সৌরজগৎ তথা পৃথিবী সৃষ্টির নানা তত্ত্ব Theories of Origin of Solar System including the Earth
সৌরজগৎ ও পৃথিবীর উৎপত্তি সম্বন্ধে বিভিন্ন বিজ্ঞানী ও দার্শনিক বিভিন্ন যুগে নানা মতবাদ প্রকাশ করেছেন । এসব মতবাদের অনেকখানি অংশ অনুমানের ওপর নির্ভর করে সৃষ্টি হয়েছে । সেই কারণে এসবের কোনোটিকেই সম্পূর্ণ সঠিক বলে গণ্য করা হয় না ।
[* আলোকবর্ষ( Light year ) :
দূরতম দূরত্ব পরিমাপের একক । আলো সেকেন্ডে 2 লক্ষ 97 হাজার কিমি বেগে এক বছরে যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে এক আলোকবর্ষ বলে।]
★ কান্ট - এর গ্যাসীয় নীহারিকা মতবাদ ( Gaseous Nebular Hypothesis of Kant )
1755 সালে জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট ( Immanuel Kant ) সৌরজগৎ তথা পৃথিবীর উৎপত্তি সম্পর্কে তাঁর ধারণা প্রকাশ করেন । কান্ট তাঁর মতবাদে নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন । কান্টের মতবাদটি পৃথিবীর উৎপত্তি সম্পর্কে প্রাচীনতম মতবাদ হিসাবে ধরা হয় । তাঁর মতবাদকে নীহারিকা মতবাদ বলা হয় । তাঁর তত্ত্বের মূল বিষয়গুলি হল-
1. তাঁর মতে মহাবিশ্বে একসময় সূর্য ছিল নীহারিকার মতো এক গ্যাস ধূলিকণার মেঘ । বর্তমান সৌরজগৎ জুড়ে ছিল এই মেঘের অবস্থান ।
2. এই ধূলিকণাগুলি মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে ক্রমশ কেন্দ্রীভূত হতে শুরু করল ।
3. এই কাজের জন্য সংঘর্ষজনিত উত্তাপ ও আবর্তন গতির সৃষ্টি হয় । ফলে মহাশূন্যে ভাসমান শীতল ও গতিহীন পদার্থগুলি প্রচণ্ডবেগে ঘুরতে ঘুরতে উত্তপ্ত বিশালাকার গ্যাসীয় পিণ্ড অর্থাৎ নীহারিকায় পরিণত হয় ।
4. উত্তাপের কারণে ঘূর্ণনের বেগ একসময় এমন অবস্থায় পৌঁছায় যে তাপকেন্দ্র বল ও ঘূর্ণন বেগ উভয়ই বাড়তে থাকায় মেঘটি ক্রমশ চ্যাপটা হয়ে চাকতির আকার নেয় ।
5. প্রচন্ড গতিতে ঘুরতে থাকা চাকতি আকারের গ্যাসীয় পিণ্ড বা নীহারিকার নিরক্ষীয় তল বরাবর প্রচণ্ড কেন্দ্রমুখী বলের সৃষ্টি হয় এবং নীহারিকার প্রান্তসীমা থেকে পরপর নয়টি বলয় বিচ্ছিন্ন হয়ে বেরিয়ে আসে ।
6. কালক্রমে বিচ্ছিন্ন নয়টি ঘূর্ণমান বলয় থেকে নয়টি গ্রহ এবং গ্রহগুলি থেকে ছিটকে আসা ছোটো ছোটো বলয়গুলি জমাট বেঁধে উপগ্রহের সৃষ্টি হয় ।
7. চাকতির আকারে নীহারিকার মাঝের ফোলা অংশটি সূর্যে পরিণত হয় । গ্রহগুলি সূর্যকে এবং উপগ্রহগুলি নিজ নিজ গ্রহকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে ।
■ কান্ট - এর মতবাদের সমালোচনা ( Criticism of the Hypothesis of Kant )
( a ) সুবিধা ( Merits )
1. কান্টের মতবাদটি সহজ সরল এবং সাধারণ মানুষের বোধগম্য ।
2. এটি সূর্যের নয়টি গ্রহ এবং তাদের উপগ্রহ সৃষ্টির প্রথম বিজ্ঞানসম্মত মতবাদ ।
3. কান্টের মতবাদটি নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ও তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে ব্যাখ্যা করা হয়েছে ।
4. কান্টের মতবাদটি প্রথম বিজ্ঞানসম্মত ও প্রাণোজ্জ্বল মতবাদ ।
( b ) অসুবিধা ( Demerits )
1. কান্টের মতবাদটি পুরোপুরি বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত নয় ।
2. মতবাদটিতে ধুলোকণার উৎসের কোনো উল্লেখ নেই ।
3. ধুলোকণার সংঘর্ষের মাধ্যমে নীহারিকার আবর্তনের ধারণা , বেগ সংরক্ষণ নীতিকে ( Conservation of Bangular momenturm ) মেনে চলেনি ।
4. প্রাথমিক শীতল পদার্থের সংঘর্ষে বিপুল তাপ উৎপন্ন হতে পারে না বলে আধুনিক বিজ্ঞানীরা মনে করেন ।
5. প্রাথমিক পদার্থপুঞ্জ পারস্পরিক সংঘর্ষের প্রভাবে কখনোই ঘুরতে পারে না বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন ।
6. এই মতবাদ অনুসারে গ্রহ , উপগ্রহ একই দিকে অর্থাৎ পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করে । বৃহস্পতি ও শনির ক্ষেত্রে বিপরীত দিক থেকে আবর্তন করার কারণ ব্যাখ্যা করা হয়নি ।
★ লাপ্লাসের নীহারিকা মতবাদ ( Nebular Hypothesis of Laplace )
ফরাসি বিজ্ঞানী পি . এস . লাপ্লাস ( P.S. Laplace ) কান্টের মতবাদকে আরও উন্নত পরিমার্জন করে 1795 সালে তাঁর নীহারিকা মতবাদ প্রকাশ করেন । এটি কাস্টের মতবাদ অপেক্ষা অধিক বিজ্ঞানসম্মত । তাঁর মতবাদের মূল বক্তব্যগুলি হল
1. লাপ্লাসের মতে অতীতে প্রাথমিক অবস্থায় নীহারিকা একটি বিশালাকার উত্তপ্ত গ্যাসীয় পিণ্ড ছিল ।
2. এই নীহারিকাটি তার কক্ষের চারদিকে দুরন্ত গতিতে ঘূর্ণায়মান ছিল ।
3. পরবর্তীকালে নীহারিকা তাপ বিকিরণ করে শীতল হতে শুরু করায় সংকোচন শুরু হয় ও পরিবর্তন বেগ বাড়তে থাকে এবং কেন্দ্রমুখী শক্তি বৃদ্ধি পায় ।
4. নীহারিকাটির প্রান্তভাগ মধ্যভাগ অপেক্ষা অধিক দ্রুত তাপ বিকিরণ করে । ফলে নীহারিকার ভিতরের তুলনায় বাইরের অংশ খুব তাড়াতাড়ি সংকুচিত হয় । ফলে নীহারিকা গঠনকারী পদার্থের কেন্দ্রমুখী বল ও ঘূর্ণন গতির মধ্যে সমতা নষ্ট হয় । এবং নীহারিকাটির নিরক্ষীয় তলের প্রান্তভাগ থেকে পরপর নয়টি বলয় ছিটকে বেরিয়ে যায় । কালক্রমে নয়টি ঘূর্ণমান বলয় থেকে নয়টি গ্রহ এবং নীহারিকাটির কেন্দ্র অংশটি সূর্যে পরিণত হয় । এ ছাড়া পরবর্তীকালে একইভাবে গ্রহগুলি থেকে ছিটকে যাওয়া ক্ষুদ্র বলয়গুলি ধীরে ধীরে শীতল হয়ে উপগ্রহে পরিণত হয় ।
■ লাপ্লাসের মতবাদের সমালোচনা ( Criticism of the Hypothesis of Laplace )
( a ) সুবিধা ( Merits )
1. লাপ্লাসের নীহারিকা মতবাদটি কান্টের মতবাদ অপেক্ষা অনেক বেশি বিজ্ঞানসম্মত ।
2. এই তত্ত্বে বিভিন্ন গ্রহ , উপগ্রহের একই তলে অবস্থানের একটি ধারণা পাওয়া যায় ।
3. লাগ্লাসের তত্ত্বে গ্রহের উত্তপ্ত গ্যাসীয় অবস্থা থেকে তরল হয়ে কঠিন অবস্থায় গ্রহ ও উপগ্রহের বিবর্তনের উপর আলোকপাত করা হয়েছে ।
b ) অসুবিধা ( Demerits )
1. গ্যাসীয় বলয় ঘনীভূত হয়ে কীভাবে প্রায় গোলাকার সূর্য , গ্রহ এবং উপগ্রহের সৃষ্টি হল তা লাগ্লাস ব্যাখ্যা করেননি
2. ঘূর্ণমান নীহারিকা থেকে কেবলমাত্র নয়টি গ্রহের সৃষ্টি হয়েছে কেন সে - বিষয়ে ব্যাখ্যা করা হয়নি ।
3. ইউরেনাস ও নেপচুন গ্রহের বিপরীতমুখী গতি অর্থাৎ অন্যান্য গ্রহের বিপরীত দিকে ঘূর্ণন এই তত্ত্বের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যায় না ।
4. পদার্থবিজ্ঞানী জে . সি . ম্যাকসওয়েল ( Maxwell ) বলেন , আদি নীহারিকা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া বয়লগুলির ভর এত কম ছিল যে , সেগুলি জমাট বাঁধার জন্য বা ঘনীভূত হওয়ার জন্য অভিকর্ষজ আকর্ষণ (Gravitational attraction ) সৃষ্টি করতে পারে না।
5. লাপ্লাসের মতে , সূর্যের কৌণিক ভরবেগ অন্যান্য গ্রহের তুলনায় বেশি কিন্তু বাস্তবে তা বিপরীত ।
6. গ্রহ থেকে যদি উপগ্রহের সৃষ্টি হত তবে গ্রহগুলি যেদিকে আবর্তন করছে তার উপগ্রহগুলিও সেদিকে আবর্তন করবে । কিন্তু শনি ও বৃহস্পতির উপগ্রহ এই নিয়ম মানেনি ।
★চেম্বারলিন ও মূলটনের গ্রহকণিকা মতবাদ
( Plauetestimal Hypothesis of Chamberlin & Multon )
1904 খ্রিস্টাব্দে আমেরিকান বিজ্ঞানী চেম্বারলিন ও মুলটন পৃথিবী ও সৌরজগতের উৎপত্তির ব্যাখ্যা দিয়েছেন । তাদের এই মতবাদটি গ্রহকণা মতবাদ নামে পরিচিত । এই তত্ত্বের মূল বিষয়গুলি হল
1. বহু কোটি বছর পূর্বে সূর্য এক জ্বলন্ত বাষ্পীয় কুণ্ডলীর আকারে মহাকাশে ভেসে বেড়াত ।
2. সূর্যের সৃষ্টির পরে মহাকাশে অপর এক শক্তিশালী নক্ষত্রের আবির্ভাব হয় ।
3. এই নতুন নক্ষত্রটি খুব দ্রুতগতিতে সূর্যের দিকে ধেয়ে আসে এবং তার প্রবল আকর্ষণে সমুদ্রপৃষ্ঠ শক্তিশালী জোয়ারের ( বাষ্পীয় ) সৃষ্টি হয় ।
4. সূর্যপৃষ্ঠ থেকে সৌরবস্তু প্রচণ্ড গতিতে বাইরের দিকে যখন বেরিয়ে আসে , তার বিপরীত । দিকে প্রায় একই সময়ে কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাবে একই ধরনের জোয়ারের সৃষ্টি হয় । এ কারণে বিপরীত অংশ থেকেও কিছুটা সৌরবস্তু পৃথক হয়ে যায় ।
5. ওই বিচ্ছিন্ন অংশগুলি শক্তিশালী নক্ষত্রটির সঙ্গে মিলিত হওয়ার চেষ্টা করে । কিন্তু নক্ষত্রটি অনেক দূরে সরে যাওয়ায় বাষ্পীয় পিন্ডের এই বিচ্ছিন্ন অংশ দুটি উল্লম্বভাবে সূর্যের চারদিকে পরিক্রমণ করতে শুরু করে ।
6. এই বাষ্পীয় পিণ্ডের মধ্যেই ছোটো - বড়ো বিভিন্ন আকৃতির ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণার সৃষ্টি হয়েছিল যাদের গ্রহকনা বলা হয় ।
7. অপেক্ষাকৃত বড়ো কণাগুলি আস্তে আস্তে জমাট বেঁধে গ্রহে পরিণত হয় এবং ছোটো কণাগুলি একত্রিত হয়ে গ্রহের চারদিকে উপগ্রহ রূপে ঘুরতে থাকে ।
৪. যে কণাগুলি আজও জমাট বাঁধার সুযোগ পেল না তারা সৌরজগতের অন্যান্য জ্যোতিষ্ক যেমন উল্কা , ধূমকেতু ৰূপে অবস্থান করছে ।
■ চেম্বারলিন ও মূলটনের মতবাদের সমালোচনা ( Criticism of the Hypothesis of Chamberlin And Multon )
( a ) সুবধ ( Merits )
1. চেম্বারলিন ও মুলটন তাঁদের মতবাদে পৃথিবীর উৎপত্তি সম্পর্কে একটি সঠিক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেন ।
2. এই মতবাদে ভূ - অভ্যন্তরভাগের গঠন , মহাসাগর ও মহাদেশের উৎপত্তির বিবর্তন পর্বত , মালভূমি এবং ছাতির সৃষ্টি প্রভৃতি বিষয়ে আলোকপাত করা হয় ।
3. এই মতবাদে সর্বপ্রথম সূর্য , গ্রহ এবং উপগ্রহগুলির উৎপত্তি সম্পর্কে আলোচনা করা
( b ) অসুবিধা ( Demerits )
1. সূর্য থেকে বিচ্ছিন্ন গ্রহকণাগুলি শুরুতে এতই উত্তপ্ত অবস্থায় ছিল যে , তাদের পক্ষে জমাট বেঁধে গ্রহ - উপগ্রহে পরিণত হওয়ার পরিবর্তে মহাশূন্যে বিক্ষিপ্ত হয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক ছিল ।
2. আগন্তুক নক্ষত্রের আকর্ষণে সৃষ্ট সৌরবস্তুগুলি গ্রহরূপে একই দিকে আবর্তিত কেন , তার ব্যাখ্যা এই মতবাদে নেই ।
3. গ্রহগুলির বিভিন্ন অবস্থানের কারণও অস্পষ্ট । বড়ো গ্রহগুলি মাঝামাঝি এবং ক্ষুদ্র গ্রহগুলি হয় সূর্যের কাছে , না - হয় সূর্য থেকে দূরে অবস্থান করছে । এই মতবাদে এর ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি ।
4. এই মতবাদ থেকে পৃথিবীর বার্ষিক গতির উৎপত্তি সম্পর্কে জানা গেলেও আহ্নিক গতির কারণ জানা যায় না হয় ।
★জিন্স ও জেফ্রির জোয়ারি তত্ত্ব ( Tidal Theory of Jeans and Jeffrey )
চেম্বারলিন ও মুলটনের গ্রহকণা মতবাদের সমন্বয়ে 1918 খ্রিস্টাব্দে ডে . জিন্স এবং এইচ . জেফ্রি পৃথিবী ও সৌরজগতের উৎপত্তির তত্ত্ব প্রকাশ করেন । এটি জোয়ারি তত্ত্ব নামে পরিচিত । এই তত্ত্বের মূল বিষয়গুলি হল—
1. সুদূর অতীতে মহাকাশে সূর্য অপেক্ষা কয়েকগুণ বড়ো এক বিশাল নক্ষত্র একসময় সূর্যের খুব কাছে এসে গিয়েছিল ।
2. নক্ষত্রের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে সূর্যের গ্যাসীয় দেহ ফুলে ওঠে , যেমন — পৃথিবীতে জোয়ারের সময় জলভাগ যেভাবে ফুলে ওঠে সেইভাবে স্ফীত হয় ।
3. কালক্রমে ফুলে ওঠা অংশটি সূর্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয় ।
4. বিচ্ছিন্ন অংশটি একটি ফিতে বা লম্বা পটোলের মতো বাইরে বেরিয়ে এসে ক্রমশ লম্বা হতে থাকে এবং সূর্যের চারিদিকে ঘুরতে শুরু করে ।
5. পরবর্তীকালে ফিতের মতো অংশটি ক্রমশ শীতল হয়ে ভেঙে বিভিন্ন গ্রহের জন্ম হয় । সৃষ্ট গ্রহগুলি সূর্যকে কেন্দ্র করে নিজ নিজ কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করে এবং উপগ্রহগুলি তাদের গ্রহের চতুর্দিকে পরিক্রম করা শুরু করে ।
■ জিন্স ও জেফ্রির মতবাদের সমালোচনা ( Criticism of the Hypothesis of Jeans and Jeffrey )
( a ) সুবিধা ( Merits )
1. জিন্স ও জেফ্রির মতবাদ অনুসারে বর্তমান সৌরজগতের গ্রহগুলির আকৃতি ও অবস্থান ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়েছে ।
2. এই তত্ত্বে ফিতে বা লম্বা পটোলের মতো গ্যাসীয় পিণ্ড থেকে গ্রহ ও উপগ্রহগুলির সৃষ্টি হওয়ায় উপগ্রহের আকৃতি ও অবস্থান ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে ।
3. এই তত্ত্ব অনুসারে বড়ো গ্রহ ও উপগ্রহগুলির শীতল ও কঠিন হয়ে জমাট বাঁধতে অপেক্ষাকৃত ছোটো গ্রহ ও উপগ্রহ থেকে বেশি সময় লেগেছে ।
4. এই তত্ত্বের সাহায্যে বিভিন্ন গ্রহ ও উপগ্রহগুলির পরিক্রমণ গতি , মেরুদণ্ডের চারদিকে আবর্তন এবং কক্ষতলের সঙ্গে মেরুদণ্ডের কৌণিক অবস্থান ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে ।
( b ) অসুবিধা ( Demerits )
1. সূর্য হালকা হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাসের সমন্বয়ে গঠিত এবং গ্রহ - উপগ্রহগুলি সিলিকা , অ্যালুমিনিয়াম , লোহা , নিকেল প্রভৃতি দিয়ে গঠিত । সূর্য থেকে গ্রহ এবং অন্যান্য উপগ্রহের সৃষ্টি হলে একই ধরনের পদার্থ দিয়ে গঠিত হত ।
2. সৌরজগতের মাঝখান থেকে দুদিকে আয়তন অনুযায়ী গ্রহ বা উপগ্রহের বিন্যাস ব্যাখ্যা করা যায় না ।
3. অসীম মহাকাশে নক্ষত্রদের মধ্যে এত বিশাল দূরত্ব আছে যে , একটি নক্ষত্র আর - একটি নক্ষত্রকে আকর্ষণ করতে পারে না ।
4. জিন্স - জেফ্রির জোয়ারি মতবাদ অনুসারে গ্রহ , উপগ্রহ , উল্কা , ধূমকেতু প্রভৃতির মোট কৌণিক ভরবেগ সৌরজগতের 98 % এবং সূর্যের ভরবেগ মাত্র 2 % । গ্রহ , উপগ্রহ , উল্কা , ধূমকেতু প্রভৃতি সূর্যের সামান্য অংশ নিয়ে গঠিত কিন্তু কীভাবে মূল অংশ থেকে 98 % ভরকেন্দ্র সঙ্গে নিয়ে এল তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না ।