welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

আবহাওয়া প্রভাবিত করা কারণ গুলো what are the factors that influe weather

আবহবিকার যেহেতু বিভিন্ন শিলাগুলির বিচূর্ণীভবন বা পরিবর্তন ঘটায় ফলে শিলার বিভিন্ন খনিজের সংযুক্তি, ফাটলের ধরণ পললের গঠন, ভাজ বা চ্যুতির অবস্থা ইত্যাদি


 1. শিলার বিভিন্ন খনিয়া ও তার গঠন (Composition and Structure of Rocks)

 আবহবিকার যেহেতু বিভিন্ন শিলাগুলির বিচূর্ণীভবন বা পরিবর্তন ঘটায় ফলে শিলার বিভিন্ন খনিজের সংযুক্তি, ফাটলের ধরণ পললের গঠন, ভাজ বা চ্যুতির অবস্থা ইত্যাদি আবহবিকারকে প্রভাবিত করে।

খনিজের সংযুক্তির ক্ষেত্রে বিজ্ঞানী বাওয়েনের (Bowen) বক্তব্য হল এই যে সকল খনিজের রং গাঢ় সেগুলি বেশি আবহবিকার প্রবণ। কারণ এরূপ খনিজগুলি সাধারণত ক্ষারকীয় ধরনের এবং ক্ষারকীয় আগ্নেয়শিলায় রাসায়নিক আবহবিকার অধিক হয়। আবার শিলার প্রথনের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে এর সুক্ষ্ম দানাযুক্ত শিলাগুলি অপেক্ষাকৃত তাড়াতাড়ি চূর্ণ বিচূর্ণ হয়। এই কারণে শিলার বিভিন্ন দানাগুলি আবহাওয়ার প্রক্রিয়ায় নানাভাবে সাড়া দেয় তখন শিলার মধ্যে ফাটল ধারণের সৃষ্টি ঘটে। 

আবার যে-সকল শিলা কার্বনেটযুক্ত কার্বনেট, ম্যাগনেশিয়াম কার্বনেট ইত্যাদি) সে সকল শিলা রাসায়নিক ভাবে পরিবর্তিত হয়। অন্যদিকে, উলম্ব ফাটল বা দারণযুক্ত শিলার উত্তাপের পার্থক্য বা তুষারের প্রক্রিয়া অধিক কার্যকরী হয়। অন্যদিকে যে সকল শিলায় ফাটল বা দারণ সমান্তরালভাবে থাকে তা অনেক বেশি সংঘবদ্ধ হয় বলে বিচুর্ণিভবনের প্রক্রিয়ার কার্য ঘটে দেরিতে।


2. ভূমিভাগের চালের প্রকৃতি (Nature of Ground Slope ) :

 পুঞ্জিত ক্ষয়ের মত আবহবিকারের ক্ষেত্রেও ভূমিভাগের ঢাল বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে থাকে। উচ্চ পাহাড়ী ঢালে যান্ত্রিক আবহবিকার অনেক বেশি কার্যক হয়। কারণ বিচূর্ণ পদার্থ পাহাড়ের ঢাল বেয়ে অতি সত্বর শিলা পতন, মৃত্তিকা প্রবন ইত্যাদি প্রক্রিয়ায় অপসারিত হয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আবহাওয়ার কাছে পাহাড়ের ঢাল অংশের গঠনকে উন্মুক্ত করে বলে আবহাওয়ার কার্যকারিতা ক্ষমতা অনেক বেশি পরিমাণে ঘটে এবং পর্বতের খোলা অংশে বিচূর্ণীভবন ঘটায়। অন্যদিকে মাঝারি বা অল্প ঢালযুক্ত অঞ্চলে যান্ত্রিক আবহবিকার স্বল্প পরিমাণে কার্যকরী হয়।

3. জলবায়ুর পরিবর্তনশীলতা (Climatic Variations)

 যে কোন প্রকার আবহবিকারের ক্ষেত্রে জলবায়ুর পরিবর্তন এক বিশেষ ভূমিকা নিয়ে থাকে। ভূমিরূপবিদদের মতে বিভিন্ন জলবায়ু নানা প্রকার আবহবিকার ঘটাতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে আর্দ্র ক্রান্তীয় অঞ্চলে রাসায়নিক আবহবিকার অধিক কার্যকরী হয়, কারণ এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যেমন অধিক তেমনি উত্তাপের পরিমাণও অধিক। 

এরূপ অঞ্চলের ভূমিরূপ গঠনে শিলাগুলি অধিক পরিমাণে কেলাসিত অর্থাৎ শিলার খনিজগুলি বেশি পরিমাণে সিলিকেট জাতীয় থাকে। ফলে সিলিকেটের উপর রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে আর্দ্র বিশ্লেষণের মাধ্যমে। এসব অঞ্চলে যান্ত্রিক আবহবিকার কমকার্যকরী হয়। অন্যদিকে ক্রান্তীয় বা শুদ্ধপ্রায় অঞ্চলে রাসায়নিক অপেক্ষা যান্ত্রিক আবহবিকার অধিক কার্যকর। 

কারণ এসব অঞ্চলে দিনের বেলা যেমন তাপের আধিক্য থাকে, রাত্রে তেমনি তাপের পরিমাণ কমে যায়। উত্তাপের এই পার্থক্য দিনের বেলা যেমন শিলার প্রসারণ ঘটায়, তেমনি রাত্রের শীতলতা শিলার সঙ্কোচন ঘটায়। অনবরত এই সংকোচন ও প্রসারণ শিলা বিচূর্ণীভবনে বা দারণ ফাটলে সহায়তা করে। আবার দেখা যায় শীতল অঞ্চলে যান্ত্রিক অপেক্ষ রাসায়নিক আবহবিকার অধিক কার্যকর হয়। কারণ বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে নিম্ন তাপমাত্রা কার্বন ডাই অক্সাইডের (CO2) দ্রাব্যতার পরিমাণের বৃদ্ধি ঘটায়।

 উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে 20° সেঃ উত্তাপে যে পরিমাণ CO, জলে দ্রবীভূত হয় 0° সেঃ—উত্তাপে দ্বিগুণ পরিমাণে CO, দ্রবীভূত হয়। এর সঙ্গে সঙ্গে একথা মনে রাখা প্রয়োজন যে আবহবিকারের ক্ষেত্রে হিমাক্ষতাপমাত্রা রাসায়নিক বিকারকে দ্বিগুণ বৃদ্ধি করে।


প্রকৃতপক্ষে পরীক্ষাদ্বারা দেখা গেল যে ঐরূপ পরিবেশে বিপরীতমুখী কার্যের ফলে রাসায়নিক বিক্রিয়ার হার অনেক কমে যায়। আবার শীতল অঞ্চলে বরফের গলন যেহেতু খুব অল্প সময়ের জন্য ঘটে, ফলে রাসারনিক আবহবিকারের সময়ের পরিমাণও অনেক কমে যায়।

 এইসব অঞ্চলে তুষারের কার্যের ফলে কিছু কিছু যান্ত্রিক আবহবিকার ঘটে। তার প্রমাণ বহন করে এই সকল অঞ্চলে কোণযুক্ত শিলাখন্ডের সৃষ্টি এবং এই সমস্ত অঞ্চলে শিলার ফাটল বা ছিদ্রের মধ্যে লবণের উপস্থিতি, তাই এখানে আবহবিকারও লক্ষ্য করা যায়।


4. জৈব প্রক্রিয়া (Bio-Chemical Action) : 

আবহবিকারের প্রক্রিয়া মৃত্তিকার উদ্ভিদ আবরণের উপর অনেকাংশে নির্ভর করে। কারণ ভূমিভাগ উদ্ভিদে ঢাকা থাকলে সে সকল অঞ্চলে যান্ত্রিক বা রাসায়নিক আবহবিকার ঘটতে সময়ের প্রয়োজন হয়, অন্যদিকে তেমনি ভূমিভাগ উদ্ভিদহীন উন্মুক্ত থাকলে আবহবিকারের প্রক্রিয়া সদর কার্যকরী হয়। এসব ক্ষেত্রে জৈব অ্যাসিড ফোন রাসায়নিক আবহবিকার ঘটায় আবার তেমনি গাছের মূল, শিকড় ইত্যাদি মৃত্তিকা বা শিলার ফাটল ঘটিয়ে যান্ত্রিক আবহবিকার ঘটাতে সাহায্য করে।


5. তুষারের ক্রিয়া (Frost Action) : 

শিলার ফাটল, দারণ বা বিভিন্ন রন্ধ্রে তুষার জমে বরফে পরিণত হলে, বরফের স্ফটিক সৃষ্টি হয় যা যান্ত্রিক আবহবিকারে সাহায্য করে। কারণ, চল জমে বরফে পরিণত হলে তা আয়তনে বৃদ্ধি ঘটে। এই বৃদ্ধির পরিমাণ জলের তুলনায় এক দশমাংশ অধিক। ফলে শিলার মধ্যে চাপের সৃষ্টি হয় যা যান্ত্রিক আবহবিকারে সহায়তা করে।


6. সময়ের ব্যাপ্তি 

(Time Scale) : 

ভূ-প্রকৃতিতে আবহবিকারের কার্য্যকরীরূপ সৃষ্টির জন্য সময় একটা বিশেষ পরিমাপক। এটা ঠিক যে কোনও অঞ্চলে যত বেশি সময় ধরে আবহবিকার ঘটবে তার পরিবর্তন তত বেশি লক্ষ্য করা যাবে। এই সময়ের ব্যাপ্তি অধিক পরিমাণে লক্ষ্য করা যায় যান্ত্রিক আবহবিকারের ক্ষেত্রে। তবে রাসায়নিক আবহবিকারের ক্ষেত্রে এই সময়ের ব্যাপ্তি সম্পূর্ণরূপে কার্যকরী না হলেও তা আংশিক ভাবে সত্য। কারণ দেখা গেছে যে জল শিলা বা মৃত্তিকার রন্ধ্র দিয়ে ধীরে ধীরে অনেক দূর পর্যন্ত ক্ষয়িত করে চলে যায় এবং ভূ-পৃষ্ঠের অভ্যন্তরের অনেক নীচেও এই রাসায়নিক আবহবিকার ঘটতে দেখা যায়।


উপরের আলোচনা থেকে এটা পরিষ্কার যে আবহবিকারের নিয়ন্ত্রকগুলি ভূ-প্রকৃতির উপর নানাভাবে কাজ করে থাকে। তাই আবহবিকারে তার কার্যকারীতার উপর নির্ভর করে আবহাওয়াবিকারকে নানা ভাগে ভাগ করা হয়।


Middle post ad 01