welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

মহীসঞ্চরণ মতবাদের গুরুত্ব Significance of Continental Drift Theory

পৃথিবীর মহাদেশগুলির অবস্থানের পরিবর্তন সম্পর্কে বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিক থেকে সুসংগত আলোকপাত করে চলেছেন জার্মান জলবায়ুবিদ ও ভূবিজ্ঞানের গবেষক আলফ্রেড

  মহীসঞ্চরণ মতবাদের গুরুত্ব Significance of Continental Drift Theory

 

পৃথিবীর মহাদেশগুলির অবস্থানের পরিবর্তন সম্পর্কে বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিক থেকে সুসংগত আলোকপাত করে চলেছেন জার্মান জলবায়ুবিদ ও ভূবিজ্ঞানের গবেষক আলফ্রেড ওয়েগনার ( Alfred Wegener , 1880-1903 ) । প্রাচীনকাল থেকে বহু - ভূতত্ত্ববিদ এবং ভূমিরূপবিদ্ এমন বহু প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন , যা পৃথিবীর মহাদেশ কিংবা মহাসমুদ্রের বর্তমান বিতরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয় । 1900 শতকের মধ্যবর্তী সময়ে ফরাসি ভূবিজ্ঞানী অ্যান্টেনিও স্নাইডার পোলিগ্রিনি ( A. S.Pollegrini , 1802-1885 ) এবং বিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগে আমেরিকান ভূ - বিজ্ঞানী এফ . বি . টেলর ( FB . Taylor , 1860 ) 1938 ) এনের গবেষণায় মহাদেশের স্থানান্তর বিষয়ের ধারণার কিছু আভাস পাওয়া যায় । ওয়েগনার 1911 সাল থেকে শুরু করে 1915 সালের শেষ সীমা পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে তিনি তাঁর প্রকাশিত The Origin of Continets and Oceans বইটিতে মহীসঞ্চরণ মতবাদ প্রতিষ্ঠা করেন । এই বৈপ্লবিক চিন্তাধারা বিজ্ঞানের জগতে প্রবল আলোড়নের সৃষ্টি করে । সেই সঙ্গে এক বিতর্কিত আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয় । ওয়েগনার যে সমস্ত প্রাকৃতিক সমস্যা সমাধানের জন্য তাঁর মতবাদ প্রচার করেছিলেন সেগুলি নীচে আলোচনা করা হল



 ( 1 ) সমগ্র পৃথিবীব্যাপী অবস্থানরত সমস্ত মহাদেশ ও মহাসাগরের আকৃতি এবং বিতরণের ক্ষেত্রে যে সকল বিশেষত্ব লক্ষ করা যায় , পূর্বে সেগুলি সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়নি । তাছাড়া মহাসাগরগুলির স্থায়িত্ব সম্পর্কেও ভূতত্ত্ব ও ভূমিরূপবিদ সহমত পোষণ করেননি । প্রাচীন ভূতাত্ত্বিকগণ এই ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য পৃথিবীর উৎপত্তি বিষয়ক তত্ত্বগুলি ব্যবহার করতেন । কিন্তু এইভাবে কোনো সর্বজনগ্রাহ্য সমাধান করা সম্ভব হয়নি । ওয়েগনারের মতবাদ এই ধরনের সমস্যার মহীসত্তরণের এক পরোক্ষ সম্পর্ক স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিল । 

( 2 ) ভূগাঠনিক কিংবা ভূমিরূপবিদ্যা বাদ দিয়ে ও প্রাণীবিদ্যার ক্ষেত্রেও এই ধরনের কিছু সমস্যা দেখা যেত । ক্যাঙ্গারু জাতীয় Marsupial প্রজাতির প্রাণী অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় । আবার এই ধরনের প্রজাতির জীবিত প্রাণী চিলিতেও লক্ষ করা যায় । কিন্তু এই গোষ্ঠীর প্রাণী বা তাদের জীবাশ্ম উত্তর গোলার্ধে কোনো অঞ্চলে পাওয়া যায় না । একই ভাবে অধসাপ প্রজাতির কয়েক ধরনের প্রজাপতি শুধু দক্ষিণ গোলাবেই দেখা যায় । আবার Glossopteris গোষ্ঠীর উদ্ভিদের জীবাশ্ম ভারত ছাড়া উত্তর গোলার্ধের অন্য কোনো দেশ বা মহাদেশে পাওয়া যায় না । উপরি উল্লিখিত এই সমস্ত প্রাণী কীভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল কিংবা এরা কেন কয়েকটি সুনির্দিষ্ট অঞ্চলে সীমাবদ্ধ ছিল সেই বিষয়ে সঠিক ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব হয়নি । আগে এই সমস্ত সমস্যা সমাধানের জন্য জীববিজ্ঞানীরা মনে করতেন যে , প্রাচীন ভূতাত্ত্বিক যুগে মহাদেশগুলি কয়েকটি স্থল - সেতুর ” ( land bridge ) মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত ছিল । বর্তমানে ঐ ধরনের সেতুগুলি সমুদ্র গর্ভে নিমজ্জিত হয়েছে । প্রাচীনকালে বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদ স্থল - সেতুর উপর দিয়ে বিভিন্ন মহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল । কিন্তু এই রকম স্থল - সেতুর ধারণা অত্যন্ত অবাস্তব ও অবৈজ্ঞানিকও বটে । ওয়েগনার তাঁর মহীসঞ্চরণ মতবাদে মহাদেশগুলি পরস্পর হতে বিচ্ছিন্ন হবার আগে ঐ সকল প্রাণী ও উদ্ভিদ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল । 

( 3 ) পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাচীন ভূতাত্ত্বিক যুগে জলবায়ুর পরিবর্তনের বিভিন্ন চিহ্ন বা রূপ দেখতে পাওয়া যায় । উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে উষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলে হিমবাহ সৃষ্ট অবক্ষেপের সময় কিংবা শুষ্ক জলবায়ু অঞ্চলে আর্দ্র জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অবক্ষেপের অবস্থান অথবা পৃথিবীব্যাপী হিমযুগের বিরাজ প্রভৃতি , ধরনের পুরা জলবায়ুর পরিবর্তনকে চিহ্নিত করে । কিন্তু পুরা জলবায়ুর এই ধরনের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সঠিক ও যুক্তিপূর্ণ কারণ নির্দেশ করা সম্ভব হয়নি । ওয়েগনার তাঁর মতবাদে উল্লেখ করেছেন যে মহাদেশগুলির স্থানাস্তর এবং তার সঙ্গে মেরুর অবস্থানের পরিবর্তনের কারণেই পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে জলবায়ুর বিশেষ পরিবর্তন হয়েছিল । 

( 4 ) ওয়েগনার তাঁর মতবাদের দ্বারা অন্য যে সমস্ত প্রাকৃতিক সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করেছিলেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল - ভগিল পর্বতমালা সৃষ্টির প্রক্রিয়া , আটলান্টিক মহাসাগরের দুই উপকূল ভাগের মধ্যে ভূতাত্ত্বিক ও ভূমিরূপগত সাদৃশ্য ইত্যাদি ।

 ( 5 ) এই তত্ত্ব ভগিল পর্বত সৃষ্টির ব্যাখ্যা প্রদান করে । হিমালয় , আয়স প্রভৃতি পর্বতের পূর্বে - পশ্চিমে বিন্যাস এবং রকি আন্দিজের উত্তর - দক্ষিণে বিন্যাসের কারণে এই তত্ত্বে যুক্তিসঙ্গতভাবে করা হয়েছে । 

( 6 ) যদিও ওয়েগনার সমালোচকদের অনেক প্রশ্নের উত্তর দেননি কিংবা এড়িয়ে গেছেন ; তবুও পরবর্তী সময়ে জলি ( Jolly ) , ড্যালি ( Dally ) , হোমস ( Holmes ) প্রভৃতি বিজ্ঞানীগণ মেনে নিয়েছেন যে , এই মতবাদ পৃথিবীর বিভিন্ন ভূতত্ত্ব কিংবা জীবতত্ত্ব বিষয়ে সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে ।

 ( 7 ) এই মতবাদ পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ এবং প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম প্রান্তের দ্বীপপুঞ্জ প্রভৃতির উৎপত্তি বিষয়ে আলোকপাত করে । 

( ৪ ) পৃথিবী পৃষ্ঠে অবস্থানরত সমস্ত মহাদেশ এবং মহাসাগর যে অপরিবর্তনীয় অংশ নয় , এবং তাদের আকৃতি , আয়তন এবং যে কোনো সময় পরিবর্তিত হতে পারে তা এই তত্ত্বে প্রমাণিত ।

 ( 9 ) এই মতবাদের উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে রয়েছে পাত ভূগঠন মতবাদ , যার দ্বারা সমুদ্রতলের সম্প্রসারণ , অগ্ন্যুৎপাত ভূমিকম্প , গিরিজনি আলোড়নের মতো একাধিক বিষয় ।

 ( 10 ) মহাদেশীয় ভূখণ্ড তথা শিলামণ্ডল পরস্পরের কাছাকাছি হওয়ায় প্রশান্ত মহাসাগরের আয়তন কমে গেছে , আবার মহাদেশীয় ভূখণ্ডগুলি পরস্পর থেকে দূরে সরে যাওয়ায় আটলান্টিক মহাসাগরের আয়তন বেড়েছে যা এই মতবাদে প্রমাণিত ।

Middle post ad 01