★ভূমিরূপ সৃষ্টির উপর শিলার প্রভাব Influence of Lithology on Landforms
● ধারণা (Concept)
পৃথিবী জুড়ে বিরাজমান বিভিন্ন প্রাকৃতিক ক্ষয়কারী ও সঞ্চয়কারী শক্তিসমূহের দ্বারা বা, আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদানের দ্বারা বিস্তীর্ণ শিলাময় অংশের উপর ক্ষয় বা সময়ের মধ্যে দিয়ে ভূভাগের যে চেহারা বা আকৃতি বা রূপ প্রকাশিত হয়। তাকেই ভূমিরূপ (landforms) বলে। ভূমিব্রপের ক্রমউত্থান বা অবনমানের জন্য যে সমস্ত নিয়ন্ত্রকগুলির কার্যকারিতা বা কার্যকরী গুণ দায়ী সেই সমস্ত নিয়ন্ত্রকগুলির মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও বৈচিত্র্যপূর্ণ নিয়ন্ত্রক হল শিলার গঠন। শিলাসহ শিলার গঠন ও ভূমিরূপের নিবিড় সম্পর্ক ভূমিরূপবিদ্যার এক প্রধান আলোচ্য বিষয়। পৃথিবীর সামগ্রিক ভূভাগ মূলত তিন প্রকার শিলার সমন্বয়ে গঠিত। যথা-
(a) আগ্নেয়শিলা (igneous rocks), (b) পাললিক বা স্তরীভূত শিলা (sedimentary rocks) এবং (c) রূপান্তরিত শিলা (metamorphic rock)। পৃথিবীর বিস্তীর্ণ অংশে বিরাজমান উক্ত শিলাসমূহ ও তাদের গঠনের সহিত ঐ অংশের ভূমিরূপসমূহের এক নিদারুণ সম্পর্ক বর্তমান। পৃথিবীর কিছু কিছু বিশেষ অঞ্চল (যেমন–আগ্নেয় শিলাময় অঞ্চল, চুনাপাথর গঠিত অঞ্চল)-এর ভূমিরূপের স্বাতন্ত্র্য ঐ অঞ্চলের শিলার বিশিষ্টতা প্রদান করে। ভূমিরূপবিদ্যায় শিলার গঠন ও ভূমিরূপ সৃষ্টির মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণে দুই ধরনের মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষ করা যায়। নিম্নে এই দৃষ্টিভঙ্গি দুটি আলোচনা করা হল
(1) ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি (Historical Approach):
পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের শিলার গঠন ও ভূমিরূপের মধ্যে সম্পর্ক আলোচনার প্রসঙ্গে অন্যতম দৃষ্টিভঙ্গি হল ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি। যে প্রকার দৃষ্টিভঙ্গিতে মনে করা হয় যে সমগ্র ভূমিরূপের সৃষ্টি হয় ভূ-গাঠনিক পরিবর্তন, সমুদ্রতলের পরিবর্তন বা, জলবায়ুর পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে এবং সামগ্রিক ভূমিরূপের-ই বিবর্তন হয় আলোচা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে, সেই প্রকার দৃষ্টিভঙ্গিকে ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি বলা হয়। ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গির ধারণাটি মূলত পদ্ধতিগত ভূমিরূপবিদ্যা (process geomorphology) ধারাটির সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। ভূমিরূপবিদ্যার আদিগুরু উইলিয়াম মরিস ডেভিসের মতে, "ভূমিরূপ হল শিলাগঠন, ভূভাগ পরিবর্তন বা বিবর্তনকারী শক্তি ও ক্ষয়ের পর্যায় বা সময়ের সামগ্রিক ফলাফল" (landform is a function of structure, process and stage)। এই প্রকার দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাপক অর্থে, শিলার গঠন বলতে শিলার সমন্বয় এবং শিলার গুণাবলিকে বর্ণনা করা হয়েছে।
( 2 ) ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ামূলক দৃষ্টিভঙ্গি (Functional Approach) : পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের শিলাসমূহের গঠন ও ভূমিরূপের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণে থাকা বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি হল ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ামূলক দৃষ্টিভঙ্গি। যে প্রকার দৃষ্টিভঙ্গিতে মনে করা হয় যে সমগ্র ভূমিরূপের সৃষ্টি হয় ভূভাগ ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশের মধ্যে পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে সেই প্রকার দৃষ্টিভঙ্গিকে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ামূলক দৃষ্টিভঙ্গি বলা হয়। এই প্রকার দৃষ্টিভঙ্গির অন্যতম প্রবন্ধা ছিলেন জে. টি. হ্যাক (J. T. Hack)। জে. টি. হ্যাকের মতে, পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের বা অন্যালের ভূমিরূপের পার্থক্য মূলত ঐ সমস্ত অংশ বা অঞ্চলের শিলার কাঠিন্যতার তারতম্যের জন্য ঘটে থাকে। ভূমিরূপবিদ্যার মৌলিক ধারণার আলোচনা করতে গিয়ে W. M. Thornbury বলেছিলেন যে, "ভূমিরূপের বিবর্তনে ভূতাত্ত্বিক গঠনের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে এবং এই প্রকার গঠন ভূপৃষ্ঠের উপরের গঠনের উপর প্রতিফলিত হয়" ("Geologic structure is a dominant controlling factor in the evolution of landforms and is reflected in them.")
● ভূমিরূপ সৃষ্টির নিয়ন্ত্রকসমূহ (Controlling Factors of Landforms)
পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের বা অঞ্চলের বিস্তীর্ণ ক্ষেত্রে সৃষ্টি হওয়া ভূমিরূপের উপর কোনো কিছু নিয়ন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণ থাকে। পৃথিবীর বিভিন্ন ক্ষেত্রের শিলার বৈশিষ্ট্য পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে শিলার চরিত্র সাধারণত জটিল ধরনের। আবার পরীক্ষার লক্ষ করা গেছে যে পৃথিবীর কোনো একটি ক্ষুদ্র অঞ্চলের গঠনেও নানা প্রকার শিলার সহাবস্থান। পৃথিবীর কোনো বিশেষ শিলায় গঠিত অঞ্চলের ভূমিরূপের গঠন ঐ অঞ্চলের গাঠনিক শিলার বৈশিষ্ট্য ও পার্শ্ববর্তী শিলার দ্বারাও প্রভাবিত হয়। পৃথিবীর বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বিরাজমান শিলার বেশ কিছু ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য ঐ অঞ্চলের শিলার উপর গঠিত ভূমিরূপের নিয়ন্ত্রক হিসাবে কার্য সম্পাদন করে থাকে। নিম্নে এই নিয়ন্ত্রকগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হল—
(1) শিলার গ্রথন (Texture of Rock): পৃথিবীর ভূমিরূপ সৃষ্টির অন্যতম প্রধান নিয়ন্ত্রক হিসাবে বিবেচিত বিষয় হল শিলার এখন। সাধারণত শিলামধ্যসর ঘনিজ পদার্থসমূহের বিন্যাসের উপর শিলার প্রথন নির্ভরশীল। শিলার প্রথন মূলত দুই প্রকারের হয়। যথা (a) সূক্ষ্ম এথন ও (b) সথূল এখন। সূক্ষ্মগ্রখন বিশিষ্ট শিলার কেলাস বা, ক্রিস্টালগুলি অতি ঘন সন্নিবিষ্ট থাকার দরুন এই শিলা আবহবিকারে বাধা প্রদর্শন করে। এর ফলাফলে শিলার ক্ষয় কম হয়ে স্বল্প ক্রয়বিশিষ্ট ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়। আবার, মূল এখন বিশিষ্ট শিলার কেলাসগুলি অঘন সন্নিবিষ্ট বা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকার দরুন এই শিলা আবহবিকারে বাধা প্রদর্শন করলেও এই শিলার ক্ষয় বেশি হয়ে বৃহৎ মাত্রায় ক্ষয়বিশিষ্ট ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়।
(2) শিলার কাঠিন্যতা (Hardness of Rock): পৃথিবীর ভূমিৰূপ সৃষ্টির নিয়ন্ত্রক হিসাবে বিবেচিত দ্বিতীয় বিষয় হল শিলার কাঠিন্যতা। শিলার কাঠিন্যতা বা, যান্ত্রিক প্রতিরোধ ক্ষমতা ভূমিরূপকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করতে পারে না। কারণ, শিলার অন্যান্য কিছু বৈশিষ্ট্য শিল্পার কাঠিন্যতার প্রভাবকে হ্রাস করে। সাধারণত যে সমস্ত শিলার কঠিন্যতা (hardness) অনেক বেশি, সেই সমস্ত শিলা যথেষ্টভাবে ক্ষয় প্রতিরোধ করে কম মাত্রার কয়লাভ ভূমিরূপ বা প্রায় উচ্চভূমি সৃষ্টি করে। যেমন—গ্রানাইট, নিস্ ও কোয়ার্টভাইট জাতীয় শিলার কাঠিন্যতা যথেষ্ট বেশি হওয়ার দরুন এই সমস্ত শিলা ক্ষয় প্রতিরোধ করে বিভিন্ন প্রকার উচ্চভূমি, টিলা, ইনসেলবার্জ, বোনহার্ড বা শৈলশিরা তৈরি করে। আবার, চুনাপাথর, ডলোমাইট, কাদাপাথর ও খড়ি পাথর শিলার কাঠিন্যতা যথেষ্ট কম হওয়ার দরুন এই সমস্ত শিলা ক্ষয় প্রতিরোধে অক্ষম হয়। এই সমস্ত শিলার উপর সাধারণত নিম্ন উপতাকা, গর্ত প্রভৃতি সৃষ্টি হয়ে থাকে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপালেশিয়ান পার্বত্য অঞ্চলে শেনান্দোহা নদী অববাহিকায় কঠিনতর বেলেপাথর ও কোয়ার্টজাইট শিলা কম ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে উচ্চভূমি ও খাড়া ঢাল সৃষ্টি করেছে এবং এর সংলগ্ন কোমলতর চুনাপাথর অধিক ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে নীচু ও তরঙ্গায়িত সমভূমির সৃষ্টি করেছে।
(3) শিলার দারণ (Joints of Rock):
পৃথিবীর বিস্তীর্ণ অংশের ভূমিরূপের নিয়ন্ত্রকসমূহের মধ্যে অন্যতম হল শিলার মারণ। শিলার মধ্যস্থ এই দারণসমূহগুলি যান্ত্রিক ও রাসায়নিক আবহবিকারের নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শিলাসমূহের ক্ষয়সাধনে সহায়তা করে। যে সমস্ত শিলায় দারণ বা জয়েন্টসের পরিমাণ বেশি সেই সমস্ত শিলায় প্রবেশ্যতার পরিমাণ বেশি হয়ে যুত শিলার ক্ষয় পরিসাধিত হয়ে বেশি ক্ষয়প্রাপ্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়। আবার, যে সমস্ত শিলায় সারণের পরিমাণ কম সেই সমস্ত শিলায় প্রবেশ্যতার পরিমাণ কম হয়ে অদ্ভুত শিলার ক্ষয় পরিসাধিত হয়ে কম ক্ষ্যাপ্রাপ্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়। ইহলে জলনির্গম প্রণালীর ধরন শিলায় দারণের বিন্যাসের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। দারণ ব্যবস্থায় জ্যামিতিক বিন্যাস অনুসারে সমান্তরাল, কৌণিক, আয়তক্ষেত্রাকার প্রভৃতি নানা ধরনের জলনির্গম প্রণালীর সৃষ্টি হয়ে থাকে।
(4) শিলার স্তরায়ণ তলের উপস্থিতি (Presence of Bedding Plane) : পৃথিবীর ভূমিরূপ সৃষ্টির নিয়ামক হিসাবে বিবেচিত চতুর্থ বিষয় হল শিক্ষার স্তরায়ণ তলের উপস্থিতি। যে সমস্ত শিলার স্তরায়ণ তলের পরিমাণ বেশি এবং স্তরায়ণতল ভূপৃষ্ঠের উপর উন্মুক্ত অবস্থায় বিরাজ করে, সেই সমস্ত শিলায় এই স্তরায়ণতল বরাবর ক্রয়কার্য যথেষ্ট বেশি হয় ও শিলা প্রান্ত হয়ে অধিক ওয়জাত ভূমিরূপের সৃষ্টি করে। আবার যে সমস্ত শিলায় স্তরায়ণ তালের সংখ্যা কম এবং স্তরায়ণ তল ভূপৃষ্ঠের যথেষ্ট নিম্নে অবস্থিত, সেই সমস্ত শিলায় স্তরায়ণ তল বরাবর ক্ষয়কার্য যথেষ্ট কম হ্যা ও শিলা কম ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে স্বল্প ক্ষয়জাত ভূমিরূপের জন্ম দেয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আগ্নেয় শিলা ও রূপান্তরিত শিলার তুলনায় পাললিক শিলায় স্তরায়ণ তল যথেষ্ট বেশি বলে এবং পাললিক শিলার স্তরায়ণ তল ভূপৃষ্ঠের উপরে উন্মুক্তভাবে অবস্থান করায়, পাললিক শিলার স্তরায়ণ তল বরাবর ক্ষয় যথেষ্ট বেশি হয়ে অধিক ক্ষয়বিশিষ্ট ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়।
(5) শিলার সচ্ছিদ্রতা (Porosity of Rock) : পৃথিবীর ভূমিরূপসমূহের সৃষ্টির নিয়ন্ত্রকরূপে বর্ণিত পঞ্চম নিয়ন্ত্রক হল শিলার সচ্ছিদ্রতা। শিলার মধ্যেকার সচ্ছিদ্রতা বলতে সাধারণত শিল্পামধ্যস্থ খনিজগুলির মাঝখানের ক্ষুদ্র বা সূক্ষ্ম কীর গুলিকে বোঝানো হয়। শিলার সচ্ছিদ্রতা সাধারণত খনিজ কণার আকুতি, গঠন ও সংঘবন্ধতার উপর নির্ভর করে। শিলার মধ্যেকার সচ্ছিন্নতার পরিমাণ অসম আয়তনের খনিজসমূহের ক্ষেত্রে যথেষ্ট কম ও সম আয়তনের খনিজসমূহের ক্ষেত্রে যথেষ্ট বেশি হয়ে থাকে। যে সমস্ত শিলার সচ্ছিদ্রতার পরিমাণ যত বেশি হবে সেই সমস্ত শিলা ততই কম ক্ষয় প্রতিরোধ করে অধিক ফ্যাবিশিষ্ট ভূমিরূপের জন্ম দেবে। আবার, যে সমস্ত শিলার সচ্ছিদ্রতার পরিমাণ যথেষ্ট কম, সেই সমস্ত শিলা বেশি ক্ষয় প্রতিরোধ করে কম ক্ষয়বিশিষ্ট ভূমিরূপের জন্ম দেবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বেলেপাথর বা চুনাপাথর শিলার সচ্ছিদ্রতা গ্রানাইট বা শ্লেট জাতীয় শিলার সচ্ছিদ্রতা থেকে যথেষ্ট বেশি হওয়ার দরুন বেলেপাথর বা চুনাপাথর শিলাগঠিত অঞ্চলে অধিক ক্ষয়বিশিষ্ট ভূমিরূপের সৃষ্টি হয় এবং গ্রানাইট ও শ্লেট শিলাগঠিত অঞ্চলে স্বল্পক্ষয় বিশিষ্ট ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়। শিলার সচ্ছিদ্রতা প্রাথমিকভাবে শিলাগাত্রে অধিক ক্ষয় সংঘটিত করতে সাহায্য করলেও পরবর্তী সময়ে শিলাগাত্রে ক্ষয়ের পরিমাণের হ্রাস ঘটিয়ে থাকে।
(6) শিলার প্রবেশ্যতা (Permeability of Rock) : পৃথিবীর ভূমিরূপ সৃষ্টির নিয়ন্ত্রক হিসাবে বিবেচিত ষষ্ঠ বিষয় হল-শিলার প্রবেশ্যতা। শিলার প্রবেশ্যতা বলতে সাধারণত শিলার ভিতর দিয়ে জল প্রবাহিত হওয়ার ক্ষমতাকে বোঝায়। শিলার প্রবেশ্যতা সাধারণত শিলার ফাটল, শিলার সংযুক্তি ও শিলার স্তরায়ণ তলে অবস্থিত দারণের উপর নির্ভরশীল। যে সমস্ত শিলার প্রবেশাতা যথেষ্ট বেশি, সেই সমস্ত শিলার মধ্যে দিয়ে জলের দ্রুত প্রবাহের দরুন শিলার মধ্যে ক্ষয়ের পরিমাণ অতি অল্প হারে ঘটে কম ক্ষয়প্রাপ্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়। কিন্তু যে সমস্ত শিলার প্রবেশ্যতা যথেষ্ট কম, সেই সমস্ত শিলার মধ্যে দিয়ে জলের অদ্ভুত প্রবাহের দরুন শিলার মধ্যে ক্ষয়ের পরিমাণ যথেষ্ট বেশি হারে সংঘটিত হয়ে অধিক ক্ষয়প্রাপ্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় যুক্তরাজ্যের কার্বনিফেরাস যুগের চুনাপাথর গঠিত অঞ্চলে প্রবেশ্যতা যথেষ্ট বেশি থাকার দরুন, সেই অংশে কম ক্ষয়কার্য সংঘটিত হয়ে উচ্চ মালভূমি, খাড়া ঢাল ও শৈলশিরা গঠিত হয়েছে।
(7) শিলার দ্রাব্যতা (Solubility of Rock) শিলার প্রাঝতা ভূমিরূপ সৃষ্টির একটি অন্যতম প্রধান নিয়ন্ত্রক। শিলার দ্রাব্যতা কথাটি শিলার দ্রবণ ক্রিয়ার সহিত নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। যে সমস্ত শিলা যত প্ৰাব্য অর্থাৎ দ্রাবকের সংস্পর্শে এসে নিজের আকার হারিয়ে ফেলে বা দ্রাবকে মিশে যায়, সেই সমস্ত শিলার মধ্যে ততই ক্ষয়কার্য সংঘটিত হয়ে ক্ষয়কার্যের উত্তম ভূমিরূপসমূহ গড়ে ওঠে। আবার অন্যদিকে, যে সমস্ত শিলা যত কম ব্রাব্য সেই সমস্ত শিল্প তত বেশি ক্ষয় প্রতিরোধ করে স্বল্প ক্ষয়বিশিষ্ট ভূমিরূপের সৃষ্টি করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, গ্রানাইট শিলার প্রাব্যতা কম হওয়ায় এই শিলাপৃষ্ঠে যে সংখ্যক স্বল্প ক্ষয়জাত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়; চুনাপাঘর বা ডলোমাইট শিলার প্রাব্যতা যথেষ্ট বেশি হওয়ায় এই শিলাপৃষ্ঠে তার থেকে বেশি সংখ্যক অধিক ক্ষয়বিশিষ্ট ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়।
(৪) শিলার খনিজ ও রাসায়নিক সংযুক্তি (Minerological and Chemical Composition of Rocks) : শিলার খনিজ ও রাসায়নিক সংযুক্তি যথেষ্ট রূপে পৃথিবীপৃষ্ঠে ভূমিরূপ সৃষ্টির নিয়ন্ত্রক রূপে কাজ করে থাকে। এক প্রকার বিশেষ ধরনের শিলার মধ্যন্য খনিজ সমন্বয়ন ও শিলার মধ্যস্থ রাসায়নিক সংযুক্তির দ্বারা শিলা দ্রুত হারে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে অধিক ক্যাবিশিষ্ট ভূমিরূপের জন্ম দেয়। এই প্রকার শিলার একটি আদর্শ উদাহরণ হল চুনাপাথর। চুনাপাথর শিলাগঠিত অংশে নিবিড়ভাবে রাসায়নিক আবহবিকারের দরুন আদর্শ কার্স্ট ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়। কোনো স্থানে দীর্ঘকাল ধরে রাসায়নিক আবহবিকারের ফলে নানা ধরনের কাদার সৃষ্টি হয়। এই ধরনের কাদা সঞ্চিত হতে হতে কাদাস্তর সৃষ্টি করে থাকে। আবার অন্য এক প্রকার শিলামধ্যস্থ খনিজ সমন্বয়ন ও রাসায়নিক সংযুক্তির দ্বারা শিলা অদ্ভুত হারে ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে স্বল্প ক্ষ্যাবিশিষ্ট ভূমিরূপের জন্ম দেয়।