স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতে আঞ্চলিক বৈষম্য (Regional inequality in post-independence India)
ব্রিটিশরা সমগ্র ভারত জুড়ে আঞ্চলিক বৈষম্যের যে ধারা অব্যাহত রেখেছিল, স্বাধীনতা পরবর্তী যুগেও সেই প্রেক্ষাপটকে পুরোপুরি মুছে ফেলা যায়নি। এর কয়েকটি দৃষ্টান্ত হল—
• প্রথমত, ব্রিটিশ আমলের উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া কিছু অর্থনৈতিক সুযোগসুবিধা এবং সহায়ক সম্পদের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের কয়েকটি অঞ্চল ক্রমশ উন্নতির শীর্ষে পৌঁছতে থাকে।
• দ্বিতীয়ত, ব্রিটিশ আমলের শেষের দিকে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের অধীনে পরিচালিত ভারতের বেশিরভাগ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডই কিছু নির্দিষ্ট স্থানকে উপলক্ষ্য করে বাস্তবায়িত হয়েছিল।
• তৃতীয়ত, স্বাধীনতা পরবর্তীকালে কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিষ্ঠা হলেও, অতীতের উদ্ভূত আর্থসামাজিক সমস্যাগুলি এতটাই ব্যাপক আকারে দেখা দেয় যে সেগুলিকে সমানভাবে মোকাবিলা করে আঞ্চলিক বৈষম্য কমিয়ে আনার দক্ষতা নতুন সরকারের ছিল না।
• চতুর্থত, ব্রিটিশ শাসন ভারতের বেশিরভাগ জনসম্প্রদায়কে যেভাবে দরিদ্র করে রেখেছিল, স্বাধীন ভারতে সেটিই সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। এই সময় সার্বিক দারিদ্রের বিষয়টি সেভাবে রোধ করা সম্ভব হয়নি বলে স্বাধীনতার সত্তর বছর অতিক্রান্ত হলেও আঞ্চলিক ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বৈষম্য রয়েই গিয়েছে।
• পঞ্চমত, স্বাধীনোত্তর ভারতে নতুন উদীয়মান অর্থনীতির সাপেক্ষে দেশের পশ্চাদপদ অঞ্চলগুলিতে ভারী শিল্প স্থাপনের একাধিক চেষ্টা করা হলেও, সেখানকার সমস্যা সমাধানের ওপর তেমন কোনও দৃষ্টি দেওয়া হয়নি। প্রকৃতপক্ষে, 1980-এর দশক থেকে ভারতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে আঞ্চলিক বৈষম্য আরও প্রকট হয়েছে।
• ষষ্ঠত, 1990-এর দশকের পর ভারতে অর্থনৈতিক উদারীকরণের মাধ্যমে প্রবর্তিত স্থিতিশীলকরণ এবং নিয়ন্ত্রণমুক্ত নীতি গ্রহণ করা সত্ত্বেও, অর্থনৈতিক বৃদ্ধির ফলে উদ্ভূত সুবিধাগুলি ভারতের সমস্ত রাজ্য এবং অঞ্চলগুলিতে সমানভাবে বিতরণ করা হয়নি। এর ফলে দেশে আঞ্চলিক বৈষম্যের পরিস্থিতি থেকেই যায়।