ব্রিটিশ ভারতে আঞ্চলিক বৈষম্য (Regional disparity in the British period)
ব্রিটিশ আমলে ভারতের আঞ্চলিক বৈষম্য নিয়ে গড়ে ওঠা গবেষণাগুলি বহু বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। অনেকেই মনে করেন, ভারতীয় অর্থনৈতিক কাঠামোয় ইউরোপীয়দের অনুপ্রবেশ আঞ্চলিক উন্নয়নের বিষয়গুলিকে যথেষ্ট উদ্দীপিতকরণের সূচনাকাল। বাস্তবে, ভারতের আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে ইংরেজ ঔপনিবেশিক গোষ্ঠীর কেন্দ্রীভূত অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ, দীর্ঘকালীন শাসন এবং সম্পদ শোষণের নির্মম প্রভাব সরাসরি দেশের আঞ্চলিক বৈষম্যের মাত্রাটিকে অত্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে। ব্রিটিশরা তাদের স্বার্থে যতগুলি শিল্পকেন্দ্র, রেলপথ, শিক্ষালয় স্থাপন করেছে, তার পুরোটাই দেশের নির্দিষ্ট কয়েকটি অঞ্চলে সীমাবদ্ধ ছিল। মূলত, দেশীয় শিল্পকে উপেক্ষা করে ভারতের ঐতিহ্যবাহী অর্থনীতির উৎপাদনশীল ক্ষেত্রগুলি ক্রমেই ব্রিটিশ বাণিজ্যর দিকে ঝুঁকে পড়ায়, এখানকার আঞ্চলিক ভারসাম্যের কাঠামোটি পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে ।
ব্রিটিশ আমলে ভারতের বৈষম্যর একাধিক নিদর্শন বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞের লেখনিতেও ধরা পড়েছে। যেমন- অধ্যাপক অমর্ত্য সেন তাঁর “Home in the world, a Memoir” নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন- “ভারতে ঔপনিবেশিক শাসনের 200 বছর ছিল ব্যাপক অর্থনৈতিক স্থবিরতার যুগ। এই সময়, দেশে প্রকৃত মোট আয় সেভাবে বাড়েনি, আবার মাথাপিছু আয় এবং শিক্ষার দিক থেকেও দেশের একাধিক রাজ্য যথেষ্ট পিছিয়ে পড়ে।”
অন্যদিকে উইলিয়াম ডালরিম্পল একটি পর্যালোচনায় লিখেছেন, 1600 খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যখন গড়ে ওঠে, তখন বিশ্ব GDP-তে ব্রিটেনের অবদান ছিল মাত্র 1.8 শতাংশ, অথচ সেখানে ভারতের অবদান ছিল প্রায় 22.5 শতাংশ। পরবর্তীকালে ব্রিটিশরাজের শাসনাধীনে এই তথ্যটি পুরো উল্টে যায় এবং ভারত ক্রমশ দুর্ভিক্ষ ও বঞ্চনার প্রতীকে’ পরিণত হয়।