welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

এস্কিমো Eskimo)

এস্কিমোগণ উত্তর গোলার্ধের উত্তরাংশে এক বিস্তৃত এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করেন। উত্তর আমেরিকার উত্তরাংশ (আলাস্কা), গ্রীনল্যান্ড এবং পূর্ব সাইবেরিয়

 এস্কিমো (Eskimo)


পরিচিতি ঃ  

 এস্কিমোগণ উত্তর গোলার্ধের উত্তরাংশে এক বিস্তৃত এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস করেন। উত্তর আমেরিকার উত্তরাংশ (আলাস্কা), গ্রীনল্যান্ড এবং পূর্ব সাইবেরিয়ার বেরিং উপকূল বরাবর প্রায় 8,000 কিলোমিটারের অধিক বিস্তৃত এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন। এঁরা উত্তর আমেরিকা ও গ্রীনল্যান্ডে ইনুয়িট (Inuit) ও ইউপিক (Eupic), রাশিয়ায় এস্কিমো ইত্যাদি নামে পরিচিত।



 আটলান্টিক উপকূলে প্রচলিত একটি স্থানীয় ভাষায় ‘এস্কিমো' কথাটির অর্থ  ‘যারা কাঁচা মাংস খান'। আবার অপর একটি স্থানীয় ভাষায় ‘Ayskimew' শব্দটির অর্থ ‘বরফের জুতো পায়ে পড়েন যে ব্যাক্তি'। বরফাবৃত অঞ্চলে বসবাস ও জীবিকা নির্বাহ করার জন্যই সম্ভবতঃ এরূপ নাম। অন্ততঃ ৫ হাজার বছর পূর্বের এস্কিমো সংস্কৃতির প্রমান পাওয়া গেছে। এদের ব্যবহৃত প্রাচীন হাতে তৈরি দ্রব্যাদির আবিস্কার এই বয়স নির্ধারনে সাহায্য করেছে।


প্রব্রজন (Migration) ঃ

 গবেষনায় দেখা গেছে এস্কিমোগণ মঙ্গোলীয় বংশোদ্ভূত এবং পূর্ব এশিয়া থেকে একসময় এতদ্ অঞ্চলে পরিভ্রমণ করতে করতে চলে এসেছিলেন। কিছুকাল পূর্বেও এরা একস্থান থেকে অপর স্থানে অস্থায়ীভাবে স্বল্প দূরত্বের প্রব্রজনে অভ্যস্থ্য ছিলেন খাদ্য বস্তু শিকার ও সংগ্রহের জন্য এবং যাযাবর জীবনযাত্রায় ভ্রমনকালে তারা চামড়ার তৈরি তাবুতে বসবাস করতেন। বর্তমানে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে অনেকখানি।

আঞ্চলিক পরিবেশ ঃ 

উত্তরের তুন্দ্রা অঞ্চলে এবং গ্রীনল্যান্ডের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে ও বিভিন্ন দ্বীপে এস্কিমোদের বসবাস। এখানে দীর্ঘস্থায়ী শীত, তাপমাত্রা বছরের অধিকাংশ সময় (প্রায় ৯ মাস) হিমাঙ্কের নীচে থাকে। শীতলতম মাসে (জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী) গড় উদ্বুতা -২০° সে. থেকে -২৫° সে.-এ নেমে যায়। স্বল্পস্থায়ী গ্রীষ্মে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের উপরে উঠে যায়। এই সময় দিবাভাগের দৈর্ঘ খুব বেশি বলে উষ্ণতার মাসিক গড় প্রায় ১০° সে. হয়। গ্রীষ্মে সূর্য অস্ত যায় না, তবে তীর্যকরশ্মির উত্তাপ কম হওয়ায় উষ্ণতার বৃদ্ধি বিশেষ ঘটে না।


শীতে সূর্য না উঠলেও অরোরা বোরিয়ালিস (Aurora Borealis) সহ বিভিন্ন জ্যোতিষ্কের আলোক বরফে প্রতিফলিত হয়ে এক মৃদু আলোকপ্রভা সৃষ্টি করে। গ্রীষ্মকালে কিছু ঘূর্ণবৃষ্টি হয় যার পরিমান গড়ে প্রায় ২৫ সে.মি.। বৃক্ষরাজির অভাবে বাতাস খুব জোরে বয় এবং শুষ্ক ও হাল্কা বরফ এক স্থান থেকে অপর স্থানে ছড়িয়ে যায়। হিমায়িত ভূমিভাগে মস্ ও শৈবাল জাতীয় গুল্ম ও ক্ষুদ্র তৃণ ও ঝোপঝাড় ছাড়া কিছুই জন্মাতে পারে না।


বাসগৃহ : 

অতীতে এস্কিমোগণ শীতকালে বরফের তৈরি বাসগৃহ ইগ্লু (Igloo)-তে বাস করতেন। গ্রীষ্মে ক্যারিবু হরিণের চামড়ার তৈরি বহনযোগ্য (Portable) তাবুতে বাস করতেন। যাযাবর জীবনযাত্রায় ভ্রাম্যমান এই তাবুর ব্যবহার হত।



বর্তমানে অধিকাংশ এস্কিমো যাযাবর জীবনযাত্রা পারিত্যাগ করে স্থায়ীভাবে উপযুক্ত স্থানে বসবাস করেন। বিভিন্নভাগে বিভক্ত ঘরের কাঠামোগুলি একত্র করে গৃহ নির্মাণ করা হয়।

পোষাক : 

শীতের আধিক্য প্রায় সারা বছর। তাই শরীরকে ভালভাবে ঢেকে রাখে এরূপ পোষাকের ব্যবহার হয়। পূর্বে সামুদ্রিক সীল, ক্যারিবু ও বল্গা হরিণের চামড়া দিয়ে তৈরি পোষাক কেবল পরিধান করতেন। বর্তমানে নিকটবর্তী অথবা ভ্রাম্যমান বিক্রেতাদের কাছ থেকে কেনা আধুনিক পশ্চিমী গরম পোষাক-এর প্রচলনও



 প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত পোষাকগুলির শীত থেকে রক্ষা করার ক্ষমতা খুব বেশি বলে এগুলির চাহিদা রয়েছে। তবে আধুনিক সভ্যতার প্রভাব এই পোষাকেও পড়েছে। সার্ট, টুপি, জ্যাকেট তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে পশুর লোম ও চামড়া ব্যবহৃত হলেও আধুনিকতার ছোয়া পেতে দেখা যাচ্ছে। পারকা (Parka) এক ধরণের পোষাক যা পশুলোম দিয়ে তৈরি হয়। জুতো তৈরি হয় সীল মাছের চামড়া দিয়ে কারণ এগুলি জল প্রতিরোধক (Water Proof)।


খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহ :

 সমুদ্র থেকে সীলমাছ সংগ্রহ প্রধান। বরফের ফাঁক দিয়ে সীল মাছ বাতাসের অক্সিজেন নেবার জন্য যখন মুখ বার করে তখন শিকারী এস্কিমোর হারপুনের ফলায় বিদ্ধ হলে শিকার ধরা পড়ে। স্থলভাগ থেকে বিভিন্ন জীবজন্তু যেমন ক্যারিবো হরিণ, খরগোস ও বিভিন্ন পাখী শিকার করা হয়। সীলমাছ খাদ্য হিসেবে, এর চামড়া পোষাক ও তাবু তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। সমুদ্রে কায়াক (Kayak) চড়ে শিকারের খোজে বের হয়। তবে বর্তমানে আধুনিকতার সংস্পর্শে এসেছেন এমন অধিকাংশ এস্কিমো কেবল আনন্দের জন্যই পূর্বতন জীবনযাত্রার স্বাদ নিতে শিকারে বের হন। খাদ্যদ্রব্য এরা স্থানীয় বা ভ্রাম্যমান বিক্রেতাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন। স্নো মোবাইল বা বরফের স্কুটারের ব্যবহারে কুকুরে বা বল্গা হরিণে টানা স্লেজগাড়ির গুরুত্ব কমেছে।

সংস্কৃতি ঃ 

কারিগরি হস্তকলার নৈপুণ্যে দক্ষ, এস্কিমো জনজাতির মানুষেরা। প্রাচীন জীবনধারায় ছোটো ছোটো দলে এক একজন নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তির অধিনে দলগত ঐক্য মেনে চলতেন। একান্ত ব্যক্তিগত কিছু জিনিস ছাড়া তাদের সংগ্রহে অন্য বিশেষ কিছু থাকে না। ছেলেরা শিকার করে, বাসগৃহ বানায় এবং মেয়েরা গৃহস্থালির কাজে সময় দিতেন। বর্তমানে এরূপ অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে।


বর্তমানে স্লেজগাড়ির জায়গা নিচ্ছে স্লোমোবাইল বা বরফের স্কুটার। হারপুনের শিকারে বন্দুকের ব্যবহার বাড়ছে। আধুনিক জীবনযাত্রার প্রতিবেশি সংস্কৃতির সংস্পর্শে এসে এঁরা স্থায়ী বসতিতে এবং উপার্জনকারী পেশায় নিযুক্ত হচ্ছেন। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিস্তীর্ণ কৃষিজমিতে এস্কিমোদের অর্থনৈতিক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করায় বহু এস্কিমো যাযাবর বৃত্তি ছেড়ে দিয়ে স্থায়ী বসতিতে বসবাস বেছে নিয়েছেন।


ভাষা ঃ 

পূর্বতন ইনুইটইউপিক দুটি প্রচলিত ভাষা। ব্যকারণগত মিল থাকলেও শ্রুতিগতভাবে ভাষা দুটির মধ্যে অমিলও যথেষ্ট।


বিবাহ ঃ 

এস্কিমোদের মধ্যে প্রেমঘটিত বিবাহ (Love Marriage)-এর প্রবণতা বেশি। পরিবার থেকে দেখে শুনে বিবাহ ব্যবস্থাও রয়েছে পাশাপাশি। কোনো কোনো ইনুইট গোষ্ঠীর মধ্যে হবু পাত্রটি পছন্দের পাত্রীটির বাড়িতে এসে কয়েকদিন থাকে। বিশ্বস্ততা অর্জনের পর সে মেয়েটির সঙ্গে রাত্রিযাপনের অনুমতি পায়। এভাবে কিছুদিন কাটানোর পর অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তারা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এস্কিমো পুরুষদের মধ্যে কেউ কেউ একাধিক বিবাহ করে থাকে। এটি তার দুটি স্ত্রীর ভরণপোষণের সামর্থকে প্রকাশ করে।

জীবন ও জীবিকা :

পূর্বে গ্রীষ্মকালে সীলমাছ সংগ্রহ করে খাওয়া হত। বরফে ঢাকা হ্রদে কায়াক-এ চড়ে বা বরফাবৃত অঞ্চলে কুকুরে বা বল্গা হরিণে টানা স্লেজ গাড়ি চড়ে ঘুরে বেড়াতো শিকারের খোজে। মূলতঃ হারপুণ ছুড়ে সীল মাছ ধরা হত এবং সীল মাছই ছিল প্রধান খাদ্য।


বর্তমানে এস্কিমোগণ আধুনিকতার সংস্পর্শে এসে নিকটবর্তী বা ভ্রাম্যমান দোকান থেকে খাবার কেনেন এবং শিকার করেন মূলতঃ আনন্দের জন্য। শিকারের জন্য বন্দুক, বরফে চলার মোবাইল বা বরফে চলার স্কুটার, সমুদ্রে চলার জন্য মোটর চালিত নৌকা বা মোটরবোট ব্যবহার করেন।


পূর্বে তারা একসঙ্গে ঘুরে বেরিয়ে শিকার করতেন, প্রয়োজনমত খাদ্য ভাগাভাগি করে। নিতেন। শীতে খাবার না পাওয়া গেলে চরম দুর্ভোগে পড়তেন। বর্তমানে শিকার ছেড়ে অধিকাংশ এস্কিমো স্থায়ী বা অস্থায়ী জীবিকা, চাকুরি বা ব্যবসার দিকে ঝুঁকেছেন এবং অন্য উন্নততর জীবযাত্রার মানুষদের জীবনযাপনে আগ্রহী হচ্ছেন। পূর্বে আনন্দ, উৎসবে নাচ, গান, মুখে মুখে গল্প বলা ইত্যাদি হ'ত। বর্তমানে ক্রমে তার জায়গা নিচ্ছে টেলিভিশন, মোবাইল ফোন ইত্যাদি।

Middle post ad 01