welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

মহাদেশীয় চলন Continental Drifting

আজ থেকে প্রায় 400 বছর আগেকার কথা । অতীতের মহাদেশীয় ভূখণ্ডের অবস্থান এখনকার থেকে আলাদা ছিল — এই ধারণার কথা বলে তুমুল বিতর্কের ঝড় তুলেছিলেন ইংল্যান্ড

 মহাদেশীয় চলন 

(Continental Drifting)




(★)মহাদেশীয় চলনের ভাবনা Concept of Continental Drifting 

• আদি ভাবনা ( Ancient Concept ) 

আজ থেকে প্রায় 400 বছর আগেকার কথা । অতীতের মহাদেশীয় ভূখণ্ডের অবস্থান এখনকার থেকে আলাদা ছিল — এই ধারণার কথা বলে তুমুল বিতর্কের ঝড় তুলেছিলেন ইংল্যান্ডের এক পণ্ডিত ফ্রান্সিস বেকন ( Francis Bacon 1561 1626 ) 1620 সালে তিনি নোভাম অরগ্যানাম ( Novam Organum ) নামে একটি বই লিখলেন যাতে দেখালেন মানচিত্র থেকে আফ্রিকা কেটে নিয়ে আমেরিকার পাশে বসালে আফ্রিকার উত্তর - পশ্চিম অক্ষরেখা যেন দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর - পূর্ব অক্ষরেখার সঙ্গে খাঁজে খাঁজে মিলে যায় । অবশ্য এরপরে এ নিয়ে তিনি আর হইচই করেননি । 1666 সালে আর এক দার্শনিক ফ্রামোয়া প্ল্যাসেড ( Framoya Placed ) লিখেছিলেন যে দক্ষিণ আমেরিকাকে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে যুক্ত করেছিল আটলান্টিক নামক মহাদেশ এবং আটলান্টিক ডুবে যাওয়ার ফলে ঘটেছিল এই বিচ্ছেদ । এরপর কেটে গেছে প্রায় 200 বছর । কিন্তু বিষয়টাকে নিয়ে ভেবেছে অনেকে । এঁদের মধ্যে ফরাসি ভৌগোলিক স্নাইডার পেলিগ্রিনি ( Antonio Snider Pellegrini 1802-1885 ) প্রথম 1858 সালে আটলান্টিক মহাসাগরের উভয় তীরের মহাদেশগুলির যুক্ত হওয়া থেকে বিচ্ছিন্ন ও ভেসে আলাদা হওয়ার কথা লিপিবদ্ধ করেন । স্নাইডার পেলিগ্রিনিকে অনুসরণ করে পরবর্তী সময়ে ফিশার ( O. Fisher ) , ওয়েটস্টেইন ( H. Wettstein ) , কোলবার্গ ( F. Coulburg ) প্রমুখ বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর গলিত তরল অভ্যন্তরের ওপরে ভাসমান মহাদেশগুলোর কথা কল্পনা করেছেন । তাঁদের সেই কল্পনাকে প্রমাণসিদ্ধ করার চেষ্টায় মার্কিন ভূতত্ত্ববিদ টেলর ( F. B. Taylor 1860-1938 ) 1910 সালে টার্শিয়ারি যুগের পর্বতমালার বিন্যাসের দিকে সমসাময়িক ভূবিজ্ঞানীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন । তিনি বললেন একটি পর্বত একদিকে বেঁকে আছে যা ভূত্বক তথা মহাদেশের পার্শ্বগতির ( lateral movement ) প্রমাণ ।

• ওয়েগনারের প্রস্তাব ( Wegener's Proposal )

 পৃথিবীর মাহাদেশগুলির অবস্থান পরিবর্তন সম্পর্কে বিংশ শতাব্দীর শুরুতে আবার আলোড়ন হয় । এবার আলোড়ন সৃষ্টি করেন জার্মান আবহবিদ আলফ্রেড ওয়েগনার ( 1880-1930 ) । তিনি গ্রিনল্যান্ডের হিমবাহের পর্যবেক্ষণ এবং পরে আফ্রিকার আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে 1911 থেকে 1915 দীর্ঘ পাঁচ বছর গবেষণা চালিয়ে তাঁর বিখ্যাত বই The Origin of Continents and Ocean প্রকাশিত করেন এ বইতে সম্ভবত প্রথম সুসংগতভাবে পৃথিবীর মহাদেশসমূহের চলন ( drifting of the continents ) মতবাদ উপস্থাপিত হয় । এই মতবাদে তিনি আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যে আকৃতির তুলনা ছাড়াও উভয় মহাদেশের প্রান্তসীমা বরাবর ভূতত্ত্ব সম্পর্কিত গঠন , জীবাশ্মের গঠন এবং হিমবাহ কার্যাবলির সাদৃশ্যের কথা উল্লেখ করেন । 

• ওয়েগনারের মহাদেশীয় চলন মতবাদ Theory of Continental Drifting by Wegener 

ওয়েগনারের মতবাদের মূল বিষয়গুলি হল --

(†)প্যানজিয়া ও প্যানথালাসা ( Pangea and Panthalasa ) 

কার্বনিফেরাস যুগের আগে অর্থাৎ প্রায় 35 কোটি বছর পূর্বে পৃথিবীর সমস্ত ভূভাগ একত্রে এক বিরাট মহাদেশ রূপে অবস্থান করত । তিনি এই অতিকায় মহাদেশের নাম প্যানজিয়া ( Pangea ) দিয়েছিলেন । প্যানজিয়া একটি গ্রিক শব্দ , যার অর্থ সমগ্র পৃথিবী ( all earth ) । প্যানজিয়ার চারিদিকে সমগ্র জলভাগ নিয়ে একটি মহাসাগর ছিল , যার নাম প্যানথালাসা ( Panthalasa ) । তাঁর মতে , অতি প্রাচীন এই মহাদেশের মধ্যে ভা রতে শুরু করে মেসোজোয়িক যুগের ( mesozoic era ) শুরু থেকে অর্থাৎ প্রায় 23 কোটি বছর পূর্বে । এরপর গ্লিসটোসিন ( pleistocene ) যুগ পর্যন্ত বিভিন্ন মহাদেশীয় খণ্ড বিভিন্ন দিকে সরতে থাকে । প্লাইস্টোসিন দক্ষিণাংশ হতে আফ্রিকা , ভারতীয় উপদ্বীপ অস্ট্রেলিয়া আন্টার্কটিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা উত্তরাংশ হতে এশিয়া , ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকা বিচ্ছিন্ন হয়ে আজকের অবস্থান নিয়েছে । 



(†)লরেশিয়া ও গন্ডোয়ানাল্যান্ড ( Laurasia and Gondwanaland) 

প্যানজিয়ার এই উত্তরাংশের নাম ছিল শো ( Laurasia ) যা সম্ভবত কানাডার পরেঙ্গীয় ভূখণ্ড থেকে নেওয়া হয়েছে । আর প্যানজিয়ার দক্ষিণাংশের নাম গন্ডোয়ানাল্যাও ( Gondwanaland ) । ভারতের মধ্যপ্রদেশে বসবাসকারী গোল্ড উপজাতির নাম থেকে এই নামকরণ করা হয়েছে । এই ভূখণ্ডটি ভারত থেকে মেরু অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল । উত্তরে লরেশিয়া এবং দক্ষিণে গন্ডোয়ানাল্যান্ডের মাঝখানে বিষুবরেখা বরাবর ছিল টেথিস নামে এক সমুদ্র । এই দুই বৃহৎ ভূখণ্ডের চতুর্দিকে যে মহাসাগর ছিল তা প্রশান্ত মহাসাগর রূপে বর্তমানে অবস্থান করছে । 

(†)গন্ডোয়ানাল্যান্ডের ভাঙন ( Drifting of Gondwanaland ) 

গন্ডোয়ানাল্যান্ডের ভাঙন শুরু হয় প্রায় 20 কোটি বছর আগে , অর্থাৎ , ট্রায়াসিক যুগে ( triassic period প্রায় 13.5 কোটি বছর আগে উত্তর আমেরিকা ইউরোপ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করে এবং উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের সৃষ্টির সূচনা হয় । এই সময় দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকার মধ্যে এক বিশাল ফাটলের সৃষ্টি হয় এবং দুই মহাদেশ বিপরীতমুখী যাত্রা শুরু করে , ফলে দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের সৃষ্টি হয় । এদিকে ততদিনে গন্ডোয়ানাল্যান্ড ভেঙে ভারতীয় উপদ্বীপ উত্তরে যাত্রা শুরু করতে থাকে । অস্ট্রেলিয়া ও আন্টার্কটিকা একসঙ্গে থেকে দক্ষিণে অগ্রসর হতে শুরু করে , ফলে ভারত মহাসাগরের সৃষ্টি হয় ।

(†) সমুদ্র ও পর্বত সৃষ্টি ( Formation of Sea and Mountain )

 বিভিন্ন মহাদেশের এই গতির ফলে আটলান্টিক ও ভারত মহাসাগরের আয়তন ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পাশাপাশি প্রশান্ত মহাসাগরের আয়তন ক্রমশ কমেছে । এদিকে ভারতীয় উপদ্বীপ ক্রমশ উত্তরে চলতে চলতে ১ কোটি বছর আগে এশিয়া ভূখণ্ডে ধাক্কা খায় এবং মধ্যবর্তী টেথিস - এর পলি উঁচু হয়ে হিমালয় পর্বত সৃষ্টি হয় । এ সময় অস্ট্রেলিয়া , আন্টার্কটিকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে উত্তর - পূর্বে যাত্রা করে এবং ভারত মহাসাগরে একটি দ্বীপ হিসাবে অবস্থান করে । আফ্রিকা মহাদেশ খুব বেশি নড়াচড়া করেনি – উত্তর দিকে সামান্য উঠে এসে ইউরোপে ধাক্কা খায় এবং আল্পস পর্বতের সৃষ্টি হয় ।

(★)মহাদেশীয় চলনের কারণসমূহ Causes of Drifting of Continent 

ওয়েগনারের মতে প্যানজিয়া ভেঙে খণ্ডগুলি দুদিকে অগ্রসর হয়েছিল- 1. নিরক্ষরেখার দিকে ও 2. পশ্চিমদিকে । এই দুদিকে চলনের ক্ষেত্রে তিনি অবশ্য আলাদা আলাদা কারণ নির্দেশ করেছেন । যথা 

A/ প্লবতা ও অভিকর্ণীয় কেন্দ্রের বৈষনা ওয়েগনারের মতে , সিয়াল স্তর ( মহাদেশীয় ভূত্বক ) সিমা ( মহাসাগরীয় ভূত্বক ) স্তরের উপর ভাসমান অবস্থায় রয়েছে । মহাদেশীয় মওগুলি ভারের জন্য নীচের দিকে চাপ দেয় , একে ভারকেন্দ্রগামী অভিকর্ষ বল বলে । সিয়াল স্তর নীচের তরলের স্নবতার জন্য ঊর্ধ্বমুখী চাপ দেয় । এই দুই বল সমান ও বিপরীতমুখী হওয়ায় সিয়াল ও সিমা স্তরের সাম্য বজায় থাকে । কিন্তু , পৃথিবীর আকৃতি অভিগত গোলক বলে মহাদেশীয় ভূত্বকের ভরকেন্দ্র এবং প্রবতাকো এক নয় । পৃথিবীর প্লবতাকেন্দ্র ভরকেন্দ্রের নীচে অবস্থান করে বলে নিরক্ষরেখার দিকে একটি বলের সৃষ্টি হয় । এই বৈষম্যমূলক বলের কারণে মহাদেশীয় খণ্ডগুলি নিরক্ষরেখার দিকে সরতে থাকে । এগেয়নারের মতে 45 ° অক্ষরেখায় এই বল সবচেয়ে বেশি তীব্র । 

B/জোয়ারি শক্তি ( Tidal Force ) ওয়েগনারের মতে , চন্দ্র ও সূর্যের নিলিত আকর্ষণে জোয়ারি শপ্তি ( tidal force ) প্রভাবে মহাদেশগুলি পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে সরে যাচ্ছে । জোয়ারি শক্তির প্রভাবে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ পশ্চিমদিকে সরে যাচ্ছে । তিনি মনে করতেন পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্বে আবর্তন করার জন্য মহাদেশগুলি ক্রমশ পশ্চিমদিকে সরে যেতে বাধ্য হয় । জোয়ারি শক্তির তাৎক্ষণিক প্রভাব খুব সামান্য হলেও দীর্ঘদিন ধরে এই শক্তি নিয়মিত কাজ করে চলায় মহাদেশগুলি পশ্চিমে সরছে । এখানে উল্লেখ্য , উপরে বর্ণিত দুটি কারণের সাপেক্ষে ওয়েগনার তাঁর মতবাদ স্থাপন করতে গিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হন , সেই কারণে পরবর্তীকালে মহাদেশীয় চলনের কারণ হিসাবে আর্থার হোমসের ( Arthur Holmes ) ভূগর্ভে পরিচলন Cre ( convection current ) - কে দায়ী করেন । 1929 সালে তিনি তাঁর নতুন সংস্করণে ভূ - অভ্যন্তরের গলিত ম্যাগমার তাপজনিত পরিচলন স্রোতকে মহাদেশীয় চলনের মূল কারণ হিসাবে স্বীকার করেন ।

(★)মহাদেশীয় চলনের প্রমাণসমূহ Evidences of Continental Drifting 

• জিগ - স - ফিট ( Jig - Saw - Fit ) ওয়েগনারের মতে , কোনো কঠিন বস্তু ভেঙে দুটুকরো হলে এদেরকে যেমন জোড়া লাগানো যায় , তেমনি আটলান্টিক মহাসাগরের বিপরীত উপকূলরেখা মূলত আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের উপকূলভাগ পরস্পর জোড়া লাগে । এই জোড়া লাগাবার ঘটনাকে জিগ - স - ফিট বলে । ব্রাজিলের সাও রক অন্তরীপ ( পশ্চিমে ) এবং আফ্রিকার গিনি উপসাগর ( পূর্বে ) ও পশ্চিম আফ্রিকার স্ফীত অংশও একইভাবে মেক্সিকো উপসাগরে জোড়া লাগে । অর্থাৎ আটলান্টিকের বিপরীত অংশ আগে নিশ্চয়ই একসঙ্গে ছিল কিন্তু মহাদেশীয় চলনের ফলে এরা বিচ্ছিন্ন হয়েছে । 

• পুরাঞ্জলবায়ুগত প্রমাণ ( Paleoclimatic evidence ) : ওয়েগনার আবহবিজ্ঞানী ছিলেন । তিনি দক্ষিণ আমেরিকা , দক্ষিণ আফ্রিকা , ভারত , অস্ট্রেলিয়ার কিছু অংশে হিমবাহ সম্বিত যাবরেখার অস্তিত্বযুক্ত পাথরের সন্ধান পেয়েছেন । বর্তমানে এই অঞ্চলগুলি ক্রান্তীয় জলবায়ুর অন্তর্গত । তাঁর মতে অতীতে আন্টার্কটিকার চারিধারে এই অঞ্চলগুলি অবস্থান করত বলে । এখানে শীতল বায়ু বিরাজ করত । এ কারণে হিমবাহের কাজের নিদর্শনগুলি থেকে গেছে । 

• জীবাশ্মের বিস্তার ( Fossil distribution ) ভারতে রসপটেরিস ( glossopteris ) নামে এক ধরনের উদ্ভিদের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে , যা ভারত থেকে বহু দূরে অবস্থিত সমুদ্র দ্বারা বিচ্ছিন্ন অস্ট্রেলিয়া ও আন্টার্কটিকাতেও পাওয়া গেছে অথচ ভারত - লাগোয়া এশিয়ার অন্য অঞ্চলে পাওয়া যায়নি । এ ছাড়া আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকায় মেসোসরাস ( mesosaurus ) নামে এক ধরনের ক্ষুদ্রাকার হলজীবী সরীসৃপের জীবাশ্ম পাওয়া যায় , যার পক্ষেও নিশ্চয়ই সাগর পেরিয়ে এক মহাদেশ থেকে আর এক মহাদেশে যাওয়া সম্ভব নয় । অর্থাৎ মহাদেশগুলি নিশ্চয়ই একত্রে অবস্থিত ছিল 

•কয়লার বিস্তৃতি ( Coal distribution ) একথা এখনও প্রমাণিত যে ক্রান্তীয় ঘন অরণ্য মাটি চাপা পড়ে কয়লার সৃষ্টি করেছে । অথচ উত্তর আমেরিকা এবং উত্তর ইউরোপের বেশ কিছু অঞ্চলে পুরু কয়লার স্তরের উপস্থিতি পাওয়া গেছে যা বর্তমান শীতল জলবায়ুর সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যায় না । অর্থাৎ কোনো এক সময় ওই দুটি মহাদেশের একত্র অবস্থান ( পরেশিয়া ) ক্রান্তীয় অঞ্চলে ছিল । তা ছাড়া ছড়িয়ে - ছিটিয়ে MIP # গন্ডোয়ানাল্যান্ডের প্রায় সর্বত্র গন্ডোয়ানা যুগের কয়লা পাওয়া যাচ্ছে , যা নিশ্চিতভাবেই এইসব মহাদেশের বিষুব - সংলগ্ন অঞ্চলে একত্র অবস্থানকে সমর্থন করে  

• অন্যান্য প্রমাণসমূহ( Other evidences ) ওয়েগনার এবং সমসাময়িক ভূবিজ্ঞানীমহল এ ছাড়াও মহাদেশীয় চলনের সপক্ষে বিস্ময়কর কিছু তথ্য সংগ্রহ ভারতসহ বর্তমানে করেছেন

 1. কানাডার উত্তরে বরফের তলায় কয়েক বর্গ কিমি বিস্তৃত পটাশিয়ামের খনির সন্ধান পাওয়া গেছে । পটাশিয়াম কেবলমাত্র উন্ন বায়ুমণ্ডলে অর্থাৎ বিষুব অঞ্চলে উৎপন্ন হতে পারে । চলনের ফলে তা এখন শীতল মণ্ডলে অবস্থিত । 

2. প্রবালদ্বীপ জলবায়ুর সাক্ষ্য বহন করে । কারণ প্রবাল জন্ম নিতে পারে একমাত্র নিরক্ষীয় উয় অগভীর সমুদ্রে ( 30 ° উঃ ) থেকে 25 " না অক্ষাংশের মধ্যে ) । কিন্তু নিরক্ষরেখার অনেক উত্তরে সুদূর অতীতের প্রবাল দ্বীপের সন্ধান মিলেছে । এই প্রবাল দ্বীপযুক্ত অপল নিশ্চয়ই অতীতে নিরক্ষীয় ছিল । 

3. ইংল্যান্ডের ভূগর্ভের অনেক গভীরে পাওয়া গেছে মরু অঞ্চলের মতো বালির সময় । কিন্তু বর্তমান ইংল্যান্ডের শীতল জলবায়ু এর কারণ ব্যাখ্যা করতে পারে না । অতীতের ইংল্যান্ডের ক্লান্তীয় অবস্থান এই মরু - জলবায়ুর কারণ হতে পারে । 

4. উত্তর আমেরিকার পূর্ব উপকূলে যে অ্যাপালেশিয়ান পর্বত রয়েছে তা নিউফাউন্ডল্যান্ডের কাছে হঠাৎ সমুদ্রে শেষ । হয়ে গেছে । আবার ইংল্যান্ডের পশ্চিম উপকূলের ক্যালিডোনিয়ান পর্বত যেন হঠাৎ করেই সমুদ্র থেকে উঠে এসেছে । এই দুই পর্বতকে মনে মনে জুড়ে দিলে পুরো একটা পর্বতশ্রেণি রূপে প্রতীয়মান হয় । 

5. তা ছাড়া উত্তর আমেরিকার পূর্বাঞ্চল এবং ইউরোপের পশ্চিমাঞ্চলের পাথরের প্রকৃতি এবং বয়স একই রকম , যা নিঃসন্দেহে অতীতের পৃথিবীতে এই দুই ভূখণ্ড হিসাবে ছিল তা প্রমাণ করে । 

(★)মহাদেশীয় চলন তত্ত্বের সমালোচনা Criticism of Continental Drifting Theory 

এইচ . এস . ওয়াশিংটন ( H.S. Washington ) . সি . শুকার্ট ( C. Schuchert ) , এইচ জেসি ( H. Jeffreys ) , বি . উইলিস ( B. Willis ) , জে . এ . স্টিয়ার্স ( 3. A. Steers ) প্রমুখ সমসাময়িক ভূবিজ্ঞানীরা অনেক ক্ষেত্রে ওয়েগনারের মহাদেশীয় চলন তত্ত্ব মেনে নিতে পারেননি । তারা নানা ভাবে সমালোচনা করেছেন । যেমন 

[1] চলনের শক্তি ( Forces of Drifting ) 

ওয়েগনারের মতে , প্লবতা শক্তি ও জোয়ারি শক্তি মহাদেশগুলির চলনের জন্য দায়ী । কিন্তু পদার্থবিদগণ এ তথ্য মানতে চাননি । এই শক্তিগুলি এতই নগণা যে মহাদেশের ভাঙনের কোনোভাবে দায়ী হতে পারে না । 

[2] জীবাশ্ম সমালোচনা ( Criticism of Fosil ) 

একই ধরনের গাছপালা , সরীসৃপ ও স্তন্যপায়ী প্রাণীদের জীবাশ্ম দেখে । দুটি মহাদেশ একসঙ্গে জোড়া ছিল - এ তথ্য আনকে মেনে নিতে পারেননি । এদের মধ্যে প্রধান ছিলেন ডুবিজ্ঞানী শুকার্ট । তার মতে , দুটি মহাদেশ ঐক্যবন্ধ না হলেও জীবাশ্ম পাওয়া সম্ভব যদি মহাদেশ - দুটির মধ্যে কোনো সেতুবন্ধ যোজক ( strait bridge ) থাকে । পৃথিবীর অনেক মহাদেশে এই যোজকের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে । যেমন — এশিয়া ও আলাস্কার মধ্যে বেরিং প্রণালী 

[3] উপকূলের অসংলগ্ন জোড়া লাগানো ( Criticism of Jig - Saw - Fit ) 

ওয়েগনারের জিগ - স - ফিট বা ভাঙা বস্তুর জোড়া লাগানো সুত্রটিও বিরোধিতার মধ্যে পড়ে । আটলান্টিক মহাসাগরের দুই বিপরীত উপকূলের জোড়া লাগানো নিখুঁত ভাবে প্রমাণিত হয়নি । অনেক ক্ষেত্রে উপকূল রেখার যথেষ্ট বিকৃতি ঘটিয়ে জোড়া লাগানো সম্ভব । 

[4] প্যানজিয়ার ভাঙন ( Drifting of Pangea ) 

ওয়েগনারের মতে , কার্বনিফেরাস যুগে প্রথম প্যানজিয়ায় ভাঙন ধরে এবং মহাদেশীয় চলন শুরু হয় । কিন্তু কার্বনিফেরাসের আগে কেন ভাঙন নয় কিংবা কোন বল কার্বনিফেরাস পর্যন্ত মহাদেশীয় খণ্ডগুলোকে একত্রে রেখেছিল এ সম্বন্ধে ওয়েগনার কোনো ব্যাখ্যা দেননি । 

■ ওয়েগনারের মহাদেশীয় সপ্তালন তত্ত্বের গুরুত্ব ( Importance of Continental Drift Theory ) 

ওয়েগনারের তত্ত্বের নানা সমালোচনা সত্ত্বেও এই তত্ত্বে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিকের নিদর্শন রয়েছে

 1. ওয়েগনারের মহাদেশীয় সঞ্চালন তত্ত্ব থেকেই বর্তমান মহাদেশ ও মহাসাগরগুলির অবস্থানের একটি বাস্তব চিত্র পাওয়া গেছে । বিজ্ঞানী হ্যারি হেস - এর সমুদ্রতলের সম্প্রসারণ তত্ত্বকে এই তত্ত্ব জোরালোভাবে সমর্থন করে । 

2. বিজ্ঞানী আর্থার হোমস্ গুরুমণ্ডলে ম্যাগমার পরিচলন স্রোতের কথা বলেছেন । এই পরিচলন স্রোতের প্রভাবে মহাদেশগুলির স্থানান্তর ঘটে । 

3. বিজ্ঞানী ডু টয়েট , আর . এ . ড্যালি প্রমুখ বিজ্ঞানীরা মহাদেশগুলির উপকূল সংলগ্ন মহীসোপান অঞ্চলের আকৃতিগত মিল খুঁজে পেয়েছেন । এঁদের মতে অচল , অনড় মহাদেশের থেকে সচল মহাদেশ অনেক বেশি যুক্তিপূর্ণ । 

4. পাত ভূগাঠনিক তত্ত্ব ওয়েগনারের মহাদেশীয় সঞ্চালন তত্ত্বকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে ।


Middle post ad 01