দৈনন্দিন কাজকর্মে সময় পরিমাপের একক হিসেবে সেকেন্ড , মিনিট , ঘণ্টা , দিন , মাস , বছর ইত্যাদির ব্যবহার হয়ে থাকে অঙ্ক সময়ের ব্যবধানে এগুলির ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ । কিন্তু পৃথিবীর বয়স 460 কোটি বছর , ভূত্বকের বয়স 350 কোটি বছর -এগুলির হিসেব বা গণনার জন্য আমাদের অন্য এককের সাহায্য নিতে হয় । এর জন্য বিজ্ঞানীরা একটি সার্বজনীন ভূতত্ত্বীয় সময় মানন s ( geological time scale তৈরি করেছেন । তবে এটি একদিনে তৈরি হয়নি । 1830 সালে বিজ্ঞানী অ্যাডান সেজউইক ( Adam ) Sedgwick ) এবং বিজ্ঞানী রোডরিক মার্ডিসন ( Rodrick ) Murchison য় সময় মানদণ্ডের প্রথম ধারণা দেন । ব্রিটেনের ওয়েলস অঞ্চলে পাললিক শিলান্তরকে প্রধান দুইভাগে ভাগ করে প্রাচীন স্তরকে ক্যামব্রিয়ান Cambrian ) এবং নবীন স্তরকে সিলুরিয়ান Sifurian ) । এর কয়েকবছর পর বিজ্ঞানী । সেজউইক আর একটি নতুন স্তরের নামকরণ করেন । ডেভোনিয়ান ( Devonian ) । পরবর্তীকালে অবশ্য এই দুই বিজ্ঞানীর শিলাস্তরের নামকরণের চরন বিবার দেখা দেয় । তাদের মৃত্যুর পর অবশ্য অর্ডোভিনিয়ান Ordovician ) এবং পার্নিয়ান ( Permian ) নামের আরো দুই স্তরের অস্তিত্ব বিজ্ঞানীরা স্বীকার করে নিয়েছেন । এভাবে ক্রমশ বহুবিজ্ঞানীর নিরলস গবেষণায় পৃথিবীর ইতিহাসের একটি সুন্দর ভূতাত্ত্বিক সময় সারণি তৈরি হয়েছে । সময় গণনার জন্য একটি এককের প্রয়োজন । সেই কারণে জন্মাবধি আজ পর্যন্ত পৃথিবীর বয়সকে দুটি বৃহৎ সময় বিভাগে ভাগ করা হয়েছে । এদেরকে বলে মহাযুগ বা Eon । আদিম মহাযুগটি প্রোটেরাডোরিক ( Proterozoic ) নামে পরিচিত । ব্যাপ্তিকাল 400 কোটি বছর । এই মহাযুগ সম্বন্ধে আমরা বেশি কিছু জানি না । এর পরের 60 কোটি বছরের ইতিহাস বেশি আমরা জানি একে বলে ফ্যানারোজোয়িক ( Phanerozic ) ফ্যানারোজোয়িক আবার তিনটি বৃহৎ সময়ে বিভক্ত এদেরকে বলে যুগ বা অধিকল্প ( Era ) । এই Era গুলির শুরু এবং শেষ পৃথিবীর গিরিজনিত ( Orogenic ) প্রক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে সৃষ্টি হয়েছে । আদি থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত এই Era গুলি -
1.পুরাজীবীয় ( Paleozoic বা প্যালিয়োজোয়িক) 2. মধ্যজীবীয় ( Mesozoic বা মেসোজোয়িক ) 3. নবজীবীয় ( Cenozoic বা সেনোজোয়িক ) এই যুগগুলি আবার ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর পর্যায়ে , ( Period ) বিভক্ত । প্যালিয়োজোয়িক যুগটি চটি পর্যায়ে , মেসোয়োজিক যুগটি 3 টি পর্যায়ে , সোনোজোয়িক যুগ ২ টি পর্যায়ে বিভক্ত ।এরপর যুগগুলিকে আবার কতকগুলি অধিযুগে ( Epoch ) ভাগ করা হয় । সেনোজোয়িক যুগের অন্তর্গত কোয়াটারনারি পর্যায়টি দুটি অধিযুগে এবং টারসিয়ারি পর্যায়টি ১ টি অধিযুগে বিভক্ত । তবে শিলাস্তরের ক্ষেত্রে বয়সের শব্দগুলি একটু আলাদা । যেসকল শিলাস্তর পর্যায় অধিযুগে তৈরি হয়েছে তাদের । যথাক্রমে সিস্টেম ( system ) , সিরিজ ( series ) , এবং স্টেজ ( stage ) বলে । স্তরবিন্যাসে বা স্ট্যাটিগ্রাফিতে এই এককগুলি টাইম - রক ইউনিট ( time - rock unit ) বা সময় প্রস্তর সম্পর্কীয় একক নামে পরিচিত । সময়ের একক ( time unit ) এবং সময় প্রস্তরের একক ( time - rock unit ) দুইটি সম্পূর্ণ পৃথক । একটি সময়কে বিশেষভাবে বোঝায় , অপরটি বিশেষ সময়ের অন্তরে অবক্ষেপিত শিলাস্তরকে বোঝায় ।
বিশুদ্ধ সময় মানদণ্ড ( Absolute Time Scale )
পৃথিবীর বিভিন্ন স্তরের বয়স সরাসরি বছরের মাপে পরিমাপ করার প্রচেষ্টা দীর্ঘদিনের । ভূত্বকের ওপর পলি জমার হার গণনা করে একদল ব্রিটিশ গবেষক ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে পৃথিবীর বয়স নির্ণয় করেছিলেন সাড়ে সাত কোটি বছর । এরপর সমুদ্রজলের লবণতা হারের গণনার সাহায্যে আইরিশ বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর বয়স নির্ণয় করেছিলেন মোটামুটি সাড়ে নয় কোটি বছর । সহজেই অনুমেয় এই সকল পদ্ধতি ত্রুটিমুক্ত ছিল না । এরপর পৃথিবীর ভূতাপের ক্রমবৃদ্ধির ( geo thermal gradient ) গণনার সাহায্যে বিজ্ঞানী কেলভিন প্রমাণ করেন পৃথিবীর বয়স তিন কোটি বছরের বেশি নয় । কেলভিন অঙ্কে অসাধারণ পারদর্শী হওয়া সত্ত্বেও তাঁর গণনায় ভুল ছিল । তাঁর ধারণা ছিল পৃথিবীর অভ্যন্তরের তাপ পৃথিবীর গরম অবস্থার উৎপত্তির কারণ । তখন পর্যন্ত তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কার হয়নি । পৃথিবীর অভ্যন্তর ভাগের তাপের অন্যতম কারণ যে তেজস্ক্রিয়তা তা জানা গেছে আরো বেশ কিছু বছর পর । তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কারের পর নির্ভুল ভাবে পৃথিবীর বয়স নির্ণয়ের চাবিকাঠিটি মানুষের হাতে এসে পৌঁছোয় । এ সম্বন্ধে আগে আলোচনা করা হয়েছে ।