লক্ষণ।
[3] চিরাচরিত প্রাচীন উৎপাদন পদ্ধতির ব্যবহার :
পৃথিবীব্যাপী বিজ্ঞানের অভাবনীয় উন্নতি ঘটলেও ভারতীয় কৃষিতে আজও চিরাচরিত প্রাচীন মান্ধাতা আমলের চাষপদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। সবুজ বিপ্লবের পর পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশের মতো কয়েকটি রাজ্যে আধুনিক কৃষিপদ্ধতি ব্যবহৃত হলেও ভারতের অধিকাংশ রাজ্যে এখনও পুরোনো কৃষিপদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
[ 4 ] জোতের ক্ষুদ্রায়তন
ভারতীয় কৃষির আর-একটি বৈশিষ্ট্য হল জোতের গড় আয়তনের ক্ষুদ্রতা। যৌথ পরিবার প্রথার অবলুপ্তি, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ, ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের ধ্বংস প্রভৃতি কারণে কৃষিজমিগুলি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হয়েছে। এর ফলে, জমির জোতের গড় আয়তন ক্রমশ ছোটো হয়েছে। ভারতের কৃষিক্ষেত্রে জোতের ক্ষুদ্রায়তনের প্রধান কারণ হল— কৃষিজমির গণ্ডীকরণ, অসম্বদ্ধতা। 1995-96 সালে জোতের গড় আয়তন ছিল 1.41 হেক্টর।
[5] প্রতিক্রিয়াশীল ভূমিব্যথা :
জমির মালিকানা শর্ত এবং কৃষক ও জমির মালিকের মধ্যে সম্পর্ককে ভূমিব্যবস্থা বলা হয়। ভারতীয় কৃষির একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল – কৃষিক্ষেত্রে ভূমিব্যবস্থা কৃষকের প্রতিকূল। এর প্রমাণ হল এখনও ভারতের বহু রাজ্যে জমি থেকে কৃষকদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে এবং মুষ্টিমেয় কিছু পরিবারের হাতে চাষের জমি কেন্দ্রীভূত হচ্ছে।
[6] স্বল্প উৎপাদনশীলতা :
ভারতীয় কৃষির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল— কৃষির স্বল্পোৎপাদনশীলতা। 2004-05 সালে ভারতে হেক্টরপ্রতি ধান ও গমের উৎপাদন ছিল যথাক্রমে 2900 কেজি এবং 2710 কেজি। সেই সময়ে মিশরে হেক্টরপ্রতি ধানের উৎপাদন ছিল 9800 কেজি এবং ব্রিটেনে 7790 কেজি ছিল হেক্টরপ্রতি গমের উৎপাদন। উন্নত দেশগুলিতে প্রতি হেক্টরপিছু উৎপাদন— ভারতের তুলনায় প্রায় সাড়ে চার থেকে পাঁচগুণ বেশি।
[7] মূলধনের অপ্রাচুর্য :
ভারতীয় অর্থনীতির মৌলিক যে সমস্যা— 'দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র', তা ভারতীয় কৃষিতেও লক্ষ করা যায় মূলধন বিনিয়োগের অপ্রাচুর্যের দরুন। প্রধানত মূলধনের অপ্রাচুর্যের জন্যই ভারতীয় কৃষিক্ষেত্রে চাষের আধুনিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না।