বিগ ব্যাং তত্ত্ব the Big Bang Theory
★মহাবিশ্ব সৃষ্টিরতত্ত্ব(Theories of Origin of Universe )
এই মহাবিশ্বে তারা জগতের মোট সংখ্যা কত ? আলোক দূরবীনের সাহায্যে এ পর্যন্ত প্রায় 10 কোটি তারা জগৎকে গোনা সম্ভবপর হয়েছে । তবে আধুনিক জ্যোতির্বিদদের মতে মহাবিশ্বে প্রায় এক লক্ষ কোটি তারাজগৎ থাকার সম্ভাবনা । এখন প্রশ্ন এই লক্ষ কোটি তারা জগতের মহাবিশ্ব কীভাবে সৃষ্টি হল ? কখন শুরু হল ? মহাবিশ্বের শেষই বা কখন ? তখন এই তারাগুলিই বা যাবে কোথায় ? মহাবিশ্বের এই সৃষ্টি রহস্য নিয়ে মানুষের চিন্তা দির্ঘদিনের । এ নিয়ে দুটি তত্ত্ব বেশি আলোচিত । তার একটি হল বিবর্তন তত্ত্ব ( Theory of the evoluing Universe ) বা বিগ ব্যাং তত্ত্ব ( Big Bang Theory ) । অপরটি হল স্থিতাবস্থাশীল তত্ত্ব ( Steady state Theory ) ।
★তত্ত্বের অবতারণা ( Introduction )
মহাবিশ্ব সৃষ্টির সর্বাপেক্ষা গ্রহণযোগ্য তত্ত্ব হল বিগ ব্যাং তত্ত্ব। পৃথিবীর উৎপত্তির সঙ্গে মহাবিশ্ব সৃষ্টির সম্পর্ক সরাসরি জড়িত না থাকলেও বিজ্ঞানীরা মোটামুটি একমত যে , এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত বস্তুকণার উৎপত্তি ও পরিণতি প্রায় একই রকম এবং একই সূত্রে বাঁধা । সেই কারণে মহাবিশ্বের উৎপত্তি সম্বন্ধে বহুল আলোচিত মহাবিস্ফোরণ ( Big Bang ) তত্ত্ব সম্বন্ধে আলোকপাত না করলে পৃথিবী তথা সৌরজগতের বিবর্তনের আলোচনা অসম্পূর্ণ থেকে যায় । ছায়াপথ বা গ্যালাক্সিগুলো পরস্পর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে অর্থাৎ বিশ্বপরিসর ক্রমশই স্ফীত হচ্ছে — বিজ্ঞানী এডুইন হাবলা ( Edwin Hubble ) - এর এই বক্তব্য প্রথম প্রকাশিত হয় 1929 খ্রিস্টাব্দে । এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রুশ বিজ্ঞানী ফ্রিডম্যান ( Alexander & Friedmana ) প্রথম বিশাল বিস্ফোরণ ( Big Bang ) তত্ত্বের অবতারণা করেন ।
★ মহাবিস্ফোরণ ( Big Bang )
ফ্রিডম্যানের মতে , ছায়াপথগুলি যে দূরে সরে যাচ্ছে , তার কারণ - মহাবিশ্বের উৎপত্তি হয়েছিল এক প্রচণ্ড কেন্দ্রীয় বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে । আজ থেকে প্রায় 1500 কোটি ( সূক্ষ্ম হিসাবে 1371 কোটি ) বছর আগের সেই বিস্ফোরণে মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয় । বিস্ফোরণের সেই রহস্যাবৃত মুহূর্তকে সময়ের শুরু বলে মনে করা হয় অর্থাৎ এই অবস্থায় মহাবিশ্বের আয়তন ছিল শূন্য এবং ঘনত্ব ছিল অসীম এই তথাকথিত মহাবিস্ফোরণে দেশ ও কাল ( space and time ) শুরু হল । অর্থাৎ সৃষ্টির আগে আমাদের অতি পরিচিত স্থান ও সময় বলতে যা বুঝি তার কোনো অস্তিত্বই ছিল না । সৃষ্টির মুহূর্তে একটি বিন্দুসম শূন্য আয়তনে সমস্ত শক্তি ও পদার্থ ঘনীভূত ছিল । সময় ( time ) তখনও শুরু হয়নি ( t = 0 ) | একে বলে singularily অর্থাৎ এক অজানা অবর্ণনীয় অবস্থা । এর পর থেকেই ক্রমশ আয়তন বৃদ্ধি ও তাপমাত্রার হ্রাস ঘটতে থাকে ।
★মহাবিস্ফোরণের পর ( After Effect ) :
জন্মমুহূর্তের এক সেকেন্ডের এক শতাংশের পর যখন মহাবিশ্বের তাপমাত্রা ছিল 1011 OK অর্থাৎ 10,000 কোটি ডিগ্রি কেলভিন , তখন বিশ্বের গঠন ছিল একেবারেই সরল ছিল বস্তুকণা ও রশ্মিকণার এক অবিমিশ্র ঝোলের ( cosmic soup ) মতো । জন্মের 0.11 সেকেন্ড পরে cosmic soup- এর তাপমাত্রা হয় । 3000 কোটি ডিগ্রি কেলভিন । এ সময় তৈরি হল পরমাণুর চেয়ে ক্ষুদ্র কণা বা উপপরমাণু ( sub atomic particle ) । তাপ কমে আসার ফলে বিভিন্ন বস্তুর পরমাণুদের গড়ে ওঠা সম্ভাবপর হল । সবচেয়ে সরল মৌলিক পদার্থ হাইড্রোজেনের পরমাণুই গড়ে উঠেছিল সবার আগে । তারপর গড়ে উঠল একে একে হিলিয়াম , লিথিয়াম ও অন্যান্য হালকা জাতের মৌলিক পদার্থের পরমাণুরা । তাপমাত্রা আরও কমে এলে ভারি মৌলিক পদার্থের পরমাণুদেরও সৃষ্টি সম্ভব হয়ে উঠল । তবে ওদের সবটাই ছিল গ্যাসীয় রূপে । যখন প্রথম এই উপপরমাণু থেকে হিলিয়াম , ডয়টেরিয়াম ও অন্যান্য স্বল্প ভরবিশিষ্ট মৌল পদার্থ সৃষ্টি হয় তখন মহাবিশ্বের বয়স তিন মিনিটেরও কম । জন্মের 3 মিনিট 2 সেকেন্ড পরে তাপমাত্রা যখন কমতে কমতে 100 কোটি ডিগ্রিতে নেমেছে , তখন অধিকাংশ ইলেকট্রন ও পজিট্রন পারস্পরিক ধ্বংসলীলার মাধ্যমে রশ্মিতে পরিণত হয়েছে । তারপর একদিন ভারি মৌলিক পদার্থের পরমাণুগুলো জড়ো হয়ে ধুলোকণার মেঘ তৈরি হল । বিরাট আকাশের ধুলো আর গ্যাসের মেঘ ধীরে ধীরে সমস্ত মহাবিশ্বটাকে ঢেকে ফেলল । চারিদিক ছিল শুধু শীতলতা , আর ছিল সীমাহীন অন্ধকার । আলো ছিল না কোথাও । সেই অন্ধকারের মধ্য দিয়ে ধুলো আর গ্যাসের মেঘগুলো শুধু বাইরের দিকে ছুটে চলেছিল অসম্ভব গতিতে । বাড়তে লাগল মহাবিশ্বের আয়তন , কমতে লাগল তাপমাত্রা । এভাবে মহাবিশ্ব যতই ঠান্ডা হতে লাগল এবং বয়োবৃদ্ধি ঘটতে লাগল জন্ম হল বিভিন্ন ছায়াপথের । তারা জগতের এই বাইরের দিকে ছুটে চলা তা আজও চলছে অবিচ্ছিন্নভাবে ।
★ মহাসংকোচন ( Big Crunch ) : মহাবিশ্বের এই বৃদ্ধি এবং ক্রমশীতলতা একদিন বন্ধ হবে । এমন এক সময় আসবে , যখন বৃদ্ধির পরিবর্তে আকার হ্রাস পেতে শুরু করবে এবং ধীরে ধীরে তা বিন্দুর আকার ধারণ করবে । একে বলে সুবিশাল সংকোচন ( the Big Crunch ) ।
★সমালোচনা ( Criticism ) : যখন বেশিরভাগ জ্যোতির্বিজ্ঞানী এই সুবিশাল বিস্ফোরণই মহাবিশ্বের বস্তুসমূহের সৃষ্টির কারণ হিসাবে মেনে নিয়েছেন , তখনও বিজ্ঞানীমহলে কিছু কিছু সন্দেহ থেকেই গিয়েছে । এই তত্ত্বে জন্মমুহুর্তটির কোনো ব্যাখ্যা নেই । একইভাবে নেই অসীম ঘনত্বের বিশ্বের কারণ ব্যাখ্যা । তাছাড়া মহাবিশ্বের আকার ও বয়স সম্বন্ধে সঠিক ধারণার অভাব রয়েছে এই তত্ত্বে ।