welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

★ওয়াল্থার পেঙ্কের ক্ষয়চক্র Cycle of Erosion of Walther Penck

ভূগোলশাস্ত্রের বিশিষ্ট শাখা ভূমিরূপবিদ্যার আলোচনার এক বিশিষ্ট অংশ হল ক্ষয়চক্র। এর ইংরাজি প্রতিশব্দ হল Cycle of Erosion। পৃথিবীত যে চক্রাকার ধারার মধ্

★ওয়াল্থার পেঙ্কের ক্ষয়চক্র Cycle of Erosion of Walther Penck

 ভূগোলশাস্ত্রের বিশিষ্ট শাখা ভূমিরূপবিদ্যার আলোচনার এক বিশিষ্ট অংশ হল ক্ষয়চক্র। এর ইংরাজি প্রতিশব্দ হল Cycle of Erosion। পৃথিবীত যে চক্রাকার ধারার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক ক্ষয়কারী শক্তিসমূহ তাদের ক্ষয় প্রক্রিয়া (erosional process)-র মাধ্যমে ভূমিরূপের ক্ষয়কার্য সাধন করে ভূমিরূপের পরিবর্তন ও বিবর্তন ঘটিয়ে ক্রমশ ভূভাগকে ক্ষয়ের শেষ সীমায় (base level of erosion) নিয়ে আসে, সেই প্রকার চক্রাকার ধারাতেই ক্ষয়চক্র বলে। 

প্রায় সম্ভবত জেমস্ হার্টানের পৃথিবীর ক্ষয়চক্রের ইতিহাস এবং ভূমিরূপের বিবর্তন তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে 1884 থেকে 1899 সালের মধ্যে আমেরিকান ভূমিরূপবিদ উইলিয়াম মরিস ডেভিস সর্বপ্রথম স্বাভাবিক ক্যাচক্রের ধারণাটি প্রকাশ করেন। এই প্রকাশিত ক্ষয়চক্রের ধারণাটি নিয়ে যখন ভৌগোলিক মহলে মুগ্ধতার রশ্মি প্রতিফলিত হচ্ছে, ঠিক সেই সময় জার্মান 'ভূমিরূপদি ওয়াথার পেক্ষ এই ধারণাটির অতি সরলীকরণের সমালোচনা করে একটি নতুন তত্ত্বের জন্ম দেন। পেঙ্ক 1924 সালে তাঁর নিজস্ব লিখিত গ্রন্থ ডাই-মরফোলোজিস্ অ্যানালাইসিস (Die Morphologische Analysis)-এ ভূমি ঢালের ক্রমবিবর্তন সম্পর্কে মৌলিক ধারণা প্রদর্শন করেন। পেকের ভূমির ক্ষয়চক্রের তত্ত্বটি পরিপূর্ণভাবে তাঁর চালেখা প্রতিস্থাপন তত্ত্ব (slope replacement theory) এর উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। 

■ উদ্দেশ্য (Object) : 
ভূমিরূপবিদ্যায় ক্ষয়চক্রের অন্যান্য তত্ত্বের মতো পেষ্কের তত্ত্বেরও বিশেষ উদ্দেশ্য বর্তমান।। পৃথিবীর মধ্যে বহির্ভূত প্রক্রিয়া ও ভূপৃষ্ঠ বৈশিষ্ট্যের সাপেক্ষে ভূমিরূপের বিকাশ বিবর্তনের ধরন পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করাই পেঙ্কের তত্ত্বের প্রধান উদ্দেশ্য। পোঙ্কের তত্ত্বের উদ্দেশ্যটির মুখ্য উপাদানগুলি বহিঃস্থ প্রক্রিয়া, ভূপৃষ্ঠের বৈশিষ্ট্য, ভূমিরূপের পরিবর্তন ও বিবর্তন, পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ। এই সমস্ত উপাদানগুলির ক্রম ক্রিয়াশীলতার মধ্য দিয়ে পেরে তত্ত্বটির উদ্দেশ্য বর্ণিত হয়। পেঙ্কের তত্ত্বটির সূচক হল—কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের ভূমিরূপগত বৈশিষ্ট্য বা প্রকৃতি এই নির্দিষ্ট অঞ্চলটির ভূগঠনগত কার্যকলাপের সঙ্গে সম্পর্কিত। 

■ মূল পারণা (Basic Concept): 

জার্মান ভূমিরূপবিদ ওয়ালথার পেঙ্ক ভৌগোলিক চক্র (Geographical Cyclel তত্ত্বটির তীব্র সমালোচনা করে ঢালের প্রতিস্থাপন তত্ত্ব নির্ভরশীল ক্ষয়চক্রটিকে প্রদর্শন ও বর্ণনা করেন। পেঙ্কের তত্ত্বটির মূল ধারণার প্রজা সীকার্য বৈশিষ্ট্য হল—ভূমিভাগের রূপের পরিবর্তন ও বিবর্তনে অন্তর্জাত ও বহির্জাত বলের অনুপাত বিবেচনা করা। পেঙ্ক তাঁর তত্ত্বটির মূল ধারণায় উল্লেখ করেছেন যে, ভূ-আন্দোলনজনিত হারের উপর ভূভাগের ক্ষয়কার্যের হার ও ক্ষয়কার্যের ফলে উদ্ভূত ক্ষয়প্রাপ্ত পদার্থের অপসারণের হার নির্ভর করে। আবার পেঙ্কের মতে, ভূভাগ আন্দোলনের ইতিহাস কয়েকটি বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে উইলিয়াম মরিস ডেভিসের তত্ত্বের ভূ-আন্দোলনের ইতিহাসের অনুরূপ হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভূভাগের ভূ-আন্দোলনজনিত উত্থান ও ক্ষয়কার্য একই সঙ্গে চলতে থাকে এবং ভূ-আন্দোলনজনিত হার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মন্থর প্রকৃতির হয়। পেঙ্কের তত্ত্বটি প্রধানত শিলার ক্ষয়ের যথাযথ নিবিড় বৈজ্ঞানিক পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণের উপর নির্ভর করে সৃষ্টি হয়েছে। নানান প্রকার আবহবিকার ও বিভিন্ন অবক্ষয় প্রক্রিয়ার দ্বারা সৃষ্ট শিলাগাত্র থেকে উদ্ভূত চূর্ণবিচূর্ণ পদার্থগুলির গতিশীলতার জন্য দায়ী থাকে।
 বিভিন্ন প্রক্রিয়া (যেমন—মৃত্তিকার স্খলন বা বিসর্পণ, বৃষ্টির জল, পুঞ্জিত ক্ষয় প্রভৃতি)-গুলির উপর পেঙ্কের তত্ত্বটি প্রতিষ্ঠিত। ইউরোপের আল্পস পর্বতের নিম্নভাগে অবস্থিত পাললিক তথা স্তরীভূত শিলা (Sedimentary Rock)-র প্রকারভেদ অনুধাবন করে পেঙ্ক বিশেষরূপে বিশ্বাস করেন যে ভূমির উত্থান প্রথম পর্যায়ে ধীর হারে, পরবর্তী পর্যায়ে ত্বরণসহকারে এবং তৎপরবর্তী পর্যায়গুলিতে সমহারে ও মন্দন সহকারে হয়ে থাকে। সর্বশেষে বা অস্তিম ক্ষেত্রে ভূভাগ সুস্থির থাকে।




● বৈজ্ঞানিক ভিত্তিসম্মত অনুমানসমূহ (Hypothesis) 

ওয়ালথার পেঙ্ক ভূভাগের ক্ষয়চক্র ও ক্ষয়চক্রের উপর নির্ভর করে সৃষ্টি হওয়া ভূভাগের পরিবর্তন ও বিবর্তনের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে যে তত্ত্বটি সৃষ্টি করেছেন, সেই তত্ত্বটি তাঁর বেশ কিছু অনুমানের উপর নির্ভর করে দাঁড়িয়ে আছে। তাঁর এই অনুমানগুলি বৈজ্ঞানিক ভিত্তির দ্বারা সমৃদ্ধ ও প্রসিদ্ধ হওয়ায় এই তত্ত্বকেন্দ্রিক অনুমানগুলিকে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিসম্মত অনুমান বলা হয়। পেঙ্কের বৈজ্ঞানিক ভিত্তির আলোকে গড়ে ওঠা অনুমানগুলি হল 

1. ভূপৃষ্ঠের কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানের ক্ষয়কার্যের তীব্রতা ঐ নির্দিষ্ট স্থানের ঢালের সঙ্গে সম অনুপাতে থাকে। অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠের কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানের ঢালের তীব্রতা ঐ নির্দিষ্ট স্থানটির ক্ষয়কার্যের তীব্রতার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। 

2. ভূপৃষ্ঠের কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানের ভূমিভাগের ঢাল ঐ নির্দিষ্ট স্থানটির মধ্যে বিরাজমান ক্ষয়জাত পদার্থসমূহের আয়তনের উপর নির্ভরশীল। 

3. কোনো নির্দিষ্ট স্থানের ভূভাগের ঢালের উপর ঐ নির্দিষ্ট স্থানটিতে বর্তমান বৃহত্তম বা বৃহত্তর শিলাখণ্ডসমূহের পরিবহনযোগ্যতা নির্ভর করে। অর্থাৎ, কোনো স্থানের ভূমির ঢাল যতই ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে ততই ঐ স্থানের মধ্যে অবস্থিত বৃহত্তম বা বৃহত্তর শিলাখণ্ডসমূহ দ্রুত ও সহজে অপসারিত হবে। 

4. কোনো স্থানের ঢালের কোনো অংশে যদি আবহবিকারপ্রাপ্ত পদার্থ বা ক্ষয়জাত পদার্থের পরিমাণ সমান থাকে তাহলে ক্ষয়কার্যের মধ্যে দিয়ে ঐ স্থানে সমান্তরাল দিকে ঢালের পশ্চাদপসরণ ঘটবে। 

5. কোনো স্থানে পিছনের দিকে গমন করা ঢালটির পাদদেশে যদি আবহবিকার বা অন্যান্য ক্ষয়জাত প্রক্রিয়ার দ্বারা উদ্বৃত ক্ষয়জাত পদার্থ সজ্জিত হয়, তবে সেই পদার্থসমূহ ঐ স্থানের পূর্ববর্তী চালের সামনের দিকে সঞ্চিত হয়ে অপেক্ষাকৃত কম ঢালযুক্ত নব একটি ভূমির জন্ম দেয়। 

6. কোনো নির্দিষ্ট স্থানের ভূভাগের পরিবর্তন-বিবর্তন-উন্নয়ন ও ক্ষয়কার্য ঐ স্থানটির সদাসর্বদাই পাশাপাশি ক্রমান্বয়ে চলতে থাকে।

Middle post ad 01