welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

চ্যুতির ধারণা ও সংজ্ঞা Concept and Definition of Fault

চ্যুতি হল একটি ভূ - অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার ফল বিশেষ । পৃথিবীর অভ্যন্তরে সৃষ্ট সংকোচন , প্রসারণ , উত্থান , অবনমন বিচ্ছেদ , বিবৃতি , নির্গমন প্রভৃতি প্র

 ★চ্যুতির ধারণা ও সংজ্ঞা Concept and Definition of Fault


• চ্যুতির ধারণা ( Concept of Fault ) 

চ্যুতি হল একটি ভূ - অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার ফল বিশেষ । পৃথিবীর অভ্যন্তরে সৃষ্ট সংকোচন , প্রসারণ , উত্থান , অবনমন বিচ্ছেদ , বিবৃতি , নির্গমন প্রভৃতি প্রক্রিয়ার জন্য ভূপৃষ্ঠে ভূমিরূপ প্রভাবিত পরিবর্তিত হয় বলে এই প্রক্রিয়াগুলিকে অন্তর্জায় প্রক্রিয়া বলে । এই অন্তর্জাত প্রক্রিয়াকে পরিচালিত করার জন্য যে শক্তির প্রয়োজন হয় তা শিলামণ্ডলের নীচে অবস্থিত ঊর্ধ্ব গুরুমণ্ডলের থেকে উদ্ভূত । গুরুমণ্ডলে উত্তপ্ত অর্ধতরল এবং স্থিতিস্থাপক পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের কারণে এক অন্তর্জাত বলের সৃষ্টি হয় যার প্রভাব শিলামণ্ডল টপকে ভূপৃষ্ঠে এসে পড়ে এবং বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপের সৃষ্টি হয় । অর্থাৎ ভূ - অভ্যন্তরভাগে ম্যাগমার এই সঞ্চালন নতুন পাতের গঠন ও ভূহকের সঞ্চালনের দ্বারা মহাদেশ মহাসাগরের প্রাথমিক সংস্থান ( structure ) গঠিত হয়ে এই সংস্থানের সৃষ্টিতে চ্যুতি উৎপত্তি একটি অন্যতম ক্রিয়া । ভূ - অভ্যন্তরে বিভিন্ন শিলাস্তরে সংনমন ও সংকোচনের প্রভাবে যেমন বিভিন্ন ভাঁজের সৃষ্টি হয় , তেমনি প্রবল আলোড়ন বা কম্পনের ফলে পার্শ্ব ও নিম্নচাপের ফলে অনেকসময় ভূত্বকে গভীর ফাটলের সৃষ্টি হয় এবং এই ফাটলের এক অংশ অন্য অংশ থেকে আলাদা হয়ে বিচ্যুত হয় তখন চ্যুতির সৃষ্টি হয় । চ্যুতি এই ভূ - অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার একটি উল্লেখযোগ্য ফল । চ্যুতি একটি ধীর আলোড়ন প্রক্রিয়া বা ভূগাঠনিক বিপর্যয় ( slow diastrophism ) । তু আবার অন্তর্জাত প্রক্রিয়াকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় যথা — মহীভাবক ও গিরিজনি আলোড়ন । এই গিরিজনি আলোড়নের ফলে ভূপৃষ্ঠে অনুভূমিকভাবে কাজ করার ফলে শিলাস্তরে কোথাও কোথাও প্রচন্ড ঢালের ( tension ) সৃষ্টি হয় , ফলে সেখানে শিলাস্তরের সম্প্রসারণ ( extension ) ঘটে এর ফলে চ্যুতি সৃষ্টি হয় । সাধারণত ভূ - আলোড়নে পীড়নের ( stress ) ফলে শিলায় টান ও সংনমন ( compression ) এই দুইয়ের সৃষ্টি হয় । টানের ফলে শিলাপৃষ্ঠ ( rock surface ) প্রসারিত ( extend ) হওয়ায় তার উপর ফাটল ( cracks ) , পারণ ( joints ) - এর সৃষ্টি হয় । আবার অনেক ক্ষেত্রে পীড়নের ফলে ভঙ্গুর শিলা বিভিন্ন টুকরোয় না ভেঙে তার উপর বিভিন্ন ফাটল ও ধারণের সৃষ্টি । হয় । এই ফাটল ও নারণ শুধুমাত্র ভূগাঠনিক শক্তির ( tectonic force ) মলে হয় তা নয় । অনেক ক্ষেত্রে আগ্নেয়শিলা উত্তপ্ত অবস্থা থেকে তাপ বিকিরণের দ্বারা শীতল হওয়ার সময়েও টানের ফলে ফাটল ও দারণের সৃষ্টি হয় । অর্থাৎ চ্যুতি হল ভূত্বকের শিলাস্তরে সৃষ্ট এমন একটি ফাটল যার দুর্দিকের শিলান্তর আপেক্ষিকভাবে নড়াচড়া করে । যদি শিলাস্তরের অপসারণ না ঘটে তাহলে ঐ ফাটলকে চ্যুতি বলা যাবে না । অর্থাৎ কোনো অঞ্চলের ভূমিরূপের ক্ষেত্রে চ্যুতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে ।  

চ্যুতির সংজ্ঞা ( Definition of Fault ) 

ভূ - অভ্যন্তরে শিলান্তরে পীড়নের মান একটি নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করলে বা অসমান পীড়নের ফলে দুর্বল শিলাস্তরে ফাটলের সৃষ্টি হয় , তার একদিকের শিলাস্তূপ অপরদিকে শিলাস্তূপের তুলনায় উল্লম্ব , অনুভূমিক বা তির্যকভাবে উত্থিত বা অবনমিত হলে তাকে চ্যুতি বলে । শিলাস্তরের লক্ষণীয় অপসারণমুক্ত ফাটলকে ( fracture ) চ্যুতি বলে । কোনো ফাটল বরাবর যদি শিলাস্তরের বিস্থাপন ( dislocation ) ঘটে , তবে ঐ ফাটলকে আমরা চ্যুতি বলি । যখন পাশাপাশি অবস্থিত দুটি ভূখণ্ডের মধ্যে ভাঙনের সৃষ্টি হয় এবং এক ভূখণ্ড অন্য ভূখণ্ডের তুলনায় একে অপরকে অতিক্রম করে তখন এই ঘটনাকে চ্যুতি বলে । ভূতত্ত্ববিদ M. P. Bullings- এর মতে চ্যুতি বলতে সেই ফাটলকে বোঝায় যেখানে ফাটলের বিপরীত দিকে অবস্থিত শিলাস্তূপ বা শিলাপ্রাচীরসমূহ একে অন্যের থেকে দূরে সরে যায় । চ্যুতি হল ভূত্বকের শিলাস্তরে সৃষ্ট এমন একটি ফাটল যার দুনিকের শিলাস্তর আপেক্ষিকভাবে নড়াচড়া করে  

E. J. Monkhouse- এর মতে " Whena fracture takes place and the rocks are displaced on either side of it relative to one another , the result is known as a fault . " স্থানান্তরিত বা স্থানচ্যুত হয় । Arthur Holmes- এর মতে চ্যুতি হল ভূত্বকের একটি বিভঙ্গ পৃষ্ঠ , যে পৃষ্ঠ বরাবর শিলাস্তর পরস্পরের সাপেক্ষে ভূ - আলোড়নের জন্য শিলাস্তরে সংকোচন ও পীড়ন ঘটে । শিলাস্তরে সংকোচন ও পীড়নের জন্য সৃষ্ট ফাটলের একপাশের শিলান্তর অন্যপাশের শিলাস্তরের তুলনায় ফাটলের সঙ্গে সমান্তরাল বা উল্লম্বভাবে স্থানান্তরিত হলে , তাকে চ্যুতি ( fault ) বলে । আবার অন্যভাবে বলা যায় যে , ভূ - আলোড়নের ফলে সৃষ্ট গভীর ও দীর্ঘায়িত ফাটলকে চ্যুতি বলে । সবশেষে বলা যায় যে , চ্যুতি হল ফাটল বরাবর শিলাস্তরের একপাশের অংশ অপর পাশের অংশ থেকে এগিয়ে বা পিছিয়ে কিংবা ওপরে উঠে বা নীচে নেমে যায় ।

চ্যুতির গঠনগত উপাদান Structural Elements of Fault 

নিম্নে একটি চ্যুতির গঠনগত উপাদানগুলি আলোচনা করা হল

 1. চ্যুতিতল ( Fault Plane ) : একটি চ্যুতিতে যে তল বা পৃষ্ঠ বরাবর শিলাস্তরে খণ্ডিত অংশ ওঠানামা করে বা একে অপরকে ঘষতে ঘষতে অতিক্রম করে , সেই তল বা পৃষ্ঠকে ছাতিল বলে । অর্থাৎ যে তল বরাবর শিলাস্তরে চ্যুতি ঘটে তাকে চ্যুতিল বলে । চ্যুতিতলে নতি লক্ষ করা যায় এবং তলটি মসৃণ কিংবা সমতল প্রকৃতির হয় । 

2. চ্যুতিরেখা ( Fault Line ) যে রেখা বরাবর চ্যুতিতল ভূপৃষ্ঠকে ছেদ করে কিংবা চ্যুতিতল ও ভূপৃষ্ঠ যে রেখা বরাবর মিলিত হয় তাকে চ্যুতিরেখা বলে । অর্থাৎ যে অনুভূমিক রেখা বরাবর চ্যুতি ঘটে তাকে চ্যুতিরেখা বলে । চ্যুতিরেখা সরল কিংবা বজ্র দুই ধরনের হতে পারে । 

3. চ্যুতি নতি ( Fault Dip ) চ্যুতিতল ও অনুভূমিক তলের মধ্যে যে কোণ উৎপন্ন হয় তাকে নতি বলে । অর্থাৎ চ্যুতিতল অনুভূমিক তলের সঙ্গে যে কোণে হেলে থাকে তাকে চ্যুতি নতি বলে । 

4. ঝুলন্ত প্রাচীর ও পাদমূল প্রাচীর ( Hanging Wall and Foot Wall ) : ঢাতিতল ঢালু হলে তার একটি পার্শ্ব অন্য পার্শ্বের ওপর অবস্থান করে । এক্ষেত্রে চ্যুতিতলের ওপরের শিলান্তর বা পাথরের স্তূপকে বলা হয় ঝুলন্ত প্রাচীর বা ঊর্ধ্বস্তূপ এবং নীচের শিলান্তর বা পাথরের স্তূপকে বলা হয় পাদমূল প্রাচীর বা অধোস্তূপ । -চ্যুতিতল খাঁজ বা লম্বভাবে অবস্থান করলে বা থাকলে সেক্ষেত্রে ঝুলন্ত এবং পাদমূল প্রাচীর কোনোটাই সৃষ্টি হবে না ।

5 . চ্যুতি খারাতল  ( Fault Scarp ) : চ্যুতির ফলে সরাসরি যে খাড়াতলের সৃষ্টি হয় তাকে চ্যুতি খাড়াতল বলে । 

6. রেখা ( Fault Line Scarp ) : উত্থিত পার্শ্বের নরম শিলাস্তর ক্ষয়ের ফলে অপসারিত হলে নীচের কঠিন শিলা বেরিয়ে আসে এবং হাতি ঢালের পরিবর্তন হয় । ঢালের এই পরিবর্তনকেই চ্যুতিরেখা খাড়াতল বলে । 

7. আয়াম ( Strike ) : চ্যুতিতল এবং অনুভূমিক তল যে রেখা বরাবর পরস্পরকে ছেদ করে , তাকে চ্যুতির আয়াম বলে । আয়াম চ্যুতি কোণের সঙ্গে সমকোণে অবস্থান করে । 

8. চ্যুতি খণ্ড ( Fault Block ) চ্যুতিরেখার দুপাশের অংশকে চ্যুতি খণ্ড বলে । 

9. ক্ষেপ ( Throw ) : যে কোনো চ্যুতির ঊর্ধ্বস্তূপ ও অধোস্তূপের মধ্যে উল্লম্ব ব্যবধানকে ক্ষেপ বলে । এর দৈর্ঘ্য কয়েক সেমি থেকে কয়েক মিটার পর্যন্ত হয় । 

10. উৎক্ষিপ্ত অংশ এবং নিক্ষিপ্ত অংশ ( Upthrow Side and Downthrow Side ) : চ্যুতির দুপাশের ভূখণ্ডগুলির মধ্যে যে খণ্ডটি ওপরে উঠে যায় তাকে উৎক্ষিপ্ত অংশ এবং যে খণ্ডটি নীচের দিকে বসে যায় তাকে নিক্ষিপ্ত অংশ বলে । অনেক সময় কোন্ খণ্ডটি ওপরের দিকে উত্থিত হচ্ছে কিংবা নীচের দিকে নামছে তা বোঝা যায় না । 

11. ব্যবধি ( Heave ) : তির্যক বা হেলানা চ্যুতিতল বরাবর ঊর্ধ্বস্তূপ ও অধোস্তূপের মধ্যে অনুভূমিক ব্যবধানকে ব্যবধি বলে । 

12. সরণ ( Rake ) : একই তলে অবস্থিত কোনো রেখা ওই তলের অনুভূমিক রেখার সঙ্গে যে কোণ সৃষ্টি করে তাকে সরণ বলে । 

13. ঘর্ষণ ( Silcken side ) চ্যুতির ফলে চ্যুতিতল বরাবর অনেক সময় একটি মসৃণ শিলান্তর লক্ষ করা যায় । এটি সাধারণত চ্যুতিতলের দুটি শিলাস্তরের বিপরীতমুখী ঘর্ষণ বলের প্রভাবে উৎপন্ন হয় । এই সুগতল ঘর্ষণত ( silicken side ) নামে পরিচিত । 

14. চ্যুতি রেকসিয়া ( Fault Breccia ) : অধিকাংশ ক্ষেত্রে দ্যুতিতল মসৃণ না হয়ে কোণযুক্ত প্রস্তর খণ্ডে পূর্ণ থাকে । এই ধরনের চ্যুতিতলকে চ্যুতি ব্রেকসিয়া বলে । এছাড়াও চ্যুতিতল বরবার খণ্ডিত শিলাস্তরে তিন ধরনের স্বলন ( slip ) লক্ষ করা যায় । সেগুলি হল 

15. প্রকৃত স্খলন ( Net Slip ) : চ্যুতির ফলে চ্যুতিতল বরাবর দুটি খণ্ডিত শিলাস্তর একে অপরের থেকে দুরে সরে গেলে উভয়ের মধ্যে স্থান চ্যুতির ব্যবধান বা দূরত্বকে প্রকৃত স্খলন বলে । এই স্খলন দুই প্রকার যথা উল্লম্ব স্খলন ও অনুভূমিক স্খলন । 

16. আয়াম স্খলন ( Strike Slip ) চ্যুতিত বরাবর চ্যুতির আয়ামের সমান্তরালে যে প্রকৃত স্খলন ঘটে তাকে আয়াম স্খলন বলে । 

17. নতি স্খলন ( Dip Silp ) চ্যুতিতলের নতির সমান্তরালে যে প্রকৃত স্খলন ঘটে তাকে নতি স্খলন বলে । নতি স্খলন নিম্ন ও ঊর্ধ্বমুখী দুইই হতে পারে । 

18. গাউজি ( Gouge ) : গাউজি চ্যুতির লক্ষণ । চ্যুতিতল বরাবর শিলাস্তরের ঘর্ষণের ফলে একটি অতি মিহি পাউডার জাতীয় শিলাচূর্ণ উৎপন্ন হয় । এই মিহি কানা জাতীয় শিলাচূর্ণকে গাউজি বলে । 

19. মাইলোনাইট ( Mylonite ) : চ্যুতিতল বরাবর সৃষ্ট সূক্ষ্মদানা দ্বারা নাইস জাতীয় শিলা মাইলোনাইট নামে পরিচিত । অনেকক্ষেত্রে চ্যুতিতল বরাবর নতুন কোনো খনিজের স্তরও সৃষ্টি হতে পারে । 

20. হেড ( Head ) 90 ° থেকে চ্যুতির নতিকোণ বিয়োগ করলে ঐ বিয়োগ ফলকে হেড বলে । 

চ্যুতির গঠন প্রক্রিয়া Mechanism of Faulting 

প্রসারণ বলের প্রভাবে চ্যুতি ঘটে । প্রসারণ বলের প্রভাবে শিলাস্তরে সহাসীমার বেশি পীড়নের ফলে ফাটলের সৃষ্টি করে । তখন ফাটলের দুপাশের শিলাস্তরের চলন ঘটে । প্রসারণ বলের মতো অনুভূমিক পার্শ্বচাপের দ্বারাও চ্যুতির সৃষ্টি হয় । অনেকক্ষেত্রে প্রবল অনুভূমিক চাপের ফলে শিলাস্তরে ভাঁজের উদ্ভব হয় । পরবর্তী সময়ে আরো চাপ বৃদ্ধি পেলে শায়িত ভাঁজে চ্যুতি ঘটে । এইভাবে পার্শ্বচাপ ও প্রসারণ বলের প্রভাবে শিলাস্তরে চ্যুতি ঘটে ।। ভূপৃষ্ঠে কিংবা ভূ - অভ্যন্তরে শিলাস্তরের মধ্যে কতকগুলি অনুকূল অবস্থার প্রয়োজন , যা চ্যুতি গঠন কিংবা সৃষ্টি হতে সাহায্য করে । সেগুলি আগে আলোচনা করা দরকার । সেই অবস্থাগুলি হল

(  a ) শিলার পীড়ন সহ্য করার ক্ষমতা বিশেষ থাকবে না । 

( b ) শিলা নমনীয় হতে হবে , যাতে আকৃতির বিকৃতি ঘটার আগে চিড় বা অন্য রূপ ধারণ করতে পারে । 

( c ) পীড়নের ফলে শিলাস্তরে ছেদক ফাটল ( shear fracture ) এবং সম্প্রসারণ ফাটল ( tension fracture ) সৃষ্টি হবে । 

( d ) ফাটল বরাবর ভূখণ্ড স্থানচ্যুত করতে হলে কৃত্তন পীড়নকে একত্রে চাপ পীড়ন বল ও ঘর্ষণজনিত প্রতিরোধ শক্তির সমান অথবা বেশি হতে হবে।

 ভূবিজ্ঞানীদের মতে প্রবল ভূ - আন্দোলনের ফলে শিলাস্তরের উপরিভাগে প্রচণ্ড পীড়ন ( shear stress ) বলের সৃষ্টি হয় যা শিলার স্থিতিস্থাপকতা সীমা অতিক্রম করলে ফাটলের সৃষ্টি করে । এই ফাটল বরাবর শিলাস্তরের এক অংশ অপর অংশ থেকে চ্যুত হয়ে ওপরে কিংবা নীচে নামলে তাকে চ্যুতি বলে । অধিকাংশ চ্যুতির কারণ টান শক্তি ( tension force ) তবে সংনমন বল ও ঘূর্ণন শক্তির ফলেও চ্যুতি ঘটতে পারে 

সম্প্রসারণ বলের জন্য শিলাস্তরে পীড়নের সৃষ্টি হয়ে যে ফাটলের সৃষ্টি হয় , তাকে সংযুক্তি বলে । সংযুক্তির সৃষ্টি হলে শিলাস্তরের সরণ বা স্থানচ্যুতি ঘটে না । চ্যুতি সাধারণত ভূপৃষ্ঠের দুর্বল শিলা দ্বারা গঠিত অঞ্চলে দেখা যায় এবং ওই চ্যুতি বরাবর জায়গাকে চ্যুতি অঞ্চল বলা হয়ে থাকে । বিখ্যাত ব্রিটিশ ভূতত্ত্ববিদ ই এম অ্যান্ডারসন ( E. M. Anderson , 1951 ) চ্যুতির গঠন প্রক্রিয়া তত্ত্বকে কতকগুলি মৌলিক নীতির ভিত্তি করে ব্যাখ্যা করেছেন সেগুলি হল 

1. ভূত্বকের পীড়নজনিত অবস্থাকে সাধারণত তিনটি পরস্পর উল্লম্ব প্রধান অক্ষরেখায় অবস্থিত বলে ধরা যায় । এই তিনটি অক্ষের মধ্যে একটা উল্লম্ব হবে এবং বাকি দুটো অনুভূমিক হয় । 

2. শিলাপতন বা শিলাচ্যুতি ঘটবে সর্বাধিক কৃত্নন তল বরাবর । শিলাস্তরে পীড়নের ফলে শিলা যে তল বরাবর কর্তিত হয় বা বিচ্ছিন্ন হয় তাকে কৃত্তন তল বলে এইরকম অবস্থায় একটি ব্যাখ্যা দ্বারা বিষয়টি সহজে বোঝানো যায় । এখানে সবচেয়ে বড়ো প্রধান পীড়ন অক্ষকে Pa মধ্যবর্তী বা অন্তঃস্থ পীড়ন অক্ষকে P এবং ক্ষুদ্রতম প্রধান পীড়ন অক্ষকে P , ধরে নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করলে দেখা যাবে যে , শিলাস্তরে পীড়নের ফলে দুটি ছেদক ফাটলের ( shear fracture ) সৃষ্টি হবে । এই ছেদক ফাটলগুলি মধ্যবর্তী প্রধান পীড়নের অক্ষের সমান্তরাল এবং এর তল P বরাবর ছেদ করে বৃহত্তম প্রধান পীড়ন অক্ষের সঙ্গে 30 ° কোণ উৎপন্ন করে । চ্যুতির ফলে শিলাস্তূপের সরণ দুধরনের হতে পারে যেমন- ( a ) নীচের অংশের তুলনায় ওপরের অংশটি ঘূর্ণিত হলে ছাতিকে ঘূর্ণনজনিত চ্যুতি ( rotational fault ) বলে । ( b ) ঘূর্ণিত না হয়ে শিলাস্তূপ সরলরেখায় স্থানান্তরিত চ্যুতিটিকে চলনজনিত চ্যুতি ( translational fault ) বলে । শিলাস্তরের টান বা প্রসারণ বলের প্রভাবে স্বাভাবিক চ্যুতির ( normal fault ) সৃষ্টি হয় । এক্ষেত্রে শিলাস্তরের আগের. থেকে বেশি জায়গায় ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ থাকে । অপরপক্ষে সনেমন বা সংকোচন বলের প্রভাবে চ্যুতি হলে শিলাস্তরগুলি কর্মসস্থান জুড়ে থাকতে বাধ্য থাকে । একে বিপরীত চ্যুতি ( reverse fault ) বলে ।

★চ্যুতির শ্রেণিবিভাগ Classification of Fault 

চ্যুতিতল থেকে চ্যুতির নতি , চ্যুতির স্খলন ( slip ) , চ্যুতিতল আয়ামের সাথে সন্নিহিত শিলাস্তরের আয়ামের সম্পর্ক , চ্যুতিগোষ্ঠীর নকশা প্রভৃতির ভিত্তিতে চ্যুতিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায় । সাধারণত শিলাত্তরের স্খলন ( slip ) বা সর ( displacement ) দুভাবে ঘটে থাকে । যথা —1 চাতিতলের নতির দিক অনুসারে ও চ্যুতিতলের আয়াম - এর দিক অনুসারে । মূলত এদের ভিত্তিতে চ্যুতিকে প্রধান দুইভাগে ভাগ করা যায় , যেমন- ( A ) উৎপত্তি অনুযায়ী শ্রেণিবিভাগ ও ( B ) জ্যামিতিক ভিত্তিতে শ্রেণিবিভাগ নীচে বিভিন্ন ভিত্তি অনুযায়ী চ্যুতির ভাগগুলি আলোচনা করা হল 

( A ) উৎপত্তি অনুযায়ী চ্যুতির শ্রেণিবিভাগ ( Classification of Fault on the Basis of Origin ) উৎপন অনুসারে ছাতিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায় সেগুলি হল 

[১]স্বাভাবিক বা অনুলোম চ্যুতি ( Normal Fault ) : 

যে চ্যুতিতে পাদমূল প্রাচীর চ্যুতি বরাবর ওপরে উত্থিত হয় এবং ঝুলন্ত প্রাচীর চ্যুতিরেখা বরাবর নীচে বসে যায় তাকে অনুলোন চ্যুতি বা স্থাবিক চ্যুতি বলে । শিলায় অনুভূমিক ও অভি ঢানের কারণে এই চ্যুতি সৃষ্টি হয় । এই হাতির চ্যুতিতল অবনত পার্শ্বের দিকে ঢালু থাকে । অনেক সময় অভিকর্ষজ টানের ফলে ঝুলন্ত প্রাচীর নীচে বসে যায় বলে এই স্বাভাবিক চ্যুতিকে অভিকর্ষ চ্যুতিও ( gravity fault ) বলে । স্বাভাবিক চ্যুতির ফলে খাড়া ঢালমুক্ত চতি গুর ( fault scarp ) সৃষ্টি হয় । এই ধরনের চ্যুতিতে চ্যুতিতলের নতির মান 60 ° -র বেশি হয় । এই চ্যুতিতে চ্যুতিখণ্ডগুলি পরস্পরের থেকে দূরে সরে যায় । ফলে ভূপৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল ( area ) বেড়ে যায় । এই চ্যুতির চ্যুতিতল উল্লঙ্গ হলে একে অনুলোম উল্লম্ব চ্যুতি এবং চ্যুতিতল তির্যক হলে তাকে অনুলোম তির্যক চ্যুতি বলে । এই চ্যুতিতে ঊর্ধ্বস্তূপ ও আধাস্তূপের মধ্যে ক্ষেপ ও বাবধির পরিমাণ সাধারণত বেশি হয় । এই চ্যুতির উচ্চতা কয়েক মিটার থেকে কয়েকশো মিটার হয় এবং দৈর্ঘ্য প্রায় 300 কিমির কাছাকাছি হয় । 2 

[২] বিপরীত বা বিলোম চ্যুতি ( Reverse Fault ) :


 যে চ্যুতিতে চ্যুতিতল বরাবর অধোস্তূপ বা পাদমূল প্রাচীর অপেক্ষা ঊর্ধ্বস্তূপ বা ঝুলন্ত প্রাচীর সংনমন বলের প্রভাবে উত্থিত হয় তাকে বিপরীত চ্যুতি বা বিলোম চ্যুতি বলে । সাধারণত ভূ - আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট প্রবল পার্শ্বচাপের ফলে এই ধরনের চ্যুতির সৃষ্টি হয় । এক্ষেত্রে ভূমির ঢাল ও চ্যুতি তলের নতি পরস্পরের বিপরীতে অবস্থান করে । এই ধরনের চ্যুতির ফলে শিলাস্তরের অনুভূমিক বিস্তার হ্রাস পায় । এক্ষেত্রে ঝুলন্ত প্রাচীর পাদপ্রাচীর থেকে উঁচুতলে অবস্থান করে । চ্যুতিতল অধোস্তূপের উপর তুলনামূলক কম নতিকোণে ( 0 ° -45 ) অবস্থান করে । এই ছি অভিকর্ষ বলের বিপরীতে ঘটে ই একে বিপতি চ্যুতি বলে । এক্ষেত্রে চ্যুতি ভূখুতটটি খাড়াভাবে লক ভৃগুর মতো অবস্থান করে । এরুপ চ্যুতির ক্ষেত্রে ভূমিভাগে বেশি পরিমাণে ধস নামে এবং ভূমির ঢালের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে । এক্ষেত্রে P ) তিকোণ ও ব্যবধির পরিমাণ বেশি হয় । আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ওরিগণন হ্রন এই ধরনের হাতির ফলে গঠিত ।

[৩] সোপান ও পরিখা চ্যুতি ( Step and Trough Fault ) 



একই চ্যুতিতলের অবনত পার্শ্বে সমাপ্তরালে পরপর একই নিকে কয়েকটি চ্যুতির সৃষ্টি হলে , সেখানে ধাপ বিশিষ্ট সিঁড়ির মতো ভূমিভাগের সৃষ্টি হয় । এভাবে গঠিত চ্যুতিকে সোপান চাড়ি বা ধাপ চ্যুতি বলে । রাইন নদীর গ্রস্ত উপত্যকায় সোপান চ্যুতি দেখা যায় । শ্রেণিবদ্ধভাবে সোপান চ্যুতি দুদিক থেকে এসে মিলিত হয়ে সন্তু পরিখা গঠন করলে তাকে পরিখা চ্যুতি বলা হয় । মূলত গোপান চ্যুতি হল অনুলোম চ্যুতির মিলিত রূপ এবং অনেকগুলি সোপান চ্যুতির মিলিত রূপ হল পরিখা চ্যুতি । এই ধরনের চ্যুতিতে ঝুলন্ত প্রাচীর নীচের দিকে নেমে যায় এবং চ্যুতিগুলি সমান্তরাল বা অসমাপ্তরাল ভাবে অবস্থান করে । 

[৪] সংঘট্ট চ্যুতি ( Thrust Fault )


 ভঙ্গিল পার্বত্য অঞ্চলে অতি তীব্র পার্শ্বচাপে শায়িত ভাঁজের অক্ষ বরাবর শিলান্তর ফেটে দুটি অংশ পৃথক হয় এবং বিভাতল বরাবর ঝুলন্ত প্রাচীর পাদমূল প্রাচীর থেকে দূরে স্থানান্তরিত হয় , একে সংঘট চ্যুতি বলে । অন্যভাবে বলা যায় যে , বিলোম চ্যুতির চ্যুতিতলের নতির মান 45 ° -এর কম হলে তা সংঘট চ্যুতিতে পরিণত হয় । কাশ্মীর হিমালয়ের মুরি ও পিরপাপ্তাল থ্রাস্ট এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান আন্দ্রিয়াস চ্যুতি , সংঘট চ্যুতির উদাহরণ । এই ধরনের চ্যুতিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় । যেমন 

( a ) অতি সংঘট্ট চ্যুতি ( Overthrust Fault ) যদি চ্যুতিতলের নতি 10 - র কম হয় এবং মোট স্খলনের পরিমাণ বেশি হয় , তবে তাকে অতি সংঘট চ্যুতি বলে । এই ধরনের চ্যুতিতে চ্যুতিতল বরাবর ঝুলন্ত প্রাচীর পাদমূল প্রাচীরের ওপর দিয়ে বহু দূরে নিক্ষিপ্ত হয় । 

( b ) স্বাভাবিক সংঘট্ট চ্যুতি ( Normal Thrust Fault ) যে সংঘট্ট চ্যুতির ছেদক ফাটলগুলির নতি 10 " -45 - র মধ্যে অবস্থান করে তাকে স্বাভাবিক সংঘট চ্যুতি বলে । 

( c ) বিলোম সংঘট চ্যুতি ( Reverse Thrust Fault ) : যে সংঘট চ্যুতিতে ঝুলন্ত প্রাচীর ওপরে উত্থিত হয় এবং পাদমূল প্রাচীর নীচে বসে যায় ও ছেদক ফাটলগুলির নতি 45 ° -র বেশি হয় তাকে বিলোম সংঘট চ্যুতি বলে ।। 

( B ) জ্যামিতিক ভিত্তিতে চ্যুতির শ্রেণিবিভাগ ( Classification of Fault on the Basis of Geometric ) চ্যুতির আকৃতিগত পার্থক্যের ওপর নির্ভর করে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন সেগুলি সম্বন্ধে নীচে আলোচনা করা হল 

1. প্রকৃত সরণ কিংবা শিলাস্তরের মোট স্খলনের চ্যুতি সনেমন ও টান জাতীয় বলের প্রভাবে শিলাস্তরের যে স্বপন ঘটে তার ভিত্তিতে চ্যুতিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় সেগুলি সম্বন্ধে নীচে আলোচনা করা হল 

[১]আয়াম স্খলন চ্যুতি ( Strike Slip Fault ) চ্যুতিতলের আরামের সমান্তরালে যখন শিলাখণ্ডের স্খলন ঘটে তখন তাকে আয়াম স্বলন চ্যুতি বলে । এই প্রকার ছাতির একদিকের শিলান্তর প্রায় উল্ল চ্যুতিতল বরাবর ( near vertical fault plane ) অপরদিকের শিলাস্তর থেকে কিছুটা দুরে একই তলে অ বস্থান করে । এই ধরনের চ্যুতিতে উল্লখ ব্যবধান , নতি ও তির্ধক স্বলনের পরিমাণ শূন্য হওয়ায় একে ছিন্ন চ্যুতিও বলে । এই চ্যুতি সুদীর্ঘ ও প্রশস্ত হয় । এই প্রকার চুক্তি যদি অতি নিম্ন সমভূমির ওপর সংঘটিত হয় তাহলে এতে কোনোরকম ভৃগু ( scarp ) গঠিত হয় না । তবে দুপাশের অসমতল ভূভাগের মিলনস্থলে চ্যুতিরেখা ( fault line ) বরাবর একটি বিচ্ছিন্ন পরিখার সৃষ্টি করে । চ্যুতির আয়াম বরাবর অর্থাৎ কোন দিকে প্রকৃত স্খলন হয়েছে , সেই দিক অনুসারে এই চ্যুতিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় । যথা—

 ( a ) বামহাতি আয়াম স্খলন চ্যুতি ( Left Lateral Strike Silp Fault ) : যে আয়াম স্খলন চ্যুতিতে বামদিকের শিলাগ চ্যুতি রেখার সমান্তরালে সামনের দিকে এগিয়ে যায় , তাকে বামহাতি আয়াম স্খলন চ্যুতি বলে । 

( b ) ডানহাতি আয়াম স্খলন চ্যুতি ( Right Lateral Strike Slip Fault ) যে আয়াম স্খলন চ্যুতিতে ডানদিকের শিলাস্তূপ চ্যুতিরেখার সমান্তরালে এগিয়ে যায় , তাকে ডানহাতি আয়াম স্খলন চ্যুতি বলে । 

[২] নতি স্খলন চ্যুতি ( Dip Slip Fault ) : আয়ামের পরিবর্তে শিলাস্তরের নতির সমান্তরালে চ্যুতি হলে সেই চ্যুতি নতি চ্যুতি নামে পরিচিত । অর্থাৎ শিলাস্তরের প্রকৃত স্খলন চ্যুতিতলের নতি বরাবর সংগঠিত হলে তাকে নতি স্বলন চ্যুতি বলে । এই ধরনের চ্যুতিতে সাধারণত ঊর্ধ্বস্তূপ নতির সমান্তরালে ওপরে ওঠে অথবা নীচে নামে , কিন্তু আয়াম বা অনুভূমিক সরণ ঘটে না । তাই চ্যুতির শুধু উল্লস্থ বরাবর ব্যবধান ঘটে । এক্ষেত্রে চ্যুতি তলের নতি বরাবর একদিকের শিলাস্তর স্খলিত হওয়ার ফলে যখন সরণরেখার কোণের পরিমাণ হয় 90 " ।

 [৩] তির্যক স্খলন চ্যুতি ( Oblique Slip Fault ) যখন চ্যুতিতলের আয়াম এবং নতির মধ্যবর্তী কোনো দিকে খণ্ডিত শিলাস্তরের প্রকৃত স্খলন ঘটে , তখন তাকে তির্যক স্খলন চাতি বলে । এক্ষেত্রে চ্যুতিতল বরাবর বিচ্ছিন্ন শিলাস্তরের তির্যকভাবে স্খলন ঘটায় , যখন সরলরেখায় কোণের পরিমাণ 0 - র অধিক কিন্তু 90 ° -র কম হয় । এই চ্যুতিতে সাধারণ খণ্ডিত শিলাস্তরের অনুভূমিক এবং উল্লম্ব উভয় ধরনের স্থানান্তর একসঙ্গে ঘটে । 

[৪] চ্যুতির ভঙ্গিমা কিংবা চ্যুতিতলের আয়ামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিলাস্তরের আয়ামের সম্পর্কের ভিত্তিতে চ্যুতি : চ্যুতির ভঙ্গিমা কিংবা চাতিতলের আয়াম বরাবর শিলাখণ্ডের স্খলন ঘটলে চাতিতলের আয়াম ও সংশ্লিষ্ট শিলাখণ্ডের আয়াম - এর সম্পর্কের ভিত্তিতে চ্যুতিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায় । সেগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল 

( i ) আয়াম চ্যুতি ( Strike Fault ) শিলান্তরের আয়ামের সমান্তরাল চ্যুতি ঘটলে , তাকে আয়াম চ্যুতি বলে । অর্থাৎ সন্নিহিত শিলাস্তরের আয়ামের সমান্তরালে চ্যুতি গঠিত হলে তাকে আয়াম চ্যুতি বলে । এক্ষেত্রে চ্যু তিরেখা ও শিলাস্তরের আয়ান পরস্পরের সমান্তরালে অবস্থান করে । আয়াম চ্যুতির ফলে স্বাভাবিক এবং বিপরীত চ্যুতি এই দুই ধরনের । 


( ii ) নতি চ্যুতি ( Dip Fault ) : আয়ামের পরিবর্তে শিলাস্তরের নতির সমান্তরালে চ্যুতি হলে সেই চ্যুতি নতি চ্যুতি নামে পরিচিত । চ্যুতিত সংলগ্ন শিলাস্তরের নতি অনুযায়ী যে চ্যুতি গঠিত হয় , তাকে নতি চ্যুতি বলে । একটি নতি চ্যুতির ক্ষেত্রে চ্যুতিতলের আয়াম অবশ্যই পারিপার্শ্বিক স্তরের নতির দিকে সমান্তরালে বিস্তৃত হয় । এক্ষেত্রে চ্যুতি তলের আয়াম শিলান্তরে আয়ামের সঙ্গে সমকোণে অবস্থিত থাকে । নতি চ্যুতি দু - ধরনের যথা স্বাভাবিক নতিচ্যুতি ও বিপরীত নতিচ্যুতি । নতির তল বরাবর যখন ঝুলন্ত খণ্ডটি নীচের শিশু নেমে যায় , তখন স্বাভাবিক নতিচ্যুতি সৃষ্টি হয় । আবার ঝুলন্ত খণ্ডটি পার্শ্বচাপের প্রভাবে পীঠ শিলার উপরে চলনশীল বলে বিপরীত নতি চ্যুতি সৃষ্টি হয় ।

( iii ) তির্যক চ্যুতি ( Oblique Fault ) তিতল সংলগ্ন শিলাস্তরের আঘামের পরিপ্রেক্ষিতে তির্যকভাবে চ্যুতি গঠিত হলে তাকে তির্যক ছাতি বলে । এক্ষেত্রে চ্যুতিতলের আয়াম সংশ্লিষ্ট শিলাস্তরের আয়ামের সঙ্গে সূক্ষ্ম কোণে অবস্থান করে । অর্থাৎ এক্ষেত্রে ছাতিরেখা তির্যকভাবে অবস্থান করে । সাধারণত এক্ষেত্রে শিলাস্তরগুলি চ্যুতিরেখার সঙ্গে 5 ° -80 ° কোণে অবস্থান করে । 

( iv ) স্তর চ্যুতি ( Bedding Fault ) : যে বিশেষ কারণে আয়াম চ্যুচিতে চ্যুতিতল স্তরায়ণ তলের সমান্তরালে থাকে তাকে স্তর চ্যুতি বলে । এই ধরনের চ্যুতিকে আয়াম চ্যুতির এক বিশেষ রূপ হিসেবে গণ্য করা হয় ।

( v ) অনুদৈর্ঘ্য চ্যুতি ( Longitudinal Fault ) : যে চ্যুতিতে চ্যুতিতল আঞ্চলিক গঠনের আয়ামের সমান্তরালে চ্যুতি গঠিত হয় তাকে অনুদৈর্ঘ্য ছাতি বলে । অর্থাৎ যে চ্যুতি আঞ্চলিক গঠনের সমান্তরালে গঠিত হয় তাকে অনুদৈর্ঘ্য চ্যুতি বলে । ঊর্ধ্বভঙ্গ অথবা অধোভরে পলি দিয়ে এই ধরনের চ্যুতি বিস্তৃত থাকে । 

( vi ) প্রস্থ চ্যুতি ( Transverse Fault ) যে চ্যুতিতে চ্যুতিতল আঞ্চলিক গঠনের আয়ামের সঙ্গে তির্যকভাবে কিংবা সমকোণে চ্যুতি গঠিত হয় , তখন তাকে প্রশ্ন বা অনুপ্রস্থ চ্যুতি বলে । অর্থাৎ যে চ্যুতি আঞ্চলিক গঠনের আড়াআড়ি দিকে গঠিত হয় তাকে অনুপ্রস্থ ছাতি বলে । 

(C) চ্যুতিগোষ্ঠীর নকশার ভিত্তিতে শ্রেণিবিভাগ : চ্যুতিগোষ্ঠীর নকশার ভিত্তিতে চ্যুতিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায় । সেগুলি সম্বন্ধে নীচে আলোচনা করা হল --

( 1 ) সমান্তরাল চ্যুতি ( Parallel Fault ) বহু অঞ্চলে চ্যুতিগুলি একই নতি ও আয়াম যুক্ত হয় । তখন এই চ্যুতির বিন্যাসকে সমান্তরাল বিন্যাস এবং সৃষ্ট চ্যুতিকে সমান্তরাল চাতি বলে । অন্যভাবে বলা যায় যে , অনেকগুলি চ্যুতিরেখা যখন পরস্পরকে মুখোমুখি একই নতি ও আয়াম যুক্ত হয় তখন যে চ্যুতি গোষ্ঠীর সৃষ্টি হয় , তখন তাকে সমান্তরাল চ্যুতি বলে । এক্ষেত্রে চ্যুতিগুলি একই কোণে হেলে । থাকে এবং ঊর্ধ্বস্তূপ ও অধোস্তূপ উভয়েই চ্যুতিতল বরাবর ওঠানামা করে

( ii ) পরিধি চ্যুতি ( Peripheral Fault ) ভূপৃষ্ঠে যে সব চ্যুতির গঠনে চ্যুতিরেখাগুলি বৃত্তাকার ও সমকেন্দ্রিক হয় , তাদের পরিধি চ্যুতি বলে । এই চ্যুতিকে প্রান্তদেশীয় চ্যুতিও বলে । প্রধানত ব্যাখোলিখ , ঊর্ধ্বগামী লবণ কেলাস ও অন্যান্য আগ্নেয় অনুপ্রবেশের প্রভাবে এই ধরনের চ্যুতির সৃষ্টি হয় অনেকক্ষেত্রে অগ্ন্যুৎপাতের প্রভাবেও এই ধরনের চ্যুতির বিন্যাস দেখা যায় । এই চ্যুতি সাধারণত সমকেন্দ্রিক প্রকৃতির হয় ।


( iii ) আঁ এঁশেলো চ্যুতি ( En Echelon Fault ) : সাধারণত অনেকগুলি চ্যুতি পাশাপাশি অবস্থানের ফলে চ্যুতিরেখাগুলি অনেক সময় পরস্পর সমান্তরাল হয় এবং চ্যুতিতলগুলি তীক্ষ্ণ কোণে পরস্পর অবস্থানে সিঁড়ির বাপের মতো হেলে বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করলে তাকে আনেশেলোঁ চ্যুতি বলে । অন্যভাবে বলা যায় যে যখন পরস্পর সমান্তরাল ছাতিগোষ্ঠী সৃষ্টি হলেও চ্যুতিগুলির প্রান্তভাগ একে অপরের মুখোমুখি থাকে , হাতিগুলিকে আনেশেলোঁ চ্যুতি বলে । সামগ্রিকভাবে এরা পরস্পর মুখোমুখি বিচরণ করে । তখন সেই গভীর অপ্রশস্ত আরীয় চ্যুতি তখন তাকে সেই কেন্দ্রবিমুখ চ্যুতিগুচ্ছকে উদ্ভবেধের চাপে এই ধরনের চ্যুতির সৃষ্টি হয় । 

(iv ) অরীয় চ্যুতি ( Radial Fault ) : যে চ্যুতিগোষ্ঠীর চ্যুতিরেখাগুলি কোনো কেন্দ্রীয় অঞ্চল থেকে বাইরের দিকে বিস্তৃত বলে । অর্থাৎ যে চ্যুতিগুচ্ছে একটি বিন্দু বা স্থান থেকে চ্যুতিগুলি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে , অরীয় চ্যুতি বলে । এই ধরনের চ্যুতিকে কেন্দ্রবিমুখ চ্যুতিও বলা হয় । মূলত ম্যাগমা উদ্বেধের চাপে এই ধরনের চ্যুতির সৃষ্টি হয়।



Middle post ad 01