welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

কিরঘিজ (Kirghizn)

মধ্য এশিয়ায় মহাদেশীয় অবস্থানে (Continental Location) তিয়েনসান পর্বতের উত্তরে স্তেপ তৃণাঞ্চলের পশ্চিম অংশে কিরঘিজদের বাস। মূল সভ্যতা থেকে এই অঞ্চলট

        কিরঘিজ (Kirghiz)  



• অবস্থান ( Location) :

 মধ্য এশিয়ায় মহাদেশীয় অবস্থানে (Continental Location) তিয়েনসান পর্বতের উত্তরে স্তেপ তৃণাঞ্চলের পশ্চিম অংশে কিরঘিজদের বাস। মূল সভ্যতা থেকে এই অঞ্চলটি একটি বিচ্ছিন্ন অবস্থানে থাকায় দেশের অগ্রসর অঞ্চলের সঙ্গে এর যোগাযোগ খুবই ক্ষীণ। উত্তরদিকে রাশিয়ার অগ্রসর অঞ্চলের সঙ্গে সামান্য যোগাযোগ গড়ে উঠলেও দক্ষিণে সিকিয়াং মরুভূমি ও তিব্বতের মালভূমি এদের চিন ও ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। পূর্ব ও পশ্চিমে শুষ্ক মরু অঞ্চল দ্বারা এরা বিচ্ছিন্ন হয়েছে। তবে অপর যাযাবর গোষ্ঠী মোঙ্গল ও তুর্কম্যানদের সাথে তাদের মাঝে মাঝে যোগাযোগ ঘটে।



পরিবেশ (Environment): 

ভূ-প্রকৃতি বৈচিত্রপূর্ণ। দক্ষিণের মালভূমিময় ভূমি নিম্ন হয়ে ক্রমে উত্তরের সুবিস্তীর্ণ সমভূমিতে গিয়ে মিশেছে। মালভূমির উচ্চতা স্থান বিশেষ ৩০০০ থেকে ৪০০০ মিটার পর্যন্ত সর্ব দক্ষিণে রয়েছে সুউচ্চ তিয়েনসান পর্বত।

জলবায়ু (Climate): 

মহাদেশীয় অবস্থানের জন্য অর্থাৎ সমুদ্র থেকে বহুদূরে অবস্থানের জন্য জলবায়ু চরমভাবাপন্ন। উষ্ণতা মেরু সীমান্তে গ্রীষ্মে সর্বাধিক ১৫.৫° সে. (জুলাই) এবং উপক্রান্তীয় সীমান্ত ২৬°সে. পর্যন্ত হয়ে থাকে। শীতকালীন উষ্মতা মেরু সীমান্তে জানুয়ারী মাসে হিমাঙ্কের নীচে নেমে যায়। দিনরাত্রির উষ্মতার পার্থক্যও যথেষ্ট বেশি। বৃষ্টিপাত — সমুদ্র থেকে বহুদূরে অবস্থানের জন্য এবং সুউচ্চ পার্বত্যভূমি দ্বারা বেষ্টিত হওয়ায় আর্দ্র সমুদ্র বায়ুর আগমনে বাধার সৃষ্টি হয়। ফলে বৃষ্টি খুবই কম। মাত্র ২৫-৫০ সে.মি। বৃষ্টির এই স্বল্পতার কারণেই স্বাভাবিক উদ্ভিদ মূলত তৃণ এবং শুষ্কতর অঞ্চলে ঝোপঝাপটা ও কাটাগুল্ম (Xerophytic Vegetation)। বড় গাছ কেবল উঁচু পর্বতের ওপর এবং—নদী তীরবর্তী অঞ্চলে জলের প্রাপ্যতায় বেড়ে ওঠে। এছাড়া সর্বত্র প্রায় তৃণভূমি। মৃত্তিকা উর্বর হলেও জলের অভাব কৃষিকার্যে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।


• জীবনযাপন প্রণালী (Mode of Living) : 

তৃণাঞ্চলের ওপর নির্ভর করেই কিরঘিজদের জীবিকা গড়ে ওঠে। এরা দলবদ্ধভাবে কাজ করে। গোষ্ঠীবদ্ধ জীবনে এরা একস্থান থেকে অন্যস্থানে তৃণ ও জলের সন্ধানে পশুর পাল নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। মেষ, ছাগ ও ঘোড়া প্রতিপালিত পশু। গ্রীষ্মকালে শীতের প্রকোপ কমলে পশুর পাল নিয়ে দক্ষিণদিকে তিয়েনসান পর্বত সংলগ্ন অঞ্চলে তৃণের সন্ধানে চলে যায়। আবার শীতের আগমনে উত্তরে মালভূমির অঞ্চলে ও অধিত্যকা সমভূমিতে নেমে আসে। এরূপ ঋতু নিয়ন্ত্রিত যাযাবর বৃত্তিতে এরা অভ্যস্ত।

● খাদ্যোপকরণ (Food): 

পশুপালক হলেও মাংস তাদের প্রধান খাদ্য নয়। পশু এদের প্রধান সম্পদ। দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য প্রধান খাদ্যদ্রব্য। মাংস প্রয়োজনে খায়। সবজি পাওয়া গেলে খায়। দুধ চামড়ার থলিতে দুতিন দিন রেখে দিয়ে পরে সেই দুধ পান করে। অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য তারা মাঝে মাঝে রাশিয়ার অধিবাসীদের থেকে সংগ্রহ করে থাকে।


• পরিধেয় বাসস্থান ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী (Clothings, Shelter and Daily Necessities) : 

বস্তুত বাসস্থানের জন্যও কিরঘিজগণ তাদের পশুপালের ওপর নির্ভর করে। তারা মূলত চামড়া ও পশম দ্বারা প্রস্তুত পোশাক পরে এবং চামড়ার জুতো ব্যবহার করে। পুরুষেরা সাধারণত চামড়ার টুপি পরলেও মেয়েরা সুতোর টুপি ব্যবহার করে। নদীর ধারে সে উইলো গাছ জন্মায়। 



এই উইলো কাঠের ফ্রেম দিয়ে গোলাকার জাফরির ন্যায় ফ্রেম তৈরি করে তার ওপর পুরু পশমের ফেল্ট বিছিয়ে তাবু তৈরি করে। এটি স্থানান্তরে গমনের সময় গুটিয়ে নেওয়া যায়। ঠাণ্ডা বাতাস ও বৃষ্টি থেকে তাবু রক্ষা করে। ৪-মিটার ব্যাসযুক্ত এই তাবু সাধারণত নদী বা জলের উৎসের কাছে স্থাপন করা হয় যাতে পানীয় জলের অসুবিধা না ঘটে।

আসবাব-এর ব্যবহার যাযাবর পশুপালক জীবনে কমই দেখা যায়। কম্বল, গালিচা, চামড়ার থলি। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য।


* নেতৃত্বের ভূমিকা ( Role of Leadership) : 

তাদের গোষ্ঠীবদ্ধ জীবন যাত্রায় গোষ্ঠীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এই নেতৃত্ব বা সর্দারের নির্দেশ গোষ্ঠীর সদস্যদের কাছে অবশ্য পালনীয়।


* বিচলন ( Movements) : 

কিরঘিজ দলের বিচলন অর্থাৎ একস্থান থেকে অন্য স্থানে গমনের দৃশ্যটি লক্ষ্য করবার মত। দলের প্রতিটি সদস্যের কাজ নির্দিষ্ট থাকে। প্রথমে পুরুষেরা ভোররাতে পশুর পাল নিয়ে অগ্রসর হয়। পরে স্ত্রীলোকেরা তাবু গুটিয়ে ছোটো ছেলেমেয়েদের নিয়ে অগ্রবর্তী দলের অনুসরণ করে। ঘোড়ার পিঠের একদিকে আসবাব অন্যদিকে বাচ্চাদের বেধে ঘোড়ার পিঠে চেপে তারা চলতে থাকে। বিকেল বা সন্ধ্যার মধ্যে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে তাবুগুলিকে খাটিয়ে অস্থায়ী গ্রাম রচনা করে এবং জিনিসপত্র এমন সুন্দর করে গুছিয়ে রাখে যে বোঝাই যায় না যে তারা নতুন কোনো জায়গায় এসেছে।


* সভ্যতার প্রভাবঃ 

একসময় যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবেও বিচ্ছিন্নতার জন্য এবং বৃষ্টির অভাবে কৃষিকাজের কথা ভাবা যেত না। কিন্তু সরকারী উদ্যোগে কৃষি প্রযুক্তির উন্নতি এবং সেচের সম্প্রসারণ। ঘটিয়ে স্তেপের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কৃষিকার্যের প্রবর্তন করা হয়েছে। এই শস্যক্ষেত্রে প্রচুর গম ও শীতসহাকারী ফসল উৎপন্ন হয়। লৌহ প্রভৃতি খনিজ আবিষ্কারে খনিজভিত্তিক বাণিজ্যকার্যও অগ্রগতি ঘটেছে। তৃণভূমির এক উল্লেখযোগ্য অংশে বাণিজ্যিক পশুচারণ প্রবর্তন হয়েছে। ফলে অন্যত্র স্থায়ী জীবিকাসত্ত্বাভিত্তিক পশুপালন দেখা যায়। ফলে পশুপালক যাযাবরদের অনেকে স্থায়ী কৃষিজীবী তা স্থায়ী পশুপালকে পরিণত হয়েছেন অথবা আধুনিক কোনো কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়েছেন। যাযাবর পশুপালক হিসেবে কোনো কোনো গোষ্ঠী এখনো তাদের প্রাচীন জীবনযাপন প্রণালী অনুশীলন করে চলেছেন।

Photo calect :- Wikipedia.com

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Middle post ad 01