ভারতের আঞ্চলিক বৈষম্যের বিশেষত্ব (Speciality of Regional Disparity of India)
ভারতে আঞ্চলিক বৈষম্যের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিশেষত্ব লক্ষ্য করা যায়, যেমন-
(i) ভারতের দীর্ঘকালীন ভৌগোলিক প্রেক্ষাপটের নিরিখে আঞ্চলিক বৈষম্য অত্যন্ত সঙ্গতিপূর্ণ। এখানকার আঞ্চলিক বৈষম্যের অধিকাংশ বিষয় ঔপনিবেশিক স্বার্থ, রাষ্ট্রীয় পরিচালনাগত অব্যবস্থা, অর্থনৈতিক বণ্টনগত ত্রুটি এবং রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বকে প্রদর্শন করে থাকে।
(ii) ভারতের অন্তঃরাষ্ট্রীয় বৈষম্যের তুলনায় অন্তঃরাষ্ট্রীয় বৈষম্যের মাত্রা যথেষ্ট বেশি।
(iii) অর্থনীতির উচ্চ বৃদ্ধির হার ভারতের ক্রমবর্ধমান অন্তঃরাজ্য বৈষম্যের পাশাপাশি ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকেন্দ্রিক বৈষম্যও অত্যন্ত সুস্পষ্ট।
(iv) এখানে মাথাপিছু রাষ্ট্রীয় অভ্যন্তরীণ পণ্য বণ্টনের ক্ষেত্রে বৈষম্য বৃদ্ধি অটুট থাকলেও, মানব উন্নয়নের রাষ্ট্রীয় সূচকগুলি কিছুটা হলেও স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে।
(v) ভারতের প্রধান অঙ্গরাজ্যগুলির মধ্যে আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে আঞ্চলিক বৈষম্য অত্যন্ত বেশি এবং স্থায়ী প্রকৃতির।
(vi) 1980-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে অর্থনৈতিক উদারীকরণ নীতি গ্রহণের কারণে ভারতে আয় এবং সম্পদের বৈষম্য চরমভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
(vii) ভারতে এমন কিছু রাজ্য রয়েছে, যেখানে উন্নয়নের বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ কয়েকটি সূচক পরস্পর বিপরীতধর্মী অবস্থাকে প্রতিফলিত করে। যেমন- কেরালা 1981, 1991 এবং 2001 খ্রিস্টাব্দে উচ্চ মানব উন্নয়ন সূচক (Human Development Index)-এর নিরিখে ভারতীয় রাজ্যগুলির মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করলেও, এখানকার মাথাপিছু আয় জাতীয় গড় আয়ের থেকে অনেক কম ছিল। এই ধরনের বৈপরীত্য অবস্থা আন্তঃরাষ্ট্রীয় আঞ্চলিক বৈষম্যকে যথেষ্ট প্রকট করে তোলে।
“OXFAM” কর্তৃক ভারতের বৈষম্য বিশ্লেষণ
সম্প্রতি OXFAM International ভারতের আর্থসামাজিক বৈষম্যকে বেশ কয়েকটি সংখ্যার ভিত্তিতে প্রকাশ করেছে, যেখানে প্রত্যেকটি সংখ্যাই বৈষম্যের এক একটি বিশেষ দিককে নির্দেশ করে থাকে। যেমন-
1% ভারতীয় জনসংখ্যার আর্থিক দিক থেকে মাত্র 10% জনসংখ্যা মোট জাতীয় সম্পদের 77% ধারণ করে রেখেছে। 2017 খ্রিষ্টাব্দে উৎপন্ন সম্পদের 73% সবচেয়ে ধনী 1%-এর কাছে গিয়েছিল, যেখানে সবচেয়ে দরিদ্র 67 মিলিয়ন জনসংখ্যার নিরিখে তাদের প্রাপ্য সম্পদ মাত্র 1% বৃদ্ধি পেয়েছে।
সম্প্রতি ভারতে 119 জন বিলিয়নেয়ার রয়েছেন। এই সংখ্যাটি 2000 খ্রিস্টাব্দে মাত্র 9 জন থেকে বেড়ে 2017 খ্রিস্টাব্দে 101 জন হয়েছে। 2018 থেকে 2022 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে, ভারত প্রতিবছর 70 জন নতুন কোটিপতি তৈরি করবে বলে অনুমান করা হয়েছে।
ভারতে বিলিয়নেয়ারদের ভাগ্য এক দশকে প্রায় 10 গুণ বেড়েছে এবং তাদের হাতে কুক্ষিগত মোট সম্পদ 2018-19 খ্রিস্টাব্দে দেশের সমগ্র কেন্দ্রীয় বাজেটে ধার্য অর্থের চেয়ে অত্যন্ত বেশি ছিল (প্রায় 24422 বিলিয়ন INR)।
ভারতে অনেক সাধারণ মানুষ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে সক্ষম হয় না। তাদের মধ্যে 63 মিলিয়ন। মানুষ প্রতি বছর বঞ্চিত হয়। একইভাবে স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় দুই জন করে মানুষ চরম দারিদ্র্যতায় উপনীত হয়।
একটি শীর্ষস্থানীয় ভারতীয় পোশাক কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মচারী এক বছরে যা উপার্জন করে সেটি গ্রামীণ ভারতে একজন ন্যূনতম মজুরি কর্মীর জন্য 941 বছর সময় লাগবে।