ভারতে আঞ্চলিক বৈষম্যের প্রেক্ষাপট (Background of Regional disparity in India)
অতি প্রাচীনকাল থেকেই ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে প্রথাগত এবং নীতিগত বেশকিছু সীমাবদ্ধতা অন্তঃআঞ্চলিক স্তরের বৈষম্য বৃদ্ধি করে উন্নয়নকে ভীষণভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে। ঔপনিবেশিক আমলের পূর্বে, আঞ্চলিক ভারসাম্যহীনতার ধারণাটি সেভাবে গুরুত্ব না পাওয়ায়, সেই সময় ভারতের বৈষম্যের বিষয়টিও যথেষ্ট উপেক্ষিত ছিল। আসলে, তৎকালীন প্রেক্ষাপটে আঞ্চলিক বৈষম্যকে ঠিক কোন্ কৌশলে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত সে সম্পর্কে কোনও ধারণা ভারতীয়দের মধ্যে ছিল না। বিশেষজ্ঞের দাবি, প্রকৃত অর্থে ভারতের আঞ্চলিক বৈষম্যের সূত্রপাত ঘটেছিল মুঘল আমল থেকেই। পরবর্তীকালে ভারতের অর্থনীতি যখন ক্রমশ ব্রিটিশদের স্বার্থের সাথে জড়িয়ে গেল, তখন রাষ্ট্রীয় স্বার্থ এবং আঞ্চলিক উন্নয়নের বৈপরীত্য নীতি বৈষম্যকে আরও অধিকতর মাত্রায় প্রকাশ করে। এখানে অতীতের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট থেকে ভারতের আঞ্চলিক বৈষম্যকে উপস্থাপন করা হল।
মুঘল আমলে ভারতের আঞ্চলিক বৈষম্য (Regional disparity in India during the Mughal period)
মুঘল আমলে ভারতকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ এবং সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে বিবেচনা করে বলা হত, দেশটি অনেকটাই প্রাক্-শিল্প ইউরোপীয় যুগের সমতুল্য। কিন্তু তা সত্ত্বেও, তৎকালীন ভারতীয় সমাজে অর্থনৈতিক শোষণ, সম্পদের অসম বণ্টন, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদি আঞ্চলিক বৈষম্যে একটি অন্য মাত্রা যোগ করে। বস্তুত, মুঘল আমলে ভারতের অন্তঃআঞ্চলিক বৈষম্যের একাধিক সুস্পষ্ট ক্ষেত্র গড়ে ওঠে। এই সময়, ভারতের বিভিন্ন প্রাদেশিক স্তরে কর আদায়কে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক শোষণ, জমি বণ্টনের অসামঞ্জস্যতা, বাণিজ্যিক কেন্দ্রিকরণ নীতি ভীষণভাবে প্রাধান্য পায়। তাছাড়া, মুঘল ভারতে আভিজাত্য, উচ্চবিত্তদের জীবনযাপনের ধরন ও জাঁকজমকপূর্ণ বিলাসিতা যেভাবে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছিল, তা থেকেই এই আমলের আঞ্চলিক বৈষম্যের বিষয়টিকে সহজেই খুঁজে পাওয়া সম্ভব।