ধারণা (concept)
যে পূর্ণবৃত্তরেখা পৃথিবীকে সমান দুটি অংশে ভাগ করে তা হল মহাবৃত্ত। কোনো বৃত্তকে তখনই মহাবৃত্ত বলা হবে যখন তার নিম্নোক্ত তিনটি বৈশিষ্ট্য থাকবে- এটি হল - গোলকের সবচেয়ে বড়ো বৃত্ত। এর থেকে বড়ো বৃত্ত ভূ-গোলক এর ওপর আঁকা যাবে না।
মহাবৃত্ত বরাবর পৃথিবী সমান দুটি অংশে ভাগ করে এবং 3 ভূ-গোলকের কেন্দ্র ও পৃথিবীর কেন্দ্র সর্বদা এক বিন্দুতে থাকবে। তাই মহাবৃত্তের ব্যাসার্ধ ও ভূ-গোলকের ব্যাসার্ধ সর্বদা সমান। ভূ-গোলকের ওপর অঙ্কিত অসংখ্য অক্ষরেখা ও দ্রাঘিমারেখার মধ্যে একমাত্র নিরক্ষরেখায় এই তিনটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তাই নিরক্ষরেখা মহাবৃত্তের উদাহরণ।
নিরক্ষীয় পরিধি সর্বাধিক হওয়ায় এটাই ভূ-গোলকের মধ্যে সবচেয়ে বড়ো বৃত্ত তথা মহাবৃত্ত (great circle)। অন্য বৃত্তগুলি হল ক্ষুদ্রবৃত্ত (small circle)। নিরক্ষরেখা বাদে বাকি সকল পূর্ণবৃত্ত অক্ষরেখা হল ক্ষুদ্রবৃত্ত। অন্যদিকে, উত্তর ও দক্ষিণ মেরুবিন্দু দিয়ে প্রসারিত ভূ-গোলকের ওপর দিয়ে বৃত্ত টানা যায় সেগুলির কেন্দ্রও ভূ-গোলকের কেন্দ্রে অবস্থান করে। আসলে, এ ধরনের বৃত্ত পরস্পর বিপরীত দুটি দ্রাঘিমারেখাকে নির্দেশ করে. সুতরাং এভাবে কল্পিত বৃত্তও একটি মহাবৃত্ত।
অন্যভাবে বলা যায়, দুটি বিপরীতমুখী দ্রাঘিমারেখা সম্মিলিত ভাবে একটি মহাবৃত্ত (যেমন ০° দ্রাঘিমারেখা ও 1800 দ্রাঘিমারেখার কিংবা দ্রাঘিমা রেখাগুলি এক-একটি অর্ধ মহাবৃত্ত নির্দেশ করে। মেরু ব্যাসার্ধ কিছু কম হওয়ায় এসব মহাবৃত্তের পরিধি নিরক্ষীয় পরিধি অপেক্ষা সামান্য কম হয়। আবার ভূ-গোলককে নিরক্ষরেখা ও মেরুবিন্দুর মধ্যবর্তী অংশ দিয়ে তির্যকভাবে অসংখ্য মহাবৃত্ত টানা যায়।
সংজ্ঞা (definition)
1) ভূ-গোলকে আঁকা বা পৃথিবীপৃষ্ঠ দিয়ে কল্পিত যে বৃত্তের বৃত্তীয় তলের কেন্দ্র বিন্দু ভূ-গোলকের বা পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দুর সঙ্গে একই বিন্দুতে অবস্থান করে তাকে মহাবৃত্ত বলে।
2)যে পূর্ণবৃত্তরেখা পৃথিবীকে সমান দুটি অংশে ভাগ করে। তাকে মহাবৃত্ত বলে।
3) যে সমাক্ষরেখা পৃথিবীর মাঝখানে অবস্থিত তাকে মহাবৃত্ত বলে। নিরক্ষরেখা (0) কে মহাবৃত্ত বলে।
4 ) পৃথিবীর ওপর কল্পিত বা ভূ-গোলকের ওপর অঙ্কিত যে বৃত্তের কেন্দ্র পৃথিবী বা ভূ-গোলকের কেন্দ্রের সঙ্গে একই বিন্দুতে অবস্থান করে তাকে মহাবৃত্ত বলে।
5) পৃথিবীপৃষ্ঠে কল্পিত সবচেয়ে বড়ো বৃত্ত হল মহাবৃত্ত।
গুরুত্ব (importance)
কোনো ভূ-গোলকের গায়ে যে কোনো দুটি বিন্দুর মধ্যে সবচেয়ে কম দূরত্ব (shortest distance) হল মহাবৃত্তের যে বৃত্তচাপ ওই দুই বিন্দুকে স্পর্শ করে।
অর্থাৎ পৃথিবীপৃষ্ঠে যে কোনো দুটি স্থানের মধ্যে বিমান ও জাহাজ চলাচলের সংক্ষিপ্ততম পথ ওই দুটি স্থানের মধ্যে কল্পিত মহাবৃত্তের সাহায্যেই স্থির করা হয়। না হলে বেশি দূরত্ব পার হতে হয়। এই কারণে সমুদ্রপথে নাবিকরা এবং আকাশপথে বিমান চালকরা মহাবৃত্তের পথ ধরেই চলাচল করেন। ফলে সময় এবং অর্থ দুই-ই সাশ্রয় হয়।