ভারতের আঞ্চলিক বৈষম্যের প্রকাশ (Disclosure of regional disparities)
ভারতের আঞ্চলিক বৈষম্যের বহিঃপ্রকাশ প্রসঙ্গে বেশ কয়েকটি বিষয় খুব সহজাতভাবেই উঠে আসে, যেমন-
1. প্রাকৃতিক সম্পদ বণ্টনের দিক থেকে ভারতের সমস্ত অঞ্চলগুলি সমানভাবে সমৃদ্ধ নয়। ফলে, সম্পদ বণ্টন ও তার ব্যবহারের নিরিখে এদেশের অগ্রসর এবং অনগ্রসর অঞ্চলগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক ব্যবধান অত্যন্ত সুস্পষ্ট। যেমন- খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ ছোটোনাগপুর মালভূমির আশেপাশের অঞ্চলগুলি (লৌহইস্পাত শিল্পের নিরিখে) ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় যথেষ্ট এগিয়ে।
2. ভারতের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলকে উন্নয়ন পরিকল্পনায় শহরাঞ্চলগুলির তুলনায় সব সময়ই পিছিয়ে থাকতে দেখা যায়। এর ফলে, দেশের অধিকাংশ গ্রাম এখনো উন্নয়নের উচ্চ স্তরে পৌঁছতে সক্ষম হয়নি, যেটি দেশের আঞ্চলিক বৈষম্যেরই অন্যতম বহিঃপ্রকাশ।
3 এদেশের মানুষের প্রচলিত জীবনযাত্রা ও আর্থিক মাপকাঠির নিরিখে জনগোষ্ঠীর দুটি পৃথক রূপ পরিলক্ষিত হয়, যার মধ্যে একটি হল দরিদ্র গোষ্ঠী এবং অপরটি হল সমৃদ্ধ বিত্তবান গোষ্ঠী। বাস্তবে দেখা যায়, এখানকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ, যাদের সাথে বিত্তবান জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক জীবনধারাগত পার্থক্যের মাত্রা যথেষ্ট বেশি।
4. দাশগুপ্ত (1971), রাও(1977) প্রমুখ কৃষি, শিল্প, ব্যাঙ্কিং, আয়, মজুরি এবং শিক্ষার ভিত্তিতে ভারতের যে সমস্ত অনগ্রসর অঞ্চলকে চিহ্নিত করেছেন, সেখানে আর্থসামাজিক বৈষম্য অত্যন্ত প্রকট।
5. হার্ভে আর্মস্ট্রং এবং জিম টেলর দাবি করেছেন, ভারতে কর্মসংস্থানের বিভিন্ন স্তরেও আঞ্চলিক বৈষম্যের মাত্রা যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে, যা দেশের সামাজিক সংহতির জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিগত দশকে ভারতের 19 টি রাজ্যের অবকাঠামো, সামাজিক পরিষেবা, আর্থিক কর্মক্ষমতা, ন্যায়বিচার, আইনশৃঙ্খলা এবং আইনসভার গুণমানের ভিত্তিতে আঞ্চলিক বৈষম্য সংক্রান্ত একটি বিশেষ গবেষণা করা হয়। পরে, সেই গবেষণার ফলাফলটিকে 2016 খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসের “Economic and Political Wickly”-র একটি আনুষ্ঠনিক প্রতিবেদন প্রকাশে বলা হয়, ভারতের প্রায় সমস্ত রাজ্যেই আঞ্চলিক বৈষম্য ক্রমবর্ধমান। ওই গবেষণাটিতে গুজরাট, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরালা এবং পাঞ্জাব—দেশের মাত্র এই ছয়টি রাজ্যকে সেরা পারফরম্যান্সকারীর তালিকায় রাখা হয়েছিল। অন্যদিকে, সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্সকারী রাজ্যরূপে ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারসহ বেশ কয়েকটি রাজ্যকে চিহ্নিত করা হয়। পরবর্তীকালে, ভারতের আঞ্চলিক স্তরের বৈষম্যকে যুক্তিসম্মতভাবে বিশ্লেষণ করতে আরও দুটি উন্নয়ন ক্লাস্টারকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল, যেগুলি নির্দিষ্ট মানসম্পন্ন সেবা প্রদান এবং উচ্চ মাথাপিছু আয়কেন্দ্রিক। তাতেও দেখা যায়, দেশের মুষ্টিমেয় কয়েকটি রাজ্য অন্য রাজ্যগুলির চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে। বিশেষ করে, ভালো পারফরমেন্স করা রাজ্যগুলির অধিকাংশই ভারতের দক্ষিণ এবং পশ্চিমে অবস্থিত, কিন্তু খারাপ পারফরম্যান্সকারী রাজ্যগুলি প্রধানত পূর্ব অঞ্চলে সর্বাধিক কেন্দ্রীভূত।