welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

ভূতাত্ত্বিক সময় সারণিতে উল্লেখযোগ্য ভূতাত্ত্বিক ঘটনা ও ভূমিরূপ Major Geological Events and Landform in Geological Time Scale

প্রি - ক্যামব্রিয়ান যুগ ( Pre - cambrian Era ) 460 কোটি বছরের পৃথিবীর বয়সের মধ্যে প্রথমদিকে প্রায় 400 কোটি বছর হল প্রি - ক্যামব্রিয়ান যুগ ।
ভূতাত্ত্বিক সময় সারণিতে উল্লেখযোগ্য ভূতাত্ত্বিক ঘটনা ও ভূমিরূপ Major Geological Events and Landform  in Geological Time Scale 


★প্রি - ক্যামব্রিয়ান যুগ ( Pre - cambrian Era )

 460 কোটি বছরের পৃথিবীর বয়সের মধ্যে প্রথমদিকে প্রায় 400 কোটি বছর হল প্রি - ক্যামব্রিয়ান যুগ । 

1. এই যুগে পৃথিবীর প্রধান ভূভাগ কতকগুলি প্রাচীন আগ্নেয় ও রূপান্তরিত শিলা দ্বারা গঠিত শিল্ড অঞ্চলে বিভক্ত । এই সময়ের ভূত্বকের শিলাসমূহ কেলাসিত ( crystalline ) অবস্থায় ছিল । এ যুগের পূর্বের সময় আর্কিয়ান ( archean ) যুগ নামে পরিচিত ।

 2. প্রি - ক্যামব্রিয়ান যুগের আগ্নেয় উদ্ভেদগুলি গ্রানাইট গঠিত ভূমিরূপ যথা — ব্যাথোলিথ , ল্যাকোলিথ , লপোলিথ প্রভৃতি রূপে আজও বর্তমান । এগুলির অনেক অংশ বর্তমানে রূপান্তরিত নিস শিলায় পরিণত হয়েছে ।

 3. প্রি - ক্যামব্রিয়ান সময় হিম যুগেরও সন্ধান মেলে । এই হিমযুগের নিদর্শন পাওয়া যায় বর্তমানের কানাডা , নরওয়ে , অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি স্থানে ।

 4. আজ থেকে 280 কোটি বছর পূর্বে গঠিত ফিনল্যান্ডের হিমবাহ সৃষ্ট হ্রদে সঞ্চিত পলিসমূহের বয়স নির্ণয় করে বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন ।

 5. এই যুগে সৃষ্ট পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য শিল্ড অঞ্চলগুলি বর্তমানে বিস্তৃত রয়েছে কানাডায় , ব্রাজিলে , স্ক্যান্ডিনেভিয়ায় , সাইবেরিয়ায় , দক্ষিণ ভারতে , আফ্রিকায় এবং অস্ট্রেলিয়ায় । 

6. ভারতের প্রি - ক্যামব্রিয়ান কুডাফ ( cuddaph system ) ও বিন্ধ্য শ্রেণি ( vindhyan system ) এর অন্তর্গত ।

7. প্রায় 300 কোটি বছর এই যুগের সমুদ্রে প্রথম প্রাণের আবির্ভাব ঘটে । এককোশী প্রাণী অ্যামিবা তৈরি হয় প্রথম । তারপর তৈরি হয় ছত্রাক , নীলাভ - সবুজ শৈবাল ও ব্যাকটেরিয়া । 

৪. এই যুগের শেষের দিকে কোনো কোনো জায়গায় কিছু পাললিক শিলার সন্ধান পাওয়া যায় । তবে এই শিলার জীবাশ্মের সন্ধান পাওয়া যায় না । এটি প্রমাণ করে প্রি - ক্যামব্রিয়ান যুগের স্থলভাগে তখনও জীবন তৈরি হয়নি ।

 9. এই যুগের আগ্নেয় ও রূপান্তরিত শিলায় লোহা , তামা , সীসা , ম্যাঙ্গানিজ , লোনা ও তেজস্ক্রিয় খনিজের উপস্থিতি লক্ষ করা যায় । 

★প্যালিয়োজোয়িক যুগ ( Paleozoic Era ) 

1.স্থায়ী হয়েছিল প্রায় 30 কোটি বছর ধরে । আজ থেকে প্রায় 54.7 কোটি বছর আগে এই যুগ শুরু হয়েছিলো প্রায় 30 কোটি বছর ধরে।

2. পর্বত গঠন প্রক্রিয়া শুরু এই যুগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য । শিল্ড বা প্রাচীন মালভূমিগুলির প্রান্তভাগে গঠিত মহীখাত অঞ্চলে বহু কোটি বছর ধরে পাললিক শিলার সময় চলতে থাকে এবং ডেডোনিয়ান উপযুগে ভূ - আলোড়নে বহু ভঙ্গিল পর্বত তৈরি হয় । 

3. উত্তর আমেরিকার পূর্ব উপকূল বরাবর অ্যাপালেশিয়ান পর্বত গঠিত হয় এবং ভূমির উত্থানের জন্য সমুদ্র ক্রমশ পিছু হঠতে থাকে । 

4. এই সময়ে এশিয়া ও ইউরোপ একত্রে বিশাল অখণ্ড ভূমিরূপে অবস্থান করে । দক্ষিণ আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়া মহাদেশও নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করে ।

 5. জীবাশ্মযুক্ত পাললিক শিলা এ যুগের আর এক অন্যতম বৈশিষ্ট্য । বিস্তৃত মহীখাত জুড়ে পাললিক শিলার সঞ্চয় হয় । এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ মহাদেশের মধ্যে ঢুকে পড়ায় মহাদেশের প্রান্তভাগ জলে নিমজ্জিত হয় । 

6. কার্বোনিফেরাস ও পার্মিয়ান অধ্যায়ে মহাদেশগুলি যথেষ্ট বড়ো হয়ে উঠেছিল এবং একত্রিত হচ্ছিল । এ সময়ে গড়ে উঠেছিল গন্ডোয়ানাল্যান্ড , লরেশিয়া প্রভৃতি ভূখণ্ড । 

7. মূলত কার্বোনিফেরাস সময়ে দেশের অভ্যন্তরে বিশাল বিশাল জলাভূমি অবস্থান করত । এই জলাভূমিগুলি এবং তার চারিদিকে স্থলভাগে সৃষ্ট হয়েছিল টেরিডোস্পার্ম অরণ্য ( বীজবাহী ফার্ন ) কালক্রমে এইসব উদ্ভিদ পলিতে চাপা পড়ে গড়ে তুলল বিশাল কয়লা ভাণ্ডার ।

 ৪. সিলুরিয়ানে স্থলজ উদ্ভিদের উত্থানের পর ডেভোনিয়ানে দেখা দিয়েছিল উভচর প্রাণী । এরপর এল পার্মিয়ান যুগে সরীসৃপ । 

9. পার্মিয়ান যুগের শেষে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী গণ অবলুপ্তি ( Mass extinction ) ঘটে । এর ফলে প্রাচীন জীবগোষ্ঠীর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ অবলুপ্ত হয়ে যায় । 

★মেসোজোয়িক যুগ ( Mesozoic Era )

 1. মেসোজোয়িক যুগ শুরু হয় আজ থেকে প্রায় 24.5 কোটি বছর আগে এবং স্থায়ী হয় প্রায় 18 কোটি বছর ।

2. মেসোজোয়িক যুগে পর্বতগুলি ক্ষয়িত হয়ে সমুদ্রতলের উয়তায় চলে এসেছিল । 

3.ট্রায়াসিক যুগে পৃথিবীর জলবায়ু শুষ্ক প্রকৃতির ছিল । তবে ক্রিটেসিয়াস যুগে সারা পৃথিবী জুড়ে প্রচুর বৃষ্টি হয় এবং জলবায়ু আর্দ্র প্রকৃতিতে রূপান্তরিত হয় বলে অধিকাংশ মহাদেশের প্রান্তভাগগুলি সমুদ্রের জলের তলায় ডুবতে থাকে । 

4.ক্লিটেসিয়াস উপযুগের শেষের দিকে টেথিস সাগর সংকুচিত হয় এবং আল্পস হিমালয় পর্বত গঠনের ভিত্তি তৈরি হয় । 

5. উত্তর আমেরিকার পশ্চিম দিকে রকি পর্বতশ্রেণির সৃষ্টি হয় এযুগে । 

6. মেসোজোয়িক যুগের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল মহাদেশ ও সমুদ্রের চেহারা সম্পূর্ণভাবে পাল্টাতে থাকে । মহাদেশগুলি একত্রিত হতে হতে ট্রায়াসিক যুগের শেষে গঠিত হয় একটি মাত্র ভূখণ্ড যার নাম প্যানজিয়া । প্যানজিয়ার অতি মহাদেশকে ঘিরে ছিল মহাসমুদ্র । ফলে মহাদেশের মধ্যভাগে জলীয়বাষ্প খুব কমই পৌঁছত । তাই ট্রায়াসিক যুগে পৃথিবীর বিশাল অঞ্চল জুড়ে শুষ্ক মরু অঞ্চল দেখা গিয়েছিল । 

7. ট্রায়াসিক যুগ থেকে প্যানজিয়া ভাঙতে শুরু করে । ভাঙা টুকরোগুলি যত দূরে সরতে থাকে তত তাদের মধ্যে তৈরি হতে থাকে নতুন সমুদ্র । মূলত অগভীর ওই সব সমুদ্রে চারিদিক থেকে পলি এসে জমা হয় । ফলে পলিসমৃদ্ধ নরম সমুদ্রতলে দেখা দেয় নতুন নতুন সামুদ্রিক প্রাণী ও উদ্ভিদ । 

8. মেসোজোয়িক যুগে জীবজগৎ বেশ বৈচিত্র্যময় । সমস্ত মেসোজোয়িক অধিযুগ জুড়ে সরীসৃপদের প্রাধান্য ছিল । এই সময় সপুষ্পক উদ্ভিদের আবির্ভাব ঘটে । 

★সেনোজোয়িক যুগ ( Cenozoic Era ) । 

1. পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক ইতিহাসে নবীনতম যুগ হল সেনোজোয়িক যুগ । এই যুগ সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে শুরু হয়েছে এবং আজও আমরা এই যুগেই বাস করছি ।

2. মেসোজোয়িক যুগ শেষ হয় সারা পৃথিবী ব্যাপী আর একটি ব্যাপক ভূতাত্ত্বিক আন্দোলনের ফলে । একে বলা হয় । পরামাইড রেডলিউশন ( Laramide revolution ) , যার ফলে আমাদের এশিয়ায় সুবিস্তৃত হিমালয় পর্বতশ্রেণি , ইউরোপে আল্পস পর্বতবেণি , উত্তর আমেরিকার রকি পর্বতশ্রেণি ও দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ পর্বতশ্রেণির সৃষ্টি হয়েছে । এর আগে ঐ পর্বগুলির কোনো অস্তিই ছিল না । 

3.বৈজ্ঞানিকরা মনে করেন এই সময় থেকে পৃথিবীতে হিমণ্ডল , নাতিশীতোর মণ্ডল ও গ্রীষ্মমণ্ডল এই তিনটি সুস্পষ্ট জলবায়ু অঞ্চলের সৃষ্টি হয় । তাছাড়া পৃথিবীর প্রায় সব অঞ্চলে শীত গ্রীষ্মের তাপমাত্রার পার্থক্য লক্ষণীয় ছিল যার ফলে উদ্ভিদের দেহে বি বা বলয়ের সৃষ্টি হয় । বড়ো বড়ো গাছের গুঁড়ি কাটলে এই রিং বা বলয়গুলি দেখা যায় ।

 4. এই যুগে আন্টার্কটিকা ও অস্ট্রেলিয়া পরপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভারত মহাসাগরের বিস্তার ঘটিয়েছে ।

 5. পানামা যোজকের উত্থান এই যুগেই হয় । ফলে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের সংযুক্তি ঘটে । 

6. ভারতীয় উপমহাদেশের অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এই যুগেই সংগঠিত হয়েছে । পৃথিবীর অন্যান্য অংশের মধ্যে ভারতীয় উপমহাদেশে সেনোজোয়িক যুগে স্তন্যপায়ী ও মেরুদণ্ডী প্রাণীদের আধিক্য ঘটে । এই প্রাধান্য অবশ্য ভারতীয় উপমহাদেশে প্যালিওসিন যুগে দেখা যায় ।

 7. ইয়োসিন পর্বের শেষ দিক থেকে মায়োসিন পর্বের মাঝামাঝি পর্যন্ত টেথিস সাগরে ভাঁজের মাধ্যমে পর্বত গঠনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছোয় । মায়োসিন পর্বের শেষদিকে হিমালয়ের সর্বদক্ষিণে শিবালিক গঠিত হয় । 

8. সেনোজোয়িক যুগের শুরুতে উত্তর আমেরিকার পশ্চিম উপকূল বরাবর রকি পর্বত এবং দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূল বরাবর আন্দিজ পর্বত চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হয় ।

 9. এযুগের সমুদ্রবন্ধে মন্বিত পাললিক শিলাস্তরে তৈরি হয় খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস নরম লিগনাইট কয়লাও এই সময় তৈরি হয়েছে । 

10. গ্লাইস্টোসিন অধিযুগে হিমযুগের আবির্ভাব সেনোজোয়িক যুগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য । উত্তর আমেরিকার হার্ডসন উপসাগর থেকে দক্ষিণে ওহিও নদী অববাহিকা পর্যন্ত সমগ্র কানাডা বরফের তলায় ছিল । আটলান্টিকের পূর্বে রাশিয়াসহ উত্তর ইউরোপের বিস্তীর্ণ অংশ বয়ে ঢাকা পড়ে । 

11. এই হিমযুগে মানুষের আবির্ভাব ঘটেছিল । বর্তমানে হোমো স্যাপিয়েন্স ( Homo sapiens , বর্তমান মানব প্রজাতি ) এর পূর্বপুরুষ হোমো হ্যাবিলিস ( Homo Habilis ) দের অস্তিত্ব ফ্রান্স , দক্ষিণ আফ্রিকা প্রভৃতি অঞ্চলের গুহায় পাওয়া গেছে ।

Middle post ad 01