welcome to mygeo.in Indian no 1 geography based website in Bengali

পৃথিবীর বয়স গণনা ( Age Determination of Earth)

পৃথিবীর বয়স মোটামুটিভাবে 460 কোটি বছর ধরা হয় । তবে এই বয়সের সুস্পষ্ট ধারণা খুব বেশি দিনের নয় । আম থেকে মাত্র সাড়ে তিনশো বছর আগেও এ নিয়ে মানুষের

পৃথিবীর বয়স গণনা ( Age Determination of Earth)


 পৃথিবীর বয়স মোটামুটিভাবে 460 কোটি বছর ধরা হয় । তবে এই বয়সের সুস্পষ্ট ধারণা খুব বেশি দিনের নয় । আম থেকে মাত্র সাড়ে তিনশো বছর আগেও এ নিয়ে মানুষের ধারণা স্বচ্ছ ছিল না । তবে বারবার মানুষের মনে প্রশ্ন জেগেছে পৃথিবীর সৃষ্টি হলই বা কী করে তার ঘটনাটা ঘটেছিলই বা কবে ? গত দুশো বছরে পৃথিবীর বয়স নিয়ে নানা ভাবনাচিন্তা করেছেন নানা বিজ্ঞানী । একদল বিজ্ঞানী মনে করতেন , যেহেতু সূর্য থেকে পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছে ধীরে ধীরে তাপ বিকিরণ করে গ্যাস থেকে তরল এবং তরল থেকে কঠিন পৃথিবী অর্থাৎ দীর্ঘদিন ধরে তাপ বিকিরিত হয়ে আজকের কঠিন পৃথিবী তৈরি হয়েছে । কী হারে পৃথিবী ঠান্ডা হচ্ছে তা জানতে পারলে তার থেকে অঙ্ক কষে পৃথিবীর বয়স নির্ণয় করা সম্ভব । কিছু ঠান্ডা হওয়ার মাত্রাটি সবসময় ও সব জায়গায় সমান নয় , তাই এই আলোচনা আর বেশিদূর এগোয়নি । আর একদল বিজ্ঞানী মনে করতেন কঠিন পৃথিবীর উপরিভাগে সবসময়ই মাটি বা পলি জমছে । প্রতিবছর কতটা করে জমছে এবং আজ পর্যন্ত কতটা পুরু হয়ে জমেছে তা হিসেব নিলেই পৃথিবীর বয়স নির্ণয় করা সম্ভব । কিন্তু এখানেও বিপত্তি — প্রতিবছর মাটি ক্ষয় একইরকম হয় না । মোট পাথরের পরিমাণও জানা সহজসাধ্য নয় , ক্ষয় হয়ে পাথরের গুঁড়ো থেকে আবার নতুন করে পাথর তৈরি হয় ইত্যাদি নানা ঘটনা । সুতরাং এ আলোচনায় ছেদ পড়ল । এরপর এল সাগরের জলে লবণের পরিমাণ হিসেব করে পৃথিবীর বয়স নির্ণয় করার তত্ত্ব । মনে করা হত সমুদ্রের লবণ কোনো না কোনো ভাবে মাটির নীচ থেকে উঠে এসে সাগরের জলে মিশেছে । সুতরাং জলে মোট লবণের পরিমাণ এবং প্রতি বছর নদীনালা দিয়ে কতটা লবণ সাগরে মিশছে তা হিসেব করলেই পৃথিবীর বয়স জানা সম্ভব । এই ধারণা প্রথম ধাক্কা খেল যখন মানুষ জানল পৃথিবী ও সাগরের বয়স এক নয় । অর্থাৎ একসলো তৈরি হয়নি । সুতরাং সাগরের জলে লবণ মেপে বিশেষ লাভ হল না ।

বয়স নির্ণয়ের আধুনিক পদ্ধতি ( Modern Method of Age Determination ) 

বয়স গণনার যে পদ্ধতি বিজ্ঞানী মহলে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তার সূত্রপাত গত শতাব্দীর শেষভাগে । 1896 সালে ফরাসি বিজ্ঞানী হেনরি বেকারেল ( Henry Becquerel ) ইউরেনিয়াম পটাশিয়াম সালফেট আর ফটোগ্রাফিক প্লেট নিয়ে কাজ করতে গিয়ে সম্মান পেলেন তেজস্ক্রিয়তার ( radio activity ) । প্রকৃতিতে কিছু কিছু মৌল আছে যেমন , ইউরেনিয়াম বা থোরিয়াম , যাদের পরমাণুগুলো খুব আস্তে আস্তে ভাঙতে থাকে । অর্থাৎ পরমাণু থেকে ইলেকট্রন ও আলফা কণা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বেরিয়ে আসে । এই ঘটনা ক্রমান্বয়ে চলতে থাকলে শেষমেষ একটি মৌল অন্য মৌলে রূপান্তরিত হবে । একে তেজস্ক্রিয়তা বলে । পরবর্তীকালে বিজ্ঞানী মেরি কুরি ( Marie Curie ) এবং পেরি কুরি ( Pierre Curie ) তেজস্ক্রিয়তার গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যান এবং 1903 সালে এরা তিনজন নোবেল পুরস্কার পান । এই যুগান্তকারী আবিষ্কার শিলা তথ্য পৃথিবীর বয়স নির্ণয়ের দরজা খুলে দেয় । তবে তেজস্ক্রিয়তা পরিমাপ থেকে বয়স নির্ণয়ের পদ্ধতি একটু জটিল । কারণ যেসব পদার্থ ইলেকট্রন ও আলফা কণা বিকিরণ করে অর্থাৎ তেজস্ক্রিয় তাদের তেজস্ক্রিয়তার পরিমাপ এক একজনের এক এক রকম । কোনো কোনো মৌল খুব তাড়াতাড়ি বিকিরিত হয়ে অন্য মৌলে পরিণত হয় আবার কোনো কোনো মৌলের ক্ষেত্রে এই ঘটনাটি ঘটে অতি ধীরে । অর্থাৎ তেজস্ক্রিয় অবক্ষয়ের হার ( rate of radio active decay ) গণনা করতেপারলে বয়স নির্ণয় করার কাজটা সহজ হবে । এক্ষেত্রে মৌলের অর্ধায়ু ( Half life ) নির্ণয় করতে হয় । নির্দিষ্ট পরিমাণ মৌল কত সময়ে ঠিক তার অর্ধেক পরিমাণ অন্য মৌলে রূপান্তরিত হচ্ছে তাকে বলে অর্ধায়ু । যেমন — ইউরেনিয়াম 235 কিংবা কার্বন 14 - এর অর্ধায়ু হল যথাক্রমে 7130 লক্ষ ও 5770 বছর । ধরা যাক কোনো শিলার মধ্যে শুরুতে 1600 টি ইউরেনিয়াম 235 - এর পরমাণু আছে । 7130 লক্ষ বছর পরে তারা বিকিরণ ছেড়ে ৪০০ টা ইউরেনিয়াম 235 ও ৪০০ টি লেড 207 পরমাণুতে রূপান্তরিত হবে । পরের 7130 লক্ষ বছরে ইউরেনিয়াম 239 পরমাণুর সংখ্যা দাঁড়াবে 400 এবং লেড 207 দাঁড়াবে 1200 - তে । সুতরাং কোনো শিলার যদি ইউরেনিয়াম ও লেডের পরিমাণটা জানা থাকে তার থেকে বলা সম্ভব কত লক্ষ বছর কেটে গেছে মাঝখানে । 1907 সালে বিজ্ঞানী রাদারফোর্ড ও বিজ্ঞানী বোল্ড উট এই পদ্ধতিতে শিলার বয়স হাতেনাতে প্রমাণ করে দেখালেন । ক্রমে দেখা গেল শুধু ইউরেনিয়াম নয় , তেজস্ক্রিয় থোরিয়াম রুবিডিয়াম , পটাশিয়াম , কার্বন ইত্যাদি নানা পরমাণুকে একাজে লাগানো যেতে পারে । তাছাড়া শিলাস্তরে যদি কোনো জীবাশ্ম থাকে তাহলে তারও বয়স এই পদ্ধতিতে নির্ণয় করা যায় জীবাশ্মের বয়স নির্ণয়ের জন্য দুটো পদ্ধতির কথা বিজ্ঞানীরা বলেছেন 1. তেজস্ক্রিয় পটাশিয়াম আর্গনের পরিমাণ নির্ণয় । 2. তেজস্ক্রিয় কার্বন ( কার্বন 14 ) পরমাণুর হিসেব নেওয়া । যেসব জীবাশ্ম বয়সে প্রাচীন তাদের জন্য পটাশিয়াম আর্গন পদ্ধতি আর তুলনামূলকভাবে নবীন জীবাশ্মদের ক্ষেত্রে কার্বন পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া হয় । কোনো জীবাশ্মের বয়স 50 হাজার বছরের বেশি হলে তাতে এত কম পরিমাণ কার্বন উপস্থিত থাকে যা পরিমাপ করা যায় না আবার জীবাশ্মটির বয়স দশ হাজার বছরের কম হলে তাতে এত কম পরিমাণ কার্বন অবক্ষয়িত হয় যা পরিমাপ করা যায় না । তাই এই পদ্ধতিতে দশ হাজার থেকে পঞ্চাশ হাজার বছরের জীবাশ্মের বয়স ভালোভাবে নির্ণয় করা যায়

 কার্বন পদ্ধতিতে বয়স নির্ণয় ( Age Determination by Carbon Method ) 

এবার দেখা যাক , কীভাবে এই পদ্ধতিতে বয়স নির্ণয় করা যায় । আমরা জানি , কার্বনের স্থায়ী আইসোটোপ কার্বন 12 এবং কার্বন 13। নিউট্রনের তারতম্যের জন্য পরমাণুর ভর আলাদা হয় কিন্তু মৌলটি একই থাকলে তাদেরকে বলে আইসোটোপ । অর্থাৎ কার্বনের ক্ষেত্রে পরমাণুর কেন্দ্রে প্রোটন ও নিউট্রনের মোট সংখ্যা 12 এবং 13। আবার বায়ুমণ্ডলে মহাজাগতিক রশ্মির প্রভাবে সামান্য পরিমাণ কার্বন 14 আইসোটোপও সৃষ্টি হয় । এই কার্বন 14 আইসোটোপ তেজস্ক্রিয় এবং তার অর্ধায়ু 5700 বছর । সুতরাং কার্বন থেকে যাই সৃষ্টি হোক না কেন তার মধ্যে কার্বন 12 , কার্বন 13 এবং সামান্য পরিমাণ কার্বন 14 থাকবেই । অর্থাৎ কোনো জীবন্ত উদ্ভিদ বা প্রাণী মারা গেলে তার মধ্যেকার কার্বন পরমাণুর মধ্যে কার্বন 12 , কার্বন 13 , কার্বন 14 থাকবেই । এর মধ্যে কার্বন 14 তেজস্ক্রিয় বলে ক্রমাগত বিকিরণ ছড়াবে ও যতদিন যাবে কার্বন 14 - এর পরিমাণও কমতে থাকবে । এইভাবে কোনো জীবাশ্মে কার্বনের বিভিন্ন আইসোটোপের অনুপাত দেখে বলা সম্ভব জীবাশ্মটির বয়স কত ।




Middle post ad 01